সেপ্টেম্বর মাসে জি২০-তে যোগদানের জন্য আফ্রিকান ইউনিয়নকে (এইউ) আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগে ভারত সফল হওয়ার পরপরই আফ্রিকান নেতারা দু’বার রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে আসেন। প্রথম সফরটি হয় অক্টোবর মাসে, যখন তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান ভারতে আসেন এবং তার পরে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ৪-৫ ডিসেম্বর এ দেশে সফর করেন। দুই দেশের সম্পর্কে হাজার ইতিহাস থাকলেও এ বছর ভারত এবং কেনিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকী।
ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিটে তানজানিয়া ও কেনিয়া উভয়ই ছিল উত্সাহী অংশগ্রহণকারী দেশ। তানজানিয়া হল ভারতের সেই বন্ধু, যে উন্নয়নমূলক সহযোগিতার একটি কার্যকরী ব্যবহারকারী এবং ঋণের বিন্যাসের (এলওসি) সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীদের অন্যতম। কেনিয়া বর্তমানে ভারতের কৌশলগত অংশীদার এবং ভারতীয় ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান করে। অন্য দিকে কেনিয়া ভারতের এক পুরনো অংশীদার হয়েছিল মূলত মানুষে-মানুষে এবং ব্যবসায়িক সংযোগের ভিত্তিতে। উগান্ডা, তানজানিয়া এবং কেনিয়ার মতো তিনটি পূর্ব আফ্রিকার দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ভাবে সবচেয়ে নিরুৎসাহী ছিল কেনিয়া। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট (এনএএম) শীর্ষ সম্মেলনের জন্য উগান্ডায় ভারতের তরফে সফর প্রত্যাশা করা যায়।
তানজানিয়া হল ভারতের সেই বন্ধু, যে উন্নয়নমূলক সহযোগিতার একটি কার্যকরী ব্যবহারকারী এবং ঋণের বিন্যাসের (এলওসি) সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীদের অন্যতম। কেনিয়া বর্তমানে ভারতের কৌশলগত অংশীদার এবং ভারতীয় ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান করে।
রুটোর ভারত সফর বিভিন্ন দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। গত ছ’বছরে কেনিয়ার কোনও প্রেসিডেন্ট এই প্রথম ভারত সফর করলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৬ সালে তানজানিয়া ও কেনিয়া সফর করেছিলেন। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা এবং প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার রাইলা ওডিঙ্গা… উভয়েই ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে সংযোগের কারণে ভারতের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবাপন্নই ছিলেন। কেনিয়াত্তার অধীনে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট রুটোর ভারত বা প্রবাসীদের সঙ্গে কোনও পরিচিতি ছিল না। তিনি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত সফর করেননি।
প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর প্রথম বছরে তাঁর করা ৩৮টি বিদেশ সফর দেশের অভ্যন্তরে এই সমালোচনারই ঝড় তোলে যে, তিনি কেনিয়ার ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিকে উপেক্ষা করছেন। রুটো নিজেকে আফ্রিকার তরফে একজন স্পষ্টভাষী নেতা বলে মনে করেন। বিশেষ করে জলবায়ু এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির সংস্কার সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সরব হয়েছেন। তিনি এইউ-এর কমিটি অফ আফ্রিকান হেডস অব স্টেট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (সিএএইচওএসসিসি) সভাপতিত্ব করেন এবং সেপ্টেম্বর মাসে আফ্রিকা জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এত দিন ধরে শুধু মাত্র রাষ্ট্রপুঞ্জ পরিবেশ কর্মসূচি বা ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) একটি অকার্যকর সদর দফতর হিসেবে পরিচিত কেনিয়ার পরিচিতিই বদলে দেন রুটো। দুবাইতে কপ২৮-এ শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর না করে এবং আফ্রিকার জন্য একটি গঠনমূলক পথ সন্ধানের উদ্দেশ্যে আফ্রিকান কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠায় তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ভারত যা চায়, কেনিয়া তার অনুরূপ এবং কেনিয়ার অবস্থান ভারতীয় জি২০ উদ্যোগের সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ।
এত দিন পর্যন্ত কেনিয়া আন্তর্জাতিক সৌর জোটের বা ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের (আইএসএ) অংশ ছিল না। সফরের সময় রুটোর জলবায়ু সংক্রান্ত আগ্রহের কারণে কেনিয়া আইএসএ এবং বায়োফুয়েলস অ্যালায়েন্সে যোগদান করেছে। ভারতে চিতা সংক্রান্ত নানাবিধ উদ্যোগমূলক কাজে যোগদান-সহ বিগ ক্যাটস অ্যালায়েন্সে কেনিয়ার যোগদান ও কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা দুর্যোগ প্রতিরোধী পরিকাঠামো সংক্রান্ত জোটের জন্ম হতে পারে। ভারতীয় উদ্যোগের প্রতি এটি কেনিয়ার ইতিবাচক মনোভাবকেই দর্শায়।
কেনিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক। ভারতীয় প্রবাসীরা এ ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এই অঞ্চলে কেনিয়ার অর্থনৈতিক পরিবেশই সর্বোৎকৃষ্ট। কেনিয়াতে ৬০টি ভারতীয় এফডিআই প্রকল্প সফল হয়েছে। কেনিয়া ব্যাঙ্কিং এবং উত্পাদন সংস্থাগুলিরও কেন্দ্রস্থল, যা আঞ্চলিক বাজারের সন্ধান চালায়। কেনিয়ার উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বাজারের আকার এবং ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি দেশটিকে বর্ধিত পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মেরুর অবস্থান প্রদান করেছে। ভারতীয় সংস্থাগুলি কেনিয়াকে কাজ করার জন্য একটি দরকারি দেশ বলেই মনে করে। ভারত-কেনিয়া বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম; বেশির ভাগই ভারতীয় পেট্রোলিয়াম পণ্য, ওষুধ, যানবাহন ও প্রকৌশল সামগ্রী কেনিয়ায় রফতানি করা হয়। কেনিয়া থেকে ভারতে মূলত সোডা অ্যাশ এবং কৃষিজাত পণ্য আমদানি করা হয়। কেনিয়া একটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) নয় এবং শুল্ক-মুক্ত ট্যারিফ বিকল্প বা ডিউটি-ফ্রি ট্যারিফ প্রেফারেন্স (ডিএফটিপি) প্রকল্পের সুবিধা পায় না। যাই হোক, ভারতে সফর করার সময় ভারতীয় বাজারে কেনিয়াজাত অ্যাভোকাডোর প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করেছেন রুটো।
কেনিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক। ভারতীয় প্রবাসীরা এ ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এই অঞ্চলে কেনিয়ার অর্থনৈতিক পরিবেশই সর্বোৎকৃষ্ট। কেনিয়াতে ৬০টি ভারতীয় এফডিআই প্রকল্প সফল হয়েছে। কেনিয়া ব্যাঙ্কিং এবং উত্পাদন সংস্থাগুলিরও কেন্দ্রস্থল, যা আঞ্চলিক বাজারের সন্ধান চালায়।
চিরাচরিত ভাবে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদার মতো ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি কেনিয়ার সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে ভারতের এক্সিম ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি শাখা খুলতে চলেছে কেনিয়াতেও। এই অফিসটি ২০১০ সালে ইথিওপিয়াতে খোলা হয়েছিল, যেটি তখন ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট বা ঋণ বিন্যাসের (এলওসি) বৃহত্তম সুবিধাভোগী ছিল এবং ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিকে স্বাগত জানিয়েছিল। তার পর থেকে ইথিওপিয়ায় গৃহযুদ্ধ-সহ অনেক পরিবর্তনই ঘটেছে। বরং এর বিপরীতে কেনিয়া স্থিতিশীলতার আলোকবর্তিকাসম। তাই এক্সিম ব্যাঙ্কের নাইরোবিতে শাখা খোলাই ভারতের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। স্থানীয় এবং বিদেশি ব্যাঙ্কগুলির শাখা খোলার পাশাপাশি তা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে কোমেসা অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যাঙ্ক ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (টিডিবি) সঙ্গে সংযুক্ত হবে। টিডিবি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগের জন্য এক্সিম ব্যাঙ্কের ঋণ বিন্যাস ব্যবহার করে। এই পদক্ষেপটি ভারতের এক্সিম ব্যাঙ্ককে পূর্ব আফ্রিকায় বিনিয়োগ করতে এবং ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য ঋণ ও ইক্যুইটি সমর্থন প্রসারিত করার অনুমতি দেবে। ‘দ্য হারাম্বি ফ্যাক্টর’ নামের একটি সাম্প্রতিক বইতে ভারতীয় সংস্থাগুলির এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, আফ্রিকায় নতুন এফডিআই খুলতে আগ্রহী ভারতীয় সংস্থাগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল পূর্ব আফ্রিকা এবং বিশেষ করে কেনিয়া।
তানজানিয়ার বিপরীতে কেনিয়া ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি এফডিআই-নেতৃত্বাধীন মডেল অনুসরণ করে চলে। কেনিয়া ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ভাবট্রন ব্যতীত বরাদ্দকৃত অনুদান প্রকল্পগুলি ব্যবহার করেনি। আইএএফএস ১ ও ২-এর অধীনে বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলিরও ব্যবহার করা হয়নি। কেনিয়া প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্ক প্রজেক্টে (পিএইএনপি) যোগ দেয়নি, যা গত এক দশক যাবৎ ৪৭টি দেশে ব্যাপ্ত রয়েছে। কেনিয়া খুব কমই এলওসি বা ঋণ বিন্যাসের ব্যবহার করেছে। কারণ কেনিয়ার মনোযোগ প্রাথমিক ভাবে পশ্চিমী দেশগুলি ও গত দুই দশক ধরে চিনের প্রতিই নিবিষ্ট থেকেছে।
কেনিয়াকে প্রদত্ত পূর্ববর্তী এলওসিগুলির দিকে তাকালে বোঝা যাবে, কেনিয়ার এসএমই-কে দ্বি-স্তরীয় ঋণের জন্য দেওয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সুবিধা ছাড়া অন্যান্য বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গিয়েছে। শুধু মাত্র ২০১৬ সালে রিভাটেক্স টেক্সটাইল মিলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ২৯.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এলওসি গ্রহণ করে কেনিয়া তার দ্রুত ব্যবহার করে। তবে মনে করা হচ্ছে, বর্তমানে সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। কেনিয়া উচ্চ হারে ঋণ নিয়েও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করারই প্রত্যাশী, যেহেতু কেনিয়া কোনও এলডিসি বা এইচআইপিসি নয়। কেনিয়া একটি বৃহৎ পরিমাণের এলওসি-র অনুরোধ করেছে এবং তাদের কৃষিখাতকে উন্নত করার জন্য ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি রুটোর অধীনে একটি সুচিন্তিত প্রস্তাব, যিনি বটম আপ ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন অ্যাজেন্ডার (বিইটিএ) উপর মনোযোগ দেন। এ ক্ষেত্রে কৃষি এবং ডিজিটাল অর্থনীতি দুটোই মনোযোগের বিষয়। সফরে আসার সময় রুটোর সঙ্গে তিনটি কাউন্টির গভর্নরও ভারতে এসেছিলেন। ফলে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাঁরা এই এলওসি ব্যবহার করে তৃণমূল স্তরে কৃষির আধুনিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণের দিকে মনোনিবেশ করছেন।
এ কথাও মনে রাখা জরুরি যে, গত কয়েক বছরে এলওসি ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যেখানে এলওসি প্রস্তাব করা দেশগুলি মূলত ঋণের চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত তা প্রদানই করেনি। কেনিয়ার একটি এলওসি অনুরোধ এলওসি ব্যবস্থায় নতুন জোয়ার এনেছে। এখন দেখার বিষয় এই যে, ২০১৫ সালের কঠোর নির্দেশিকা বিশেষ করে টেন্ডারিং এবং এক্সিম ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিরীক্ষণ এটিকে ফলপ্রসূ করে তোলে কি না।
চিরাচরিত ভাবে শিক্ষা ভারত ও কেনিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। কিছু ক্ষেত্রে বৃত্তি পেয়ে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেসরকারি ভাবে ৩৫০০ কেনিয়ার ছাত্র ভারতে পাঠরত। এই বৃত্তিগুলি এখন সংখ্যায় ৪৮ থেকে ৮০-তে পরিণত হয়েছে। কেনিয়ার আইটিইসি প্রোগ্রাম, রমন সায়েন্স ফেলোশিপ এবং এগ্রিকালচারাল ফেলোশিপের ব্যবহার গড়ের তুলনায় বেশি।
যদি কৃষি প্রকল্পগুলি শুরু হয়, তবে সেই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত আইটিইসি অবস্থানগুলিকে কাজে লাগানো যাবে, যা এই প্রকল্পগুলির সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
কেনিয়া প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্ক প্রকল্পে যোগ না দিলেও ভার্চুয়াল শিক্ষায় তার ধারাবাহিক আগ্রহ রয়েছে। রুটোর সফরের সময় ইগনু এবং কেনিয়ান ওপেন ইউনিভার্সিটির মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি এ বিষয়ে এক ইতিবাচক লক্ষণ। ইগনু-র সামনে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে সফল করে তোলার বিষয়টি নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং হবে। পিএএনইপি-এর ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে কোনওটিই সেই সুযোগটিকে বাণিজ্যিক স্তরে রূপান্তরিত করতে পারেনি।
উগান্ডা এবং তানজানিয়ার বিপরীতে ভারতের সঙ্গে কেনিয়ার প্রতিরক্ষা সম্পৃক্ততা তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। কেনিয়া ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্রেতা নয়। কেনিয়া ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক ও সাগর কৌশলগুলিতে সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয় এড়িয়ে গিয়েছে। তবে বর্তমান সফরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিমূলক বিবৃতি বেশ এক অগ্রগতিমূলক পদক্ষেপ। কেনিয়া ভারত মহাসাগরে সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে ভারত ও কেনিয়াকে একটি নতুন পথের দিশা দেখিয়েছে, যা দুই দেশকে সঙ্ঘবদ্ধ করে। ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতি, এইচএডিআর এবং অপ্রথাগত হুমকির বিষয়ে ভারতীয় ও কেনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে অভিন্ন সাধারণ স্বার্থ রয়েছে, যেগুলিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। দুই দেশ বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার জন্য আইওআরএফ এবং জিবুতি কোড অফ কন্ডাক্ট-এর মতো নানা প্রতিষ্ঠান এবং সাধনীকে ব্যবহার করার কথা ভাবছে। ভারত ও কেনিয়া উভয়েই এই দুই জোটের অংশীদার। কেনিয়া গত দু’বছরে ভারত-আফ্রিকান মহড়া এবং সামরিক কনক্লেভে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে কেনিয়া ভারতের পূর্ব উপকূলে বহুপাক্ষিক মিলন-এ অংশগ্রহণ করতে পারে। এটি সম্ভবত রুটোর সফরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ফলাফল।
ভারতের প্রতি কেনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গিয়েছে এবং রুটোর সফরের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে। স্বাক্ষরিত চুক্তি, যৌথ বিবৃতি ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিমূলক বিবৃতি আরও কৌশলগত পরিবেশকেই তুলে ধরে। অনেকেই মনে করতে পারেন যে, কেনিয়া চিনের নাগপাশ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। কেনিয়া তার অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্যের সন্ধান করছে এবং আন্তর্জাতিক পুনর্বিন্যাসের বর্তমান পর্যায়ে ভারতকে একটি বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার বলে মনে করে। ভারতের গ্লোবাল সাউথ দৃষ্টিভঙ্গি, জি২০-তে সফল নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণে ডিজিটাল প্রভাব… সব কিছুই কেনিয়ার নেতৃত্বকে মুগ্ধ করেছে, যাঁরা বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার এক নতুন কাঠামোর মুখাপেক্ষীও বটে।
গুরজিৎ সিং জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, আসিয়ান এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের ভারতীয় অ্যাম্বাস্যাডর। তিনি এশিয়া আফ্রিকা গ্রোথ করিডোরের (এএজিসি) সিআইআই টাস্ক ফোর্সের সভাপতিও।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.