এই বছর ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া ১০ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ করবে। এই বছরের মধ্যে উভয় দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা এবং উভয়ের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠান, সেমিনার ও সফর হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, বিদ্যমান সম্পর্ককে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, এখন তা নিয়ে ভাবা জরুরি। আমাদের অবশ্যই খুঁজে বার করতে হবে কেন তারা তাদের প্রকৃত সম্ভাবনায় পৌঁছতে পারেনি, এবং কোন বিষয়গুলি এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
অনুপস্থিত উপাদান সনাক্তকরণ: প্রযুক্তি
যদিও ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া বৌদ্ধ ধর্ম থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ঔপনিবেশিক ইতিহাস পর্যন্ত অনেক কিছুরই ভাগীদার, তবুও দুই দেশের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সংযোগের অভাব রয়েছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া রাজনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে যাত্রা করেছে। ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, বৈশ্বিক দক্ষিণের একটি কণ্ঠস্বর এবং ফার্মাসিউটিক্যালস, আইটি ও ইলেকট্রনিক্সের একটি উৎপাদন কেন্দ্র। একইভাবে, দক্ষিণ কোরিয়াও এশিয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উদার গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে অগ্রণী হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ২৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আরও ভাল করার সম্ভাবনাকে দেখায়। কিন্তু কোথাও এখনও কিছু অভাব থেকে গিয়েছে।
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অবশ্যই তাদের ঐতিহ্যগত অর্থনৈতিক স্বার্থের বাইরে তাকাতে হবে এবং তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য প্রযুক্তির সম্ভাবনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।
যে কারণটি সম্পর্কের আরও অগ্রগতি থেকে বিরত রেখেছে তা হল ভারতের কৌশলগত অবহেলা। এমনকি যখন দুই দেশের মধ্যে একটি ‘বিশেষ কৌশলগত অংশীদারি’ থাকে, তখনও তা ‘বিশেষ’ বা ‘কৌশলগত’ হয় না। এর কারণ হল প্রথাগত অর্থনৈতিক স্বার্থই প্রাথমিকভাবে প্রাধান্য পায়। এইভাবে সংযোগসূত্রগুলি স্থবির হয়ে যায় এবং তাদের নতুন ক্ষেত্রে প্রসারিত হওয়ার পথ বাধাপ্রাপ্ত হয়। একটি অভিন্ন দৃষ্টির অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। তবে, ‘প্রযুক্তি’ সম্পর্ককে প্রসারিত ও গভীর করতে পারে। প্রযুক্তি এখন জোটবদ্ধতার চালক হয়ে উঠেছে। মিত্রতা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার অত্যাবশ্যক উপাদান হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া এই পরিবর্তনে পারস্পরিক স্বার্থ এবং বৃহত্তর বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য একত্র হতে পারে, যেমনটি এই বছরের জানুয়ারিতে ভারত–কোরিয়া বৈদেশিক নীতি এবং নিরাপত্তা সংলাপের সময় আলোচনা করা হয়েছিল।
বর্তমানে, ভারত–দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ধীর গতিতে চলছে, বিশেষ করে জাপান–ভারত সম্পর্কের তুলনায়। পরের সম্পর্কটি ‘বিশেষ কৌশলগত ও বিশ্বব্যাপী অংশীদারি ’-র যথার্থ উদাহরণ। জাপান ও ভারত তাদের ভূগোলের বাইরে তৃতীয় দেশগুলিতে এবং দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে কাজ করে, কোয়াডের মাধ্যমে আঞ্চলিক উদ্বেগগুলির মোকাবিলা করে, এবং জি৪–এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সংস্কারের জন্যও কাজ করে৷ এমনকি যখন এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের চেয়ে কম, তখনও সম্পর্ক কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। ওআরএফ বৈদেশিক নীতি সমীক্ষা ২০২২ –এ জাপান ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের একটি শীর্ষ অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে: ৩১ শতাংশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ৭৩ শতাংশ জাপানকে ভারতের অগ্রণী অংশীদার হিসাবে দেখেছে। প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো, সংযোগ ও প্রযুক্তিতে সম্পর্কের গভীরতা, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে একে অপরের ভবিষ্যতের অংশীদার হওয়া ভারত–জাপান সম্পর্ককে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। তাঁর ২০২২ সালের ভারত সফরের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আগের ৩.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েনের প্রকল্পগুলির সফল সমাপ্তির পরে পরবর্তী পাঁচ বছরে ‘সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পে অর্থায়ন’ করার জন্য ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জাপান–ভারত সম্পর্ক দেখায় যে দেশগুলি শুধু বাণিজ্য অংশীদার না–হয়ে একে অপরের বৃদ্ধির অংশ হতে পারে, যা উচ্চস্তরের আস্থা প্রতিফলিত করে। প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বের বাইরে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া কিন্তু একে অপরের ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসতে পারেনি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্থবির থেকে গিয়েছে।
প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো, সংযোগ ও প্রযুক্তিতে সম্পর্কের গভীরতা, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে একে অপরের ভবিষ্যতের অংশীদার হওয়া ভারত–জাপান সম্পর্ককে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ
কোভিড–১৯ অতিমারির সময় থেকে সহযোগিতার গুরুত্ব, বিশেষ করে অতি–গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, বিশ্বমঞ্চে কেন্দ্রীয় স্থলে উঠে এসেছে। ভারতও একটি দেশের নিরাপত্তা, জনসুরক্ষা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তির অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে। সম্প্রতি ভারত–মার্কিন ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা’, ‘সহ–উন্নয়ন, ও সহ–উৎপাদন’-এর উপর গুরুত্ব আরোপ করে অতি–গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি (আইসেট) সংক্রান্ত কৌশলগত অংশীদারি উদ্যোগকে উন্নীত করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি বায়োটেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, হাই–পারফরমেন্স কম্পিউটিং (এইচপিসি), উন্নততর সামগ্রী ও রেয়ার–আর্থ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির সম্ভাবনাগুলিকে স্বীকৃতি দেয় এবং অন্বেষণ করে, এবং এইভাবে এমন একটি অংশীদারির ইঙ্গিত দেয় যা পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এই অংশীদারি এমন ‘একটি উন্মুক্ত, ব্যবহারযোগ্য ও সুরক্ষিত প্রযুক্তি বাস্তুতন্ত্রের জন্য অঙ্গীকার করে’ যার মূলে রয়েছে ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান’। আইসেট ছাড়াও শুধু একটি অনুরূপ উদ্যোগ রয়েছে, যা হল ভারত–ইইউ প্রযুক্তি এবং বাণিজ্য পরিষদ। কাউন্সিলের তিনটি ওয়ার্কিং গ্রুপ আছে: ‘কৌশলগত প্রযুক্তি, ডিজিটাল গভর্নেন্স ও ডিজিটাল প্রযুক্তি’; ‘সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তি’; এবং ‘বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও স্থিতিস্থাপক মূল্যশৃঙ্খল’। ভারত ও অন্য প্রধান শক্তিগুলির প্রযুক্তিগত অংশীদারি ভারতের উদ্ভাবন বাস্তুতন্ত্র ও বৃদ্ধি সম্পর্কে আস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। একটি অস্ট্রেলীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এএসপিআই–এর সাম্প্রতিক অতি–গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ট্র্যাকার রিপোর্ট ভারতকে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রেখেছে, এবং ৪৪টির মধ্যে ২৯টি প্রযুক্তিতে অগ্রণী বলে গণ্য করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রের একটি প্রধান শক্তি, এবং ভারত পিএলআই উদ্যোগের সূত্রে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে সক্ষমতা ও উৎপাদন বাড়ানোর কৌশলগত অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিয়েছে।
এর বিপরীতে, দক্ষিণ কোরিয়া ২০টি প্রযুক্তিতে এগিয়ে রয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, ক্রমবর্ধমান উদ্ভাবন ও গবেষণা বাস্তুতন্ত্র হয়ে ওঠার পরেও একটি উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসাবে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ‘অতি–গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি’ অংশীদারি অনাবিষ্কৃতই থেকে গিয়েছে। আরেকটি ক্ষেত্র হল সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খল; দক্ষিণ কোরিয়া এই ক্ষেত্রের একটি প্রধান শক্তি এবং মার্কিন কৌশলগত পরিবর্তনের সঙ্গে সে নিজেকে জুড়তে চায়। ভারতও পিএলআই উদ্যোগের সূত্রে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রণোদনা হিসাবে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে সক্ষমতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশলগত অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মতো অনেক দেশ এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সেমিকন্ডাক্টর কনসর্টিয়ামের (আইএসএমসি) ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণাটি ছিল ভারতে একটি সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট স্থাপনের প্রথম পরিকল্পনা; তারপরে এসেছে সিঙ্গাপুর–ভিত্তিক আইজিএসএস উদ্যোগগুলি। বাণিজ্যিক সংলাপের অধীনে একটি সেমিকন্ডাক্টর সাবকমিটি তৈরির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। সংলাপের কেন্দ্রীয় বিন্দুটি হল ‘সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে শিল্প সহযোগিতার প্রসারের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রয়াস বাড়িয়ে’ একটি ‘শক্তিশালী সংযোগ, পরিপূরক বাস্তুতন্ত্র এবং সেমিকন্ডাক্টরের জন্য আরও বৈচিত্র্যময় সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা’। কিছু দেশীয় নির্মাতাও এই ক্ষেত্রে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে: প্রথমে এসেছে বেদান্ত–ফক্সকন, এবং ফক্সকন একটি দ্বিতীয় ইউনিট খুলছে বলে প্রতিবেদিত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াকে অবশ্যই পিএলআই প্রকল্পের অধীনে সুযোগগুলি অন্বেষণ করতে হবে, যা অতি–গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি খাতে প্রণোদনা প্রদান করে। এটি প্রযুক্তিগত অংশীদারির একটি বাধ্যতামূলক কারণ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে, যা আরও ভাল কৌশলগত সম্পর্কের দিকে চালিত করবে, যেমনটি জাপানের সঙ্গে হয়েছে। প্রযুক্তিতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য আরও বেশি করে মানুষের–সঙ্গে–মানুষের সম্পর্ক প্রয়োজন, যা ব্যবসা, গবেষক ও স্টার্টআপ–গুলির জন্য সহজ উপলব্ধতা, গতিশীলতা ও পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে। সেমিকন্ডাক্টর ইঞ্জিনিয়ারদের লালন–পালন করতে চাইছে এমন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্কলারশিপ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া ভারতের ট্যালেন্ট পুলকে কাজে লাগাতে পারে। ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র ও ক্রমবর্ধমান রপ্তানির পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টরগুলির ‘নিরাপদ’ ও ‘স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার উচিত অতি–গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান প্রযুক্তির সম্ভাবনাগুলি অন্বেষণ করা এবং তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য একে অপরের উদ্ভাবন বাস্তুতন্ত্র ও বৃদ্ধিতে আস্থা রাখা।
এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়া–ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা হল আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে সেমিকন্ডাক্টরগুলির নিরাপত্তা ও স্থিতিস্থাপকতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঐতিহ্যগতভাবে, ভারতের সঙ্গে অনেক দেশের কৌশলগত সম্পর্ক এগিয়েছে অনেকগুলি কারণে, যেমন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও কৌশলগত উন্নয়নমূলক অংশীদারি বা উভয়ের সংমিশ্রণ। ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল ও ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এগিয়েছিল; অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণভাবে এবং এর বাইরেও ভারতের পরিকাঠামো ও সংযোগ আধুনিকীকরণে জাপানের প্রচেষ্টার কারণে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বৃদ্ধির কারণে জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কয়েক বছর ধরে শক্তিশালী হয়েছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ব্যবসা–বাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কিছু উদাহরণও আছে। দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যই অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার অভাব সত্ত্বেও সম্পর্ককে ইতিবাচক রেখেছে; তবে বর্তমান প্রশাসনের অধীনে বাণিজ্য ঘাটতি সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক ধারণা কিন্তু অস্বস্তির একটি উপাদান নিয়ে এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্পোরেশনগুলি সিইপিএ থেকে উপকৃত হচ্ছে বলে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সাম্প্রতিক মন্তব্য অন্যায্যতার দিকে আঙুল তুলেছে। ২০২০–র আগে অনেক বছর ধরে ও তারপরে কোভিড–১৯–এর কারণে বিলম্বিত সিইপিএ পুনর্বিবেচনায় এখনও অগ্রগতি না–হলে তা সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এই অবস্থানটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত, এবং সিইপিএ নিয়ে আলোচনায় এর সুরাহা না–হলে তা আরও জোরদার হবে। গত বছর বাণিজ্যমন্ত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠকে ২০৩০ সালের জন্য ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবং এই বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল যে ‘উভয় পক্ষের পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতিতে বৃদ্ধি’ অর্জন করা দুই দেশের মধ্যে আরও প্রযুক্তি সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হবে না।
সামনের পথ
দুই রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক যাতে দৃঢ় থাকে তা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ কোরিয়াকে ঝুঁকি বণ্টনের জন্য অন্যান্য ক্ষেত্রে তার সম্পর্কের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন শক্তি, পরিকাঠামো ও সংযোগ হল কিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র যেখানে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনতে অবদান রাখতে পারে। চিনের ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণে ভারত যেহেতু তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ করছে, তাই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা নির্মাতারা ভারত ও এই অঞ্চলের চাহিদা পূরণের নীতি অনুসরণ করলে উপকৃত হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল পরিচ্ছন্ন শক্তি: ভারতের শক্তি রূপান্তরের উপর গুরুত্ব আরোপের বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়াকে পরিচ্ছন্ন শক্তি উদ্যোগে, বিশেষ করে সবুজ হাইড্রোজেন ও বায়ুশক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার সুযোগ দেয়। দক্ষিণ কোরিয়া যেমন ১৯৯০–এর দশকে অটো সেক্টরে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতের উপর বাজি ধরেছিল, তার পুনরাবৃত্তি করতে হবে, এবং এই সময় বাজিটি ‘প্রযুক্তি’ হওয়া উচিত। এই প্রযুক্তিগত পদক্ষেপটি উভয় দেশকে প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কৌশলগত বিশ্বাস তৈরি করতে এবং একের অন্যের অগ্রগতির প্রতি অঙ্গীকারের ইঙ্গিত দিতে সাহায্য করবে। অতিমারির সময় থেকে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চস্তরের রাজনৈতিক বৈঠক না–হওয়ায় প্রযুক্তি বা কৌশলগত অংশীদারির কর্মসূচি এগোয়নি। ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিকাশ ও গভীরতা’ নিয়ে উভয় রাষ্ট্রের নেতাদের ব্যক্ত অভিপ্রায় স্থবির হয়ে রয়েছে। এই বছর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে যদি অংশীদারিকে গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সম্প্রসারিত করা যায়, যা সম্ভবত অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে এবং আস্থাও তৈরি করবে। জি২০ রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট ইউন ও প্রধানমন্ত্রী মোদী এই অংশীদারিকে নতুন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত করে এবং ‘২+২’ ফর্ম্যাটটি বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে উন্নীত করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে সহযোগিতা করতে পারেন। এটি টেক–স্টার্টআপ ও ছোট সংস্থাগুলিকে একে অপরের বস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করতে এবং পারস্পরিক স্বার্থের জন্য অনুকূল অবস্থার সুযোগ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.