সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)–এর সদস্য দেশগুলি আফগানিস্তান থেকে আসা বিশ্বের অবৈধ আফিমের ব্যবসার প্রায় ৮০ শতাংশকে আন্তঃদেশীয় গমনপথ প্রদান করে। যদিও এসসিও তার সূচনা থেকে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী কাঠামোর (র্যাটস) অধীনে মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বৃহত্তরভাবে একত্র হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে, ক্রমবর্ধমান মাদকাসক্তির প্রবণতা এবং এসসিও অঞ্চলের মধ্যে মাদক ব্যবসা কিন্তু এই ব্লকের অকার্যকারিতা প্রমাণ করে। এসসিও অঞ্চলের মধ্যে মাদকদ্রব্যের বাণিজ্যের বেশিরভাগটাই নজর এড়িয়ে চলে, এবং এই বাণিজ্য চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্থায়নের উৎস প্রদান করে। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মাদক পাচার ও অস্ত্র চোরাচালানের জন্য নতুন প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এসসিও এবং সমগ্র ইউরেশীয় ক্ষেত্রের উপর সরাসরি নিরাপত্তাজনিত প্রভাব ফেলে।
এসসিও এবং অবৈধ মাদকদ্রব্য
১৯৯৬ সালে চিন, কাজাখস্তান, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া ও তাজিকিস্তান সাংহাই ফাইভ গঠন করে। ২০০১ সালে উজবেকিস্তান গ্রুপিংয়ে যোগ দেওয়ার পর এর নাম পরিবর্তন করে এসসিও রাখা হয়। ভারত ও পাকিস্তান ২০১৭ সালে আঞ্চলিক ফোরামে যোগ দেয়, আর ইরানের ২০২৩ সালে স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার কথা। ২০০৬–এর পরে এসসিও–র সদস্য দেশগুলি আঞ্চলিক মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সম্মত হয়েছিল, যা সন্ত্রাসবাদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অর্থায়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। এই ফ্রন্টে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুবিধার্থে এই গোষ্ঠীটি অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার প্রসারও করেছে। মাদক পাচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর জন্য বেজিংয়ের এসসিও সচিবালয় ২০১৮ সালে প্যারিস প্যাক্ট ইনিশিয়েটিভ (পিপিআই) আয়োজন করে। পিপিআই হল ৫৮টি দেশ ও ২৩টি সংস্থার একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক গ্রুপিং যা অবৈধ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এসসিও ইতিমধ্যে ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমস (ইউএনওডিসি), সেন্ট্রাল এশিয়ান রিজিওনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন সেন্টার ফর কমব্যাটিং ইললিসিট ট্রাফিকিং ইন নারকোটিক ড্রাগস, সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যান্ড দেয়ার প্রিকারসরস (সিএআরআইসিসি), ও কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অরগানাইজেশন (সিএসটিও)–এর সঙ্গেও স্মারকলিপি ও চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এসসিও–র অধীনে বহুপাক্ষিক ও বহু–সংস্থা সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির ফলে ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৮১ টন হেরোইন এবং ৬৬৭ টন হাশিশ আটক করা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মাদক পাচার ও অস্ত্র চোরাচালানের জন্য নতুন প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এসসিও এবং সমগ্র ইউরেশীয় ক্ষেত্রের উপর সরাসরি নিরাপত্তাজনিত প্রভাব ফেলে।
নর্দার্ন রুট ও গোল্ডেন ক্রেসেন্ট হয়ে চোরাচালান বেড়েছে
২০২১ সালে আফগানিস্তান বিশ্বব্যাপী আফিমের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে বিশ্বের ৮০ শতাংশ আফিম ও হেরোইন সরবরাহ করেছিল। আফগানিস্তান থেকে মাদকদ্রব্য তিনটি প্রাথমিক রুটের মাধ্যমে বৃহত্তর ইউরেশিয়া, ইউরোপ এবং বাকি বিশ্বে পাচার করা হয়:
১। নর্দার্ন রুট যায় মধ্য এশিয়া হয়ে রাশিয়ান ফেডারেশন ও পূর্ব ইউরোপে।
২। সাদার্ন রুটটি যায় পাকিস্তান ও ইরান হয়ে উপসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায়।
৩। বলকান রুট যায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও তুর্কিয়ে হয়ে মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে।
আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে ২,৩৮৭ কিমি দীর্ঘ ছিদ্রযুক্ত সীমান্তটি ‘নর্দার্ন রুট’ গঠন করে, যা ব্যাপকভাবে মাদক চোরাচালানের জন্য যথেষ্ট জায়গা প্রদান করে। মধ্য এশিয়া থেকে মাদক রাশিয়ান ফেডারেশন ও পূর্ব ইউরোপে পাচার করা হয়। আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সরবরাহ তাজিকিস্তানের মাধ্যমে রাশিয়া এবং তার বাইরে এই পথে পাচার করা হয়। ২০১৪ সালে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে সরবরাহকৃত ৮০ শতাংশেরও বেশি মাদকদ্রব্য তাজিকিস্তানের মধ্য দিয়ে গেছে, যা এই দরিদ্র মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রের জিডিপি’র ৩০ শতাংশ। তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতাশীলদের জন্য মাদক ব্যবসা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অপব্যবহার করে অপ্রত্যাশিত অর্থপ্রাপ্তির একটি লাভজনক বিকল্প প্রদান করে। তাজিকিস্তান থেকে মাদকদ্রব্য প্রবাহিত হয় উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানে, এবং শেষ হয় রাশিয়া বা ইউরোপে। কাজাখস্তানে আনুমানিক ৪৫০,০০০ মাদকাসক্ত আফগানিস্তান থেকে পাচার করা আফিমের ৩০ শতাংশ খেয়ে ফেলে। বাকি ৭০ শতাংশ রাশিয়া ও ইউরোপে পরিবহণ করা হয়। রাশিয়ায় প্রায় ৬ মিলিয়ন মাদকাসক্ত আছে, এবং মাদক সংক্রান্ত মৃত্যুর হার প্রতি ১০০,০০০ জনসংখ্যায় ১০.২। রাশিয়ায় মাদকাসক্তি এইচআইভি মহামারিতেও অবদান রেখেছে, যা ১.৬ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করে।
রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে সরবরাহকৃত ৮০ শতাংশেরও বেশি মাদকদ্রব্য তাজিকিস্তানের মধ্য দিয়ে গেছে, যা এই দরিদ্র মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রের জিডিপির ৩০ শতাংশ।
‘গোল্ডেন ক্রেসেন্ট’ বা সাদার্ন রুট হল আফগানিস্তান থেকে ইরান ও পাকিস্তান হয়ে উপসাগর, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় সরবরাহের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান রুট। বিশ্বের সবচেয়ে মাদক–আক্রান্ত দেশ পাকিস্তানে ৭.৬ মিলিয়ন মাদকাসক্ত রয়েছে। ২০১৯ সালে ইরান ২.৮ মিলিয়নেরও বেশি মাদক সেবনকারীর কথা নথিভুক্ত করেছে। হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তান থেকে ৪০ শতাংশেরও বেশি মাদক ভারত ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছনোর আগে পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে যায়। পাকিস্তানের সঙ্গে তার সীমান্তে ভারত নিরাপত্তা গ্রিডকে শক্তিশালী করার পরে, যা কার্যকরভাবে জঙ্গি ও মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ কমিয়েছে, মাদক–সন্ত্রাসীরা ভারতের ভূখণ্ডে অস্ত্র ও মাদক ফেলার জন্য ড্রোনের ব্যবহার শুরু করেছে। ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের বক্তব্য অনুসারে, ২০২২ সালে সীমান্তে ১৭টি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছিল বা আটক করা হয়েছিল, যার ফলে ২৬,৪৬৯ কেজি মাদক ধরা পড়েছিল।
ইরান ও পাকিস্তান হয়ে দক্ষিণ এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমুদ্রপথ হল মাদক পাচারকারীদের জন্য পছন্দের বিকল্প গমনপথ। হিসাব অনুযায়ী, গোল্ডেন ক্রেসেন্ট হয়ে সমুদ্রপথে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মাদক ভারতে পাচার হয়। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আসা প্রায় ৩,০০০ কেজি মাদক গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে আটক করা হয়েছিল। নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা ৩,০১৭ কেজি হেরোইনের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ছিল সমুদ্রবাহিত এবং ১২২ কিলোগ্রাম বাজেয়াপ্ত করা কোকেনের মধ্যে ৮৪ শতাংশ সমুদ্রপথে পাচার করা হয়েছিল।
চিন একমাত্র এসসিও সদস্য রাষ্ট্র যেখানে মাদক পাচার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে কোভিডের সময় থেকে প্রচলিত চ্যানেলগুলির পরিবর্তে মাদক পাচারের জন্য প্রায়শই ব্যবহৃত হয়েছে ডাক পরিষেবা ও জলপথগুলি। মাদক পাচার অনলাইন এবং অফলাইনে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। ২০২১ সালে অনলাইন মাদক পাচারের ৫,০০০ কেস ছিল। মাদকের লেনদেন মূলধারার চ্যাট সিস্টেম থেকে বিবর্তিত হয়ে নতুন সামাজিক সরঞ্জাম, সেকেন্ড হ্যান্ড ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, গেমিং ওয়েবসাইট ও ডার্ক নেটে চলে গেছে। চিনে ড্রাগ সম্পর্কিত আর্থিক হস্তান্তর অনলাইন ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে ভার্চুয়াল ও গেম কারেন্সি দিয়ে হচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও চরমপন্থীদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য মাদক চোরাচালান অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে।
ভারতের বৃহত্তর অভিন্নতার জন্য প্রয়াসী হওয়া উচিত
ক্রমবর্ধমান মাদক ব্যবসা এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বৃহত্তর সম্পৃক্ততা সমস্ত এসসিও সদস্য দেশগুলির জন্য ভূ–রাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে৷ চিন ব্যতীত অন্য সমস্ত এসসিও সদস্য দেশ আফগানিস্তান থেকে পরিবহণ করা মাদক ও ক্রমবর্ধমান মাদকাসক্তির বিপদের কারণে ভুগছে। আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে, কারণ নর্দার্ন রুট ও গোল্ডেন ক্রেসেন্ট উভয় জায়গাতেই মাদক ব্যবসায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রবিরোধী কুশীলবদের আরও জড়িত থাকার সাক্ষ্য মিলেছে। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও চরমপন্থীদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য মাদক চোরাচালান অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। যদিও এসসিও–র লক্ষ্য হস্তক্ষেপ না–করার মূল নীতি অক্ষুণ্ণ রেখে সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষমতাগুলিকে উন্নত ও দৃঢ় করা, ভারতকে অবশ্যই তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব এবং যথেষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিক পুঁজি ব্যবহার করে অবৈধ মাদক পাচারের বিষয়ে একটি সুসংগত নীতির জন্য দৃঢ়ভাবে বলতে হবে। যেহেতু এসসিও–র বেশিরভাগ সদস্য দেশ উদ্বেগজনক অনুপাতে মাদক সমস্যার সম্মুখীন, তাই নয়াদিল্লিকে র্যাটস–এর অধীনে এসসিও অঞ্চলের মধ্যে মাদকের তথ্যের মাসিক শেয়ারিংয়ের জন্য একটি প্রগতিশীল কর্মসূচির বিকাশে তার কূটনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগের কথাও বিবেচনা করতে হবে। তা ছাড়া নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মাদকের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এসসিও ভূগোল জুড়ে সর্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির অর্থ প্রবাহ কমাতে তথ্য আদানপ্রদান ও কৌশলের জন্য মাদকদ্রব্যের মানচিত্রায়ণ, অপরাধ বিশ্লেষণ এবং আর্থিক পোর্টালগুলির দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। এই অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলির মধ্যে বৃহত্তর সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে নয়াদিল্লিকে অবশ্যই তার এসসিও সভাপতিত্বের সুবিধা নিতে হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.