Author : Harsh V. Pant

Published on Jul 21, 2023 Updated 0 Hours ago
ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফ্রান্স সফর আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সময়ে ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের অব্যাহত সশক্তিকরণের সাক্ষ্য হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর ৬৩০০ সদস্যের মধ্যে ভারতীয় সেনার তিনটি বাহিনীর ২৪১ জন সৈন্যের একটি দলের শাঁজেলিজে-র কুচকাওয়াজ ছিল ১৪০০০০ সেই ভারতীয় সৈন্যদের স্মরণে, যাঁরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামে লড়াই করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক ও সামরিক সম্মান গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য লিজিয়ঁ অফ অনা্রেও ভূষিত করা হয়।

সফরের সময় প্রধান প্রতিরক্ষা ঘোষণাগুলি ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কেন্দ্রীয় ভূমিকাকেই পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু এমন একটি সময়ে যখন উভয় দেশ তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫তম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন করছে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দীর্ঘস্থায়ী গুরুত্বের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রের অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্য – ছ’দশকের মহাকাশ সহযোগিতা থেকে শুরু করে বেসামরিক পারমাণবিক, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং মানুষে মানুষে সংযোগ। জলবায়ু সঙ্কটের ক্ষেত্রে দুই দেশ ফরাসি এবং ভারতীয় হাইড্রোজেন বাস্তুতন্ত্রকে সমন্বিত করার জন্য ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সবুজ হাইড্রোজেনের উপর একটি পথনির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেছে। সাম্প্রতিক সফরে ফ্রান্সে ইউপিআই ব্যবহার সংক্রান্ত ঘোষণা এবং ফ্রান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করা ভারতীয় ছাত্রদের জন্য পাঁচ বছরের দীর্ঘ অধ্যয়ন-পরবর্তী শেনজেন ভিসা প্রদানের ঘোষণাও হয়েছে।

প্রকৃত পক্ষে, এই সফরটি শুধুমাত্র একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই সশক্ত করেনি, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে, বরং ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত ভাবনায় ভারতের কেন্দ্রিকতাকেও সুনিশ্চিত করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার প্রতি নয়াদিল্লি এবং প্যারিস… উভয়েরই আনুগত্য দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

সাম্প্রতিক সফরে ফ্রান্সে ইউপিআই ব্যবহার সংক্রান্ত ঘোষণা এবং ফ্রান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করা ভারতীয় ছাত্রদের জন্য পাঁচ বছরের দীর্ঘ অধ্যয়ন-পরবর্তী শেনজেন ভিসা প্রদানের ঘোষণাও হয়েছে।

২০১৮ সালে একটি মন্ত্রী-পর্যায়ের প্রতিরক্ষা সংলাপ প্রতিষ্ঠা এবং ২০২৩ সালে একটি কৌশলগত মহাকাশ সংলাপ হল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্পষ্ট সশক্তকরণের উদাহরণ, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গভীর সম্পৃক্ততার ফলে একটি বৃহত্তর সম্প্রীতি দ্বারা আকার পেয়েছে। এই সম্পৃক্ততা শুধুমাত্র রাজনৈতিক (চিনের প্রেক্ষিতে) এবং ধারণাগত নয় (কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের একটি অভিন্ন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সংস্কারকৃত এবং কার্যকর বহুপাক্ষিকতা দ্বারা আকারপ্রাপ্ত বহুমেরু বিশ্বের এক বিশ্বাস), বরং এর ভিত্তি ভৌগোলিক। যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিকের সীমা জার্মানির জন্য নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত সীমিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে শুরু হয়েছে, ভারত এবং ফ্রান্স আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণাটির একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা ভাগ করে নেয়।

ইন্দো-প্যাসিফিকের ভৌগোলিক রূপের এই সাধারণ উপলব্ধিটি তুচ্ছ নয়। এর ভূগোল সম্পর্কে এক অভিন্ন ধারণা এবং ডি ফ্যাক্টো অংশীদারদের মাধ্যমে এটি সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যুতা, সংগঠিত অপরাধ, অবৈধ মাছ ধরা এবং পরিবেশগত নিরাপত্তার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রকল্পগুলি সূচনা করতে উত্সাহ জুগিয়েছে। এটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নৌ-সহযোগিতার ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে সত্যি, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিময় ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে দুই নৌবাহিনীর মধ্যে আয়োজিত যৌথ মহড়া বরুণ ভারত মহাসাগরে যৌথ টহল শুরু করে, যার মধ্যে প্রথমটি ২০১৯ সালে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, লা রিইউনিয়ন থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর পি-৮১ বিমান মোতায়েন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে লজিস্টিক সাপোর্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার চার বছর পর মে ২০২২ সালে দ্বিতীয় টহল অনুষ্ঠিত হয়, যা ভারতীয় নৌবাহিনীকে লা রিইউনিয়নের সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশাধিকার দেয়।

নৌ-সহযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠেও সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব ভারতের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ-এর (আইপিওআই) মাধ্যমে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চালু হয়েছিল, যেখানে প্যারিস সাতটি স্তম্ভের একটির (সামুদ্রিক সম্পদ) দায়িত্ব পালন করেছিল। আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশ ব্লু  ইকোনমি বা নীল অর্থনীতি এবং সামুদ্রিক প্রশাসন সংক্রান্ত একটি পথনির্দেশিকা স্বাক্ষর করে, যার লক্ষ্য ছিল আইনের শাসন, স্থিতিশীল বৃদ্ধি, পরিকাঠামো এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে সামুদ্রিক প্রশাসনের একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে একটি বহুক্ষেত্রীয় অংশীদারি গড়ে তোলা।

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে দু’দেশ দ্বারা আন্তর্জাতিক সৌর জোটের সূচনা ইতিমধ্যেই একটি সম্পর্কের উদীয়মান বিশ্বায়নের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তখনও পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে দ্বিপাক্ষিক ছিল।

যদি এই উন্নয়নগুলি উদ্বেগের আঞ্চলিক প্রসঙ্গে যৌথ সহযোগিতার জন্য ভারত এবং ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে, তা হলে সম্পর্কটি সম্পূর্ণ রূপে প্রকৃতিগত ভাবে দ্বিপাক্ষিক থেকে প্রথমে আঞ্চলিক এবং পরে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে দু’দেশ দ্বারা আন্তর্জাতিক সৌর জোটের সূচনা ইতিমধ্যেই একটি সম্পর্কের উদীয়মান বিশ্বায়নের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তখনও পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে দ্বিপাক্ষিক ছিল। সংরক্ষিত অঞ্চলের স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনার জন্য আঞ্চলিক দক্ষতা-নির্মাণ প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি ইন্দো-প্যাসিফিক পার্ক অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে ২০২২ সালের আহ্বানও তেমনই একটি পদক্ষেপ। ইন্দো-প্যাসিফিক স্তরে ২০৪৭-এর সদ্য প্রকাশিত পথনির্দেশিকার দ্বিতীয় স্তম্ভের লক্ষ্য হল ইন্দো-প্যাসিফিককে স্থিতিশীলতা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের একটি অঞ্চলে পরিণত করার জন্য সুস্পষ্ট সমাধান প্রদান করা, ফ্রান্স এবং ভারত উভয়েরই অংশগ্রহণকারী বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া – যেমন ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) এবং ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম-এর (আইওএনএস) মতো আদর্শ মঞ্চ তুলে ধরে, যার মাধ্যমে দুই দেশ যৌথ ভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ত্রিপাক্ষিক বিন্যাসগুলি (২০২২ সাল থেকে ভারত-ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া ও সদ্য প্রতিষ্ঠিত ভারত-ফ্রান্স-সংযুক্ত আরব আমিরশাহি) এবং সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে অন্যান্য মঞ্চ স্থাপনের পথ দেখাতে একই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো উচিত। প্যারিসে মোদীর সফরের সময় ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য স্বাক্ষরিত ইন্দো-ফরাসি পথনির্দেশিকাটির উচ্চাকাঙ্ক্ষা হল সমগ্র অঞ্চলটির জন্য এটিকে বাস্তবে ফলপ্রসূ করা।

মোদীর সফর আগামী কয়েক দশকের জন্য ভারত ও ফ্রান্সের নিরিখে একটি উচ্চাভিলাষী পথের সূচনা করেছে। এটি এমন একটি সম্পর্কের জন্য উপযুক্ত, যা ক্রমাগত বিকশিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বাস্তবতার সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করার ব্যাপারে অত্যন্ত কার্যকর। এটি সেই কর্মসূচিকেই কার্যকর করে তোলা, যা এখন প্যারিস এবং নয়াদিল্লি উভয় ক্ষেত্রেই নীতিনির্ধারকদের গুরুতর মনোযোগের দাবি রাখে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.