Published on Apr 08, 2023 Updated 0 Hours ago

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব থেকে ভারত ছ’টি মূল শিক্ষা নিতে পারে। ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলির, বিশেষত ভারতীয় সেনাবাহিনীর, কাজকে আরও সুনির্দিষ্ট করতে  হবে।

সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শিক্ষা

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিদ্যমান যুদ্ধ ইউক্রেনের বাখমুট শহরের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠার পাশাপাশি এই ধ্রুবকের প্রতি পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, যুদ্ধ হল আল্টিমা রেশিও বা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সর্বোচ্চ শক্তিগুলির সর্বোত্তম অনুপাত। আন্তর্জাতিক রাজনীতি যুদ্ধের ছায়ায় সংঘটিত হয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তি নিরবধি রাষ্ট্রীয় কৌশলের একটি কার্যকর হাতিয়ার থাকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব থেকে ভারত ছ’টি মূল শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

প্রথমত এবং বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিদ্যমান যুদ্ধে কৌশলগতভাবে বাখমুটের যুদ্ধে সাফল্য উভয় পক্ষের নিরিখেই যুদ্ধের সামগ্রিক দিকনির্দেশের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ নয়। এর সীমিত কৌশলগত বা সামরিক মূল্য থাকা সত্ত্বেও দু’টি যুদ্ধরত রাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে একটি নৃশংস যুদ্ধাভিযানে মত্ত হয়ে পড়েছে, যা এ কথাই দর্শায় যে, ভূমিভিত্তিক আঞ্চলিক দখল সুরক্ষিত করার প্রেরণাটি কতটা মারাত্মক ছিল। এর পাশাপাশি এ কথাও গুরুত্বপূর্ণ যে, যুদ্ধকে ছেলেখেলা বা অপ্রাসঙ্গিক মনে করা আদতে এক অপ্রাপ্তবয়স্কসুলভ আচরণ।

রণসজ্জা, গোলাবারুদ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মতো কারিগরি কর্মী এখনও গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেগুলি সাইবার, স্পেস এবং অন্যান্য অ-গতিশীল তথ্য সম্পর্কিত ক্ষমতা দ্বারা প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়ত, এটি আমাদের এক ফলাফভিত্তিক ও সেই সংক্রান্ত পরিবর্তনের দিকে চালিত করে – ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধ এখনও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং স্থলশক্তিকে ভারত-সহ যে কোনও দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় করে তোলে। জনসংখ্যা যুদ্ধের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যে কোনও আক্রমণকারী শক্তিকে নিবৃত্ত ও পরাজিত করার একটি প্রধান পথ। বিপুল খরচ সত্ত্বেও অঞ্চলটিকে রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী স্থলবাহিনীর আকারে সামরিক শক্তির অভাব রাষ্ট্রের পতনের অন্যতম কারণ হবে। মানুষ ভূখণ্ডে বাস করে এবং আক্রমণ তীব্রতর হলে এই ভূখণ্ডেই যুদ্ধের পরিণতি নির্ধারিত হয়। রণসজ্জা, গোলাবারুদ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মতো কারিগরি কর্মী এখনও গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেগুলি সাইবার, স্পেস এবং অন্যান্য অ-গতিশীল তথ্য সম্পর্কিত ক্ষমতা দ্বারা প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।

তৃতীয়ত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সস্তা ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা বাধা এবং ধ্বংসের ফলে নৌবাহিনীর দুর্বলতাকে প্রকাশ্যে এনেছে। এর ফলস্বরূপ, রুশ নৌবাহিনীর ব্ল্যাক সি বহর কার্যকরভাবে তার ঘাঁটিতে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে বা ইউক্রেনীয় উপকূলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছে। চিনা মূল ভূখণ্ড থেকে মার্কিন নৌবাহিনী এবং মিত্র নৌবাহিনীর স্থলভিত্তিক নৌবহরকে দূরে রাখার জন্য চিনারা জাহাজবিরোধী ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং জাহাজবিরোধী ক্রুজ মিসাইলের আকারে ‘ক্যারিয়ার ধ্বংসকারী’ তীর এবং স্থলভিত্তিক প্রজেক্টাইলের সম্পূর্ণ পরিসর নির্মাণ করেছে। ভারত তার স্থলভিত্তিক ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী তৈরি করে ইউক্রেন এবং চিনকে অনুকরণ করতে পারে।

চতুর্থত, ঘূর্ণায়মান এবং ফিক্সড-উইং বিমান ব্যবহার করে শত্রু অঞ্চলের অভ্যন্তরে গভীর অনুপ্রবেশ আক্রমণ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতায় কৌশলগত প্রভাব তৈরিতে অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অ্যাপাচের মতো রোটারি-উইং এয়ারক্রাফ্ট – যা ভারত পরিচালনা করে – গভীর স্ট্রাইক মিশনের জন্য প্রস্তুত। ২০০৩ সালের দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকি স্থলভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা গোলাবারুদের মুখোমুখি হওয়ার সময় সেগুলি বহুলাংশে কম কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল। যদি পাকিস্তান বা চিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় অ্যাপাচের কোনও ভূমিকা থাকে, তা হলে এটি সম্ভবত স্থলবাহিনীর জন্য ঘনিষ্ঠ বিমান সহায়তার সঙ্গে জড়িত একটি পুনরুদ্ধার ভূমিকা বা মিশনে সম্পৃক্ত থাকবে।

ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ ফিক্সড-উইং এবং রোটারি-উইং বিমানের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী প্রভাব-সহ স্বল্প পরিসরের বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র এবং ছোট অস্ত্রের ব্যবহার করেছে। অন্য দিকে, ইউক্রেনীয়রা এখনও অনেক কিছুই অর্জন করতে পারেনি। কারণ তারা স্থলবাহিনীকে সমর্থন জোগাতে এবং যুদ্ধের শক্তি রক্ষা করতে তাদের বিমান সম্পদ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, কোনও পক্ষই বায়ু ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারেনি। গভীর অনুপ্রবেশকারী স্ট্রাইক ক্ষমতাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করার পরিবর্তে, কাউন্টার-আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেম তৈরি করে ভারত যথেষ্ট উপকৃত হতে পারে, যা প্রতিপক্ষের বাধার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বৃহত্তর সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা, যা যুদ্ধের নেটওয়ার্ক ও উপাদানগুলিকে সমন্বিত ও আন্তঃপ্রক্রিয়াযোগ্য করে কৌশলগত হিংস্রতাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।

ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ ফিক্সড-উইং এবং রোটারি-উইং বিমানের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী প্রভাব-সহ স্বল্প পরিসরের বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র এবং ছোট অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাবিদদের যে পঞ্চম সমস্যাটি বিবেচনা করতে হবে, তা বায়ু সংক্রান্ত এবং এর পাশাপাশি উভচরে ব্যাপ্ত মিশনগুলি শত্রু দ্বারা প্রাণঘাতী হামলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং অতীতের অভিজ্ঞতা এ কথাই প্রমাণ করে যে, বায়ু সংক্রান্ত এবং উভচর পরিসরে ব্যাপ্ত অভিযানগুলি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপুল সম্পদসাপেক্ষ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে হোস্টোমেল বিমানবন্দর দখল করার চেষ্টায় রুশ বিমানবাহী বাহিনী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। উভচর এবং বিমানবাহিনী অতীতের ধ্বংসাবশেষ না-ও হতে পারে, তবে তাদের অবশ্যই নির্বাচনী এবং নির্দিষ্ট মিশনে ব্যবহার করা উচিত। ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতীয় বাহিনীর লড়াই চালানো এবং প্রাণঘাতী আক্রমণের ক্ষমতা অর্জন করা।

সর্বোপরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইতিমধ্যেই ইউক্রেন সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধেও তা করবে বলে আশা করা যায়। অ্যাপ্লিকেশনটি ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটিয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী বাখমুটে যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ ইউনিটের সঙ্গে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের মোতায়েন করে বিধ্বংসী প্রভাবের পাশাপাশি এআই-কে ব্যবহার করেছে।

প্রকৌশলীরা তাঁদের লক্ষ্য-অধিগ্রহণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অ্যালগরিদমের ফাংশনগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছেন, যাঁরা কমান্ডারদের ধ্বংসের জন্য রুশ বাহিনীকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। এই এআই অ্যাপ্লিকেশনটি রূপান্তরিত হচ্ছে। কারণ এআই ধ্রুবক ডেটা ইনপুটের উপর নির্ভরশীল। একটি চিরাচরিত পদ্ধতিতে আক্রমণের পরে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন থেকে অর্জিত তথ্য একটি ডিজিটাল নেটওয়ার্কে পূরণ করা হয় এবং ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক মডেলকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। ইউক্রেনীয়রা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর জন্য স্যাটেলাইট ইন্টেলিজেন্স এবং এআই যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত সেন্সর তথ্যের সংমিশ্রণ ব্যবহার করেছে। এআই রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর টিকে থাকার ক্ষমতাকেও বাড়িয়েছে।

ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলি, বিশেষত ভারতীয় সেনাবাহিনীর, বর্তমানে লক্ষ্য সুস্পষ্ট হয়েছে। বিকল্প হিসাবে নয়, দেশটিকে গোলাবারুদ-নিবিড় ক্ষমতার সূচনাকারী হিসাবে উদীয়মান প্রযুক্তি প্রয়োগ করার পাশাপাশি রণসজ্জা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং আর্টিলারি সক্ষমতায় বিনিয়োগ করতে হবে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti is a Senior Fellow with the Strategic Studies Programme. Kartik specialises in space military issues and his research is primarily centred on the ...

Read More +