Published on Aug 15, 2023 Updated 0 Hours ago
এসসিও-র অভ্যন্তরে ভারতের লড়াই

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীদের একত্র করার মাধ্যমে ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসায় ভারত এপ্রিল মাসের শেষ ও মে মাসের গোড়ায় দুই সপ্তাহে জি২০ থেকে তার নজর সরাতে বাধ্য হয়। নয়াদিল্লির জন্য জি২০ এবং এসসিও উভয়ের সভাপতিত্ব একসঙ্গে এমন সময়ে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে, যখন ইউরেশিয়ার অশান্তি বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার সমীকরণের ভারসাম্যকে পরিবর্তনের দিকে চালিত করেছে। এসসিও সভাপতিত্বের মূল ভাবনা যখন ‘এসসিও-কে সুরক্ষিত রাখা’ বা ‘সিকিওর এসসিও’, তখন ভারতের নিজের উত্তর সীমান্তে আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া দেশটির জন্য অগ্রাধিকারের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেছে।

তবুও এসসিও এক অত্যাশ্চর্য গোষ্ঠী। ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের পরপরই মধ্য এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে রাশিয়া এবং চিনের উদ্বেগের মাঝে আমেরিকার একমেরুকরণের সময়ে গোষ্ঠীটি নির্মাণের ভাবনা দানা বাঁধে। মস্কো নিকট প্রতিবেশে তার প্রভাব রক্ষা করতে চেয়েছিল এবং এ কথা ভেবেছিল যে, বেজিংকে অন্তর্ভুক্ত করলে এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হবে। ১৯৯৬ সালে যখন গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন চিন এটিকে মধ্য এশিয়ায় অর্থনৈতিক সুযোগ কাজে লাগানোর একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখেছিল। রাশিয়া এবং চিন উভয়ের জন্যই গোষ্ঠীটি ছিল ন্যাটোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে দূরে রাখার অন্যতম হাতিয়ার, যখন সোভিয়েত-পরবর্তী বিশ্বে ন্যাটোর আকর্ষণ ছিল সর্বাধিক। এসসিও সনদটি বিচ্ছিন্নতাবাদ, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের ‘তিনটি অশনি সঙ্কেত’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল, যা আঞ্চলিক প্রভাবের শেষ অবশিষ্টাংশগুলিকে ধরে রাখার জন্য মস্কোর ঠান্ডা লড়াই-পরবর্তী আঞ্চলিক সীমানা স্থিতিশীল করার আকাঙ্ক্ষার উপর জোর দেয়।

এসসিও-র সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা একটি আকর্ষক পথ ধরে আবর্তিত হয়েছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের পর নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে শুরু করলেও সেই সম্পৃক্ততা কত দূর এগোবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। নিজের কৌশলগত অবস্থান রক্ষা করার জন্য ভারত আমেরিকার মতো অতিকায় শক্তির সঙ্গে নিজের অস্বস্তি প্রকাশ করতে মস্কো এবং বেজিংয়ের সঙ্গে যোগ দেয়, যার ফলে প্রথমে একটি রাশিয়া-ভারত-চিন ত্রিপাক্ষিক এবং তার পরে তৎকালীন উদীয়মান শক্তিগুলির একটি বৃহত্তর জোট অর্থাৎ ব্রিকস-এর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) জন্ম হয়। নয়াদিল্লি এই আশা করেছিল যে, মস্কোর সহায়তায় ভারত বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

এসসিও সনদটি বিচ্ছিন্নতাবাদ, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের ‘তিনটি অশনি সঙ্কেত’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল, যা আঞ্চলিক প্রভাবের শেষ অবশিষ্টাংশগুলিকে ধরে রাখার জন্য মস্কোর ঠান্ডা লড়াই-পরবর্তী আঞ্চলিক সীমানা স্থিতিশীল করার আকাঙ্ক্ষার উপর জোর দেয়।

কিন্তু এসসিও-র প্রসঙ্গে ভারতের বাস্তববাদী ধারণা ধীরে ধীরে এক গুরুতর প্রসার পায়। যেমন নয়াদিল্লির কৌশলগত ভাবনা ইন্দো-প্যাসিফিক আলোচনায় দেশের কেন্দ্রিকতা লাভের জন্য সামুদ্রিক পরিসরের দিকে স্থানান্তরিত হয় এবং ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলি প্রকৃতিগত ভাবে মহাদেশীয় হয়ে ওঠে। মেরিটাইম সাউথ বা সামুদ্রিক দক্ষিণের সুযোগগুলি কেবল তখনই সম্পূর্ণ ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, যদি কন্টিনেন্টাল নর্থ বা মহাদেশীয় উত্তর দ্বারা আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলিকে কার্যকর ভাবে পরিচালনা করা যায়। এর জন্য ইউরেশিয়ার সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ সম্পৃক্ততার প্রয়োজন রয়েছে।

২০০১ সালের পরে আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রসারের বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থাকে অভ্যন্তরীণ ভাবে পরিচালনা করার জন্য ভারতকে তার উত্তরের সীমান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে এবং এর ফলে ভারত অবশেষে ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্য হিসাবে এসসিও-তে যোগদান করে। কিন্তু এপ্রিল মাসের শেষের বৈঠক (প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীদের) দর্শিয়েছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অধঃপতনের ফলে এটি নয়াদিল্লির জন্য একটি কঠিন বিষয় হয়ে থেকেছে।

মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক ও সভ্যতাগত সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এসসিও সদস্যপদ ভারতকে একটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক পরিসরে তার উপস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবুও দেশগুলির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতি, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং তাদের প্রত্যেকের মতামতের প্রতি পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধা, যা কিনা এসসিও-র মূল ভিত্তি, সেটিকে এসসিও সদস্যরা নিজেরাই চ্যালেঞ্জ করেছে৷

তাই নয়াদিল্লি এসসিও-তে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে নিজের মনোযোগ বজায় রেখেছিল, যখন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির উপস্থিতিতে এসসিও সদস্যদের প্রতি জোর দিয়ে বলেন যে, গোষ্ঠীটির নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য ‘সন্ত্রাস থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া’ আখেরে ক্ষতিকারকই হবে এবং বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ অতিমারি এবং তার পরিণতি মোকাবিলায় নিয়োজিত ছিল, তখন সন্ত্রাসবাদের হুমকি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে অব্যাহতই থেকেছে। চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের প্রেক্ষাপটে ভারত সরাসরি চিনকে আক্রমণ করে এবং জয়শঙ্কর স্পষ্টতই বলেন যে, সংযোগ স্থাপন অগ্রগতির জন্য ভাল হলেও তা দেশগুলির আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করতে পারে না। আরও বিস্তৃত ভাবে, চিন-ভারত সম্পর্ক একটি কঠিন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এলএসি বরাবর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কেবল নয়াদিল্লির জন্যই নয়, এসসিও-র জন্যও একটি সমস্যা হয়ে রয়ে গিয়েছে। এসসিও বৈঠকের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে ভারতের আগ্রহের আরও সঙ্গত কারণ রয়েছে।

চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের প্রেক্ষাপটে ভারত সরাসরি চিনকে আক্রমণ করে এবং জয়শঙ্কর স্পষ্টতই বলেন যে, সংযোগ স্থাপন অগ্রগতির জন্য ভাল হলেও তা দেশগুলির আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করতে পারে না।

ভারত এই বছরের শেষের দিকে এসসিও নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত ডি-র‍্যাডিকালাইজেশন কৌশল, বাজরার প্রচার এবং জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল রূপান্তর মোকাবিলার জন্য স্থিতিশীল জীবনধারার প্রসঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে চারটি যৌথ বিবৃতি প্রস্তাব করেছে। এটি ঘোষণাগুলি কর্মসূচি সংক্রান্ত অগ্রাধিকারগুলির উপর জোর দেওয়ার নিরিখে এসসিও মঞ্চকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ভারতের একটি প্রচেষ্টা। তবে বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হতে পারে। চিন-পাকিস্তান অক্ষ সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিষয়ে এসসিও কর্মসূচিকে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষমতাকে খর্ব করতে থাকবে এবং চিনের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা মধ্য এশিয়ায় বৃহত্তর উপস্থিতির জন্য নয়াদিল্লির চাপকে প্রভাবিত করবে।

এসসিও-র তৃতীয় সরকারি ভাষা হিসাবে ইংরেজিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারতের অব্যাহত সংগ্রাম এই বৃহত্তর সমস্যারই লক্ষণ।

ইউরেশিয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই হিসাবে দেশটি এসসিও-র সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ভারত কতটা কূটনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগ করবে, তা নির্ভর করবে গোষ্ঠীটি ভারতীয় অগ্রাধিকারগুলিকে কতটা গুরুত্ব দিতে সক্ষম, তার উপর। অন্যান্য আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের মতো এসসিও দ্রুত আবর্তিত ক্ষমতার ভারসাম্য দ্বারা পুনর্গঠিত হচ্ছে। এসসিও-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও পুনর্গঠনের একটি বৈশিষ্ট্য স্বরূপ।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.