Published on Apr 30, 2022 Updated 0 Hours ago

ভারতকে তার তেল আমদানির উৎস বহুমুখী করার জন্য সতর্ক ভাবে কৌশল তৈরি করতে হবে।

ভারতের তেল আমদানি: বৈচিত্র্যের প্রবণতা

এই নিবন্ধটি ‘‌কম্প্রিহেনসিভ এনার্জি মনিটর: ইন্ডিয়া অ্যান্ড দি ওয়র্ল্ড’‌ সিরিজের অংশ


অতিমারি বছর ২০২০-২১–এ ভারতের পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদার ৮৪ শতাংশের বেশি (অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য) আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছিল। ২০২০–২১ সালে ভারতের মোট আমদানির ১৯ শতাংশেরও বেশি ছিল ৭,৭০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের প্রায় ২৩.‌৯ কোটি  মেট্রিক টন (এমটি)‌ গ্রস পেট্রোলিয়াম আমদানি। তার আগে ২০১৯-২০ সালে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছিল। ১১,৯০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ২৭ কোটি এমটি–রও বেশি গ্রস পেট্রোলিয়াম আমদানি ছিল সে বছরের ভারতের মোট আমদানির ২৫ শতাংশ। ২০০৬-০৭–এর তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, কারণ তখন প্রায় ১৪.‌৫ কোটি মেট্রিক টন  তেল আমদানি ছিল মোট উপভোগের প্রায় ৭৭ শতাংশ।

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্রমবর্ধমান পরিমাণের পরিপ্রেক্ষিতে ভাবনা শুরু হয়েছিল ভারতের শক্তি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে, এবং এক্ষেত্রে দুটি প্রধান বাহ্যিক ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রথমটি ছিল আয়তনের ঝুঁকি, যার কারণ ছিল বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ তেলের উৎস এবং ভারতেরও বেশিরভাগ তেল আমদানি পারস্য উপসাগরে কেন্দ্রীভূত ছিল। তখন মনে করা হয়েছিল যে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা রাষ্ট্রীয় বা অ-রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃত ভাবে তেল সরবরাহ ব্যাহত করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। দ্বিতীয়টি ছিল মূল্যজনিত ঝুঁকি, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধির সম্ভাবনা। এমন আশঙ্কার বিভিন্ন কারণের মধ্যে ছিল:‌ (ক) তেল উৎপাদনকারী অঞ্চলে  অ–স্থিতিশীলতা, (খ) উৎপাদনকারী দেশগুলির গৃহীত নীতির কারণে সরবরাহ হ্রাস, ও (গ) কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশ থেকে তেল সংগ্রহের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। তেল সরবরাহে আয়তনের পরিমাণজনিত ঝুঁকিকে দামের ঝুঁকির চেয়ে বড় বিপদ হিসেবে দেখা হয়েছিল, এবং তার মোকাবিলা করার জন্য তেল আমদানির ক্ষেত্রটির বৈচিত্র্যকরণ এবং বিশ্বজুড়ে ইক্যুইটি তেল সম্পদ অধিগ্রহণের মতো কৌশল নেওয়া হয়েছিল।

সূত্র:‌ বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক

আমদানির উৎসের বৈচিত্র্যকরণ

২০০৬-০৭ সালে ভারত ২৭টি দেশ থেকে অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ করেছিল, আর ২০২০-২১ সালে সংগ্রহ করেছিল ৪২টি দেশ থেকে। কিন্তু একে তেল আমদানির উৎসের বৈচিত্র্যবৃদ্ধি হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় না। ভারত তার তেল আমদানির  শীর্ষ ২০টি উৎস থেকে ধারাবাহিক ভাবে মোট আমদানির ৯৫% আমদানি করে, এবং শীর্ষ ১০টি দেশ থেকে গত ১৫ বছর ধরে ৮০%–এর বেশি। গত ১৫ বছরে ভারতের অপরিশোধিত তেলের আমদানিতে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির অংশভাগ প্রায় ৬০% থেকেই গেছে। আফ্রিকা থেকে আমদানির অংশ ২০০৯-১০ সালে প্রায় ১৭% থেকে কমে ২০১৯-২০ সালে প্রায় ১৩% হয়েছে, এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির অংশ প্রায় ৬% থেকে বেড়ে প্রায় ১২% হয়েছে। ভারতের শীর্ষ ১০ তেল আমদানির উৎসের মধ্যে পারস্য উপসাগর, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির অবদান ৮০% এরও বেশি। এই অঞ্চলগুলির তুলনামূলক ভাবে সস্তা সরবরাহকারীদের আধিপত্য একথাই বোঝায় যে অপরিশোধিতের উৎস সম্পর্কে সিদ্ধান্ত শোধনাগার স্তরে নেওয়া হয়, জাতীয় স্তরে নয়।৷ অর্থাৎ, ভূ–রাজনীতির পরিবর্তে শোধনাগার–অর্থনীতি অপরিশোধিতের উৎস সম্পর্কিত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

‌সূত্র: বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক; * ২০২১-২২ (এপ্রিল ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২)

ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির উৎসের সাম্প্রতিক প্রবণতা

২০২০-২১ সালে ভারতে শীর্ষ তেল রফতানিকারী ছিল ইরাক, এবং তারপরে সৌদি আরব। ভারতের আমদানিতে ইরাকের অংশ ২০০৯-১০ সালের প্রায় ৯% থেকে বেড়ে ২০২০-২১ সালে ২২%-এর বেশি হয়েছে। যদিও সৌদি আরব ২০১৭-১৮ সালে ভারতের তেল আমদানির বৃহত্তম উৎস হিসেবে তার দীর্ঘকালের অবস্থান ইরাকের কাছে হারিয়েছে, এক দশক ধরে সৌদি আরবের অংশভাগ কিন্তু ভারতের আমদানির ১৭-১৮% বরাবর দাঁড়িয়ে রয়েছে। মজার বিষয় হল, যদিও এক দশক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে শীর্ষ ২০ তেল রফতানিকারী দেশের মধ্যে ছিল না, ২০১৭-১৮ সালে দেশটি ১৮তম স্থানে পৌঁছয়, ২০১৮-১৯ সালে হয়ে ওঠে নবম বৃহত্তম রফতানিকারী, ২০১৯-২০ সালে সপ্তম বৃহত্তম, এবং ২০২০-২১–এ চতুর্থ বৃহত্তম। অবশ্য ২০১৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে  অপরিশোধিত তেল রফতানি অবৈধ ছিল। তা ছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপরিশোধিত তেলের একটি বড় নেট আমদানিকারীও ছিল। শেল অয়েলের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু অপরিশোধিত তেলের নেট রফতানিকারীই নয়, বরং বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকারীও। ভারতের তেল আমদানির চতুর্থ বৃহত্তম উৎস হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উঠে আসার ফলে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের শীর্ষ পাঁচটি তেল আমদানির উৎস হিসেবে থাকা সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নাইজেরিয়া ও ভেনেজুয়েলার আধিপত্যও ভেঙে গিয়েছে।

চেষ্টা সত্ত্বেও ভারতের তেল আমদানির উৎসের বৈচিত্র বৃদ্ধি পায়নি‌।

যে দুটি দেশ পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, সেই ইরান ও ভেনেজুয়েলা গত এক দশক ধরে যে ১০টি দেশ থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে তার মধ্যে ছিল। ইরান ২০০৯-১০ সালে ভারতে অপরিশোধিত তেল রফতানিকারীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ২০১০-এর দশকের শুরুতে প্রায় ৬%-এ নেমে আসে৷ ২০১০-এর দশকের শেষের দিকে তার অংশভাগ আবার প্রায় ১০%-এ উন্নীত হয়েছিল, কিন্তু ২০১৯-২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১%-এর কম। ২০২০ সাল থেকে অবশ্য ইরান আর ভারতের শীর্ষ ২০ তেল আমদানিকারীর মধ্যে নেই। ভেনেজুয়েলার অংশ ২০১০-এর দশকের গোড়ার দিকে প্রায় ৪% থেকে ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ১২%-এর উপরে উন্নীত হয়। তারপর থেকে ভেনেজুয়েলার অংশ কমেছে, এবং ২০২০-২১ সালে ওই দেশটির অংশভাগ মাত্র ২% এর কিছু বেশি ছিল। ইরান ও ভেনেজুয়েলা কেউই ২০২১-২২ সালে ভারত যে ২০ দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে তার মধ্যে ছিল না।

রাশিয়া, যে দেশটি ২০২২ সালে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার আওতায় এল, ভারতের তেল আমদানির একটি বড় উৎস না–হলেও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের তেল আমদানিকারীদের দীর্ঘ পোর্টফোলিওটিতে রয়েছে। ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ১%–এর কম ছিল, কিন্তু তার পরেই রাশিয়া প্রায় ১.৪% অংশভাগ নিয়ে ভারতের শীর্ষ ২০টি তেল আমদানি উৎসের মধ্যে ঢুকে পড়তে শুরু করেছিল। ২০২১-২২ সালে (এপ্রিল থেকে জানুয়ারি) ভারতের তেল আমদানির মধ্যে রাশিয়ার অংশ ছিল ২.৩%, যার ফলে রাশিয়া ভারতের তেল আমদানির শীর্ষ ১০টি উৎসের মধ্যে এসে গেছে।

কী কী ইস্যু আছে

যে প্রেক্ষাপটে তেল আমদানির উৎসের বৈচিত্রকরণের প্রয়োজন পড়েছিল, তার অন্যতম ছিল সরবরাহের নিরাপত্তাহীনতা। পারস্য উপসাগরে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনার  প্রভাব ছিল খুব বেশি, আর এই ধরনের ঘটনার সম্ভাব্যতার হারও বেশি বলে ধরা হয়েছিল। এর যুক্তিসঙ্গত প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়েছিল সরবরাহের উৎসের বৈচিত্র্যকে, কারণ এই অঞ্চলের দেশগুলি থেকে ভারতের তেল আমদানির ৬০%–এরও বেশি আসে। যদিও পারস্য উপসাগরে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঘটনার প্রভাব এখনও খুব বেশি, তবে এ ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা ততটাও বেশি নয় যতটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় মনে করা হয়েছিল। আরও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল তেল রফতানিকারীরা এখন ‘‌চাহিদার নিরাপত্তাহীনতা’য় ভুগছে, এবং তার ফলে তেলের চাহিদা সামান্য যে কয়েকটি দেশে বাড়ছে তার অন্যতম ভারতের বাজারে অংশীদারি বাড়ানোর জন্য তেল রফতানিকারী দেশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। এই ঘটনা ভারতের সরবরাহ-নিরাপত্তার চেয়ে বৈচিত্রকরণকে বেশি প্রভাবিত করছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম বারের মতো তেলের বাজারের প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে, এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো পশ্চিম গোলার্ধের তেল রফতানিকারী দেশগুলি ভারতে শীর্ষ ১০ তেল রফতানিকারী দেশের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভারতের তেল আমদানির উৎসগুলির ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি বিপর্যয় ঘটাতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবণতাকে পাল্টে দিতে পারে না।

সূত্র: বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক; * ২০২১-২২ (এপ্রিল ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২)
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...

Read More +
Lydia Powell

Lydia Powell

Ms Powell has been with the ORF Centre for Resources Management for over eight years working on policy issues in Energy and Climate Change. Her ...

Read More +
Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change. Member of the Energy News Monitor production ...

Read More +