Published on Jun 24, 2023 Updated 0 Hours ago

জুনের শুরুতে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের সফর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন সফরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, এবং এবার সেখানে কিছু বড় মাপের ঘোষণা হতে পারে

ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্কের পরবর্তী পর্যায়ের সূচনা

গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন–ভারত সম্পর্কে অবিশ্বাস্য গতি এসেছে, যা মূলত তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের দ্বারা চালিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বড় ধরনের প্রতিরক্ষা অংশীদারি শক্তিশালী করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ৪–৫ জুন ভারত সফর করেন। লক্ষণীয়ভাবে, তাঁর সফরের সময় প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতার আগামী পথ নির্দিষ্ট করতে একটি চুক্তি হয়েছে। এটি  ইউ এস-ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভ অন ক্রিটিকাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি (আইসেট) চুক্তির (মে ২০২২–এ ঘোষিত) অংশ, যার উদ্বোধনী বৈঠক হয়েছিল এই বছরের জানুয়ারিতে। আগামীর পথনির্দেশিকা হিসাবে বৃহত্তর প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতে প্রতিরক্ষা উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্যগুলি যেমন ভারতের নিজস্ব স্বনির্ভরতা মিশন ও আমদানি নির্ভরতা কমানোর আকাঙ্ক্ষার পরিপূরণ করে, তেমনই সম্ভাব্যভাবে মার্কিন–ভারত কৌশলগত সম্পর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পুনঃস্থাপন করে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের এই সফরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল: প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা। সফরের সময় গৃহীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতার জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা। রোড ম্যাপের লক্ষ্য হল গুরুত্বপূর্ণ যৌথ–উন্নয়ন ও যৌথ–উৎপাদন উদ্যোগগুলিকে ত্বরান্বিত করা, যার ফলে দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।

সফরের সময় গৃহীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতার জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা।

সেখানে একটি নতুন উদ্যোগ ইনডাস–এক্স–এর সূচনা হয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন সম্পৃক্ততায় নতুন প্রেরণা দেবে। এটি ২০২২ সালে স্বাক্ষরিত মার্কিন–ভারত দ্বিপাক্ষিক স্পেস সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে আরও এক ধাপ এগিয়েছে, যা মহাকাশ ক্ষেত্রে তথ্য আদান–প্রদান ও সহযোগিতা বাড়ানোর  প্রতিশ্রুতি দেয়। অধিকন্তু, মার্কিন মহাকাশ কমান্ড ও ভারতের ডিফেন্স স্পেস এজেন্সির মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে মহাকাশ প্রতিরক্ষা তথ্য বিনিময়ের নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভারতের ‘‌মেজর ডিফেন্স পার্টনার’‌ (এমডিপি) মর্যাদা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চারটি মৌলিক চুক্তি এখন প্রযুক্তি ভাগাভাগি এবং আরও ঘন ঘন সহযোগিতার সুযোগ দেয়। এগুলি ভারতকে যে শুধু জোট–মিত্র না হওয়া সত্ত্বেও সংবেদনশীল প্রযুক্তি আদান–প্রদানের সুযোগ দিয়েছে তাই নয়, সেইসঙ্গেই পদ্ধতিগত অসুবিধা বা কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবেও প্রমাণিত হয়েছে।

ইন্দো–প্যাসিফিক আবশ্যিকতা
২০২২ সালের এপ্রিলে ২+২ মন্ত্রী-পর্যায়ের সংলাপের সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের যোগাযোগের ভিত্তি হিসাবে মার্কিন–ভারত প্রতিরক্ষা অংশীদারির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দেন। এর মধ্যে ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ, বলপূর্বক সীমানা পুনর্নির্মাণ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ, এবং সন্ত্রাসবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহ। এই অঞ্চলে বিপদ সংক্রান্ত ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত মূল্যায়ন চিনকে একটি সাধারণ ও সর্বাধিক সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ হিসেবে নির্দেশ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রকাশিত চিনের সামরিক শক্তি রিপোর্ট ২০২২–এ বলা হয়েছে, জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী। ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে ওঠার সময়ে এই অনুমান করা হয়েছে যে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রতলে চিনের উপস্থিতি বাড়তে পারে।

ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ডিটিটিআই) প্রায়শই অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বলে সমালোচিত হয়েছে, এবং আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধ, সংবেদনশীল প্রযুক্তি স্থানান্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রয়োগগত খুঁটিনাটি এবং ভারত–মার্কিন প্রতিরক্ষা বাস্তুতন্ত্র কাজের কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে বাধার মুখে পড়েছে।

ইন্দো–প্যাসিফিকের বাইরে, প্রতিরক্ষা খাতে ভারতীয় ও মার্কিন সংস্থাগুলির মধ্যে বৃহত্তর শিল্প সহযোগিতা তুলে ধরার একটি শক্তিশালী যুক্তি হল ভারতে মার্কিন বিনিয়োগের বিদ্যমান আয়তন। এর পিছনে মার্কিন সরকারের প্রায় ঘোষিত সমর্থন আছে, যা সে দেশের সংস্থাগুলিকে ভারতের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণ সমর্থন করার আহ্বান জানায়। দীর্ঘমেয়াদে, এটি মার্কিন–ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ছত্রছায়ায় অন্তত তিনটি প্রভাবশালী প্রবণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে: সংস্থাগুলির মধ্যে যৌথ উদ্যোগের একটি বাস্তুতন্ত্রের লালন ও বৃদ্ধি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনে একটি বৃহত্তর অংশীদারিত্ব অর্জন, এবং উভয় পক্ষের যৌথ–উন্নয়ন ও যৌথ– উৎপাদনে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ। বোয়িং, লকহিড মার্টিন, বিএই সিস্টেমস, হানিওয়েল অ্যারোস্পেস, রেথিয়ন, টেক্সট্রন ও অন্যদের নেতৃত্বে মার্কিন সংস্থাগুলি ভারতীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন উৎপাদন কার্যক্রমের অংশীদার হচ্ছে, বিশেষত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড ও টাটা গ্রুপের সঙ্গে। আইসেট চুক্তিতে ঘোষিত একটি ‘উদ্ভাবন সেতু’‌‌র মাধ্যমে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা স্টার্ট–আপগুলিকে সংযুক্ত করে এগুলির সম্পূরক করা যেতে পারে।

ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ডিটিটিআই) প্রায়শই অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বলে সমালোচিত হয়েছে;‌ এবং আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধ, সংবেদনশীল প্রযুক্তি স্থানান্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রয়োগগত খুঁটিনাটি ও ভারত–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাস্তুতন্ত্র কাজের কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে বাধার মুখে পড়েছে। যাই হোক, সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যৌথ–উৎপাদন ও যৌথ–উন্নয়নে নির্দিষ্ট গতি প্রদান করে ডিটিটিআই শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই বিষয়ে একটি অসামান্য নজির হল আইসেট চুক্তির মাধ্যমে ভারত–মার্কিন কৌশলগত অংশীদারি আরও উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়া।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের সফরটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য জমি তৈরি করেছিল। এখন সেখানে কয়েকটি বড় মাপের ঘোষণা দেখা যেতে পারে, বিশেষত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে। এখন মনে হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণতন্ত্রের মধ্যে উদীয়মান প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের সীমা আকাশছোঁয়া।


এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘‌দ্য হিন্দু’‌তে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...

Read More +