Author : Harsh V. Pant

Published on Mar 22, 2025 Updated 0 Hours ago
জার্মান ‘ফায়ারওয়াল’ কি ভেঙে পড়ছে?

সম্প্রতি হওয়া জার্মান নির্বাচন আরও এক বার দর্শিয়েছে যে, ইউরোপের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে মৌলিক পরিবর্তন আসছে। ফ্রিডরিখ মের্জের কনজারভেটিভরা জয়লাভ করলেও নির্বাচনী সন্ধ্যার প্রধান আকর্ষণ ছিল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানিবা এএফডি, যারা মাত্র চার বছরে নিজেদেপ্রতি সমর্থন দ্বিগুণ করে ২০.৮%-এ পৌঁছেছে এবং দেশটির পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এএফডি-র স্বাভাবিকীকরণ এমন একটি দেশে নতুন বাস্তবতা, যেখানে তা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। পূর্ব দিক থেকে শুরু করে - যেখানে দলটি চিরাচরিত ভাবে প্রভাবশালী ছিল - বর্তমানে দলটির প্রভাব পশ্চিমেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনটি স্টেটে অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক চরম দক্ষিণপন্থী হিসেবে চিহ্নিত একটি দলের জন্য এটি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

ব্র্যান্ডমাউরের সমাপ্তি?

তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে জার্মান রাজনৈতিক ঐকমত্য সুনিশ্চিত করেছে যে, এএফডি-কে ক্ষমতার বাইরে রাখা হবে। এ  নেপথ্যে রয়েছে একটি ফায়ারওয়াল’ (জার্মানিতে ব্র্যান্ডমাউর) বা প্রতিরোধ। জার্মানির মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলি মেনে নিয়েছে যে, তারা কোনও চরমপন্থী দলের সঙ্গে জোটে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল এই যে, যা অনিবার্য, তাকে কত দিনই বা স্থগিত রাখা যেতে পারে।

জার্মানির এই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটার মতদান করেছিলেন। সম্ভবত তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁদের দেশ এক পরিবর্তনশীল পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইউক্রেন ইউরোপের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে জার্মানদের কাছে বিকল্পের সংখ্যা কমে এসেছে এবং নির্বাচনের আগে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং লন মাস্ক প্রকাশ্যে এএফডি-কে সমর্থন করার ফলে ভবিষ্যতের বিষয়ে জার্মানিতে এক নতুন তাগিদ তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আটলান্টিক মহাসাগরের দু’পারের দেশগুলির মধ্যকার সম্পর্ক এখন নিম্নমুখী। জার্মানির চ্যান্সেলর-ইন-ওয়েটিং ফ্রিডরিখ মের্জ ন্যাটোর ভবিষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই ইউরোপকে নিজস্ব প্রতিরক্ষা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।

ইউক্রেন ইউরোপের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে জার্মানদের কাছে বিকল্পের সংখ্যা কমে এসেছে এবং নির্বাচনের আগে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং লন মাস্ক প্রকাশ্যে এএফডি-কে সমর্থন করার ফলে ভবিষ্যতের বিষয়ে জার্মানিতে এক নতুন তাগিদ তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা প্রত্যাখ্যাত উরোপের নেতৃত্ব দিতে হবে জার্মানিকেই। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে জার্মানি এখন বিভ্রান্ত। বর্তমানে নতুন সরকারকে একটি বিভক্ত দেশে কঠোর পদক্ষেপ  নিতে হবে কারণ অতি-দক্ষিণপন্থীদের উত্থান গ্রহণযোগ্যতা ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

দক্ষিণপন্থীদের উত্থান কেন?

কথা স্পষ্ট যে, গত কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি, বিশেষ করে ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের পর থেকে, অতি-দক্ষিণপন্থীদের উত্থানের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। কঠোর ব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং আয় বৈষম্য অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে, যার ফলে অনেক নাগরিক মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি বিচ্ছিন্ন অসন্তুষ্ট বোধ করছে। অতি-দক্ষিণপন্থী দলগুলি জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, স্থানীয় শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার বিশ্বায়ন প্রতিরোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্রুত সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে এবং নিজেদেরকে শ্রমিক শ্রেণি ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের ধারক বলে উপস্থাপন করেছে।

সাধারণ মানুষের এই উদ্বেগের সমাধানে চিরাচরিত রাজনৈতিক দলগুলি বেশির ভাগ ইউরোপীয় গণতন্ত্রে মানুষ ও তাদের মধ্যে গুরুতর বিচ্ছিন্নতার দিকে চালিত করেছে।

অভিবাসনের ধর পরিবর্তিত জনসংখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জাতীয় পরিচয় সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সম্পর্কে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি-দক্ষিণপন্থী আন্দোলনগুলি এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে বিদেশি-বিদ্বেষী মতাদর্শ প্রচার করে এবং অভিবাসীদেরকেই সকল সমস্যার উৎস হিসেবে উপস্থাপন করে। সাধারণ মানুষের এই উদ্বেগের সমাধানে চিরাচরিত রাজনৈতিক দলগুলি বেশির ভাগ ইউরোপীয় গণতন্ত্রে মানুষ ও তাদের মধ্যে গুরুতর বিচ্ছিন্নতার দিকে চালিত করেছে। এই হতাশার অনুভূতি প্রতিষ্ঠা-বিরোধী আন্দোলনের প্রতি ক্রমবর্ধমান সমর্থনকে উস্কে দিয়েছে, যারা প্রায়শই অতি-দক্ষিণপন্থী মতাদর্শ দ্বারা চালিত হয়। এই দলগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা অভিজাত ও প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ‘নিয়ন্ত্রণ পুনরায় ছিনিয়ে নেবে’, যেগুলি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। র মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যেটিকে প্রায়শই আমলাতান্ত্রিক জাতীয় সার্বভৌমত্বকে খর্বকারী বিদেশি শক্তি হিসাবে তুলে ধরা হয়।

একটি অস্তিত্বগত সমস্যা

জার্মানির জন্য অতি-দক্ষিণপন্থীদের উত্থান প্রায় একটি অস্তিত্বগত সমস্যা উপস্থাপন করে। এবং এটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ইউরোপের একটি বড় অংশ নেতৃত্ব প্রদানের জন্য তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছে। এক দিকে যখন ট্রাম্প ইউরোপের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে এবং রাশিয়া ইউরোপীয় নিরাপত্তা অবকাঠামোর ভবিষ্য রূপরেখা নির্ধারণে আপাতদৃষ্টিতে এগিয়ে রয়েছে, তখন জার্মানিকে প্রথমে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে হবে। মের্জ এএফডি-র উত্থানের বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘দলটি এখনও টিকে রয়েছে। কারণ এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, যা সমাধান করা হয়নি। এই সমস্যাগুলি আরও গুরুতর হলে দলটি খুশি হবে। আমাদের সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে... আর তা হলে সেই দল অর্থাৎ এএফডি-ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

এটা বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ নয়। গত কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে এই বিশ্বাস ছিল যে, এএফডি-র উত্থান কেবল আকস্মিক ঘটনা। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলি দর্শিয়েছে যে, এই মূল্যায়ন কতটা ভুল ছিল। জার্মানির মূলধারার দলগুলিকে এখনই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কারণ এএফডি-র নেত্রী অ্যালিস ভাইডেল ইতিমধ্যেই পরবর্তী নির্বাচনের দিকে নজর রেখেছেন। ফলাফল প্রকাশের পরপরই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, মের্জের জোট গঠনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে এবং জার্মানিতে আরও চার বছর অপেক্ষা না করেই নতুন নির্বাচন সংঘটিত হবে। এখন জার্মান রাজনৈতিক শ্রেণির দায়িত্ব হল, অ্যালিসকে ভুল প্রমাণ করা।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.