Published on Mar 20, 2024 Updated 0 Hours ago

চিন সম্ভাব্যভাবে পারমাণবিক পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ বাতিল করার সঙ্গেসঙ্গে ভারতকে চিনের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র চত্বরে তার সামরিক শক্তি বাড়াতে হবে।

চিন কি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করছে?

পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি) জিনজিয়াং অঞ্চলে তার লোপ নুর পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রে ধারাবাহিকভাবে কিছু পরমাণু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর এসেছে। এর গুরুতর প্রভাব রয়েছে, শুধু বিশ্বের উপরেই নয়, সব চেয়ে বেশি করে ভারতের উপরে। সাম্প্রতিক খবর প্রমাণ করে যে পিআরসি একটি অস্ত্রাগার তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে যা আকার, প্রাণঘাতী ক্ষমতা ও কার্যকারিতার দিক থেকে গুণগতভাবে উন্নততর। যদি বেজিং সত্যিই নতুন করে পরমাণু পরীক্ষা চালায়, তাহলে বেজিংয়ের লোপ নুর পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র প্রস্তুত করার সিদ্ধান্তের পিছনের কার্যকারণগুলি মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। খুব কম করে ধরলেও এটি ১৯৯৬ সালে পিআরসি যে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছিল তা বাতিল করার জন্য তাদের অভিপ্রায়ের একটি অস্পষ্ট সংকেত। চিনারা ১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি থেকে নতুন ওয়ারহেড ডিজাইনের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করেছে, যার জন্য এখন পরীক্ষার প্রয়োজন।

লোপ নুরে বেশ কিছুদিন ধরে প্রত্যক্ষ করা কার্যকলাপ থেকে বোঝা যায় সেখানে নতুন ওয়্যারহেড ডিজাইন পরীক্ষা করার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত আছে
চিনাদের পৃথিবীর পৃষ্ঠের গভীরে একটি উল্লম্ব খাদ খনন, যা অনুমান অনুযায়ী এক মাইলের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ। লোপ নুর–এ চিনা পারমাণবিক পরীক্ষাক্ষেত্র, যা মালান নামে পরিচিত, তা দুই বর্গ মাইল ব্যাসার্ধজুড়ে বিভিন্ন বিল্ডিং ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর একটি গোলকধাঁধা নিয়ে গঠিত, যেখানে ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ৩০টি ভবনের সংস্কার করা হচ্ছে। এই নতুনভাবে নির্মিত এলাকায় গভীর উল্লম্ব শ্যাফটগুলি পরীক্ষার জন্য অতীতে নির্মিত অনুভূমিক শ্যাফটের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সংখ্যক পরীক্ষার সুযোগ করে দেবে। যদিও রাশিয়ান ও আমেরিকানরা নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক পরীক্ষার রেঞ্জে কিছু ধরনের সীমিত কার্যকলাপ পরিচালনা করে, তবে তা আয়তনের দিক থেকে লোপ নুরে যা চলছে তার মতো কিছুই নয়। এটি কার্যকরভাবে নিশ্চিত করে যে পিআরসি শি জিনপিং–এর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন (সিএমসি)–এর ছাড়পত্র পেলে স্বল্প নোটিসে পুনরায় পরীক্ষা শুরু করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।


যেহেতু চিন একটি নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও প্রবর্তন করেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ওয়ারহেড কনফিগারেশনের জন্যও উপরে উল্লিখিত মেট্রিক্সের সঙ্গে তাদের ডেলিভারি ভেহিকলস–এর উচ্চ স্তরের অপ্টিমাইজেশন বা ইন্টারফেসের প্রয়োজন।

 

চিন যখন ৪৫টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে, তখন বেজিংয়ের তীব্র অস্বীকৃতি সত্ত্বেও কেন আবার পরীক্ষা শুরু করা হবে? সর্বশেষ চিনা পারমাণবিক পরীক্ষা ১৯৯৬ সালে পরিচালিত হয়েছিল এবং বিদ্যমান নকশাগুলি, এমনকি যদি সেগুলি কোনও এক পর্যায়ে পরীক্ষিত হয়েও থাকে, তা হলেও তাদের থেকে প্রাপ্ত ডেটা ওয়ারহেড ক্ষুদ্রকরণ, হালকা করা, উচ্চ ফলদায়ক (‌হাই ইল্ডিং)‌ করা এবং নির্ভরযোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা পূরণের দিক থেকে অপ্রতুল ছিল। যেহেতু চিন একটি নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও প্রবর্তন করেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ওয়ারহেড কনফিগারেশনের জন্যও উপরে উল্লিখিত মেট্রিক্সের সঙ্গে তাদের ডেলিভারি ভেহিকলস–এর উচ্চ স্তরের অপ্টিমাইজেশন বা ইন্টারফেসের প্রয়োজন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ান ফেডারেশন (এর পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ) যথাক্রমে
১,০৩০ এবং ৭১৫টি পারমাণবিক পরীক্ষা পরিচালনা করেছে, যা তাদের পারমাণবিক মজুদের আধুনিকীকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরীক্ষার তথ্যের একটি ভান্ডার তৈরি করেছে। বেজিং কিন্তু ওয়াশিংটন ডিসি ও মস্কোর তুলনায় কম পরীক্ষা চালিয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে পিআরসি–র কৌশলগত পরিচালকেরা পারমাণবিক পরীক্ষার বিস্ফোরণের সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে।


কঠিন পছন্দের মুখোমুখি ভারত

প্রায় ২৭ বছরের ব্যবধানের পর চিন যদি পারমাণবিক পরীক্ষা করতে এগিয়ে যায় তাহলে নয়াদিল্লি কঠিন পছন্দ বা ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মুখোমুখি হবে। পারমাণবিক পরীক্ষার তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে পিআরসি ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লির থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে আছে, এবং নিজের অস্ত্রাগারকে ভারতের অস্ত্রাগার থেকে অন্তত গুণগতভাবে উচ্চতর করে তুলেছে। চিনের পরমাণু পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা ভারতের পারমাণবিক চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দেবে। ভারতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ একটি যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্ভরযোগ্য অস্ত্রাগারের অধিকারী হওয়া, যা এয়ারব্রিদিং প্ল্যাটফর্ম, মিসাইল ও সাবসারফেস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কাজ করতে পারে। উপরন্তু, চিনের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের সম্প্রসারণের সঙ্গে বসবাসের জন্য ভারতকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে, বিশেষ করে যদি নয়াদিল্লি চিনের পরিমাণগত ও গুণগত পারমাণবিক সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে একটি বৃহত্তর অস্ত্রাগার অর্জন থেকে বিরত থাকে
এই কারণে যে তা ‘‌অস্ত্র প্রতিযোগিতার অস্থিতিশীলতার’‌ দিকে চালিত করবে। একটি দ্বিতীয়, তবে ভারতের জন্য একই রকম পরিণতিমূলক ও জটিল উপাদান হল চিনের ক্ষেপণাস্ত্র–প্রতিরক্ষার ক্ষতি সীমিতকরণ সক্ষমতা অর্জনের প্রয়াস, যা ভারতের নিক্ষিপ্ত অস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করে দেবে। চিনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ক্ষমতা যেমন এমকিউ–১৯ মিসাইল ইন্টারসেপ্টর ভারতের অগ্নি–৩ ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইআরবিএম)–কে আকাশেই বাধা দিতে সক্ষম। গ্রাউন্ড–বেসড মিসাইল ডিফেন্স (জিবিএমডি) ক্ষমতা ছাড়াও, বেজিংয়ের কাছে দূরপাল্লার প্রচলিত এবং পারমাণবিক এয়ার–লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল রয়েছে, যা ভারতের নেই। চিনের পারমাণবিক চ্যালেঞ্জকে ভারতের জন্য আরও জটিল করে তোলার তৃতীয় একটি জটিল উপাদান হল চিনের ‘‌নো ফার্স্ট ইউজ’‌ (এনএফইউ) নীতি বদলে ‘‌ফার্স্ট ইউজ’‌ (এফইউ) করার সম্ভাবনা, যা ভারতের জন্য বিষয়টিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে তার ক্ষুদ্রতর পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে অ–কার্যকর করে দিয়ে।


ভারতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ একটি যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্ভরযোগ্য অস্ত্রাগারের অধিকারী হওয়া, যা এয়ারব্রিদিং প্ল্যাটফর্ম, মিসাইল ও সাবসারফেস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কাজ করতে পারে।



চিন পরমাণু বিস্ফোরণ পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে যদি নয়াদিল্লি পরমাণু পরীক্ষা পুনরায় শুরু না–করে, তবে তাকে অবশ্যই সংখ্যাধিক্যের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত নির্ভরযোগ্যতা ও কর্মক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকে গুণগতভাবে নিম্নমানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার নিয়ে বসবাস করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তার অস্ত্রাগার পিআরসি–র সামনে বামনে পরিণত হবে, কারণ সামরিকভাবে উন্নত প্রতিবেশীটির কাছে অনেক ধরনের প্ল্যাটফর্ম ও ডেলিভারি সিস্টেম আছে, বিশেষ করে ভয়ঙ্কর হাইপারসনিক মিসাইল।

নয়াদিল্লি, সর্বোত্তমভাবে, তার বিদ্যমান মজুদের মধ্যে ওয়্যারহেডের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, এবং ইতিমধ্যেই তৈরি ও পরীক্ষিত সাধারণ ফিশন ডিভাইসগুলির উপর নির্ভর করতে পারে। এই বিকল্পের বাইরে, নতুন দিল্লির তিনটি সেট ডেলিভারি সিস্টেম ও প্ল্যাটফর্মে জোরালোভাবে বিনিয়োগ করা জরুরি:‌ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার এয়ার–লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল, এবং দীর্ঘতর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সহ এখনকার থেকে আরও বেশি পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন। চিনের পরমাণু পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে এই তিনটি সক্ষমতার সেটের সম্পূর্ণতা ও একীকরণকে অনুঘটন করা, যেগুলি উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, ভারতের জন্য বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

বিকল্পভাবে, ভারত স্থগিতাদেশ ভঙ্গ করে নিজস্ব পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, যেমন নয়াদিল্লি ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার পরে করেছিল। ভারতের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা যদি পিআরসি–র পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিক্রিয়া হিসাবে পরমাণু পরীক্ষা পুনরায় শুরু করেন, তাহলে তাঁদের পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা–সম্পর্কিত পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ভারত পরীক্ষা চালালে বহু মাস ধরে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শেষ রাউন্ডের পরীক্ষার পর থেকে তৈরি যে কোনও নতুন ডিজাইন, বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে ব্যর্থ হওয়া থার্মোনিউক্লিয়ার ডিভাইস, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাপ্ত সমস্ত পরীক্ষার ডেটা ভারতকে ওয়ারহেডগুলিকে ক্ষুদ্রাকারে তৈরি করতে সাহায্য করবে যা হবে হালকা, কমপ্যাক্ট ও নির্ভরযোগ্য, এবং এর মধ্যে কিছু উচ্চ ফলপ্রদও হবে। এই পরীক্ষাগুলি সমাপ্ত হওয়ার পরে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে ভারত ব্যাপক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি) স্বাক্ষর করতে পারে এবং এমনকি এটি অনুমোদন করতেও পারে।

প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, নয়াদিল্লি অলস বসে থাকতে পারে না। ভারতের সামনের বিকল্পগুলি সহজ নয়, এবং তার সঙ্গে বিশাল খরচ ও ঝুঁকি জড়িত। তবুও পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র চত্বরে তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য ভারতকে এমন পথ অনুসরণ করতে হবে যা অবশ্যই পিআরসি–র সামরিক হুমকি মোকাবিলা করার জন্য তাকে প্রস্তুত করবে। এই বিপদ শুধু ভারতের জন্য নয়, সমানভাবে ইন্দো–প্যাসিফিকের শক্তির ভারসাম্যের জন্যও।



কার্তিক বোমাকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.