পঞ্চায়েতগুলিতে নারীদের সংরক্ষণ ক্ষমতায়নের একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসাবে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং তাঁদের আক্ষরিক অর্থে কোনও বাস্তব ক্ষমতাই প্রদান করা হয়নি… এই ধারণা সর্বত্র ব্যাপ্ত ছিল। এ বছর ৭৩তম ও ৭৪তম সংবিধান সংশোধনী কার্যকর হওয়ার ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে, যা স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থাগুলিতে নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত করেছে। সাধারণত দাবি করা হয় যে, স্থানীয় প্রশাসনে নারীদের জন্য রাজনৈতিক সংরক্ষণ ঘিরে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তা গুরুত্বপূর্ণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন সাধিত হয়েছে। নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা গ্রামীণ ভারতে উন্নয়ন ফলাফলে অবদান রাখলেও তাঁদের অবদানগুলি মূলত অবমূল্যায়িত এবং অবহেলিতই থেকেছে। এ বছর যেহেতু নারীদের জন্য আইনসভার আসন সংরক্ষণকারী দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়েছে, তাই স্থানীয় সরকারে তাঁদের অভিজ্ঞতামূলক অর্জন এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি।
স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থাগুলিতে নারীদের সংরক্ষণের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনীগুলি তৃণমূল স্তরে একটি পরিবর্তনমূলক প্রভাব ফেলেছিল, যার ফলে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি নারী নেতৃত্বের পদে উন্নীত হয়েছেন। সাম্প্রতিক নানাবিধ তথ্যে দেখা গিয়েছে যে, স্থানীয় সংস্থাগুলির প্রায় ৪৪ শতাংশ আসন ভারতে নারীদেরই নেতৃত্বাধীন। এটি একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড, যা ভারতকে স্থানীয় স্তরে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি এবং জাপানের মতো অন্য প্রধান দেশগুলিকে পিছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির অন্যতম করে তোলে।
এ বছর যেহেতু নারীদের জন্য আইনসভার আসন সংরক্ষণকারী দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়েছে, তাই স্থানীয় সরকারে তাঁদের অভিজ্ঞতামূলক অর্জন এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি।
নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয়ে অনেক রাজ্যই নারী প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষণের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে ২০টি রাজ্য তাদের পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানে (পিআরআই) নারীদের জন্য সংরক্ষণের পরিমাণ ৫০ শতাংশ প্রসারিত করেছে৷। কর্নাটকের মতো কিছু রাজ্যে নারীরা এমনকি এই সীমা অতিক্রম করেছেন এবং পিআরআই-তে ৫০ শতাংশের বেশি নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি ইঙ্গিত করে যে, নারীরা এখন সেই নির্বাচনী ওয়ার্ডগুলিতেও সফল হচ্ছেন, যেগুলি এত দিন পর্যন্ত তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে সংরক্ষিত ছিল না।
পঞ্চায়েত স্তরের রাজনীতি নারীদের জনজীবন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাঠামোয় অংশগ্রহণের জন্য একটি অপরিহার্য মঞ্চ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণে তাঁদের সম্পৃক্ততা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রশাসনের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত স্তরে ইলেক্টেড উইমেন রিপ্রেজেন্টেটিভ বা নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের (ইডব্লিউআর) দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গ্রামীণ এলাকায় পানযোগ্য জলের সুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলির উন্নতিতে বিনিয়োগের মতো উন্নয়নমূলক কাজে দক্ষ নেতৃত্ব প্রদর্শনের সম্ভাবনাই বেশি। সংরক্ষণ আসলে লিঙ্গ-সম্পর্কিত সমস্যাগুলিকেও প্রভাবিত করেছে এবং নীতিগত পছন্দের ক্ষেত্রে নারীদের চাহিদা ও উদ্বেগের সঙ্গে আরও মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। গার্হস্থ্য হিংসা ও বাল্যবিবাহের সমস্যা সমাধানে সহায়তা প্রদানে ইডব্লিউআর প্রধান ভূমিকা পালন করেন। অপ্রচলিত পরিসরগুলিতে নারীদের প্রবেশ গ্রামীণ ভারতে বিদ্যমান কঠোর লিঙ্গ সংক্রান্ত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ইডব্লিউআর তাঁদের সম্প্রদায়ের অন্য নারীদের জন্য রোল মডেল হয়ে ওঠেন এবং আরও বেশি সংখ্যক নারীকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
ইডব্লিউআর-এর জন্য অব্যাহত চ্যালেঞ্জ এবং সামনের পথ
নারীদের জন্য রাজনৈতিক সংরক্ষণের ইতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সামনে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা তাঁদের পুরুষ সমকক্ষদের তুলনায় আলাদা। প্রথমত, নারী প্রতিনিধিরা প্রায়শই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সংরক্ষিত আসন পরিবর্তনের নীতিকে নিজেদের রাজনৈতিক পেশার ধারাবাহিকতায় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আসন আবর্তনের প্রক্রিয়ায় নারী প্রার্থীরা এ মেয়াদ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা পরবর্তী মেয়াদে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন এবং তাঁরা দফতরে একটি মেয়াদের পরে বাড়িতে নিজেদের ভূমিকায় ফের অবতীর্ণ হন। নির্বাচিত নারীদের তুলনায় নির্বাচিত পুরুষ প্রতিনিধিদের একাধিক বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা বেশি। নারী নেত্রীদের খুব কমই সাধারণ অসংরক্ষিত আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হয়। কারণ সব স্তরেই বলা হয় যে, নারী প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম, যার ফলে রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের কম টিকিট প্রদান করে। সাম্প্রতিক তথ্যসমূহ এই মতবাদকে ভুল প্রমাণ করলেও বাস্তবে এমনটাই ঘটে থাকে।
আসন আবর্তনের প্রক্রিয়ায় নারী প্রার্থীরা এ মেয়াদ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা পরবর্তী মেয়াদে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন এবং তাঁরা দফতরে একটি মেয়াদের পরে বাড়িতে নিজেদের ভূমিকায় ফের অবতীর্ণ হন।
দ্বিতীয়ত, লিঙ্গ ডিজিটাল বিভাজন - যা প্রধানত গ্রামীণ ভারতের নারীদের প্রভাবিত করে - আসলে নারী প্রতিনিধিদের কাজকে বাধা দেয়। এটি পঞ্চায়েতগুলির জন্য প্রাসঙ্গিক। কারণ স্থানীয় প্রশাসনগুলি জনসেবা প্রদান ও প্রতিকারের জন্য সারা দেশে আরও বেশি করে ডিজিটাইজেশনের সঙ্গে অভিযোজিত হচ্ছে। বিহারে সেন্টার ফর ক্যাটালাইজিং চেঞ্জ নামক একটি নাগরিক সমাজ সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ইডব্লিউআর অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ৬৩ শতাংশের কাছে একটি করে ফোন ছিল এবং তার মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ ছিল স্মার্টফোন। নারীদের মধ্যে কম ডিজিটাল সাক্ষরতা তাঁদের প্রশাসনিক কাজকর্ম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার ক্ষেত্রে নারী নেত্রীদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু রাজ্য (রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা) দুই সন্তানের নিয়ম অনুসরণ করে, যা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দুই সন্তানের অভিভাবকসম প্রার্থীদের (পুরুষ ও মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই) বাধা দেয়। হরিয়ানা এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে। এই নীতিগুলি অসাবধানতাবশত নারীদের রাজনীতিতে প্রবেশকেই সীমিত করে। কারণ তাঁদের শিক্ষার সুযোগ ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিকল্পের অভাব রয়েছে। নানাবিধ তথ্য ইঙ্গিত করেছে যে, নারী প্রতিনিধিরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নিম্ন অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত, তাঁরা প্রতিযোগী ও প্রতিনিধি হিসাবে দুই ক্ষেত্রেই আর্থিক সীমাবদ্ধতার শিকার হন এবং রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের নারী নেত্রীদের আর্থিক সহায়তা আরও বেশি নারীকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে সহায়ক হতে পারে।
তৃতীয়ত, বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বেশির ভাগ নারী প্রতিনিধিই তাঁদের লিঙ্গের কারণে পঞ্চায়েতে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এবং উপেক্ষিত বোধ করছেন বলে অভিযোগ দায়ের করেন। পঞ্চায়েত সচিব এবং অন্যান্য পদের মতো প্রশাসনিক ভূমিকায় মূলত পুরুষদেরই দেখা যায়। বেশির ভাগ নবনির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা মনে করেন, ব্লক ও জেলা প্রশাসন, রাজ্য স্তরের সরকারি বিভাগ ও পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে কাজ করা কঠিন এবং এ ভাবে পুরুষ প্রতিনিধি বা নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পর্কিত নেতারা বহিরাগত সংস্থাগুলির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন। এই আশঙ্কাও রয়ে গিয়েছে যে, ভারত জুড়ে অনেক অঞ্চলে নারী নেত্রীরা প্রক্সি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন, যাঁরা তাঁদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের পুরুষ সদস্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। এই ধরনের ঘটনা আজও ব্যাপক মাত্রায় লক্ষ করা যায়।
বেশির ভাগ নবনির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা মনে করেন, ব্লক ও জেলা প্রশাসন, রাজ্য স্তরের সরকারি বিভাগ ও পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে কাজ করা কঠিন এবং এ ভাবে পুরুষ প্রতিনিধি বা নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পর্কিত নেতারা বহিরাগত সংস্থাগুলির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন।
ভাল প্রশাসনিক কাজ সত্ত্বেও নারী নেত্রীরা পুরুষদের তুলনায় তাঁদের ভোটারদের কাছ থেকে কম ইতিবাচক মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন। নারী নেত্রীরা প্রকাশ করেছেন যে, পঞ্চায়েতগুলিতে প্রশাসনিক কাজ নারীদের জন্য অনুপযুক্ত ছিল অথবা তাঁরা দায়িত্ব পালনে নিজেদের অযোগ্য বলে মনে করেছেন। অনেকে এমনটাও বলেছেন যে, তাঁরা তাঁদের স্বামী বা পরিবারের প্রতিরোধের কারণে পেশাগত কাজ ও গৃহস্থালির কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেননি। উত্তরপ্রদেশের ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নারীদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচনী নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব ছিল উল্লেখযোগ্য রকমের।
স্থানীয় অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণে নারী প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যাই হোক, দক্ষতা-নির্মাণ কর্মসূচি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মিশ্রণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই নারীদের রাজনৈতিক পেশাকে শক্তিশালী করার পথ প্রশস্ত করবে এবং জাতীয় ও রাজ্য আইনসভায় তাঁদের আরও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।
সুনয়না কুমার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
অম্বর কুমার ঘোষ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.