মার্চ ২০২৪-এ, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর ম্যানিলা সফরের সময় একটি যৌথ বিবৃতিতে ফিলিপিনসের জাতীয় সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা বলেছিলেন। জয়শঙ্করের মন্তব্যটি করা হয়েছিল ম্যানিলা ও বেজিংয়ের মধ্যে চলতি দক্ষিণ চিন বা পশ্চিম ফিলিপিন সাগর বিরোধের মধ্যে, যার সব থেকে তীব্র ও অস্থিতিশীল বছর ছিল ২০২৩, যখন সমুদ্রে ঘন ঘন উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক সংঘাত দেখা দিয়েছিল। নয়াদিল্লি ও ম্যানিলার ২০২৩ সালের যৌথ বিবৃতিতে চিনকে নিয়মভিত্তিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং ২০১৬ সালের ম্যানিলার পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়কে স্বীকার করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এই দুটি বক্তব্যই একটি বিকশিত পদ্ধতির অংশ, যা দক্ষিণ চিন সাগরের ক্ষেত্রে ভারতের আগের সতর্ক ও নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন, সার্বভৌমত্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরে সার্বভৌম অধিকারের বিধানগুলিকে সমর্থন করে আরও স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক মঞ্চে তার বৃহত্তর কৌশলগত ও অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
একটি নীতি বিবর্তন
এই অঞ্চলের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক এবং পূর্বের দিকে তাকানোর (লুক ইস্ট) নীতি দ্বারা চালিত ছিল, যার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সংযুক্তিকরণ বাড়ানো এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে জ্বালানি জোগান দেওয়ার জন্য নিজের শক্তির সংস্থানগুলিকে সুরক্ষিত করার অপরিহার্যতা। ভিয়েতনামের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পে এবং অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের অংশগ্রহণ — যেমন তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশনের বিদেশী শাখার (ওএনজিসি বিদেশ) — শুধুমাত্র এই অঞ্চলে ভারতের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকেই নির্দেশ করে না; সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের সীমার মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদের অন্বেষণ ও শোষণের স্বাধীনতার নীতির প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করে, বিশেষ করে সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন (ইউএনক্লস)-এর।
এই দুটি বক্তব্যই একটি বিকশিত পদ্ধতির অংশ, যা দক্ষিণ চিন সাগরের ক্ষেত্রে ভারতের আগের সতর্ক ও নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনের অধীনে ভারতের নীতিগত অভিমুখ লুক ইস্ট থেকে অ্যাক্ট ইস্ট-এ রূপান্তরিত হয়েছে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে আরও কৌশলগত এবং সক্রিয় সম্পৃক্ততার দিকে একটি পরিবর্তন চিহ্নিত করেছে। এই নীতির বিবর্তন যেমন পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ভূচিত্র সম্পর্কে ভারতের স্বীকৃতির প্রমাণ, তেমনই তা পূর্বে সক্রিয়তার নীতির সঙ্গে আরও সক্রিয় ও বহুমুখী বৈদেশিক নীতি পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিফলিত করে। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক একীকরণ নয়, বরং কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং ফিলিপিনস ছাড়াও ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর-সহ ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলির সঙ্গে বর্ধিত নিরাপত্তা সহযোগিতার উপর জোর দেয়। ভারত একইসঙ্গে ফরওয়ার্ড পজিশনিং, মিশন-ভিত্তিক স্থাপনা, শক্তিশালী সামুদ্রিক পরিসর সচেতনতা, এবং গভীর-জলের সামুদ্রিক সুবিধার মাধ্যমে তার নিজস্ব ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে।
চিনের সঙ্গে ভারতের জটিল সম্পর্ক
দক্ষিণ চিন সাগরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার সময়, বিশেষ করে চিনের আগ্রাসী ভূমিগত দাবি ও সামরিকীকরণ প্রচেষ্টার কারণে, আগের থেকে কম সতর্ক অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি ভারতের অবস্থান আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের অবস্থানের বিবর্তনকে চিনের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ক থেকে আলাদা করা যায় না। দুই দেশের সীমান্ত বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা ২০২০ সালের গলওয়ান উপত্যকার ঘটনার পর থেকে — সেই সঙ্গে ভারতের ভূখণ্ডে বেজিংয়ের পর্যায়ক্রমিক অনুপ্রবেশ এবং অতি সম্প্রতি এমনকি অরুণাচল প্রদেশের ভারতীয় গ্রামগুলির নাম পরিবর্তনের সঙ্গে — তীব্রতর হয়েছে।
গলওয়ান উপত্যকার ঘটনাটি ভারতকে অ-প্রতিসম প্রতিরোধের জন্য ভারতের সক্ষমতার প্রদর্শনে দক্ষিণ চিন সাগরে একটি ফ্রন্টলাইন যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে দেখেছিল। দক্ষিণ চিন সাগরে এবং ভারতের স্থল সীমান্তে চিনের আগ্রাসী অবস্থান এবং ভূমিগত দাবি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর যথেষ্ট বিঘ্নিত প্রভাব ফেলে। নিয়মিত নৌ-মহড়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করা-সহ ভারতের কৌশলগত ব্যস্ততা দ্বৈত উদ্দেশ্য পূরণ করে: তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে, এবং চিনের বেআইনি দাবির পাল্টা হিসেবে কাজ করে।
ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে আসিয়ানের কেন্দ্রীয়তা ভারতের জন্য আসিয়ান সংক্রান্ত অবস্থানকে জোরদার করা অপরিহার্য করে তোলে, যদিও আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের মধ্যে পার্থক্যগুলি এই ধরনের প্রচেষ্টার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে চলেছে।
আসিয়ান ফ্যাক্টর
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলার জন্য দক্ষিণ চিন সাগরের তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্বের স্বীকৃতির মাধ্যমে নয়াদিল্লির কৌশলগত পুনর্নির্মাণ চালিত হয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরের বিরোধ — যার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চিন এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট নেশনস (আসিয়ান)–এর কয়েকটি দেশ জড়িত — সমুদ্রে চলাচল ও তার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার স্বাধীনতার উপর প্রভাব ফেলে। এই নীতিগুলি শুধুমাত্র ভারতের বাণিজ্য ও শক্তি পরিবহণ রুটের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে দেশগুলির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি দায়িত্বশীল অংশীদার হিসাবে ভারত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন অবস্থান নেওয়া এড়িয়ে যেতে পারে না। ইন্দো-প্যাসিফিক থিয়েটারে এর কেন্দ্রীয়তার অর্থ হল যে এর পরিধি আর শুধু ভারত মহাসাগরে সীমিত নয়, বরং বিস্তৃত পুরো সামুদ্রিক পরিসরে যেখানে চিনের উত্থান স্থিতাবস্থাকে এমনভাবে চ্যালেঞ্জ করছে যা আগে প্রত্যাশিত ছিল না। ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে আসিয়ানের কেন্দ্রীয়তা ভারতের জন্য আসিয়ান সংক্রান্ত অবস্থানকে জোরদার করা অপরিহার্য করে তোলে, যদিও আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের মধ্যে পার্থক্যগুলি এই ধরনের প্রচেষ্টার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে চলেছে।
একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক ব্যবস্থার জন্য নয়াদিল্লির ওকালতি, বিশেষ করে ইউএনক্লস-এর উপর জোর দেওয়া, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিপদে ফেলার মতো একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান প্রতিফলিত করে। এই অবস্থান ভারতের নীতিগত বিদেশনীতি পদ্ধতির মূলে থাকা সত্ত্বেও তা দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের বিস্তৃত আঞ্চলিক দাবি এবং কার্যকলাপকে পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দায়িত্বশীল অংশীদার হিসাবে ভারতের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান বজায় রাখার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবদান রাখার পাশাপাশি নিজের স্বার্থ রক্ষা করার লক্ষ্যে বৃহত্তর কৌশলেরও প্রতীক।
এই ভাষ্যটি প্রথম দ্য হিন্দু তে প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.