মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে যুদ্ধের রেখা শুধু রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিভাজনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়নি, তারা এমন একটি যুগ সংজ্ঞায়িত করার লড়াই শুরু করতে প্রস্তুত হয়েছে যা উভয় পক্ষই চেয়েছিল৷ ডেমোক্র্যাটরা ২০২৪ সালের নির্বাচনকে জাতির আত্মার লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা তাদের প্রকল্প ২০২৫ চালু করেছে, যা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যে শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়া যথেষ্ট নাও হতে পারে, বরং যা প্রয়োজন তা হল আমেরিকাকে 'উগ্র বামপন্থী'দের কবল থেকে বাঁচানো। ঠিক যখন ডেমোক্র্যাট বনাম রিপাবলিকান বিভাজন, যথাক্রমে বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রতিনিধিত্বে, বিশাল আমেরিকান বিভাজনকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত প্রতীকী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল,সেই সময়ই বাইডেন প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে সরে গিয়েছেন এবং পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন। সিদ্ধান্তটি বেশ আশ্চর্যজনকভাবে এসেছিল, বিশেষত যেহেতু বাইডেন তাঁর দল থেকে পদত্যাগের ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেও দৌড়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সর্বোপরি, বাইডেন তার ঘোষণার কয়েক মিনিট মাত্র আগে তাঁর কর্মীদের কাছে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।
এই সিদ্ধান্তটি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্টের দৌড়ে ঠেলে দিয়েছে। ফলে হঠাৎ করেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে হ্যারিসের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে হুড়োহুড়ি করতে হচ্ছে। তাঁর সর্বজনীন অনুমোদনের আগে কমলাকে বাইডেনের প্রতিস্থাপনের জন্য একজন শক্তিশালী মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বিবেচনা করা হয়নি, এবং তাঁর প্রার্থিপদ তাঁর অভিবাসন ও বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো নির্দিষ্ট পোর্টফোলিওগুলি পরিচালনা করার জন্য সমালোচনার মধ্যে রয়ে গেছে। যাই হোক, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, তিনি ছয় গভর্নর সহ মূল ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন অর্জন করেন।
এই সিদ্ধান্তটি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্টের দৌড়ে ঠেলে দিয়েছে। ফলে হঠাৎ করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে হ্যারিসের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে হুড়োহুড়ি করতে হচ্ছে।
কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্টের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যা তিনি গ্রহণ করেছেন। তাঁর অনুমোদনের পরে তাঁর প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিতিতে, তিনি বাইডেনের উত্তরাধিকারের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ভাষণ শুরু করেছিলেন। হ্যারিস অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, এবং তিনি কীভাবে সে সবের মোকাবিলা করবেন তা সম্ভবত তাঁর প্রেসিডেন্টের প্রচারণার পথ ও নির্বাচনের ফলাফলকে সংজ্ঞায়িত করবে। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে প্রথম বাধা অতিক্রম করেছেন। হ্যারিসের একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা প্রার্থী হওয়ার সুবিধা রয়েছে, যিনি তাঁর প্রতিপক্ষের চেয়ে প্রায় দুই দশকের ছোট। ডেমোক্র্যাটরা হঠাৎ করেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বয়স বিতর্কে এবার আক্রমণ রিপাবলিকানদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে । দুই বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ পুরুষের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দৌড় নিয়ে আমেরিকান এবং বিশ্বব্যাপী একঘেয়েমিও শেষ হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে হ্যারিসের একটা সুবিধা রয়েছে যে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে অনেক পিছিয়ে পড়বেন না। তিনি ২৭ জুনের ডিবেট পোল-এ ট্রাম্পের থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিলেন। ডেমোক্র্যাটিক দলের মধ্যেও কমলা হ্যারিস অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থী যেমন গ্যাভিন নিউজম, মিশেল ওবামা এবং পিট বুটিগিগের সঙ্গে তুলনায় সমীক্ষায় এগিয়ে ছিলেন। পরবর্তী পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে, তাঁর তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি ছিল একজন রানিং মেট বেছে নেওয়া, কারণ কিছু রাজ্যে প্রাথমিক ভোট সেপ্টেম্বরে শুরু হবে। ডেমোক্র্যাট জুটিকে শুধুমাত্র আন্তঃদলীয় প্রতিযোগিতা ও রাজনীতির জোয়ার-ভাটা সামাল দিলেই চলবে না, বরং ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটির সম্ভাবনার সঙ্গেও পাল্লা দিতে হবে।
কমলা হ্যারিসের জন্য প্রচারণার ভিত্তি
কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রচারে নতুন শক্তি নিয়ে এসেছেন, এবং সেই সব সম্ভাব্য ভোটারকে জয় করেছেন যাঁরা প্রার্থী হিসাবে বাইডেনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, তিনি মার্কিন নির্বাচনের মূল বিষয়গুলিতে অনন্যভাবে জোর দিয়েছেন — গর্ভপাত, অভিবাসন, জাতি, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও যুবা। এমন এক যুগে যেখানে আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন একটি ক্রমবর্ধমান সংস্কৃতি যুদ্ধের আবহে লড়া হচ্ছে, সেই সময় এই নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার, মহিলা এবং যুবাদের একত্রিত করা কমলার একক সবচেয়ে বড় সুবিধা হতে পারে।
কমলার প্রচারাভিযানটি ট্রাম্পের দুর্বলতা এবং তাঁর নিজের শক্তির উপর ফোকাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং তার বেশিরভাগই হবে সেই মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে যা ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহ্যগতভাবে সমর্থন করে। গর্ভপাতের ইস্যুতে কমলা তরুণ ও মহিলাদের ভোটকে একত্রিত করে প্রো-চয়েস মুভমেন্টের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন। তিনি দেশ জুড়ে গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, এবং ২০২২ সালে বাতিল হওয়া রো বনাম ওয়েড রায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন। তাঁর সুবিধা হল প্র্যাকটিসিং ক্যাথলিক হিসাবে গর্ভপাতের ইস্যুতে জো বাইডেনের ব্যক্তিগত অস্বস্তিকে কমলা অতিক্রম করেছেন।
কমলার প্রচারাভিযানটি ট্রাম্পের দুর্বলতা এবং তাঁর নিজের শক্তির উপর ফোকাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং তার বেশিরভাগই হবে সেই মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে যা ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহ্যগতভাবে সমর্থন করে। গর্ভপাতের ইস্যুতে কমলা তরুণ ও মহিলাদের ভোটকে একত্রিত করে প্রো-চয়েস মুভমেন্টের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে, যা প্রকৃতপক্ষে বিদেশনীতির অনেক সিদ্ধান্তকে নির্ধারণ করতে পারে, কমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁর নীতিগত অবস্থানে তিনি পরিবেশগত ন্যায়বিচারের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন, এবং জলবায়ু, জাতি ও লিঙ্গের বিষয়গুলিকে দক্ষতার সঙ্গে একত্রিত করে বিশেষভাবে অ-শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের উপর এর যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা তুলে ধরেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর সময়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোটাধিকারের জন্য লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, বিশেষত রিপাবলিকান রাজ্যগুলিতে ভোটদানের বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে তাঁর ফোকাস ছিল। জাতিগত ন্যায়বিচার নিয়ে হ্যারিসের প্রচার উচ্চগ্রামে উঠতে পারে, কারণ তিনি ২০২২ সালের কুখ্যাত জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার পরে পুলিশিং আইনে ন্যায়বিচারের দাবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।
ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রচারাভিযান সম্ভবত বাইডেন প্রশাসনের অধীনে হ্যারিসের কাজকর্মের উপর ফোকাস করবে, এবং তাঁরা এই ধারণার উপর জোর দেবেন যে তিনি স্বাভাবিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পরিবর্তে আকস্মিকতাজনিত মনোনয়ন পেয়েছেন। ট্রাম্প প্রচারাভিযান বিশেষভাবে জোর দেবে বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসন নীতির ফাটলের উপর, যেখানে হ্যারিস কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রচারাভিযান সম্ভবত বাইডেন প্রশাসনের অধীনে হ্যারিসের কাজকর্মের উপর ফোকাস করবে, এবং তাঁরা এই ধারণার উপর জোর দেবেন যে তিনি স্বাভাবিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পরিবর্তে আকস্মিকতাজনিত মনোনয়ন পেয়েছেন।
নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে, কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর অপেক্ষাকৃত নিঃশব্দ ভূমিকার ছায়া থেকে উঠে আসার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার পর এটি প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের পক্ষে সুবিধাজনক বলে মনে হয়েছিল, তবে হ্যারিস প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা এনেছেন, যা এই নির্বাচনকে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক প্রেসিডেন্ট প্রতিযোগিতার মধ্যে একটি করে তুলেছে।
বিবেক মিশ্র অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.