Author : Abhijit Singh

Published on Jan 29, 2023 Updated 0 Hours ago

ভারত তার সাবমেরিন বহরের আধুনিকীকরণ করছে, কিন্তু প্রয়াসটি চ্যালেঞ্জিং

আইএনএস বাগির: ভারতের সাবমেরিন আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা

২০ ডিসেম্বর, ২০২২–এ ভারতীয় নৌবাহিনী প্রকল্প–৭৫–এর অধীনে পঞ্চম সাবমেরিন কালভারি শ্রেণির আইএনএস বাগির হাতে পেয়েছে। নেভাল গ্রুপ–এর সহযোগিতায় মুম্বইয়ের মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (‌এমডিএল)‌ নির্মিত বাগির হল একটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন, যাতে শব্দশোষণ (‌অ্যাকোস্টিক অ্যাবসর্পশন)‌‌–সহ উন্নত গোপনগমন (‌স্টেলথ)‌ বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ এটি নানা ধরনের মিশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেমন অ্যান্টি–সারফেস, অ্যান্টি–সাবমেরিন, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ,  নজরদারি ও মাইন স্থাপন। সাবমেরিনটি ২০২০ সালের নভেম্বরে চালু করা হয়েছিল, এবং মাত্র দু’‌ বছরের মধ্যে এটি সাজসরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের পরীক্ষা–নিরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর এখন ২০২৩ সালের শুরুর দিকে কমিশনের জন্য ভাল জায়গায় রয়েছে। এর পরীক্ষা ও মূল্যায়নের গতি ইঙ্গিত দেয় যে নৌবাহিনী সাবমেরিন নৌবহর আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করছে।

ভারতের নিরাপত্তা পরিকল্পনাকারীরাও অত্যন্ত সচেতন যে গত এক দশকে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান কর্মপদ্ধতিগত (‌অপারেশনাল)‌ ঘাটতি হল আক্রমণাত্মক  সাবমেরিনের অভাব।

সাবমেরিন বহরের আধুনিকীকরণে ভারতের দ্রুত পদক্ষেপের কারণ সহজেই বোঝা যায়। যখন চিন ভারত মহাসাগরে তার নৌ–উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তেমন একটি সময়ে ভারতীয় পর্যবেক্ষকেরা ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং কৌশলগত প্রভাবের ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারতীয় বিশ্লেষকরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন সমুদ্রের জলের নিচে চিনা ড্রোনগুলি নিয়ে, যেগুলিকে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার নিকট–সাগরে দেখা গেছে। এগুলিকে পূর্ব ভারত মহাসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের চারপাশের জলেও মোতায়েন করা হতে পারে। কাজেই, ভারতের নৌ–নেতৃত্ব ডিজেল–ইলেকট্রিক সাবমেরিনগুলির উপর ফোকাস করছে, যেগুলি সমুদ্রতীরে টহল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

ভারতের নিরাপত্তা পরিকল্পনাকারীরাও অত্যন্ত সচেতন যে গত এক দশকে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান কর্মপদ্ধতিগত (‌অপারেশনাল)‌ ঘাটতি হল আক্রমণাত্মক সাবমেরিনের অভাব। মাত্র ১৫টি প্রথাগত সাবমেরিন–সহ নৌবাহিনীর সাবমেরিন শাখা যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। শুধু যে এখন বহরের মাত্রা আদর্শ ২৪–এর থেকে কমপক্ষে নয়টি কম রয়েছে তাই নয়, সাবমেরিন বহরের সবথেকে জোরালো কিলো শ্রেণির (সিন্ধুঘোষ) সাবমেরিনগুলো তাদের কর্মজীবনের শেষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। জুলাই ২০২২–এ আইএনএস সিন্ধুধ্বজ ডিকমিশন করা এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে যা দশকের শেষের দিকে এই শ্রেণির সমস্ত ডুবোজাহাজের অবসর নেওয়ার সঙ্গে শেষ হবে।

নতুন দিল্লির জন্য উদ্বেগের বিষয় হল, কিলো শ্রেণির সাবমেরিন প্রতিস্থাপন কর্মসূচি প্রকল্প–৭৫ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ছয়টি স্করপিন শ্রেণির সাবমেরিন এসে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রথম জাহাজটি, আইএনএস কালভেরি,  প্রত্যাশার চেয়ে পাঁচ বছর পরে, ২০১৭ সালের আগে, চালু করা যায়নি। আরও দুটি সাবমেরিন, আইএনএস খান্দেরি ও আইএনএস করঞ্জ ২০২০ সালের মধ্যে পরিষেবাতে অন্তর্ভুক্ত হয়, কিন্তু তাদের কোনওটির কাছেই তাদের প্রধান অস্ত্র টর্পেডোর সম্পূর্ণ স্টক ছিল না। ১০০টি ব্ল্যাক শার্ক  টর্পেডো সরবরাহ করা যায়নি, কারণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ফিনমেকানিকাকে কালো তালিকাভুক্ত করে (অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড ভিভিআইপি হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে), এবং তার ফলে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ডব্লিউএএসএস অস্ত্র সরবরাহ করতে পারেনি।

প্রকল্পটি ‘‌মেক ইন ইন্ডিয়া’‌–র অধীনে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হতে চলেছে, এবং সম্ভাব্যভাবে এটি দেশে সাবমেরিন নির্মাণের জন্য একটি শিল্প–বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

সাবমেরিন বহরের মাত্রার হ্রাস এখন কালভেরি ক্লাসের ডেলিভারি ত্বরান্বিত করতে বিলম্বিত প্রতিক্রিয়ার সূচনা করেছে। বাগির–এর ডেলিভারি (এবং এই বছরের শুরুর দিকে সম্ভাব্য কমিশনিং) একটি ভাল সূচনা হবে। স্করপিন প্রোগ্রামের ষষ্ঠ ও চূড়ান্ত সাবমেরিন বাগশির ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর নৌ–পরিচালকেরা প্রকল্প–৭৫(‌১) আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করছেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (এমওডি) ইতিমধ্যেই পি–৭৫(‌১)‌–এর অধীনে ৪৩,০০০ কোটি টাকার আনুমানিক  খরচে ছয়টি প্রথাগত সাবমেরিন নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি অনুমোদন করেছে। প্রকল্পটি ‘‌মেক ইন ইন্ডিয়া’‌–র অধীনে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হতে চলেছে, এবং সম্ভাব্যভাবে এটি দেশে সাবমেরিন নির্মাণের জন্য একটি শিল্প–বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যে, এমওডি ছয়টি নতুন স্টেলথ সাবমেরিন নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্য এমডিএল ও বেসরকারি জাহাজ নির্মাতা লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এলঅ্যান্ডটি)–কে বেছে নিয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনী পারমাণবিক অ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছে। নৌবাহিনী ১৯৯৯ সালে অনুমোদিত ৩০ বছরের সাবমেরিন বিল্ডিং প্ল্যান পরিবর্তন করার অনুমতি চেয়ে ২০২১ সালের মে মাসে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ইন্দো–প্যাসিফিকের পরিবর্তিত কৌশলগত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নৌবাহিনী ছয়টি প্রথাগত আক্রমণকারী জাহাজকে পরমাণু–চালিত প্ল্যাটফর্ম দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে। ভারত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান চিনা মোতায়েন এবং অন্য ইন্দো–প্যাসিফিক শক্তিগুলির সাবমেরিন সক্ষমতা তৈরির প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসাররা একমত হন যে একটি ভারতীয় এসএসএন নির্মাণ কর্মসূচি, তা যতই দীর্ঘ সময় নিক বা জটিল হোক, প্রয়োজনীয় এবং অনিবার্য। ভারতের নৌ–পরিচালকেরা অত্যন্ত সচেতন যে আকুলা শ্রেণির এসএসএন, চক্র, রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ায় দেশের প্রথাগত জলের নিচে যুদ্ধের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যদিও ভারত ইতিমধ্যেই এরকম আর একটি সাবমেরিনের জন্য একটি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ২০২৫ সালে সরবরাহ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে, নৌবাহিনীকে কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে যে কোনও জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ইন্দো–প্যাসিফিকের পরিবর্তিত কৌশলগত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নৌবাহিনী ছয়টি প্রথাগত আক্রমণকারী জাহাজকে পরমাণু–চালিত প্ল্যাটফর্ম দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।

নৌবাহিনী আগামী ১০ বছরে কমপক্ষে ছয়টি পি–৭৫ (১) শ্রেণির সাবমেরিন এবং ছয়টি এসএসএন তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। চিনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী নিবারণমূলক ব্যবস্থা (‌ডেটারেন্স)‌ গড়ে তোলার জন্য নৌবাহিনী শীঘ্রই আইএনএস অরিঘাত, আইএনএস অরিহন্তের পরে দ্বিতীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংবলিত পারমাণবিক সাবমেরিন (এসএসবিএন) কমিশন করতে চাইছে। এস৪ ক্লাসের একটি উন্নত জাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনাও চলছে। এসএসবিএন–এর নতুন শ্রেণির জন্য    ইতিমধ্যে কে৫ (৫,০০০ কিমি) এবং কে৬ (৬,০০০ কিমি) সাবমেরিন–লঞ্চড ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে ৷ কে–৮ একটি আরও বড়, ৮০০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, এবং এটি এখন গবেষণা ও নির্মাণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

তা সত্ত্বেও কালভেরি শ্রেণির সাবমেরিন ও প্রকল্প–৭৫(১) বর্তমানে ভারতের নৌ–পরিকল্পনাকারীদের ভাবনাচিন্তার মুখ্য কেন্দ্রবিন্দু। পরিকল্পনাটি কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে তা অবশ্য এখনও দেখার বিষয়।

এ কথা রিপোর্ট করা হয়েছে যে পি–৭৫ (১) টেন্ডার বা প্রস্তাবের জন্য অনুরোধের (আরএফপি) ক্ষেত্রে বিক্রেতার প্রতিক্রিয়ার সময়সীমা ২০২৩ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে হয়েছে। আপাতভাবে, সাবমেরিনগুলির জন্য ডিজাইন–এর ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর স্টাফ কোয়ালিটিটিভ রিকোয়ারমেন্ট (এনএসকিউআর)–এর বাড়াবাড়ি, অবাস্তব ডেলিভারি সময়সূচি, অকার্যকর দায়বদ্ধতা ধারা, এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রশ্নে কঠোর শর্তের কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সাবমেরিন নির্মাতারা পি–৭৫ (১)–এ অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। বলাই বাহুল্য, ভারতের সাবমেরিন আধুনিকীকরণ কর্মসূচির সাফল্য নির্ভর করবে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ভারতীয় প্রবৃত্তির উপর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.