Published on Feb 15, 2024 Updated 0 Hours ago

রায়েল-হামাস যুদ্ধের বিষয়ে স্টারমারের অবস্থান তাঁর নেতৃত্ব নির্বাচনী সম্ভাবনার জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে চাপের মুখে লেবার পার্টি

বেশ কিছু দিন আগে এ কথা সুনিশ্চিত বলে মনে হয়েছিল যে, লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমার ২০২৫ সালের শুরুর দিকে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রাইম মিনিস্টার হবেন। ক্ষমতাসীন টোরিদের তুলনায় ভোটে লেবার পার্টি ১৮ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার দরুন স্টারমার ১৩ বছরব্যাপী রক্ষণশীল শাসনের পরে দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু দ্বীপদেশটি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে ঘটা একটি সংঘাত স্টারমারের নেতৃত্ব নির্বাচনী সম্ভাবনার জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে।

অক্টোবর ইরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলা ১৪০০-রও বেশি ইরায়েলি নিহত হন। এর প্রত্যুত্তরে গাজারায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় কমপক্ষে ১২০০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়, যা ব্রিটেনের লেবার পার্টির অভ্যন্তরে তথা বিশ্বব্যাপী গুরুতর বিভাজন সৃষ্টি করেছে।

 

বিরতি না কি যুদ্ধবিরতি?

রায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি স্টারমারের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে তাঁর অস্বীকৃতি লেবার পার্টির মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান প্রাইম মিনিস্টার ঋষি সুনাক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো স্টারমার যুদ্ধে মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন, যা গাজায় অত্যধিক প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহ করতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করবে।

যাই হোক, যে কোনও যুদ্ধবিরতি মূলত সংঘাতকে স্থবির করে দেবে এবং হামাসকে ইজরায়েলের উপর ফের হামলা চালানোর জন্য নিজেদের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখতে সাহায্য করবে… স্টারমারের এ হেন দাবি তাঁর দলের মধ্যেই বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। বিবিসি-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এবং গ্রেটার ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বারহামের মতো লেবার পার্টির বিশিষ্ট সদস্য-সহ অন্তত ৫০ জন লেবার পার্টির এমপি এবং ২৫০ জন কাউন্সিলর অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি সমর্থন করেছেন। ইমরান হোসেনের মতো শ্যাডো মিনিস্টাররাও পার্টির অবস্থানের নিরিখে নিজেদের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) দ্বারা যুদ্ধবিরতি সমর্থন করার জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করার সময় এ হেন পরিস্থিতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যেখানে প্রথম সারির ১০ জন নেতাকে – যাঁরা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন লেবার পার্টি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয় প্রস্তাবটি ২৯৩ ভোটের তুলনায় ১২৫টি ভোট পেয়ে পরাজিত হলেও প্রস্তাবটিকে লেবার পার্টির সদস্যরা দৃঢ় সমর্থন জুগিয়েছিলেন। ১৯৮ জনের মধ্যে ৫৬ জন প্রস্তাবের পক্ষে এবং পার্টি স্টারমারের ঘোষিত অবস্থানের বিরুদ্ধে ভোট দেন এবং এই ক্ষোভ প্রকাশ করে যে, দলীয় নেতৃত্বের ‘নৈতিক দিশা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’

 

অক্টোবর ইরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলা ১৪০০-রও বেশি ইরায়েলি নিহত হন। এর প্রত্যুত্তরে গাজারায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় কমপক্ষে ১২০০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়, যা ব্রিটেনের লেবার পার্টি-সহ বিশ্বব্যাপী গুরুতর বিভাজন সৃষ্টি করেছে।

 

সমস্যাটি শুধু এই নয় যে স্টারমারের অবস্থান তাঁর দলের বেশ কয়েকজন সদস্যের তুলনায় আলাদা, সেটি লেবার পার্টির মূল নীতিগুলি অর্থাৎ যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার সঙ্গে একটি আপস বলে মনে করা হয়। এই নীতিগুলি প্যালেস্তাইনের জন্য এক স্বাধীন রাষ্ট্র, ন্যায়বিচার মানবাধিকারের প্রগতিশীল কারণগুলিতে নিহিত। স্টারমারের দৃষ্টিভঙ্গি – যিনি নিজে একজন মানবাধিকার আইনজীবী বামপন্থী জেরেমি করবিনের তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত। করবিন প্রায়শই ইহুদি-বিরোধিতার জন্য অভিযুক্ত ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি অস্বাভাবিক খারাপ ফলাফল করেছিল।

টোরিদের তুলনায় লেবার পার্টির বিপদ বেশি। টোরিদের বিপরীতে লেবার পার্টির সমর্থনের ভিত্তি হল মুসলিম জনসংখ্যা এবং উদার বামপন্থী মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা লেবার পার্টির সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্রায় তিন লক্ষ বিক্ষোভকারী লন্ডনব্যাপী মিছিলে নামার পরে এ কথা স্পষ্ট যে, লেবার পার্টির প্রতি সমর্থন ক্রমশ কমছে। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৬৪ শতাংশ মুসলমান লেবার পার্টিকে ভোট দিতে পারেন, যা কিনা ২০১৯ সালের ৭১ শতাংশের তুলনায় কম। মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় স্টারমার এমন এক অস্বস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের তুলনায় বিরোধীদের আরও বেশি করে জবাবদিহি করতে হতে পারে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি কিন্তু এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পেরেছে।

 

ব্লেয়ারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি থেকে শিক্ষা?

 

গাজায় সংঘাতের মাত্রাতিরিক্ত মানবিক মূল্য এবং ইরায়েলি সামরিক পদক্ষেপের বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে একটি যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করা সম্ভবত প্রাথমিক ভাবেই অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং এর ফলে সরকারগুলি নীতি পরিবর্তন করার জন্য চাপের মুখে পড়তে পারে।

 

পরিহাসের বিষয় হল এই যে, যুদ্ধবিরতির আহ্বান নিয়ে লেবার পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকার সময় কাতারের মধ্যস্থতায় ইরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি সফল হওয়ার পাশাপাশি গাজায় বন্দি ও আটকদের দু’তরফা আদানপ্রদানের পর্ব শুরু হয়েছে।

কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনস-এর রিচার্ড হাসের মতো বিশেষজ্ঞরা হামাসকে নির্মূল করার ইরায়েলের রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যকে অসম্ভব বলে মনে করেন, যা সরকারগুলির জন্য বিপুল পারিপার্শ্বিক ক্ষতি-সহ অসম্ভব লক্ষ্যকে সমর্থন করার কাজটি কঠিন করে তোলে। গাজায় সংঘাতের মাত্রাতিরিক্ত মানবিক মূল্য এবং ইরায়েলি সামরিক পদক্ষেপের বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে একটি যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করা সম্ভবত প্রাথমিক ভাবেই অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং এর ফলে সরকারগুলি নীতি পরিবর্তন করার জন্য চাপের মুখে পড়তে পারে।

এখন থেকে পরবর্তী ব্রিটিশ সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অন্তত এক বছর সময় থাকা সত্ত্বেও ইরায়েল-প্যালেস্তাইন প্রসঙ্গটির আবেগ এমনই জোরদার হয়ে উঠেছে যে, স্টারমারের আজকের অবস্থান ২০২৫ সালে লেবার পার্টির নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। পদত্যাগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, এমনকি লেবার পার্টির নেতৃপদ থেকে স্টারমারের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা ব্রিটিশ রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টারমারকে আরও কার্যকর ভাবে দলীয় বিভাজন রুখতে হবে, যাতে তাঁর ভাগ্য পূর্ববর্তী লেবার সরকারগুলির মতো না হয়, যাঁদের সব কৃতিত্বই ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কালো ছায়ায় ঢেকে গিয়েছিল।


শায়েরী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.