-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
দিল্লির মতবাদ’ যেন কোনও মতেই বৃহৎ ভাবনার স্তরে আমাদের উদ্ভাবন এবং পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর ক্ষমতাকে খর্ব না করে
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় দ্রুত বিবর্তিত ক্ষমতার ভারসাম্যকে স্পষ্ট করে তুলেছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক রাশিয়া সফর অভূতপূর্ব উপায়ে দুই দেশের কাছাকাছি আসার ফলাফল সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণের ঝড় তুলেছে। যেটা এক সময় ক্ষীণ সম্ভাবনা বলে মনে করা হত, তা বর্তমানে দ্রুত একটি অবিসংবাদিত বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে, যা আর কোনও ভাবেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। বিশ্ব-রাজনীতির মূল ভিত্তিগুলি দ্রুত স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং তার সঙ্গে দীর্ঘ কাল ধরে আলোচিত পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে। অনেকেই এ হেন পরিবর্তন এড়িয়ে যেতে পারবেন এমন দুরাশা রাখলেও রুশ-চিন অক্ষ যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটাতে পারে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই স্বৈরতন্ত্রের কাছাকাছি আসার ঘটনা যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করার ফলে বিশ্ব পরিস্থিতিতে একই রকম উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলার মতো অন্য কিছু পরিবর্তন চাপা পড়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাইম মিনিস্টার অ্যান্থনি আলবানিজ এবং জাপানের প্রাইম মিনিস্টার ফুমিও কিশিদার মার্চ মাসে ভারত সফরে আসার ঘটনা এ কথাই তুলে ধরে যে, কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলি আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিবেশকে পুনর্বিন্যাস করার লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
পূর্বসূরি শিনজো আবের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে কিশিদা ভারত সফরে একটি ‘মুক্ত এবং অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক’-এর জন্য একটি নতুন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন, যার চারটি স্তম্ভ হল: (১) শান্তির নীতি এবং সমৃদ্ধির নিয়ম, (২) ইন্দো-প্যাসিফিক সমুদ্রপথ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, (৩) বহুস্তরীয় সংযোগ এবং (৪) সমুদ্র এবং বায়ুর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষিত ব্যবহারের জন্য প্রসারিত প্রচেষ্টা। কার্যত এটি উদীয়মান অর্থনীতিতে জাপানের সহায়তা, সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য সমর্থন, উপকূলরক্ষী টহলদার নৌকা ও সরঞ্জাম এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত সহযোগিতার ব্যবস্থা করবে।
ভারত এখন এই বিশ্বজোড়া তোলপাড়ের কেন্দ্রে। ইউক্রেন সংঘাতের চাপে ইউরেশীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিবর্তিত হওয়ার ফলে এবং বিশ্বের ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতির মূল কেন্দ্র হিসাবে ইন্দো-প্যাসিফিক উঠে আসায় নয়াদিল্লির ভূমিকা এবং সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বের চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ক্যানবেরা চিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালালেও আলবানিজের ভারত সফরের লক্ষ্য ছিল সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করা। প্রথমে আলবানিজ এ কথা সুনিশ্চিত করেছিলেন যে, ভারত যেন অস্ট্রেলিয়ার নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে এবং তার পরে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ সরবরাহের জন্য ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সঙ্গে অউকাস চুক্তি চূড়ান্ত করতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। তবে এই চুক্তিটি শুধুমাত্র পারমাণবিক ডুবোজাহাজেই সীমাবদ্ধ নয়; এটির লক্ষ্য হল সেই তিনটি চিরাচরিত নিরাপত্তা অংশীদারের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করা, যাদের অবিলম্বে নিজস্ব গোয়েন্দা-ব্যবস্থা এবং উচ্চ প্রযুক্তিগত আন্তঃসহযোগিতা ব্যবস্থা্র সংস্কার করতে হবে, যাতে তারা তাদের সামনে উপস্থিত বাধাগুলি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে।
জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াও মার্চ মাসের শুরুর দিকে দুই দেশের মধ্যে টালমাটাল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা চালিয়েছে, যখন বিগত বারো বছরের মধ্যে প্রথম বারের জন্য দুই দেশের নেতারা সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতের ফলে টোকিও সেমিকন্ডাক্টর রফতানির উপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে সম্মত হয়েছে, এমনকি সিওল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে তার অভিযোগ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। চিন বিরক্ত হতে পারে, এ হেন প্রাথমিক ধারণাকে সরিয়ে রেখে দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার নিজস্ব স্থানকে পুনর্সংজ্ঞায়িত করছে। কিন্তু ইউন সুক ইওলের অধীনে সিওল এই অঞ্চলে বিবর্তিত কৌশলগত সমীকরণেও নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী। দেশটি নিজেকে শুধুমাত্র কোরীয় উপদ্বীপের এক পরিণতমনস্ক এবং স্থিতিশীলতর অংশ হিসাবে তুলে ধরতে চায় না। ইন্দো-প্যাসিফিকের অন্তর্গত আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াই চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ বা দ্য কোয়াড সম্পর্কে সবচেয়ে উত্সাহী।
কোয়াড নেতৃত্ব মে মাসে মঞ্চটির ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করার জন্য সমবেত হবেন, যে মঞ্চটিকে মাত্র কয়েক বছর আগেও নন স্টার্টার হিসেবে খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। আইনের শাসন, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়ে কোয়াড সদস্যরা ‘আঞ্চলিক ও বিশ্ব-কল্যাণের জন্য একটি শক্তি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অগ্রাধিকার দ্বারা পরিচালিত একটি উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি নির্মাণ করেছেন।’
বর্তমান এই কর্মসূচিতে রয়েছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণহীন শক্তিতে রূপান্তর, গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি, স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও ন্যায্য ঋণ প্রদান এবং অর্থায়নের অনুশীলন, পরিকাঠামো, সংযোগ এবং সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলি।
ভারত এখন এই বিশ্বজোড়া তোলপাড়ের কেন্দ্রে। ইউক্রেন সংঘাতের চাপে ইউরেশীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিবর্তিত হওয়ার ফলে এবং বিশ্বের ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতির মূল কেন্দ্র হিসাবে ইন্দো-প্যাসিফিক উঠে আসায় নয়াদিল্লির ভূমিকা এবং সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বের চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রধান শক্তিগুলি ভারতকে সঙ্গে পেতে চাইছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক কর্মসূচিকে আকার দিতে ভারত কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। ভারতের সঙ্গে বর্ধিত সম্পৃক্ততার জন্য দরজা খোলা আছে, ন্যাটো এমনটা দাবি করলেও রাশিয়া তার নতুন বিদেশনীতি কৌশলের প্রেক্ষিতে বিশ্ব মঞ্চে ভারত ও চিনকে প্রধান বন্ধু দেশ বলে চিহ্নিত করেছে।
এক দিকে যখন বিশ্ব ও আঞ্চলিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটছে এবং মূল শক্তিগুলি তাদের পরিবেশকে রূপ দেওয়ার জন্য দ্রুত চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন ভারতকেও একই সঙ্গে একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। দেশটিকে অবশ্যই তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে জোরালো অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।
এক দিকে পশ্চিমী দেশগুলি, এবং অন্য দিকে রাশিয়া এবং চিনের মধ্যে সংঘাত আরও প্রতিবন্ধকতাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ফলে বিশ্ব শক্তির ভারসাম্যের বর্তমান ভাঙন সম্ভবত ভারতের বিকল্পগুলিকে সীমিত করবে। চিনের উত্থান এবং আগ্রাসন ভারতের নিরাপত্তা পরিবেশের ক্রমশ রূপান্তর ঘটাচ্ছে। রাশিয়া বর্তমানে একটি গুরুতর সঙ্কটের সম্মুখীন হওয়ায় ও নিজেকে চিনের জুনিয়র পার্টনার হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার ফলে ঠান্ডা লড়াই শেষ হওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লি সম্ভবত এই প্রথম বার তার কৌশলগত পরিস্থিতির সবচেয়ে গুরুতর পরিবর্তনগুলির মুখোমুখি হচ্ছে।
এক দিকে যখন বিশ্ব ও আঞ্চলিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটছে এবং মূল শক্তিগুলি তাদের পরিবেশকে রূপ দেওয়ার জন্য দ্রুত চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন ভারতকেও একই সঙ্গে একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। দেশটিকে অবশ্যই তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।
কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, ‘দিল্লির মতবাদ’ চিন্তাভাবনার স্তরে উদ্ভাবন এবং পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর ভারতের ক্ষমতাকে খর্ব না করে এমন এক সময়ে, যখন দেশটি অভিন্ন স্বার্থে সমমনস্ক দেশগুলির মধ্যে নিজেদের স্থান সুনিশ্চিত করতে চাইছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +