Published on Oct 03, 2023 Updated 0 Hours ago

চিন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান আইডব্লিউ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ভারতকে পর্যাপ্ত পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

ভারতের দুই–ফ্রন্টে তথ্য যুদ্ধ

তথ্য যুদ্ধ (আইডব্লিউ) ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জনমত, রাজনৈতিক কথন ও সামাজিক নিয়মগুলিকে প্রভাবিত করতে চায়, এবং প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর মধ্যে রয়েছে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য, অপপ্রচার, অপতথ্য, এবং নির্দিষ্ট বার্তা বা মতামতকে প্রচার বা দমন করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম ব্যবহার করা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য মিথ্যা তথ্য ও বিভাজনমূলক বিষয়বস্তু ছড়িয়ে দিতে রাশিয়ার সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কথিত ব্যবহার, এবং ব্রিটেনের ব্রেক্সিট গণভোটকে দুর্বল করার জন্য বিদ্বেষী বট ব্যবহার ভালভাবে প্রতিবেদিত হয়েছে। একইভাবে, ভূখণ্ডগত হুমকি ও অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের কৌশলের অতিরিক্ত হিসাবে চিন ও পাকিস্তান নিরলসভাবে ভারতের বিরুদ্ধে তথ্য যুদ্ধ কৌশল ব্যবহার করে চলেছে।

তথ্য যুদ্ধ চিনের বাণিজ্যিক ও সামরিক কৌশল প্রণয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ইন্টিগ্রেটেড নেটওয়ার্ক ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (আইএনইডব্লিউ) নামেও পরিচিত। চিন শত্রুর ক্ষমতাকে প্রতিহত ও ব্যাহত করতে সাইবার আক্রমণ ও গুপ্তচরবৃত্তি–সহ বিস্তৃত ইলেকট্রনিক ও নেটওয়ার্ক–কেন্দ্রিক যুদ্ধের কৌশল ব্যবহার করে। চিন নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সমস্ত ডিজিটাল সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলি পর্যবেক্ষণ করছে সান ঝং ঝানফা ব্যবহার করে, যা হল জনমত/মিডিয়া যুদ্ধ, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও আইনি যুদ্ধের জন্য একটি ত্রিমুখী কৌশল। প্রাথমিকভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় প্রয়োগ করার পর দেশটি এখন সক্রিয়ভাবে ভারতকে লক্ষ্যে পরিণত করেছে। এই কৌশলের মধ্যে রয়েছে প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা, স্কলারশিপ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে নরম শক্তির প্রভাব প্রয়োগ করা, দেশের মধ্যে মতামতকে প্রভাবিত করা, এবং ঘৃণামূলক প্রচার ছড়ানো। একটি বিতর্কিত অঞ্চলকে নিজের বলে মিথ্যা দাবি করা এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ভূখণ্ডগত অধিকার দাবি করার জন্য সীমান্তের দেশগুলিকে ‘‌উৎপীড়ন’‌  করতে আইনি যুদ্ধ ব্যবহার করা হয়। চিনের আইডব্লিউ কৌশলের প্রভাব অনুধাবন করা ভারতের পক্ষে কার্যকর পাল্টা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

চিন নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সমস্ত ডিজিটাল সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলি পর্যবেক্ষণ করছে সান ঝং ঝানফা ব্যবহার করে, যা হল জনমত/মিডিয়া যুদ্ধ, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও আইনি যুদ্ধের জন্য একটি ত্রিমুখী কৌশল।

কোভিড–১৯–এর সময় অবিশ্বাস প্রচারের চেষ্টা

কোভিড–১৯ অতিমারি চলাকালীন চিনের বিরুদ্ধে ভারতে তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছোট করে দেখানো এবং ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছিল। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে চিন এমন আখ্যান তৈরি করার চেষ্টা করেছিল যা তার অতিমারি  প্রতিক্রিয়ার ধারণাগুলিকে নতুন আকার দিয়েছিল, এবং চিনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের ভ্যাকসিন প্রচেষ্টাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিল।

গ্লোবাল টাইমসের মতো চিনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়া আউটলেটগুলি অতিমারি কার্যকরভাবে মোকাবিলায় ভারতের তথাকথিত ব্যর্থতার বিষয়ে বারবার ভুয়া খবর ও অস্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিছু প্রতিবেদনে এমনও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ভারত সীমান্তে চিন ও পাকিস্তানকে উস্কে দিয়ে কোভিড–১৯ থেকে মনোযোগ সরাতে চেয়েছিল।

ডোকলাম বিরোধ

২০১৭ ডোকলাম সীমান্ত সঙ্কটের সময়   চিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মতামতকে প্রভাবিত করতে সামাজিক মিডিয়াকে ব্যবহার করেছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়া এবং চিনের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ভারতকে তার কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার জন্য প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছে। বেজিংয়ের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের কৌশলের মধ্যে ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রয়াত সুষমা স্বরাজকে মিথ্যাবাদী বলা এবং ভারতের যুদ্ধ অভিযান পরিচালনার ক্ষমতাকে দুর্বল করার জন্য ‘‌কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে’‌ ও ‘‌মুক্ত সিকিম’‌ –এর মতো ভিত্তিহীন বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।

সামাজিক মিডিয়া ভিত্তিক প্রচার

রাষ্ট্রচালিত মিডিয়া আউটলেটগুলি প্রাথমিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে থেকে গেলেও চিন তার প্রচার বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকেও ব্যবহার করেছে। যেমন, ২০২০ সালের জুনে টুইটার একটি সংগঠিত নেটওয়ার্ক থেকে ২৩,৭৫০টি অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দিয়েছিল, আর ১৫০,০০০ অ্যাকাউন্ট বিভ্রান্তি প্রচার করছিল। এই পোস্টগুলি চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অনুকূল ভূ–রাজনৈতিক আখ্যান ছড়িয়ে দিচ্ছিল। একইভাবে অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম, যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব একই ধরনের বৃহৎ মাপের সমন্বিত প্রচেষ্টার কথা প্রকাশ করেছে, যা প্রভাব ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রচার চালাচ্ছিল। বেশিরভাগ জাল টুইটার অ্যাকাউন্ট ভারতের সঙ্গে তার সামাজিক মিডিয়া যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাকিস্তান ও অন্য প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে।

গ্লোবাল টাইমসের মতো চিনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়া আউটলেটগুলি অতিমারি কার্যকরভাবে মোকাবিলায় ভারতের কথিত ব্যর্থতার বিষয়ে বারবার ভুয়া খবর ও অস্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তান: চিনের পদাঙ্ক অনুসরণ

ভারত–বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে পাকিস্তানও ভারতীয় তথ্যের স্থানকে অস্থিতিশীল করার জন্য প্রোপাগান্ডা চালাতে বিভিন্ন প্রতারণামূলক উপায় ব্যবহার করেছে:‌ তথ্য জাল করা ও অপতথ্য প্রচারের জন্য আইটি সেল, বট, যাচাইকৃত পাকিস্তান–ভিত্তিক হ্যান্ডল ব্যবহার করা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ট্রোল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো। পাকিস্তান প্রচার চালায় ভারত–পাকিস্তান সামরিক সঙ্কট, ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ, এবং কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে।

বালাকোট বিমান হামলার সময় প্রচার

২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলার সময় পাকিস্তান–অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর মিগ–২১ বাইসন বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান গুলি করে নামিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এফ–১৬ যুদ্ধবিমানকে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মিডিয়া শাখা ইন্টার–স্টেট পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)–এর ডিরেক্টর জেনারেল একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখে এই কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন। তাঁর প্রত্যাখ্যান একটি মার্কিনভিত্তিক প্রকাশনা ফরেন পলিসি দ্বারা একটি প্রতিবেদনে সমর্থিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয় যে পাকিস্তানের এফ–১৬–র সংখ্যা গুনে দেখা গিয়েছে যে, কোনও বিমান নিখোঁজ হয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ অবিলম্বে এই প্রতিবেদন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়ে বলেছিল যে তারা এই ধরনের কোনও গণনা সম্পর্কে ‘‌অজ্ঞাত’‌।

পাকিস্তান ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বালাকোট বিমান হামলার চতুর্থ বার্ষিকীতে আইডব্লিউ–র অনুরূপ নমুনা অবলম্বন করে পাকিস্তানি টুইটার অ্যাকাউন্টগুলি, যেমন #PakistanZindabad, #SurpriseDay, ও #TeaIsFantastic থেকে অনেক টুইট করে। এই অ্যাকাউন্টগুলি পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ার পর উইং কমান্ডার (এখন গ্রুপ ক্যাপ্টেন) বর্তমানকে উপহাস করে ছবি, মিম, ও ভিডিও পোস্ট করেছে। এই প্রয়াসের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় বিমান হামলার ব্যর্থতার মিথ্যা দাবির পুনরাবৃত্তি করা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুর্বল ছবি তৈরি করা।

ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ

আরেকটি বিষয় যা বারবার পাকিস্তানি তথ্য যুদ্ধ অভিযানে স্থান পেয়েছে, তা হল ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। পাকিস্তান নিরলসভাবে ভারতীয় মুসলমানদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ আনছে। অনেক সময়ে এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মো্দীর সরকারকে ফ্যাসিবাদী, হিন্দু আধিপত্যের প্রচারক ও মুসলিম–বিরোধী বলে অভিযুক্ত করেছে। আইএসপিআর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল ও  থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রিপোর্টের  মাধ্যমে এই অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানি মিডিয়াও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে দাবি করেছে যে ভারতে মুসলমানদের অবস্থা জার্মানিতে ১৯৪০–এর দশকে হলোকস্টের সময় ইহুদিদের সঙ্গে আচরণের সমতুল্য।

পাকিস্তান ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বালাকোট বিমান হামলার চতুর্থ বার্ষিকীতে আইডব্লিউ–র অনুরূপ নমুনা অবলম্বন করে পাকিস্তানি টুইটার অ্যাকাউন্টগুলি, যেমন #PakistanZindabad, #SurpriseDay, ও #TeaIsFantastic থেকে অনেক টুইট করে।

এই আখ্যানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন ঘটনাকে ব্যবহার করেছে। যেমন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে #Hinduterrorism ও #RSSKillingMuslims এর মতো হ্যাশট্যাগ সহ পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত অ্যাকাউন্টগুলি থেকে ব্যাপক টুইট ট্র্যাফিক দেখা যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন  দেশ ও টাইমলাইনের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বানানো ও সম্পাদিত মিডিয়া রিপোর্টগুলি প্রচুর শেয়ার করা হয়েছিল, আর সেগুলির উৎস ভারত বলে দাবি করা হয়েছিল।

কাশ্মীর সমস্যা
কাশ্মীরের বিষয়ে পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে যাচাইকৃত টুইটার হ্যান্ডল, যেমন আইএসপিআর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিদেশ মন্ত্রক (এমওএফএ) ওয়েবসাইট, বিদেশী মিডিয়া ও সোশাল মিডিয়া ট্রোলগুলি ব্যবহার করে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে দাবি করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়েছে।

পাকিস্তানি এমওএফএ–র ওয়েবসাইটে ‘‌ভারতীয় অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীর’‌ নামে একটি পৃথক বিভাগ আছে, যেখানে কাশ্মীরি জনগণের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিপদ হিসাবে চিত্রিত করে ব্যাপকভাবে সম্পাদিত ও বিভ্রান্তিকর মিডিয়া প্রতিবেদন রয়েছে। বিদেশী মিডিয়াও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের তথ্য যুদ্ধের ভাগীদার হয়েছে। যেমন স্টোক হোয়াইট, একটি স্বাধীন ব্রিটেন–ভিত্তিক তদন্তকারী ইউনিট, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পাকিস্তান–ভিত্তিক আইন সংস্থা লিগ্যাল ফোরাম কাশ্মীর–এর সহযোগিতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

২০১৯ সালের আগস্টে ভারতের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার সিদ্ধান্তের পরে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী প্রচারে অতিসক্রিয়তা দেখা গিয়েছে। আইএসপিআর দাবি করেছে যে ১৯৪৭ সালের কাশ্মীরকে সংযুক্ত করার উপকরণটি ছিল ‘‌বেআইনি’‌। অধিকন্তু, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বারবার কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর নিপীড়ন এবং উপত্যকার সামরিকীকরণের অভিযোগ করেছেন

ভারত সরকারের পাল্টা ব্যবস্থা

চিন ও পাকিস্তানের তথ্য যুদ্ধ জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের সঙ্গে বাস্তব তথ্য প্রচারের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারতের সামনে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এখনও অবধি, ভারত আগাম সক্রিয়তা ও নিবারণের পরিবর্তে প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার কৌশল গ্রহণ করেছে।

পাকিস্তানি এমওএফএ–র ওয়েবসাইটে ‘‌ভারতীয় অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীর’‌ নামে একটি পৃথক বিভাগ আছে, যেখানে কাশ্মীরি জনগণের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিপদ হিসাবে চিত্রিত করে ব্যাপকভাবে সম্পাদিত ও বিভ্রান্তিকর মিডিয়া প্রতিবেদন রয়েছে।

ভারত ‘সত্যমেব জয়তে, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযান, ও জাতীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশনের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি করা যায়। কোভিড–১৯ অতিমা্রি চলাকালীন সরকার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর অধীনে একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটবট ও একটি ফ্যাক্ট–চেকিং ইউনিট তৈরি করেছে। তথ্য যুদ্ধ ফ্রন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনী চিন ও পাকিস্তানের প্রচার নিরীক্ষণের জন্য দুই বছর আগে তথ্য যুদ্ধের মহাপরিচালকের পদ তৈরি করেছিল। তবে এই উদ্যোগগুলির লক্ষ্য ‘‌আখ্যানের যুদ্ধে’‌ আধিপত্য বিস্তারের বৃহত্তর উদ্দেশ্যের পরিবর্তে সত্য–পরীক্ষা হিসাবে কাজ করা।

এই প্রোপাগান্ডা ও তথ্য যুদ্ধে জয়লাভের জন্য নিরন্তর প্রয়াস প্রয়োজন। ভারতবিরোধী আখ্যানের মোকাবিলা শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদে কার্যকর হতে পারে। যা ভারতীয় মানসিকতাকে লক্ষ্যবস্তু করে, এবং বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি করে ও সাম্প্রদায়িক বিরোধ তৈরি করতে চায়, সেই ধরনের তথ্য যুদ্ধের মোকাবিলা করতে ভারত সরকারকে একটি সমন্বিত ও ব্যাপক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। তার জন্য একটি ‘‌মহা পরিকল্পনা’‌র মতো উদ্যোগ নিতে হবে, যার মধ্যে সমস্ত মন্ত্রক জড়িত থাকবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তথ্য যুদ্ধ কৌশলে বিনিয়োগ করছে ঠিকই, কিন্তু সেইসঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক অভিযান, ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধের জন্য তহবিল বরাদ্দ করতে হবে, এবং ভারতপন্থী আখ্যান প্রচারের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে অংশীদারিত্ব কার্যকর সত্য–পরীক্ষায় সহায়তা করতে পারে। ভারতকে অবশ্যই তথ্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি সামগ্রিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে, এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য সম্পদ বরাদ্দ করতে হবে।


সার্থক আহুজা  সমৃদ্ধি দিওয়ান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন–এ ইন্টার্ন ছিলেন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.