Published on Mar 29, 2023 Updated 0 Hours ago

বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা বিদ্যমান ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয়তার মডেলকে আরও উন্নত করতে পারে

আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠান: ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় আলাপ-আলোচনাকে সশক্ত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার

ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ভারতীয় সংবিধানের একটি অনন্য উদ্ভাবন। ভারতীয় সংবিধান যেহেতু ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি শুরু হওয়ার পর থেকে ৭৪ বছর পূর্ণ করেছে, এটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মূল্যায়ন এবং যাচাই করার জন্য একটি উপযুক্ত মুহূর্ত যা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর রূপ দিয়েছে। ভারতের সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয়তার এক অনন্য মডেল প্রদান করেছে যাকে প্রায়ই ‘কেন্দ্রীভূত যুক্তরাষ্ট্রীয়তা’ বলা হয়। এর কারণ হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ধ্রুপদি মডেলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সংবিধান প্রণেতারা স্বাধীনতার পরপরই সামাজিক বিরোধের মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে রাজ্যগুলির চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাজ্যের সীমানা তৈরি, আর্থিক সংস্থান, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা এবং রাজ্যগুলিতে জরুরি শাসন জারির বিষয়ে সংবিধান কেন্দ্রকে বাড়তি ক্ষমতা প্রদান করেছে।

প্রেক্ষিত নির্ধারণ

বহুকাল থেকে কেন্দ্রের সাংবিধানিক ভাবে অনুমোদিত উচ্চতর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, রাজ্যগুলির জন্য ক্ষমতার এক্তিয়ার স্পষ্ট ভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিসরে রাজ্যগুলির কর্তৃত্বের একটি উল্লেখযোগ্য এবং স্বতন্ত্র ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে রাজ্য সরকারগুলি শাসন করার জন্য যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা ভোগ করে। সম্পদের লভ্যতা, বণ্টন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্বেগের পাশাপাশি ভারতের একটি অত্যন্ত জটিল এবং বৈচিত্র্যময় সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত রয়েছে। এ হেন এক প্রেক্ষাপটে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সমন্বিত এবং বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক দিকে কেন্দ্র জাতীয় স্তরে শাসনের বিষয়গুলিকে রূপ দান করে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দিকগুলিতে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রধান সমন্বয়কারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে কাজ করে। অন্য দিকে রাজ্য সরকারগুলি রাজ্য স্তরে শাসনের আঞ্চলিক এবং স্থানীয় প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এই ধরনের একটি ভারসাম্যমূলক মডেল কার্যকর ভাবে জাতীয় একীকরণ এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দ্বৈত প্রয়োজনীয়তাকেই কার্যকর করে, যা একটি বৈচিত্র্যময় রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কার্যকরী ভারসাম্য ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় মডেলকে কিছু প্রধান জটিল প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ও তার সমাধান করতে সহায়তা করেছে যার মধ্যে রয়েছে স্বায়ত্তশাসনের বিভিন্ন দাবি, বস্তুগত সম্পদের উপর দাবি এবং অন্যান্য ধরনের আনুষঙ্গিক পরিস্থিতি।

ভারতের কেন্দ্রীভূত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা এবং বহুদলীয় ব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির পাশাপাশি রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার একটি সহযোগিতামূলক মডেল সুনিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় মিথস্ক্রিয়াকে অপরিহার্য করে তোলে।

যদিও ভারতের কেন্দ্রীভূত যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো, আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা এবং বহুদলীয় ব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির পাশাপাশি রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার একটি সহযোগিতামূলক মডেল সুনিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় মিথস্ক্রিয়াকে অপরিহার্য করে তোলে। রাজ্যগুলিতে আর্থিক ও অন্যান্য সম্পদের বণ্টন, কেন্দ্র কর্তৃক রাজ্যগুলিতে নিযুক্ত রাজ্যপালের ভূমিকা এবং রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকার মতো কিছু বিষয় অনেক সময় কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধ তৈরি করে। সর্বোপরি নদীর জল বণ্টন বা অঞ্চলগুলির উপর আধিপত্যের দাবির মতো সংস্থানগুলির বণ্টনও রাজ্যগুলির মধ্যে বিরোধের একটি বিষয় হয়ে ওঠে, যেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ মীমাংসা প্রয়োজন৷

যুক্তরাষ্ট্রীয় আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠান

এ বিষয়ে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি প্রশাসনের অন্য সমস্যাগুলি সমাধানের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় শক্তিদের জন্য যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ প্রদান করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রীয় আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সরকারের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে যোগাযোগের পদ্ধতি এবং পথগুলিকে নির্দেশ করে: কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলি সমন্বিত শাসনের জন্য অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতি শাসনের সুনির্দিষ্ট এক্তিয়ারগুলিকে অনেকাংশে নির্দিষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত করলেও নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রগুলিও বিদ্যমান, যেগুলির মধ্যে ব্যাপক অভিন্নতা জড়িত এবং সরকারগুলির মধ্যে পরামর্শ ও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে৷ এ হেন আন্তঃসরকারি যোগাযোগ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পাশাপাশি রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যেও হতে পারে। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই ভারতে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির কার্যনির্বাহী শাখাগুলির মধ্যে আন্তঃ-সরকারি সমন্বয়ের কিছু সুনির্ধারিত বিধান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার জন্য একটি মূল আন্তঃ-সরকারি প্রতিষ্ঠান হল ইন্টার-স্টেট কাউন্সিল (আইএসসি), যেটি ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে নীতি, সাধারণ স্বার্থের বিষয় এবং রাজ্যগুলির মধ্যে বিরোধ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারিয়া কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এ বিষয়ে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হল ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিল, পূর্ববর্তী পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিস্থাপন হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত; আইনসভা-সহ সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীরা; অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর; পদাধিকারী সদস্য; ভাইস চেয়ারম্যান, নীতি আয়োগ; পূর্ণ সদস্য, নীতি আয়োগ; এবং বিশেষ আমন্ত্রিতরা। এই সংস্থাটিকে উন্নয়ন আখ্যান গঠনে রাজ্যগুলির সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি ‘জাতীয় অগ্রাধিকার এবং কৌশলগুলি ভাগ করে নেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি’ তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হল ভারতের পাঁচটি আঞ্চলিক কাউন্সিল- উত্তর, পশ্চিম, পূর্ব, দক্ষিণ এবং মধ্য, যা স্টেটস রিঅর্গানাইজেশন অ্যাক্ট (রাজ্য পুনর্গঠন আইন), ১৯৫৬-র তৃতীয় অংশের সংসদীয় আইন দ্বারা গঠিত হয়েছিল। এগুলি হল উচ্চ স্তরের উপদেষ্টা সংস্থা, যার মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিটি অঞ্চলের মন্ত্রী এবং রাজ্যের সরকারি সচিবরা। ‘এর উদ্দেশ্য হল আন্তঃরাজ্য সমস্যার সমাধান, সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং সুসংহত  কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি অঞ্চলে একটি সাধারণ পরিসর প্রদান করা।’ পরবর্তী কালে এই অঞ্চলের রাজ্যগুলি নিয়ে ১৯৭২ সালে প্রাথমিক ভাবে একটি উপদেষ্টা সংস্থা হিসাবে নর্থ-ইস্টার্ন কাউন্সিল (এনইসি) আইনের (১৯৭১) অধীনে গঠিত হলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরামর্শের ভিত্তিতে তা একটি আঞ্চলিক পরিকল্পনা সংস্থা হিসাবে কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় আলাপ-আলোচনার সশক্তিকরণ

যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে – যেমন কোভিড-১৯-এর মতো আপৎকালীন পরিস্থিতিতেও যেমনটা লক্ষ করা গিয়েছে – সমন্বিত পরিকল্পনা, তথ্যের লভ্যতা, সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন, পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ এবং আলাপ-আলোচনা অপরিহার্য।

বিভিন্ন যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও গঠনমূলক আলাপ-আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের এই বিস্তৃত পরিসর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে – যেমন কোভিড-১৯-এর মতো আপৎকালীন পরিস্থিতিতেও যেমনটা লক্ষ করা গিয়েছে – সমন্বিত পরিকল্পনা, তথ্যের লভ্যতা, সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন, পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ এবং আলাপ-আলোচনা অপরিহার্য। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বিভিন্ন মাত্রার পরিকল্পনা করার জন্য অবিচ্ছেদ্য মঞ্চ হিসাবেই কাজ করে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় বিরোধগুলি সমাধানে একটি গঠনমূলক ভূমিকাও পালন করতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় অংশীদারদের দ্বারা তুলনামূলক ভাবে কম-রাজনৈতিক পরিবেশে আলাপ এবং আলোচনা চালাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা শাসনের সংবেদনশীল প্রশ্নগুলির সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক সময় পরিচয় ও বস্তুগত স্বার্থের জটিল গতিশীলতার সঙ্গে জড়িত। ভারতীয় সংবিধান দ্বারা পরিকল্পিত ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়্তার মডেলটি বিগত সাত দশকে একটি বৈচিত্র্যময় সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সঙ্কট ব্যবস্থাপনার অন্যতম কার্যকরী মডেল হিসাবে উঠে এসেছে এবং একটি শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা তার সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.