Author : Harsh V. Pant

Published on Nov 14, 2024 Updated 0 Hours ago
এলএসি চুক্তি: চিনের কথা আর কাজে কি আদৌ মিল থাকবে?

Image Source: Getty

আপাতত এবং প্রায় সর্বতোভাবেই ভারত চিন তাদের বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলস্বরূপ, রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যা সম্ভাব্য ভাবে চার বছরের দীর্ঘ সামরিক সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়েছে এবং দুই প্রতিবেশী পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর টহল দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে যার লক্ষ্য হল যুদ্ধ থেকে নিজেদের বিরত রাখা।’

দুই দেশের সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যেই পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকার ছটি সংঘর্ষ বিন্দুর মধ্যে চারটি বিন্দু থেকে পিছিয়ে এসেছে। ২০২০ সালের জুন মাসে গলওয়ানে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ চুক্তিটি ছিল ডেপসাং এবং ডেমচোক এলাকায় টহল দেওয়া সংক্রান্ত। এর পর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিশ্চিত করেছেন, সীমান্ত টহল সংক্রান্ত চুক্তিটি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ‘চিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।’

এক দীর্ঘ দ্বন্দ্ব

দুই শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ২০২০ সালের মে মাস থেকে প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। নয়াদিল্লি স্পষ্ট বলেছে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর পরিস্থিতি ২০২০ সালের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোনও স্বাভাবিকীকরণ সম্ভব নয়। ১৯৬২ সালে চিনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের পর সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ ঘটে ২০২০ সালের ১৫ জুন। এই সংঘর্ষের ফলে ভারতের ২০ জন সেনার মৃত্যু হয় এবং পিএলএ-র ৪০ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। যদিও চিন মাত্র চার জন চিনা সৈন্যের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

চিনের সহিংস মনোভাব এক অভূতপূর্ব ভারতীয় সংকল্পের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ সমগ্র সরকারের সামগ্রিক মনোভাব নয়াদিল্লিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত না থাকার এক নবলব্ধ সদিচ্ছা প্রদান করেছে।

এটি চিনের প্রতি ভারতীয় নীতির পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিককে আকার প্রদানকারী বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক মন্থনের ক্ষেত্রে একটি বড় ইনফ্লেকশন পয়েন্ট বা বিচ্যুতি বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নয়াদিল্লি নাটকীয় ভাবে বেজিংয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে তার সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেছে এবং চিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে সংঘবদ্ধ হয়েছে। বৈদেশিক নীতি থেকে অর্থনীতি, অবকাঠামো থেকে মানুষের সঙ্গে মানুষে সম্পৃক্ততাপুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং এর ফলে পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। চিনের সহিংস মনোভাব এক অভূতপূর্ব ভারতীয় সংকল্পের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ সমগ্র সরকারের সামগ্রিক মনোভাব নয়াদিল্লিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত না থাকার এক নবলব্ধ সদিচ্ছা প্রদান করেছে।

ভারত এখন আরও বেশি করে প্রস্তুত

এবং নয়াদিল্লির এই সংকল্পই সম্ভবত অসম্পৃক্ততার চুক্তিকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করেছে। এখনও অনেক বিষয় গোপনীয়তার আড়ালে রয়েছে এবং নতুন চুক্তির বিশদ বিবরণ প্রকাশ্যে এলেই সেগুলি সামনে আসবে। ভারত যেহেতু স্থিতাবস্থায় ফিরে আসার জন্য উপায় খুঁজছে, তাই চিন ভারতের সঙ্গে সীমান্তে যে বিশাল পরিকাঠামো তৈরি করেছে তা দ্রুতই বদলে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলস্বরূপ, ভারত অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে মিলে কাজ করতে সক্ষম হবে। সুতরাং, ২০২০ সালের মে মাসের পূর্ববর্তী সময়ের বিপরীতে হেঁটে, সীমান্তে ভারতীয় লজিস্টিক উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং আশা করা যায় সীমান্তকে কেন্দ্র করে ভারতীয় অঞ্চলে ভারতের নিজস্ব অবকাঠামো গড়ে তুলতে কোনও বাধা দেওয়া হবে না।

বারংবার চুক্তির লঙ্ঘন এমন এক নতুন বাস্তবতার দিকে চালিত করেছে যেখানে চিনের সঙ্গে যে কোন নতুন চুক্তি সাধারণ ভারতীয়দের চোখে আর মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের কাজ আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে

অন্য সমস্যাটি বর্তমানে ভারতে চিনের ভাবমূর্তি সংক্রান্ত। কূটনৈতিক স্তরে যা-ই হোক না কেন, বাস্তবতা হল এই যে, বেজিংয়ের প্রতি বিশ্বাস যা তলানিতে ঠেকেছিল, তা কেবল ভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকেই নয়, বরং সামগ্রিক ভাবে সমাজ থেকেই সম্পূর্ণ রূপে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। চিনকেই সেই আস্থার পুনর্নির্মাণ করতে হবে এবং কথার মাধ্যমে নয়, কাজের মাধ্যমে এমনটা করা জরুরিবারংবার চুক্তির লঙ্ঘন এমন এক নতুন বাস্তবতার দিকে চালিত করেছে যেখানে চিনের সঙ্গে যে কোন নতুন চুক্তি সাধারণ ভারতীয়দের চোখে আর মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের কাজ আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি, ডোকলাম পরাজয়ের পরে উহান উদ্যম’ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুধু মাত্র গলওয়ানের দিকেই চালিত করেছে।

চিন কি ভারতকে সহযোগী হিসেবে মেনে নিতে পারবে?

সর্বোপরি, সাম্প্রতিক চুক্তিটি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠনের সূচনা বিন্দু হলেও সীমান্ত সমস্যাটি চিন-ভারত সম্পর্কের সামনে আরও একটি বৃহত্তর সমস্যাকে তুলে ধরেছে। দু উদীয়মান শক্তি এখন কাঠামোগত ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ভারতকে সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করতে বা নয়াদিল্লির মূল নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল হতে চিনের অক্ষমতা দু এশীয় মহাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই সর্বশেষ চুক্তি সেই বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না।

দু উদীয়মান শক্তি এখন কাঠামোগত ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ভারতকে সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করতে বা নয়াদিল্লির মূল নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল হতে চিনের অক্ষমতা দু এশীয় মহাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

বৃহত্তর ভাবে ভারতীয়দের জন্য, এই প্রশ্নটি এখনও যুক্তিসঙ্গত যে, চিন সীমান্ত বিরোধের বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধানে আদৌ পৌঁছতে আগ্রহী না কি এটি নিছকই সময় অতিবাহিত করার আর কটি কৌশলী প্রয়াস? কারণ চিন এবং ভারত উভয়ই আন্তর্জাতিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় শ্রেণিবিন্যাসে তাদের উত্থান বজায় রেখেছে। তা সত্ত্বেও, যা স্পষ্ট তা হল চিনের সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলা করার নয়াদিল্লির সংকল্প ফলপ্রসূ হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক চুক্তির পরে ভারত চিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও এ কথা মনে রাখা জরুরি যে এক সম্ভাব্য ক্ষতিকর চিনকে কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অন্তর্নিহিত দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাহ্যিক অংশীদারিত্বকে কাজে লাগানো ব্যতীত অন্য কোনও বিকল্প নেই।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.