Published on Jul 18, 2022 Updated 0 Hours ago

বাইডেন এবং আই পি ই এফ অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার বিষয়টি তুলে ধরায় এটিকে ট্রেডিং ব্লক–এর পরিবর্তে ওয়াশিংটনের একটি ইন্দো–প্যাসিফিক ট্রেড ব্লক তৈরি করার উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আই পি ই এফ: নীতিতে বাণিজ্য, চুক্তিতে নয়

প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর প্রাথমিক কয়েকটি ফোন ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ পুনঃস্থাপন, এবং উত্তর আমেরিকার প্রতিবেশীদের, বিশেষ করে মেক্সিকোর সঙ্গে, অতীতের উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত দিয়েছিল। বাইডেনের পূর্বসূরির বাণিজ্য এবং অভিবাসন সংক্রান্ত মন্তব্য দক্ষিণের প্রতিবেশীটির সঙ্গে সম্পর্ককে খারাপ করেছিল।

পূর্বে যেমন বলা হয়েছে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় সরকার প্রধানদের সঙ্গে বাইডেনের যোগাযোগের লক্ষ্য ছিল দুটি:‌ আঘাতের ক্ষত ও সম্পর্কের ভাঙন মেরামত করা, এবং সেই সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকে একটি সমন্বিত প্রয়াস। এই ভাবে মার্কিন মিত্রদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে বৈশ্বিক ব্যস্ততা থেকে মার্কিন বিরতি নিছক একটি বিভ্রান্তি ছিল, মোটেই ওয়াশিংটন ডকট্রিন থেকে সরে যাওয়ার কোনও যুগান্তকারী মুহূর্ত নয়।

আসিয়ান অঞ্চল বা উত্তর এশিয়ার নেতাদের কাছে প্রথম দিকে কোনও ফোন না আসা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর আগের বসের মতোই ইন্দো–প্যাসিফিকের দিকে মনোনিবেশ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অধীনে লড়াইক্ষ্যাপা বেজিংয়ের আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে দৃঢ় অর্থনৈতিক যোগাযোগ এবং দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠার লক্ষণ তৈরি হতে শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টি পি পি) ছিল এশিয়ায় ওবামা প্রশাসনের মূল ভরকেন্দ্র। এই অঞ্চলে যখন আসিয়ান কেন্দ্রিকতা পরীক্ষা করা হচ্ছিল সেই সময় চিনা ডেমোক্লিস–এর তলোয়ার ঝুলছিল। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এশিয়া প্যাসিফিককে ইন্দো–প্যাসিফিক নামকরণ করেছিল, এই অঞ্চলের অগ্রাধিকারগুলি কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্পষ্টভাবে বাণিজ্য সুরক্ষাবাদী মনোভাবের কারণে পিছনে পড়ে গিয়েছিল, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টি পি পি–র মতো বাণিজ্য চুক্তি থেকেও পিছিয়ে গিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এভাবে টি পি পি থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলে মার্কিন শূন্যতা তৈরি হয়। এই অঞ্চলে বেজিংয়ের অর্থনৈতিক ও সামরিক ওজন বৃদ্ধিজনিত ওয়াশিংটনের পীড়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে ট্রাম্পের এই প্রত্যাহারকে নিজের গোলে গোল দেওয়া বা আরও খারাপ হিসাবে দেখেছেন, কারণ তা সম্ভবত নিজেরা না–খেলে বেজিংকে একটি ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার সামিল ছিল।

আই পি ই এফ–কে ঠিক টিপিপি–র জায়গায়  একটি পথ সংশোধনী হিসাবে দেখা না–হলেও, তা অবশ্যই এই অঞ্চলে মার্কিন অর্থনৈতিক ওজন বাড়ানোর উপায়।

টি পি পি, যার এখন নতুন করে কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সি পি টি পি পি) হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে, তা কিন্তু এগিয়ে চলেছিল, তবে ওয়াশিংটনকে ছাড়াই। এবার এল ইন্দো–প্যাসিফিক ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আই পি ই এফ)। আই পি ই এফ–কে ঠিক টি পি পি–র জায়গায়  একটি পথ সংশোধনী হিসাবে দেখা না–হলেও, তা অবশ্যই এই অঞ্চলে মার্কিন অর্থনৈতিক ওজন বাড়ানোর উপায়।

বাইডেন প্রশাসন এই অঞ্চলটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরের ওয়াশিংটনে শারীরিক উপস্থিতিতে প্রথম কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন সহ চারটি প্রধান স্তরের কোয়াড বৈঠক হয়েছে, তারপরে গত মাসে টোকিওতে শারীরিক উপস্থিতিতে দ্বিতীয় কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ।

আই পি ই এফ যদিও কোয়াডের অংশ নয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত মাসে এশিয়ায় তাঁর প্রথম সফরে এর সূচনা করেছিলেন। আই পি ই এফ একটি বাণিজ্য চুক্তি না–হলেও বাণিজ্য এবং সেইসঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা, স্বচ্ছ শক্তি, ডিকার্বনাইজেশন, পরিকাঠামো, এবং কর ও দুর্নীতিরোধের ইস্যুগুলি হল এই কাঠামোর প্রধান কয়েকটি উপাদান।

চিন কোয়াড–কে এশিয়ান ন্যাটো হিসাবে বিপদস্বরূপ বলে  ইঙ্গিত করেছে, কারণ তারা মনে করছে এটি চিনের কৌশলগত স্বার্থ অবরোধ করার এবং তাদের বাধা দেওয়ার দিকে ঝুঁকছে। কোয়াড কিন্তু এই ধরনের সামরিক গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হযয়নি, যদিও চারটি সদস্য দেশের মধ্যে যৌথ সামরিক অনুশীলন হয়েছে। যেমন পূর্বে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি অওকাস প্রকাশ্যে কোয়াডের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য প্রণোদনার উপর জোর দিয়েছে, যার মদ্যে আছে গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান নতুন প্রযুক্তি, সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা, পরিচ্ছন্ন শক্তি, পরিকাঠামো, ভ্যাকসিন কূটনীতি এবং শিক্ষাগত অংশীদারিত্ব। আই পি ই এফ এবং কোয়াড সদস্যদের অগ্রাধিকারের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে, আর তার কারণ হল সমস্যাগুলির অভিন্নতা, অঞ্চলটির উপর পারস্পরিক কেন্দ্রীভূত মনোযোগ ও গুরুত্ব। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কোয়াড এবং আই পি ই এফ উভয়েই ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে অবাধ ও উন্মুক্ত এবং নিয়মভিত্তিক আদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চায়।

অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি অওকাস প্রকাশ্যে কোয়াডের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য প্রণোদনার উপর জোর দিয়েছে,  যার মধ্যে আছে গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান নতুন প্রযুক্তি, সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা, পরিচ্ছন্ন শক্তি, পরিকাঠামো, ভ্যাকসিন কূটনীতি, এবং শিক্ষাগত অংশীদারিত্ব।

গত অক্টোবরে, ইস্ট এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, ‘‌‘‌মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারদের সঙ্গে একটি ইন্দো–প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়নের অন্বেষণ করবে যা বাণিজ্য সুবিধা, ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মান, সরবরাহ শৃঙ্খল, স্থিতিস্থাপকতা, ডিকার্বনাইজেশন ও স্বচ্ছ শক্তি, পরিকাঠামো, কর্মীদের মান এবং অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্র সম্পর্কে আমাদের অভিন্ন উদ্দেশ্যগুলিকে সংজ্ঞায়িত করবে৷”

কোয়াড–এর মতো, যা প্রথম শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে সুনামির পরে ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক ত্রাণের জন্য, আই পি ই এফ কী আকার ধারণ করবে তা নিয়ে একটি অনিশ্চয়তার অনুভূতি রয়েছে৷ কিন্তু এটি যা হবে না তা হল একটি বাণিজ্য চুক্তি। ভারতের জন্য, এটি একটি স্বাগত সতর্কীকরণ।

ভারত এবং আই পি ই এফ

ভারত–মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাণিজ্য চুক্তির প্রতি ভারতের বিতৃষ্ণা এবং বাণিজ্যের বিষয়ে স্পষ্টতই সুরক্ষাবাদী অবস্থান একটা বড় সমস্যা। যদিও ভারতের জাপানের সঙ্গে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি আছে এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি প্রাথমিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ চুক্তি প্রাথমিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ চুক্তি রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা থেকে শুয়োরের মাংস পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে বিভিন্ন স্তরের খুঁটিনাটিতে আটকে থেকেছে। তবে ২০২১ সালের নভেম্বরে ট্রেড পলিসি ফোরাম শুয়োরের মাংস ও আমের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বাণিজ্যের পথপ্রদর্শক হয়েছে। কিন্তু নানা বাধা এখনও রয়েছে, যে কারণে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতকে একবার ‘‌শুল্ক রাজা  ’‌ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।

অন্যরা যখন আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের (আর সি ই পি) জন্য শপথ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, ঠিক তখনই ভারত সেই মঞ্চ থেকে দূরে সরে এসেছিল। তখন বড়সড় বাধাটি ছিল ড্রাগন, অর্থাৎ চিন। নয়াদিল্লির আতঙ্ক ছিল যে এই বাণিজ্য ব্লকটি বেজিংকে এই অঞ্চলের বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লকগুলির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেবে, এবং তার ফলে ভারত আরও ধাক্কা খাবে। অন্য উদ্বেগ ছিল ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য দুর্বল অভ্যন্তরীণ বাজার, এবং শীঘ্রই সস্তা চিনা আমদানির প্লাবনের ফলে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার হারানোর সম্ভাবনা।

আই পি ই এফ–কে ওয়াশিংটনের জন্য একটি ট্রেডিং ব্লক–এর পরিবর্তে ইন্দো–প্যাসিফিক বাণিজ্য ব্লক তৈরির উপায় হিসাবে দেখা হয়েছে, যেটি বাণিজ্য সংক্রান্ত বাধানিষেধ না–কমানোর মধ্যে দিয়ে নতুন দিল্লির মতো কোয়াড খেলোয়াড়দের প্রলুব্ধ করে।

আর সি ই পি অথবা সি পি টি পি পি–র মতো আই পি ই এফ কোনও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নয়। কিন্তু মূল টি পি পি চুক্তির জায়গায় এখন এই অঞ্চলে বেজিংয়ের অর্থনৈতিক আধিপত্যকে প্রশমিত করতে ওয়াশিংটনের শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রসার প্রয়োজন। মাঝে মাঝে কোয়াডকে চিনের উল্লেখ না–করেই চিনের উল্লেখ করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখা হয়েছে (একটি উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, এবং চারটি দেশের অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উল্লেখের মাধ্যমে)। একইভাবে, আই পি ই এফ–কে ওয়াশিংটনের জন্য একটি ট্রেডিং ব্লক–এর পরিবর্তে ইন্দো–প্যাসিফিক বাণিজ্য ব্লক তৈরির উপায় হিসাবে দেখা হয়েছে, যেটি বাণিজ্য সংক্রান্ত বাধানিষেধ না–কমানোর মধ্যে দিয়ে নতুন দিল্লির মতো কোয়াড খেলোয়াড়দের প্রলুব্ধ করে।

যেহেতু আই পি ই এফ একটি প্রথাগত বাণিজ্য চুক্তি নয়, তাই এখন পর্যন্ত ১৪ সদস্য স্বাক্ষরকারী হওয়া সত্ত্বেও তারা এর চারটি স্তম্ভ মেনে চলতে বাধ্য নয়। বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, আই পি ই এফ বাজারে প্রবেশাধিকারের প্রতিশ্রুতি বা শুল্ক হ্রাসকে বলবৎ করবে না, যা নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।

আকর্ষণীয় বিষয় হল, আই পি ই এফ–এ মধ্যে চার কোয়াড সদস্য, সাত আসিয়ান সদস্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিজি ও নিউজিল্যান্ড রয়েছে। এখানকার অনেকেই আবার আর সি ই পি–র সদস্য, যার মধ্যে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে আই পি ই এফ–এর বাকি সব সদস্য এবং চিন, কম্বোডিয়া, লাওস ও মায়ানমার রয়েছে। শেষ চারটি দেশ আই পি ই এফ–এ নেই। এই দুটির তুলনা করা অবশ্য অনেকটা চক ও পনিরের তুলনা করার মতো হবে, কারণ তারা ট্রেডিং ব্লক নয়, তবে তাদের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক আধিপত্যের জন্য প্রতিযোগিতায় ওয়াশিংটন–বেজিং উপাদান রয়েছে।

আসিয়ানের কেন্দ্রীয়তা আবারও পরীক্ষার মুখে পড়েছে । দক্ষিণ চিন সাগরের জটিলতার পর থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মতো আসিয়ান শক্তিগুলি, যাদের নৌবাহিনী স্প্র্যাটলিস এবং প্যারাসেলস দ্বীপপুঞ্জে চিনা সামরিক সম্প্রসারণের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল, তাদের বেজিংয়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রোশ আছে। আপক্তি মূলত থাইল্যান্ড থেকে এসেছিল, যাদের দক্ষ রাষ্ট্রনীতি প্রাচীনকাল থেকে ঔপনিবেশিক বাহিনীকে রাজত্ব করা থেকে বিরত রেখেছে। থাইল্যান্ড চিনকে এই অঞ্চলের জন্য বিপদ হিসেবে দেখে না, এবং বেজিং সম্পর্কে ব্যাংককের উদ্বেগ ওয়াশিংটনের মতো নয়।

এছাড়াও মাঠে আছে কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমার, যারা বেজিংয়ের অর্থনৈতিক নীতিতে আরও বেশি সম্পৃক্ত এবং তাদের উদীয়মান অর্থনীতিতে বিনিয়োগের কারণে বেজিংয়ের প্রতি যাদের ভূ–রাজনৈতিক কৃতজ্ঞতা রয়েছে ।

চিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দক্ষতার প্রেক্ষিতে কোয়াডের মতো আই পি ই এফ–ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে জাঁকিয়ে বসতে চায়। চিন যখন তার সৌর বিনিয়োগ তিনগুণ করেছে, সেই সময় এই অংশীদারির লক্ষ্য অতিমারীর ফলে ব্যাহত সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্নির্মাণ এবং জলবায়ু কর্মের উপর মনোযোগ নিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা।

বাইডেন এবং আই পি ই এফ যা হাইলাইট করতে চায় তা হল চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বি আর আই) বিনিয়োগের কাঠামোটির কোনও স্পষ্ট আকার না–থাকার বিষয়টি এবং বেজিংয়ের কোষাগারের উপর নির্ভরতার ফলে সৃষ্ট কিছু ঋণ–ফাঁদের রূপরেখা, যার উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা। পরিবর্তে আই পি ই এফ  অর্থনৈতিক স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

চিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দক্ষতার প্রেক্ষিতে কোয়াডের মতো আই পি ই এফ–ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে জাঁকিয়ে বসতে চায়। চিন যখন তার সৌর বিনিয়োগ তিনগুণ করেছে, সেই সময় এই অংশীদারির লক্ষ্য অতিমারীর ফলে ব্যাহত সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্নির্মাণ এবং জলবায়ু কর্মের উপর মনোযোগ নিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা। অন্যান্য আর্থিক অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে এই অঞ্চলের উদীয়মান বাজারগুলিকে লুন্ঠনমূলক বিনিয়োগ, মানি লন্ডারিং ও করফাঁকির মতো আর্থিক অপরাধ ধরতে সহায়তা করে আর্থিক স্বচ্ছতা আনা।

উপসংহার

ওয়াশিংটনের জন্য নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক ব্যতিক্রমী। ভারত কোনও চুক্তিবদ্ধ জোটের অংশ নয়;‌ পরিবর্তে এই সম্পর্কে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সামরিক সহযোগিতা পর্যন্ত কৌশলগত অংশীদারিত্বের গভীরতা আছে। কিন্তু ওয়াশিংটন বুঝতে পারে যে এই অঞ্চলের ব্যুৎপত্তি (ইন্দো–প্যাসিফিক) হল ভারত, এবং যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এই অঞ্চলে বিপদাপন্ন হয়, তখন শুধু ভারতের উপরেই সে নির্ভর করতে পারে। কারণ ভারত হল একমাত্র কোয়াড সদস্য যার চিনের স্থল সীমান্ত বিবাদ রয়েছে।

কয়েক বছর আগে একজন নেতৃস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিক বলেছিলেন যে ভারত ছাড়া ব্রিকস–কে (রাশিয়া ও চিনের  উপস্থিতিতে) দেখাবে এমন একটি চুক্তির মতো যার লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং ভারত ছাড়া কোয়াডকে মনে হবে চিনবিরোধী (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওজনের কারণে)। ভূ–রাজনৈতিক চুক্তির ঝাঁঝালো মশলার ঝাঁঝ সামলাতে ভারত ছিল প্রশমনকারী মাখন।

কিন্তু ২০২০ সালে গালওয়ানের ঘটনাগুলি ভারতের মনো‌ভাবে পরিবর্তন এনেছে, বিশেষ করে যখন নতুন দিল্লি পবিত্র বলে মনে করে এমন একটি অঞ্চল থেকে চিনা বৈশিষ্ট্য খোদাই করা প্রবাদের গ্রিক সোর্ড অফ ডেমোক্লিস সরানোর প্রশ্ন রয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.