Author : Ayjaz Wani

Published on Jun 25, 2022 Updated 0 Hours ago

এস সি ও সদস্য দেশগুলিকে তাদের পারস্পরিক মতপার্থক্য ও ক্ষোভের সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং এক শান্তিপূর্ণ, সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ ইউরেশিয়া অর্জনের লক্ষ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।

এস সি ও – আর এ টি এস শীর্ষ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে ভারতের যে সব উদ্বেগে সাড়া মেলেনি

১৬ মে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন-এর (এস সি ও) সদস্য দেশগুলি আঞ্চলিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে আন্তঃসহযোগিতা ও আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধির জন্য রিজিওনাল অ্যান্টি-টেররিস্ট স্ট্রাকচার (আর এ টি এস)-এর আওতায় নয়াদিল্লিতে আলাপ-আলোচনা শুরু করে। ভারত ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আর এ টি এস-এর সভাপতিত্বের দায়ভার গ্রহণ করে এবং বিশেষ করে তালিবান নাটকীয় ভাবে আফগানিস্তানে  ক্ষমতা দখল করার পর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমস্যা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আন্তঃসহযোগিতা গভীরতর করার উদ্দেশ্যে দৃঢ় ভাবে আহ্বান জানায়। আর এ টি এস-এর অধিবেশনটি এমন সময়ে সংঘটিত হচ্ছে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী বিভাজন সুস্পষ্ট হচ্ছে এবং এস সি ও সদস্য দেশগুলির মধ্যেও ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এ টি এস প্রাথমিক ভাবে আফগানিস্তান এবং তালিবান শাসনের অধীনে থাকা সেই সব সক্রিয় জঙ্গি সংস্থাগুলির উপরে মনোযোগ দেবে, যারা সামগ্রিক ভাবে এস সি ও সদস্য দেশগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ। চিন এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মাদক সন্ত্রাস এবং মাদকের বেআইনি পাচারের কথাও কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বছর অক্টোবর মাসে মানেসরের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড-এর (এন এস জি) ঘাঁটিতে আর এ টি এস-এর তত্ত্বাবধানে সন্ত্রাসবিরোধী মহড়া চালানোর কথা। যে হেতু ভারত ২০২৩ সালের এস সি ও শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন আয়োজন করবে, তাই নয়াদিল্লির নীতি নির্ধারকেরা আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চল দ্বারা অর্থায়িত সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা এবং মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারার বিষয়ে আশাবাদী।

রিজিওনাল অ্যান্টি-টেররিস্ট স্ট্রাকচার (আর টি এস) বা আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদবিরোধী কাঠামো

২০০২ সালের ৭ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে এস সি ও সদস্য দেশগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের অধিবেশনে আর এ টি এস-কে একটি স্থায়ী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সূচনার প্রথম দিন থেকেই আর এ টি এস আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তঃসমন্বয়ের স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। আর এ টি এস-এর কর্মপদ্ধতি অনুসারে সদস্য দেশগুলি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের মধ্যে এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। আর এ টি এস তার সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তথ্য সমন্বিত একটি ডেটাবেস বা তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। সর্বোপরি, আর এ টি এস-এর অধীনে যৌথ সন্ত্রাসবাদ দমন কর্মসূচির মাধ্যমে সদস্য দেশগুলি তাদের গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্রোহবিরোধী গ্রিড এবং আন্তঃসমন্বয় শক্তিশালী করতে সশস্ত্র কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়। যে হেতু মাদক পাচার অঞ্চলটিতে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অর্থায়নের একটি প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে, তাই সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে আর্থিক সাহায্য জোগানোয় বাধা দিতে মাদক সন্ত্রাসকেও আর এ টি এস-এর আওতাভুক্ত করা হয়। যদিও তা সত্ত্বেও এস সি ও-র প্রধান কর্মসূচি হল হস্তক্ষেপ না করার মূল আদর্শের উপরে ভিত্তি করে সদস্য দেশগুলির সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো ও সশক্তিকরণ।

আর এ টি এস-এর অধিবেশনটি এমন সময়ে সংঘটিত হচ্ছে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী বিভাজন সুস্পষ্ট হচ্ছে এবং এস সি ও সদস্য দেশগুলির মধ্যেও ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

আর এ টি এস ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ২০টি সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রতিহত করা এবং ১৭০০টি সম্ভাব্য হামলা ব্যাহত করার পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ২৭০০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়াও এই সন্ত্রাস-প্রতিরোধী সংগঠনটি ৪৪০টি সন্ত্রাস ঘাঁটি ধ্বংস করা, সদস্য দেশগুলিকে ৬৫০টি সন্ত্রাস সম্পর্কিত অপরাধ থেকে রক্ষা করা, ৪৫০০০০ অস্ত্রশস্ত্র এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন থেকে ৫২ টনেরও বেশি বিস্ফোরক পদার্থ বাজেয়াপ্ত করতে সফল হয়েছে।

ভারতের উদ্বেগ

ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই ২০১৭ সালে এস সি ও-র পূর্ণ সদস্য হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি সর্বাপেক্ষা অধিক প্রভাবশালী দেশের সংযোজন গোষ্ঠীটির সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার সামগ্রিক দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি যে, ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ উপস্থিতি এস সি ও-র অভ্যন্তরে মতভেদ, বিচ্যুতি ও বিশ্বাসহীনতার বাতাবরণ তৈরি করেছে এবং গোষ্ঠীটির অভ্যন্তরীণ বিভাজন রেখা সুস্পষ্ট করেছে। ভারত তার পূর্ণ সদস্যপদ গ্রহণের পর থেকেই সমগ্র ইউরেশিয়া অঞ্চল ও বিশেষ করে এস সি ও সদস্য দেশগুলিতে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবুও সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসের পরিকাঠামো এবং সাম্প্রতিক কালে এই সকল কার্যকলাপকে অর্থ জোগানোর জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে সরবরাহ করা মাদকদ্রব্য নয়াদিল্লির অন্যতম প্রধান দুশ্চিন্তার কারণ। যে হেতু ২০১৮ সালের জুন মাসে এফ টি এ এফ পাকিস্তানকে গ্রে লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করে, তাই আফগান-পাক অঞ্চলস্থিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি মাদক ও নেশার দ্রব্যের রফতানি থেকে প্রাপ্ত অর্থের সাহায্যে জম্মু ও কাশ্মীরের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অর্থায়ন করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে এল ও সি বা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পুঞ্চে ৩১ কিলোগ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাকিস্তান  আন্তর্জাতিক সীমান্ত ব্যবহার করে জম্মু ও কাশ্মীরে মাদকদ্রব্য পাচার করেছে। এফ এ টি এফ-এর চাপে পড়ে ইসলামাবাদ তার মাদক সন্ত্রাস কৌশলের অংশ রূপে মাদক দ্রব্যের রফতানি চালানোর মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে তার অসম যুদ্ধের অর্থায়ন ঘটিয়েছে। আর এ টি এস-এর অধীনে এস সি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে তার সদস্য দেশগুলিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম জোগান দিতে সফল হলেও ভারতের ভূকৌশলগত এবং সার্বভৌম স্বার্থের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসের সমাধান নিয়ে কোনও আলোচনা চালানো হয়নি।

অন্য দিকে চিনের আধিপত্যমূলক স্বার্থ এবং সংকীর্ণ মনোভাব নয়াদিল্লি-সহ বেশ কয়েকটি মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রকে এস সি ও-র ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত করে তুলেছে। এস সি ও-র মৌলিক লক্ষ্যগুলি হল সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং একটি অনাগ্রাসী নীতি মেনে চলার পাশাপাশি সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। গলওয়ান উপত্যকা সঙ্কটের নেপথ্যে থাকা লাদাখে এল এ সি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনের আগ্রাসন এবং মাঝে মাঝেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চিনের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ নয়াদিল্লির স্ট্র্যাটেজিক গোষ্ঠীর মধ্যে চিনের প্রতি অবিশ্বাস গভীরতর করেছে। এ ছাড়াও চিন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বি আর আই) মাধ্যমে তার আধিপত্যমূলক স্বার্থকে  চরিতার্থ করার জন্য এস সি ও-কে ব্যবহার করেছে, বিশেষ বি আর আই-এর ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডরের (সি পি ই সি) ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা গিয়েছে। সি পি ই সি-র যে অংশটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (পি ও কে) মধ্য দিয়ে গিয়েছে, সেটি গুরুতর ভাবে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার পরিপন্থী।

ভারত তার পূর্ণ সদস্যপদ গ্রহণের পর থেকেই সমগ্র ইউরেশিয়া অঞ্চল ও বিশেষ করে এস সি ও সদস্য দেশগুলিতে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও ভারতের উদ্বেগগুলি অভিন্ন। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ব্যর্থতা ও সেনা প্রত্যাহারের পরে নয়াদিল্লি ‘শান্তি ও সমন্বয় সাধনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য একটি আফগান-চালিত, আফগান-মালিকানাধীন, আফগান-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া’কে সমর্থন করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান ও চিন ২০০০ সাল থেকেই তালিবানকে সমর্থন জুগিয়ে ও অনুমোদন দিয়ে ভারতের নীতিকে বিপন্ন করেছে। সহস্রাধিক বৈদেশিক সন্ত্রাসবাদীর উপস্থিতি, বিশেষত আল কায়েদা এবং খোরাসান অঞ্চলের ইসলামিক স্টেটের (আই এস কে পি) জঙ্গিরা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে, যা এস সি ও-র অন্য সদস্য দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এস সি ও অঞ্চলের মধ্যে অখণ্ডতা ও আন্তঃসহযোগিতা বজায় রাখার জন্য ভারত ও রাশিয়ার আনা প্রস্তাব তত দিন বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়, যত দিন না মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে মতানৈক্য, বিভাজন এবং অবিশ্বাস দূর হচ্ছে। ১৯ মে ভারতে রুশ দূতাবাসের তরফে জানানো হয় যে, আর এ টি এস-এর আইনি বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞরা সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার মোকাবিলার উদ্দেশ্যে এক অভিন্ন প্রস্তাবে সহমত হয়েছেন, যেটি এই বছরে্রই পরের দিকে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে চলা পরবর্তী কাউন্সিল মিটিং-এ স্বাক্ষরিত হবে। তবুও ফোরামটিকে ব্যবহার করে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সংহতি আনা এবং বিশেষত ভারত-সহ অন্য সদস্য দেশগুলির দুশ্চিন্তার ন্যায্য কারণগুলির সমাধান করার জন্য এস সি ও-র সদস্য দেশগুলিকে নিজেদের মধ্যে এক বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ কার্যকর আলোচনা চালাতে হবে। যদি এই উদ্বেগগুলির সমাধান করা সম্ভব না হয়, তবে সেগুলি ইউরেশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.