Author : Kabir Taneja

Published on Aug 01, 2024 Updated 0 Hours ago

হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরো চিফের হত্যা হামাসের নেতৃত্ব, গাজা সংঘাত তার সম্ভাব্য বৃদ্ধি এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে

ইরানে হামাসের রাজনৈতিক প্রধানকে হত্যা: প্রাথমিক বিশ্লেষণ

ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেকের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে - যেখানে ভারত এবং বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের প্রতিনিধি-সহ অনেক আঞ্চলিক নেতা উপস্থিত ছিলেন - হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল  হানিয়াকে তেহরানে হত্যা করা হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে দেশটির সর্বশক্তিমান ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এই খবরটি ঘোষণা করেছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে গাজায় ইরায়েল-হামাস যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হানিয়া। ইরায়েলি বন্দিদের আটক রেখে হামাস ইরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর মধ্যে মাসব্যাপী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। হামাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের তরফে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ। কাতার, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ আটকদের মুক্তির জন্য মধ্যস্থতা করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। এই পরিস্থিতির মাঝেই হানিয়া ছিলেন হামাসের জন্য একক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং সেতুস্বরূপ। একটি বিস্তৃত কাঠামোহামাস প্রতিরোধের অক্ষ অংশ হিসাবে ইরানের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছে, যার মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লা, ইয়েমেনে হুতি (যারা আনসরাল্লা নামেও পরিচিত) এবং সিরিয়া ও ইরাকের রাজনৈতিক পরিসর জুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে অবস্থিত অন্যান্য ছোট শক্তিও অন্তর্ভুক্ত।

 

হানিয়ার প্রভাবের প্রাসঙ্গিকতা

হানিয়ার হত্যার সময় এবং ঘটনাস্থল নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ইরান তার মাটিতে স্বার্থবাদী ব্যক্তিদের নির্মূল বা নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে কার্য সমাপনের জন্য যথেষ্ট পরিচিত। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শীর্ষস্থানীয় ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে-কে তেহরানের উপকণ্ঠে একটি এআই-সহায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে লুঠপাট চালানোর মতো ঘটনা - যেখানে ২০১৭ সালে ইরানের পারমাণবিক উদ্দেশ্য এবং নকশা জনসমক্ষে আনার জন্য ইজরায়েল গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করে আনে - আসলে দু প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে অবিরাম চলতে থাকা সাপে-নেউলে সম্পর্ককেই দর্শায়।

 

হানিয়ার হত্যার সময় এবং ঘটনাস্থল নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ইরান তার মাটিতে স্বার্থবাদী ব্যক্তিদের নির্মূল বা নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে কার্য সমাপনের জন্য যথেষ্ট পরিচিত

 

অক্টোবরের অনেক আগে থেকেই হানিয়াকে হত্যা করার জন্য লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই প্রচেষ্টার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। বন্দি সংক্রান্ত আলোচনায় তাঁগুরুত্ব - যা তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সুদৃঢ় ছিল – তাঁকে হামাসের পক্ষকে শক্তিশালী করার অবিশ্বাস্য সুযোগ প্রদান করেছিল। গোষ্ঠীটি সফল ভাবে একটি সন্ত্রাসবাদী শক্তি থেকে বিপ্লবী হয়ে উঠে জনসাধারণের আখ্যানে

উল্লেখযোগ্য ভাবে নিজের ভাবমূর্তি বদলে সফল হচ্ছিল। হানিয়া গাজার ধ্বংসকাণ্ড থেকে বহু দূরে কাতারে দোহা সুবিশাল মিনারে অপেক্ষাকৃত নিরাপদেই বসবাস করতেন। জুন মাসে ইরায়েলি বিমান হামলায় তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হ। এর আগে এপ্রিল মাসে উত্তর গাজায় হামলায় তাঁর তিন ছেলে নিহত হ

 

ভবিতব্য কী?

এখন যে প্রশ্নটি সামনে উঠে আসছে তা হল, হামাসের নেতৃত্বের উপর, বিশেষ করে গাজা সংঘাতের উপর এর কী প্রভাব পড়বে। এই সমীকরণের ঊর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিক দলাদলির নিরিখে বৃহত্তর প্রশ্নটি আবার আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে এসেছে। এটি অসম্ভাব্য যে হানিয়ার হত্যার বিষয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। প্রাথমিক ভাবে, হামাসের মতো গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের বিষয়টি এ বার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনকে অতিক্রম করেছে। একটি নির্দিষ্ট স্তরের অনুভূত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ক্ষমতার ক্রম জুড়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক ও আদর্শগত ধারণা থাকার দরুন এই নেতারা প্রতিস্থাপনযোগ্য। খালেদ মাশালের মতো হামাস পলিটব্যুরোর সিনিয়র সদস্যরা হানিয়াকে প্রতিস্থাপন করার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। কথাও উল্লেখযোগ্য যে, মাশালের ঊর্ধ্বে উঠে অন্য হামাস নেতাদেরও এ ক্ষেত্রে যোগ্য মনে করা যেতে পারে, যাঁরা গাজায় ঘটা ধ্বংসযজ্ঞের সমাধান সন্ধানে এবং বন্দি আলোচনার বিষয়ে আরও যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব দিতে সমর্থ। কথা মনে রাখা অপরিহার্য যে, গাজায় কৌশলগত ভাবে হামাসের সামরিক শাখা অর্থাৎ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের অধীনে আল কাসাম ব্রিগেডসিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে। অতীতেও এই বিষয়টিকে ব্যক্তিগত স্তরে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যে, অক্টোবরের হামলা পরিচালনা এবং পরবর্তী সময়ে ব্রিগেড দ্বারা ইরায়েলি বন্দিদের আটক… এই দুই বিষয়ই সিদ্ধান্তগ্রহণকে কঠিন ও বিরোধপূর্ণ করে তুলেছে।

 

টি অসম্ভাব্য যে হানিয়ার হত্যার বিষয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। প্রাথমিক ভাবে, হামাসের মতো গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের বিষয়টি এ বার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনকে অতিক্রম করেছে

 

বিভিন্ন স্তরের এই সমস্ত সঙ্কটের মাঝেই হামাসও তার নিজস্ব রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অনেকটা হিজবুল্লা যেমন পার্লামেন্টে ক্ষমতা অর্জন-সহ লেবাননের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে, তেমন হামাস ২০০৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সমান্তরাল ভাবে আরও রাজনৈতিক বাঁকবদলের পথে হেঁটেছে। কারণ দলটির শিকড় সামরিক সমাধানের পক্ষেই সওয়াল করেছে। এই অভ্যন্তরীণ বিবর্তনগুলিকে রক্ষা করাও দলের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। একচেটিয়া ভাবে জঙ্গি আন্দোলনে ফিরে আসা আসলে হামাসের পতনকেই সুনিশ্চিত করতে পারে এবং তা শুধু ইরায়েলের হাতে নয়, বরং সম্ভাব্য ভাবে তার আরব প্রতিবেশীদের তরফেও

রায়েলি আঙ্গিক থেকে দেখলে, প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রাজনৈতিক ভাবে যে ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, তা বিবেচনা করলে অন্তত পক্ষে সমর্থকদের মধ্যে হলেও তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে (এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্তরায়েল কোনও বিবৃতি দেয়নি)। হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দরুন নেতানিয়াহুর অক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে এবং জনগণ পথে নেমে বিক্ষোভ জানাচ্ছে। কিন্তু নেতানিয়াহু বা অন্য কোনরায়েলি প্রাইম মিনিস্টারের জন্য ইরায়েলের প্রশাসনের প্রধান হওয়া এবং হামাসকে ছাড় দেওয়া এক অনভিপ্রেত ভবিতব্য। এবং নেতানিয়াহুর জন্য, সর্বোচ্চ প্রাধান্য না পেলেও উত্তরাধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 

উপসংহার

পরিশেষে, আঞ্চলিক সংঘাত বৃদ্ধির উদ্বেগটি অমূলক নয়। যাই হোক, কথা অসম্ভাব্য যে ইরান – যে দেশটি ২০২০ সালে কাসেম সোলেইমানি হত্যার প্রতিক্রিয়ায় একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেনি - হানিয়ার জন্য সমগ্র অঞ্চল জুড়ে হিংসার আগুন ছড়িয়ে দেবে। তবে প্রতিক্রিয়ার জন্ম অবশ্যই হবে, যেমনটা এ বছরের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে কথিত ইরায়েলি হামলার পরবর্তী সময়ে লক্ষ করা গিয়েছে। তেহরানের জন্য, এই মুহূর্তেসবচেয়ে বড় সঙ্কট কেবল হানিয়ার মৃত্যু নয়। বরং তেহরানে হামাস নেতা নিহত হওয়ার ঘটনাটি কেবল বাহ্যিক বিন্যাসের পরিবর্তে নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে ফের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

 


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.