স্বাধীন ভারতের জন্য বিদ্যুদয়ন একটি প্রধান উন্নয়ন লক্ষ্য। স্বাধীনতার ভোরে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা কয়েকটি শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, গ্রামীণ এলাকায় একেবারেই বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ভারত এখন ১০০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুদয়নের গর্ব করে। চিত্র ১ গত দশকে ভারতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখায়, যখন ভারতে বিদ্যুদয়নের গতি বিশ্ব গড়কে ছাড়িয়ে গিয়েছে। যাই হোক, দেশটি ২০২২-এর ২৪x৭ বিদ্যুতের প্রাপ্তিযোগ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য থেকে এখনও অনেক দূরে। যদিও বিদ্যুতের প্রাপ্তিযোগ্যতার কোনও মানক সংজ্ঞা নেই, তবে প্রাপ্তিযোগ্যতার সাধারণ ধারণা হল একটি বাড়ির জন্য গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ, বা বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি স্বতন্ত্র ব্যবস্থা থাকবে। এই মৌলিক প্রাপ্তিযোগ্যতা চার থেকে ছয়টি বাল্ব জ্বালানো, একটি মোবাইল চার্জ করা, এবং একটি ফ্যান ও একটি টেলিভিশন চালানোর জন্য যথেষ্ট। বিদ্যুতের ব্যবহারের মাত্রা বিভিন্ন স্থান এবং অর্থনৈতিক শ্রেণীতে পরিবর্তিত হয়, এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃদ্ধি বা হ্রাসের সম্ভাবনা থাকে। ত্রুটি, অপ্রতুল উৎপাদন বা অন্য কোনও কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়াকে পাওয়ার কাট বা পাওয়ার আইটেজ বলা হয়।
চিত্র ১: বিদ্যুতের প্রাপ্তিযোগ্যতাসহ জনসংখ্যার শতাংশ (ভারত ও বিশ্ব)
সূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্ক
বিদ্যুৎ এখন দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেমন সূর্যাস্তের পর আলো প্রদান, যন্ত্রপাতি চালনা, জীবিকার কার্যক্রম গ্রহণ, ডিজিটাল লেনদেন করা, শালীন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার সুযোগ প্রদান, স্মার্ট ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি। জলের বিপরীতে আজকের বিশ্বে বিদ্যুৎ শুধু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, বরং একটি ভাল মানব জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতের প্রায় ১১.৪ শতাংশ উপ-কেন্দ্রে (ভারতের গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অংশ) এবং ৩.৭ শতাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিরাপদ প্রসবের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে এবং টিকা সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে নির্ভরযোগ্য শক্তি প্রয়োজন। বিদ্যুতের প্রাপ্তি পরিবারের আয় ও জীবিকার উপর স্পষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণা দেখায় যে, বিদ্যুতের সুযোগ গৃহস্থালি ব্যবসার আয় গড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে। অধিকন্তু, বেশিরভাগ তরুণকে শিক্ষা ও চাকরি খোঁজার জন্য লার্নিং পোর্টাল ও চাকরির পোর্টালগুলি ব্যবহার করতে হয়। সুতরাং, বিদ্যুৎ একটি সংযোগের চেয়ে বেশি কিছু, এটি মৌলিক অধিকার ও জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের পথ।
বিদ্যুৎ এখন দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেমন সূর্যাস্তের পর আলো প্রদান, যন্ত্রপাতি চালনা, জীবিকার কার্যক্রম গ্রহণ, ডিজিটাল লেনদেন করা, শালীন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার সুযোগ প্রদান, স্মার্ট ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি।
মানবিক নৈতিকতা, শক্তি ও উন্নয়নের বিশেষজ্ঞ লার্স লফকুইস্ট যুক্তি দেন: "আমাদের মৌলিক অধিকারগুলি, যেমন জীবনের অধিকার এবং পর্যাপ্ত বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো অন্য বস্তুগত প্রয়োজনগুলি রক্ষা করার জন্য বিদ্যুতের অধিকার প্রায়শই প্রয়োজনীয়। তবুও জীবন, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা অপরিহার্য, কিন্তু বিদ্যুৎ নয়।" ভারতে, ১৯৫৫ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের বিধানের মধ্যে বিদ্যুৎকে একটি অপরিহার্য পণ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, যদিও পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলি অপরিহার্য পণ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর ধারা ১৭৬-এর অধীনে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ (ভোক্তাদের অধিকার) বিধিমালা ২০২০ জারি করেছে। বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিতরণ লাইসেন্সধারীদের থেকে বিদ্যুতের সরবরাহের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিষেবার মান পাওয়া গ্রাহকদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিতরণ লাইসেন্সধারী কর্মক্ষমতা মানক অনুযায়ী সমস্ত গ্রাহককে ২৪x৭ শক্তি সরবরাহ করবে। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ (ভোক্তাদের অধিকার) বিধিতে সংশোধনী আনা হয়েছিল। ভোক্তাদের জানানোর জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল যে ২৪x৭ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গ্রাহকদের অধিকার। কোনও বিতরণ সংস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে লোডশেডিং করলে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দাবি করার অধিকার আছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) ইলেকট্রিসিটি (ভোক্তাদের অধিকার) বিধি ২০২০ (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কলকাতা সংস্করণ, ২৮ জুন ২০২৩) বিষয়ে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপগুলি বিদ্যুৎ সরবরাহকে সংযোগ ধারকের জন্য একটি চুক্তিভিত্তিক অধিকার করে তোলে।
বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিতরণ লাইসেন্সধারীদের থেকে বিদ্যুতের সরবরাহের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিষেবার মান পাওয়া গ্রাহকদের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ লাইসেন্সধারীদের (বিতরণ সংস্থা) আর্থিক স্বাস্থ্য ও ভোক্তা সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। বিদ্যুৎ আইন ২০০৩-এর ৫৬ ধারা বিদ্যুতের জন্য কোনও চার্জ মেটাতে, বা একটি নির্ধারিত নোটিস সময়ের পরে বিদ্যুতের জন্য চার্জ ব্যতীত অন্য কোনও অর্থ প্রদানে, অবহেলার ক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা উল্লেখ করে; আর আইনের ৫৭ ধারাটি হল ভোক্তা সুরক্ষা সম্পর্কিত। বাস্তবের মাটিতে বিল মেটাতে ব্যর্থতার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা রয়েছে। ২০২২ সালের পঞ্জাব হাইকোর্টের একটি মামলায় রায়ে বলা হয়েছে, "বিদ্যুৎ যে একটি মৌলিক প্রয়োজন, ভারতের সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে অন্তর্ভুক্ত জীবনের অধিকারের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তা যতটা সম্ভব জোর দিয়ে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত আবেদনকারীর হাতে বিবাদাস্পদ সম্পত্তিটি রয়েছে, ততক্ষণ তাকে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।"
পেমেন্ট ওভারডিউয়ের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রকৃত শতাংশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। অনুপাতের পরিবর্তন সঠিক ১০০ শতাংশ প্রাপ্তির লক্ষ্য থেকে একটি ব্যবধান তৈরি করতে পারে। বিদ্যুতের গুরুত্ব সমাজে প্রতিদিন বাড়ছে — শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহণ (বৈদ্যুতিক যানবাহন গতিশীল হওয়ার সাথে) বা ব্যাঙ্কিং ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে। তাই বিদ্যুতের প্রাপ্তিযোগ্যতা নেহাৎই একটি সংযোগের চেয়ে বেশি কিছু। অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব মাথায় রেখে অবিরত মৌলিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আরও বিশিষ্ট ও শক্তিশালী ব্যবস্থা বিবেচনা করা আবশ্যক।
পেমেন্ট ওভারডিউয়ের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রকৃত শতাংশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি পরিমাপ হল সম্পূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরিবর্তে শুধুমাত্র নির্ধারিত মৌলিক ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রমাগত সরবরাহ করা, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র গ্রাহকদের ক্ষেত্রে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলি ১০০ শতাংশ পরিবারের বিদ্যুদয়নকে সমর্থন করতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) অনুসারে শক্তি ব্যবহারের জন্য মাথাপিছু মাত্রা ৫০-১০০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। রাজ্যগুলি বকেয়া অর্থপ্রদানের সমস্যার মুখে পরিবারগুলিতে সরবরাহযোগ্য মৌলিক বিদ্যুৎ ইউনিট কত তা নির্ধারণ করতে পারে৷
আরেকটি পরিমাপ হল গ্রিড সরবরাহ থেকে স্বতন্ত্র পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেম সরবরাহ করা। সম্প্রতি ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা ১ কোটি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ছাদে সৌর সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরির কথা বলেছে। পরিবারগুলি বিতরণ সংস্থাগুলির কাছে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করার বিকল্পসহ প্রায় ৩০০ ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কখনও কখনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং প্রকৃতিচালিত কারণে দূরবর্তী অঞ্চলে টানা কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সূর্যোদয় প্রকল্পটি এখন সৌর রুফটপ ব্যবস্থাগুলিকে পাওয়ার ব্যাকআপের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ বিল কমানোর একটি ব্যবস্থা, এবং বিদ্যুতের অব্যাহত সরবরাহের একটি ব্যবস্থা হিসাবে আকার দেয়৷ সংক্ষেপে, বিদ্যুতের উপর সমাজের নির্ভরতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অতএব, বিদ্যুৎকে একটি অপরিহার্য পণ্য হিসাবে বিবেচনা করা, এবং একে একটি লক্ষ্য, বিশেষাধিকার বা চুক্তিভিত্তিক অধিকারের পরিবর্তে একটি অধিকার হিসাবে গণ্য করার সময় এসেছে।
মঞ্জুশ্রী ব্যানার্জি এনার্জি অ্যাকসেস সম্পর্কিত একজন স্বাধীন কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করেন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.