Published on Mar 07, 2024 Updated 0 Hours ago

রাশিয়ার বাইরে প্রতিরক্ষা সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য আরও ব্যাঘাত ভারতের বৈচিত্র্যকরণ স্বদেশিকরণের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

রুশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে ভারত সমস্যায়

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর ডিসেম্বরের শেষ দিকে পাঁচ দিনের সফরে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। সফরশেষে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্র (এমইএ) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে যে, তিনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-সহ বেশ কয়েক জন বর্ষীয়ান রুশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা ক্রেমলিনের জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক বলেই মনে করা যেতে পারে। পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পরে জয়শঙ্কর একটি টুইট বার্তায় বলেন যে, তিনি ‘মন্ত্রী মান্তুরভ এবং লাভরভের সঙ্গে আমার আলোচনার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অবকরেছি। এবং আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য তাঁর নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানাই।’ তিনি যেমনটা উল্লেখ করেছেন, জয়শঙ্কর উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভ এবং রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

এমইএ প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, জয়শঙ্কর অর্থনৈতিক, বাণিজ্য এবং জ্বালানির পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা-সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন। জয়শঙ্কর সেন্ট পিটার্সবার্গেও ভ্রমণ করেন, যেখানে তিনি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করেন।

সফরের সময় জয়শঙ্কর কুডানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংক্রান্ত তিনটি নথির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা ও ফার্মাসিউটিক্যালে সহযোগিতার বিষয়ে একটি মউ এবং বিদেশ দফতরের পরামর্শে একটি প্রোটোকলে স্বাক্ষর করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিদেশমন্ত্রীর সফরটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে খতিয়ে দেখার এক উপলক্ষ ছিল এবং উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘কৌশলগত অভিন্নতা, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার দৃঢ় এবং অবিচলিত ভিত্তি বিদ্যমান

প্রকৃতপক্ষে, এটি সমস্ত প্রধান শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করার ভারতীয় বিদেশনীতির লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। ইউক্রেনে আক্রমণ করা সত্ত্বেও এবং একটি সহযোগী রাষ্ট্রপুঞ্জ সদস্য দেশের সার্বভৌমত্ব আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে লঙ্ঘন করার পরেও রাশিয়া ভারতের এই বিদেশনীতি সংক্রান্ত লক্ষ্যের মধ্যেই পড়ে। ভারত যে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা করেনি বা এর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেনি, তা আসলে মস্কোর জয়কেই দর্শায়২০২৩ সালে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সূক্ষ্ম নিন্দার মোড়কে বলেছিলেন যে, ‘এখন যুদ্ধের সময় নয়। সেই সময় নয়াদিল্লি এতটুকু সমালোচনা করতেই প্রস্তুত ছিল।

ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সাম্প্রতিক রাশিয়া সফর ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোন অসামান্য সমস্যার সমাধান করেছে বলে মনে হয় না। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরবরাহ বিলম্বিত করার জন্য বেশ হতাশ। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে ভারতীয় চাহিদা মেটানো রাশিয়ার পক্ষে এখন কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ রাশিয়া সর্বাগ্রে তার নিজস্ব সামরিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যস্ত২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) একটি সংসদীয় কমিটির কাছে এক বিবৃতিতে বলেছিল যে, রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রতিশ্রুত অত্যাবশ্যক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করার কোনও অবস্থানে ছিল না। আইএএফ আরও বলেছে যে, ২০২৩ সালের জন্য পরিকল্পিত একটি অনির্দিষ্ট ‘প্রধান সরবরাহ’ যুদ্ধের কারণে হয়ে উঠবে না। তবে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মতো বড় সরবরাহ রাশিয়া ভারতকে করতে পারে। ভারত এটি ২০১৮ সালে ৫.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্য প্রদান করে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রয় করেছিল। আইএএফ তার এসইউ-৩০এমকেআই এবং মিগ-২৯ ফাইটার জেটের যন্ত্রাংশের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল।

একই ভাবে, ‘উত্তর প্রদেশের কোরওয়ানার আমেথিতে একটি নিবেদিত ফেসিলিটিতে রাশিয়ান কালাশনিকভ একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেলগুলির স্বদেশি লাইসেন্সকৃত উত্পাদনে বিলম্ব ঘটতে পারে, যা রাশিয়ার পূর্বের চুক্তিগুলি সরবরাহ করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইন্দো-রাশিয়ান রাইফেলস প্রাইভেট লিমিটেড (আইআরআরপিএল) ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রায় ৫০০০ একে-২০৩ ৭.৬২x৩৯ মিলি রাইফেলের প্রথম দফার উৎপাদন সরবরাহ করতে না পারার দরুন এই ক্ষমতার অভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও এই প্রকল্পটি খরচ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং স্বদেশীকরণ-সহ বেশ কয়েকটি সমস্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল।

এই বিলম্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্ভাব্য বিকল্প অন্বেষণে বাধ্য করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ভারতীয় সামরিক বাহিনীর তাত্ক্ষণিক কার্যকারিতা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৭৩০০০ সিগ সাওর অ্যাসল্ট রাইফেল আমদানি অনুমোদন করেছে বলে জানা গিয়েছে। র পাশাপাশি ইতিমধ্যে ৭২৪০০টি বন্দুক ক্রয় করা হয়েছে।

অন্যান্য যে ভারত-রাশিয়া প্রকল্প বিলম্বের সম্মুখীন হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, কালিনিনগ্রাদে রাশিয়ার ইয়ান্টার শিপইয়ার্ডে প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সম্পন্ন দুটি প্রকল্প অর্থাৎ ১১৩৫.৬এম অ্যাডমিরাল গ্রিগোরোভিচ-শ্রেণির গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট নির্মাণ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য আনুমানিক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ৯৭১ আকুলা (শুকা-বি) শ্রেণির পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দুটি স্টিলথ ফ্রিগেট ভারতে সরবরাহ করার কথা থাকলেও জানা গিয়েছে তা ২০২৫ সালের শুরুর দিকে সরবরাহ করা হবে।

এ হেন বিলম্ব হতে থাকলে তর্কাতীত ভাবে এর কোনও অন্ত নেই। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়ার অস্ত্র রফতানিকারক রোসোবোরোনেক্সপোর্ট ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে বলেছিল যে, রুশ প্রতিরক্ষা শিল্প ‘তীব্র সঙ্কটের সম্মুখীন। প্রতিরক্ষা সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য আরও বাধা ভারতের প্রতিরক্ষা বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ভারত স্বদেশীকরণের পাশাপাশি বিকল্প বিদেশি সরবরাহকারী অন্বেষণ করে বিলম্ব সংক্রান্ত প্রভাবকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে।

তিনটি ভারতীয় পরিষেবাই এখন সক্রিয় ভাবে অন্যান্য কার্যকর বিকল্পের অন্বেষণ করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারত এখন রুশ মিগ-২৯-এর পরিবর্তে ভারতের বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্যের জন্য ফরাসি রাফালের মেরিন ফাইটার জেটগুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং সেটিও আবার বিলম্বের সম্মুখীন হচ্ছে। ফরাসি সংস্থা দাসাউ-এর সঙ্গে চুক্তিতে ২২টি একক-সিটার রাফালে মেরিন বিমান এবং চারটি টুইন-সিটার ট্রেনার সংস্করণও এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে সরঞ্জাম সংক্রান্ত সরবরাহে বাধার পাশাপাশি রুশ অস্ত্র ব্যবস্থার দুর্বল কার্যকারিতা সম্ভবত রুশ ব্যবস্থার প্রতি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর আস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.