Author : Jhanvi Tripathi

Published on Dec 26, 2023 Updated 8 Days ago
বিনিয়োগ সুবিধা: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বৈধতা সংকট

৬ জুলাই ২০২৩ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (‌ডব্লিউটিও)‌–র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল, কারণ সেই দিনে তিন বছর আলোচনার পর অংশগ্রহণকারী সদস্যেরা তথাকথিত ‘‌বিনিয়োগ সুবিধার জন্য উন্নয়ন’‌ (আইএফডি) চুক্তির আলোচনা শেষ করে। সাধারণ বিশেষণ — ‘যুগান্তকারী অর্জন; গ্রাউন্ড–ব্রেকিং; নতুন টার্নিং পয়েন্ট’‌ — সবই এই ক্ষেত্রে ঠিকভাবে প্রযোজ্য।

তবে ঐকমত্যের সম্ভাবনা ঘিরে উচ্ছ্বাসের মধ্যে, যা অবশ্যই আইএফডি নিরাপদে দাবি করতে পারে যেহেতু ১১০জন সদস্য অংশগ্রহণ করেছিল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও ব্যবস্থার সমর্থকেরা অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক কিছু উল্টে দিয়েছে। এর কারণ এই যে আলোচনাটি শুধু আদর্শ পদ্ধতির বাইরেই ঘটেনি, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনি।

চুক্তির সমর্থকেরা উল্লেখ করবেন যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে এই সদস্যদের  কোনও বাধা ছিল না। এই চুক্তিগুলিতে অনেক বেশি কিছু দাঁওতে রয়েছে, যার জন্য বিশ্ব বাণিজ্যে এই ধরনের পরবর্তী প্রজন্মের বাণিজ্য আলোচনা থেকে মূল প্রভাবশালীদের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি কাম্য নয়। কী তাদের থামাচ্ছে? চ্যুতিরেখাটি কোথায়? ভারতের কি সাধারণ সমাধান খুঁজে বার করার জন্য একইরকমভাবে দ্বিধান্বিত অন্য অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত?

চুক্তির সমর্থকেরা উল্লেখ করবেন যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে এই সদস্যদের  কোনও বাধা ছিল না।

গোডোর জন্য অপেক্ষা

উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের মরিয়া প্রয়াসে বিভিন্ন জয়েন্ট স্টেটমেন্ট ইনিশিয়েটিভস (জেএসআই)–এর অংশগ্রহণকারী সদস্যরা পরিষেবা অভ্যন্তরীণ নিয়মবিধি, ই–কমার্স, বিনিয়োগ সুবিধা ও অন্য উদীয়মান বিষয়গুলির ভবিষ্যৎ বাণিজ্য নিয়ম নিয়ে আলোচনা করছে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটি বাণিজ্যের নতুন ক্ষেত্রগুলিতে বাণিজ্য নিয়ম নিয়ে আলোচনা করার জন্য সমমনস্ক সদস্যদের একত্র করছে, যা আনুষ্ঠানিক দোহা রাউন্ড ম্যান্ডেটের অংশ নয়। এমনকি তারা দোহা ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্ডার একটি অংশ হলেও, এর রূপ ও গঠন ভিন্ন কারণ তারা বিদ্যমান ডব্লিউটিও চুক্তির সঙ্গে যুক্ত।

যাই হোক, যেমন বলা হয়ে থাকে, নরকের পথটিও ভাল উদ্দেশ্য দিয়ে প্রশস্ত করা যায়। জেএসআই সমস্যাযুক্ত হয়ে পড়েছে কারণ তারা ট্রেড নেগোশিয়েটিং কমিটির (টিএনসি) বাইরে, অর্থাৎ যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সকল ডব্লিউটিও সদস্য সম্মত হয়েছে, তারা তার বাইরে কাজ করছে। যদিও জেএসআইগুলি তাদের নিজস্ব উপায়ে চাপ এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য উদ্বেগগুলির উপর একটি কথোপকথন তৈরি করার চেষ্টা করছে, এই কথোপকথনগুলি ডব্লিউটিও–র কাছে উপলব্ধ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে ঘটছে, যা তাদের বৈধতা কেড়ে নেয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের মূল্য থাকে না যদি তারা নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ না–করে, বিশেষ করে যখন আরও শক্তিশালী সদস্যেরা তা পছন্দ করছে না। এটা ভন্ডামি ও জোর করে এগিয়ে চলার সমতুল্য।

২০১৭ সালে শুরু হওয়া অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটি বাণিজ্যের নতুন ক্ষেত্রগুলিতে বাণিজ্য নিয়ম নিয়ে আলোচনা করার জন্য সমমনস্ক সদস্যদের একত্র করছে, যা আনুষ্ঠানিক দোহা রাউন্ড ম্যান্ডেটের অংশ নয়।[/pullquote]

এটি একটি সমস্যা যা ভারত ক্রমাগত তুলে ধরেছে, এবং জেএসআই ব্যবস্থা নিয়ে তার সমস্যার কথা জানিয়েছে। যাই হোক, পুরো বিষয়টি এই দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করে যে দেশটির উচিত এই বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে সমমনোভাবাপন্ন অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা করা, কারণ তা না হলে জেএসআই–এরই আদর্শ পথ হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকবে।

চিত্র ১: ডব্লিউটিও অর্গানোগ্রাম



আমরা চিত্র ১ থেকে দেখতে পাচ্ছি, ‌ডব্লিউটিও–তে বহুপাক্ষিক আলোচনার নজির রয়েছে। কিন্তু এই বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলির প্রতিটি একটি ঐকমত্যভিত্তিক কাজের কর্মসূচির উপর ভিত্তি করে ছিল। জেএসআই–গুলি এই শ্রেণিতে পড়ে না, যার ফলে সেগুলি হয়ে ওঠে কী করা যেতে পারে তার একটি উইশ লিস্টের চেয়ে সামান্য বেশি কিছু।

দোহা রাউন্ডের আনুষ্ঠানিক আলোচনার রাউন্ডে তাদের যোগ করা হয়নি বলে জেএসআই–এর বৈধতার অভাব রয়েছে। যদিও দোহার মৃত্যু হয়েছে বলে সাধারণ ঐকমত্য রয়েছে, আলোচনায় ‌ডব্লিউটিও পদ্ধতির সংস্কারের জন্য কোনও গুরুতর প্রচেষ্টা করা হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার মাধ্যমে যে ব্যবস্থাটি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেই ব্যবস্থাটিকেই অসম্মান করা হচ্ছে।

ডব্লিউটিও সংস্কারে তর্কযোগ্যভাবে আরও চাপ প্রয়োগের বিষয়টিতে যথাযথ মনোযোগ না–দিয়ে নতুন ইস্যুতে চুক্তির জন্য চাপ দেওয়া আরও বিরক্তিকর। যদি ব্যবস্থাটি দক্ষতার সঙ্গে কাজ না–করে এবং ‌ডব্লিউটিও–র মধ্যে আলোচনা প্রক্রিয়ার বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে বর্তমান ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একই শক্তি ব্যবহার করা যাবে না কেন?

সংস্কারের প্রশ্নটি সত্যিকার অর্থে এক রূপক পরিত্রাণের প্রতীক্ষার মতো হয়ে উঠেছে, যা কখনই আসে না এবং চাকা ঘুরতে বাধ্য হয়।

শ্রোডিংগারের চুক্তি

অফিসিয়াল ফ্যাক্টশিটের উপর ভিত্তি করে আইএফডি–তে যে প্রতিশ্রুতিগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলি সবই ‘‌সর্বোত্তম প্রচেষ্টা’‌র জন্য দেশীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা। এটি বোঝায় যে দেশগুলির কোনও বাধ্যতামূলক দায় থাকবে না, তবে প্রস্তাবিত শব্দবন্ধের অনুসরণে তারা সর্বসম্মত প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করার জন্য ‘‌যথাসাধ্য চেষ্টা করবে’‌৷ এর অ–দায়বদ্ধ প্রকৃতি এই গোষ্ঠীগুলির বিভিন্ন ধরনের সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্য নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।

ডব্লিউটিও সংস্কারে তর্কযোগ্যভাবে আরও চাপ প্রয়োগের বিষয়টিতে যথাযথ মনোযোগ না–দিয়ে নতুন ইস্যুতে চুক্তির জন্য চাপ দেওয়া আরও বিরক্তিকর।

এটি থেকে সক্রিয়ভাবে ‘‌বাজারে প্রবেশের সুযোগ, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ও বিনিয়োগকারী–রাষ্ট্র বিরোধ নিষ্পত্তি (আইএসডিএস)’‌ বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে এই সমস্যাগুলি নিয়ে বহুপাক্ষিক স্তরে আদৌ আলোচনা করা উচিত কি না, তা বাদ দিলেও একটি আইএফডি চুক্তির প্রয়োজনীয়তা যা এই সমস্যাগুলিকে বাদ দিতে চায় তার ব্যাখ্যা প্রয়োজন৷ সারভিসেস ডোমেস্টিক রেগুলেশন (এসডিআর) সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতি সমঝোতায় একই ধরনের ইস্যু উঠেছিল। যদিও এসডিআর রেফারেন্স পেপারে  থাকা নিয়মগুলি গুরুত্বপূর্ণ, প্রথম বিভাগে একটি ধারা  রয়েছে  (পয়েন্ট ৫) যা সদস্যদের বেরিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দেয়, এবং কার্যকরভাবে নথিটিকে অ–বাধ্যতামূলক করে তোলে।

যদিও চুক্তির প্রকৃত বয়ান এখনও প্রকাশিত হয়নি, অন্য একটি আইএসডি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট সমস্যা পাবলিক ফ্যাক্ট শিট থেকে স্পষ্ট। ফ্যাক্ট শিট এটা স্পষ্ট করে যে প্রকৃত বাণিজ্য উদারীকরণের দিকে চালিত করবে এমন কিছুই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। স্বচ্ছতা এবং বিশেষ ও পার্থক্যমূলক চিকিৎসার বিষয়গুলি ট্রেড রিলেটেড ইনভেস্টমেন্ট মেজারস (ট্রিমস) চুক্তির চেয়ে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি করেছে কি না তা দেখতে হবে। তবে করেছে বলে মনে হয় না, কারণ ট্রিমস চুক্তিটি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল যে পণ্যের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য সীমাবদ্ধকরণ বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ করা যাবে না। নিয়মের বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কিং এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে (এলডিসি) সক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএফডি আরও অস্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে।

ডব্লিউটিও–র মধ্যে অন্যান্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে যা এই উভয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রশ্ন উঠছে যে যদি আইএফডি প্রয়াসটিকে যথেষ্ট পরিমাণে এগিয়ে না–দেয়, তাহলে এমন একটি চুক্তির মাধ্যমে ধাক্কা দেওয়ার জন্য নিয়মিত মানসম্মত পদ্ধতিগুলিকে ফাঁকি দেওয়ার প্রয়োজন কোথায়?

রুবিকন ও যৌক্তিকতা

চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হল, প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায্যতার অভাব সত্ত্বেও জেএসআই এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পদ্ধতি কি ডব্লিউটিও-র জন্য একমাত্র ভবিষ্যৎ?

নিয়মের বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কিং এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে (এলডিসি) সক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএফডি আরও অস্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে।

গুরুতর সংস্কারের প্রয়াস করা না–হলে, স্বল্পমেয়াদে এমনই হতে পারে। আমরা যদি এটিকে নতুন স্বাভাবিক হিসাবে নিতে চাই, ভারত নীতি বনাম অগ্রাধিকারের একটি খুব বাস্তব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। সিস্টেমে বিশ্বাস রাখা এবং অবশ্যই সংশোধনের আশা করা কি সম্ভব, নাকি আমাদের টিকে থাকার জন্য অন্য পথ নিতে হবে?

এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত আগামী বছর ত্রয়োদশ মন্ত্রী-পর্যায়ের সম্মেলনে (MC13) দেওয়া হবে৷ ভারত এবং তার সমমনা অংশীদারদের উচিত ডব্লিউটিও ব্যবস্থাকে উদ্ধারের জন্য সংস্কারের প্রস্তাবগুলি পেশ করার জন্য সচেতন পরিকল্পনা করা। না-হলে আমাদের নতুন সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্য করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।


জাহ্নবী ত্রিপাঠী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জিওইকোনমিক্স স্টাডিজ প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.