Published on Jan 31, 2022 Updated 0 Hours ago

বিদ্যুতের সর্বজনীন ব্যবহারের এসডিজি বা স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং হারানো গতি ফিরে পেতে স্বল্পমেয়াদে অফ-গ্রিড সমাধানগুলিকে গ্রহণ করতে হবে।

বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব

এই বিশ্বে প্রায় ৭৭ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ এখনও বিদ্যুতের নাগাল পাননি। স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য শুধু বিদ্যুৎ সংযোগই পর্যাপ্ত নয়, এমন গুণগত মানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা প্রয়োজন যা পরিবেশবান্ধব ও ব্যবহারকারীদের সাধ্যায়ত্ত। স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৭‌ নম্বর লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হল ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রয়সাধ্য মূল্যের নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিদ্যুদয়নের হারে গোটা বিশ্বে অগ্রগতি হয়েছে, যার ফলে ২০০০ সালের ৮৩ শতাংশের জায়গায় ২০১৯ সালে জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বিদ্যুতের নাগাল পেয়েছেন। তবে, এসডিজি রিপোর্ট ২০২১ ইঙ্গিত করে যে বর্তমান গতিতে এগোলে ২০৩০ সালে প্রায় ৬৬ কোটি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন থাকতে পারেন। এর উপর ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) বলেছে কোভিড-১৯ অতিমারি অতীতের বিদ্যুৎ ব্যবহারের অগ্রগতিকে আবার উল্টো দিকে ঠেলে দিয়েছে। এসডিজি৭ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অন্যান্য এসডিজি-কে সহায়তা দেয়, এবং সেই কারণে বিদ্যুতের ব্যবহারের হার কমে গেলে অন্য এসডিজিগুলির অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। এই নিবন্ধে ব্যবহার ও সরবরাহের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের ব্যবহারের উপর কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

লেখক বিদ্যুতের ব্যবহার সংক্রান্ত নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা, নাম–করা জাতীয় সংস্থা ও রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট এবং ২০২০ ও ২০২১ সালে এলসেভিয়ার অ্যান্ড উইলি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলি থেকে ১০টি বাছাই করে সেগুলির পর্যালোচনা করেছেন। সেই পর্যালোচনার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রায়শ–নির্দেশিত ছয়টি প্রভাব তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এবং চিত্র ১–এ উপস্থাপন করা হয়েছে।

চিত্র ১

সূত্র: লেখকের নিজস্ব (উপলব্ধ নথি পর্যালোচনার ভিত্তিতে)

কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে সারা বিশ্বে মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা তাঁদের উপার্জন কমে গেছে, আর তা আরও উল্লেখযোগ্য ভাবে ঘটেছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরতদের মধ্যে। প্রায় ৮ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ, মূলত উন্নয়নশীল এশিয়ায়, ক্রয়ক্ষমতার সমস্যার কারণে বিদ্যুতের বর্ধিত ব্যবহার (‌এক্সটেন্ডেড ইউজ অফ ইলেকট্রিসিটি)‌ থেকে মৌলিক ‌বিদ্যুতে (‌বেসিক ইলেকট্রিসিটি)‌ সরে গিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের কারণে উন্নয়নশীল আফ্রিকা ও এশিয়ার ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কাছে মৌলিক বিদ্যুৎও সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। লকডাউন চলাকালীন বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা ও ব্যবহার কমে গিয়েছিল প্রধানত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে। বিভিন্ন দেশের সরকার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল মকুব করেছে বা দেরিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সেনেগালে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারগুলির জন্য বিদ্যুতের বিল তিন মাসের জন্য ফ্রিজ করা হয়েছিল। ভিয়েতনাম সরকারও কোভিড-১৯ প্রভাবিত পরিবারের বিদ্যুতের বিল কমিয়ে দিয়েছিল। তবে উন্নত দেশগুলোতে আবাসিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে লকডাউন চলার সময় আবাসন ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহার ৩০ শতাংশের মতো বেড়ে গিয়েছিল।

লকডাউন চলাকালীন বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা ও ব্যবহার কমে গিয়েছিল প্রধানত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে।

বিদ্যুতের ব্যবহার কমে যাওয়া এবং মূল্যের ক্ষেত্রে ছাড়ের কারণে সরবরাহের দিকটিতে বিপত্তি ঘটে যায়। ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কো-অপারেশন (আইএফসি)‌–এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের চাহিদা ও ব্যবহার কমার পাশাপাশি ভোক্তাদের বিল দেওয়ার অক্ষমতা এবং বিষয়টি নিয়ে সামাজিক বিবেচনার কারণে বেশ কিছু বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির চুক্তিতে ইতি টেনেছে। ভারতে লকডাউনের সময় বড় গ্রাহকদের চাহিদা কমে যাওয়ার ঘটনা বণ্টন সংস্থাগুলির বকেয়া পাওনাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করেছে। সেই সঙ্গে লকডাউন সারা বিশ্বে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, কিছুটা হলেও বিল সংগ্রহ প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছিল। যেমন, লকডাউনের সময় মিটার দেখা ও বিল জমা করা বা তা সশরীরে সংগ্রহ করার কাজ সীমিত ছিল।

বিদ্যুতের ব্যবহারকারী ও সরবরাহকারীদের ধাক্কা ছাড়াও সরকারগুলিকে জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর ব্যবস্থা উন্নততর করার কাজটিতেও রাশ টানতে হয়েছিল। যেমন, বাংলাদেশ সরকারকে কোভিড-১৯ ও আমফান ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমাতে গিয়ে টিআর-কবিতা কর্মসূচি (যার লক্ষ্য সৌর অফ-গ্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছনোর ব্যবস্থা উন্নত করা) থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা সরিয়ে নিতে হয়েছিল। উপরন্তু, আইএ–র তথ্য অনুযায়ী, যে সব দেশে বিদ্যুতের নাগালের ঘাটতি বেশি, সেখানে ঋণের খরচ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বুরকিনা ফাসো সরকার গ্রামীণ পরিবারগুলির জন্য সৌর কিটের খরচ ৫০ শতাংশ কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল, আর নাইজেরিয়ার অফ-গ্রিড পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সংস্থাগুলির জন্য ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার ত্রাণ তহবিলের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।

বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করার কম ব্যয়বহুল উপায় হল অফ-গ্রিড প্রযুক্তির ব্যবহার করা। দরিদ্র দেশগুলিতে সকলের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সৌর অফ-গ্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় উপায়। কিন্তু অতিমারি অফ-গ্রিড সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করেছিল, এবং সেই সঙ্গে উপাদানের সরবরাহ ব্যাহত করেছিল। বুরকিনা ফাসো সরকার গ্রামীণ পরিবারগুলির জন্য সৌর কিটের খরচ ৫০ শতাংশ কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল, আর নাইজেরিয়ার অফ-গ্রিড পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সংস্থাগুলির জন্য ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার ত্রাণ তহবিলের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। পাওয়ার আফ্রিকা প্রোগ্রাম গ্রামীণ ও শহর–ঘেঁষা অঞ্চলের হেলথ ক্লিনিকগুলির বিদ্যুদয়নের জন্য অফ-গ্রিড সংস্থাগুলিকে অনুদানে ৪১ লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়েছে।

ভালর দিকটা হল আইইএ–র নবীকরণযোগ্য বাজার বা রিনিউয়েবল মার্কেট সংক্রান্ত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে পুনর্নবীকরণযোগ্য ক্ষমতার সংযোজন হয়েছে ৪৫ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধি হয়েছে মূলত চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামে। তবে ইনস্টলেশনের জন্য ভিড় কিন্তু কোভিড অতিমারির আগেকার শুল্ক ও কর সম্পর্কিত নীতির সঙ্গে সংযুক্ত। যেমন, ভিয়েতনামে সৌর ফোটোভোলটাইক প্রকল্পগুলির জন্য ফিড-ইন-ট্যারিফ (ফিট) পর্যায়ক্রমে ভাগ করে দ্রুত ইনস্টলেশনের ব্যবস্থা করা হয়। ভারতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি ও মে মাসের মধ্যে নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষমতার ইনস্টলেশন ০.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নিলামে তোলার জন্য চিহ্নিত মোট ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য পরিমাণের জন্য ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি ইঙ্গিত করছে একটি চক্রের দিকে যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাসের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার কমছে, এবং তা প্রভাবিত করছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যকে। বণ্টন ও উৎপাদন সংস্থাগুলির স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নীতি, নিয়মকানুন ও অন্যান্য প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে এই সমস্যাটির মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারের নেতিবাচক পরিবর্তন উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যখন এসডিজি পূরণে এক দশকেরও কম সময় বাকি।

অতিমারির আরেকটি বড় প্রভাব হল অর্থনৈতিক কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারে পরিবর্তন, বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ায় দরিদ্রদের মধ্যে। ২০২০ সালে আইইএ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে সাব-সাহারান আফ্রিকার তিন কোটি মানুষ সাম্প্রতিক ভবিষ্যতে আর মৌলিক বিদ্যুৎ কিনতে সক্ষম হবেন না। বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারের নেতিবাচক পরিবর্তন উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যখন এসডিজি পূরণে এক দশকেরও কম সময় বাকি। কোভিড-১৯-এর ছয়টি প্রভাবের মধ্যে তিনটি দরিদ্রদের মধ্যে বিদ্যুতের ব্যবহার সরাসরি প্রভাবিত করে:‌ (১) বিদ্যুতের জন্য টাকা দেওয়ার সামর্থ্য কমে যাওয়া, (২) অফ-গ্রিড সংস্থাগুলির নিজেদের পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার অক্ষমতা, এবং (৩) বিদ্যুতের সংযোগের জন্য বরাদ্দ টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করা।

চিত্র ২: দরিদ্রদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব

সূত্র:‌ লেখকের নিজস্ব

বিদ্যুতের বা অন্য যে কোনও শক্তি পরিষেবার ক্রমাগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা কেনার সামর্থ্য একটি বড় উদ্বেগের জায়গা, এমনকি যখন কোনও অতিমারি নেই সেই পরিস্থিতিতেও। ভারত জুড়ে প্রায় ১৫,০০০ পরিবারকে নিয়ে সেন্টার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার (সিইইডব্লিউ)–এর ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, ২.৪ শতাংশ পরিবার মূলত গ্রিড–বিদ্যুৎ কেনার সামর্থ্যের অভাবে বিদ্যু্দয়নের বাইরে থেকে গেছে। দরিদ্রদের জন্য বিদ্যুৎকে সাশ্রয়ী করতে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলি পৃথকীকৃত শুল্কহার, বিলে ভর্তুকি দেওয়া বা বিনামূল্যে সংযোগের মতো কিছু ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সকলের কাছে পৌঁছনোর দ্রুত ও সাশ্রয়ী উপায় হল অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ। এই প্রতিকূল সময়ে বিদ্যুতের ব্যবহারের হার অনুযায়ী যে সব দেশ উচ্চ ঘাটতিসম্পন্ন, সেগুলির জন্য অফ-গ্রিড একটি প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন বিকল্প। কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন বিদ্যুতের ব্যবহারের হারে নেতিবাচক পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাসের কথা মাথায় রেখে সাম্প্রতিক ভবিষ্যতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার জন্য অফ-গ্রিড সংস্থা ও উদ্যোগগুলিকে শক্তিশালী করা যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদে অফ-গ্রিড সমাধানগুলির বিদ্যুতের ব্যবহার সংক্রান্ত এসডিজিগুলির বাস্তবায়ন ও পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষমতা রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে গ্রিড সংযোগ অনেক বেশি কাম্য বিকল্প।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.