Author : Hari Seshasayee

Published on May 23, 2023 Updated 0 Hours ago
তেলের ভূ–রাজনীতিতে ভারতের আবস্থান

প্রথমে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড–১৯ অতিমারি এবং ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের দরুন বিশ্বের শক্তির বাজারগুলি গত তিন বছর ক্রমাগত অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করেছে ৷ ভারত অর্থনৈতিক কূটনীতি ব্যবহার করে এই উভয় বাধাই অতিক্রম করতে পেরেছে, যা তাকে তেলের ভূ–রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তেল কূটনীতির পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসি ও মস্কো উভয়ের সঙ্গেই নয়াদিল্লি রাজনৈতিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের তেল আমদানির শীর্ষ পাঁচটি উৎসের মধ্যে রয়েছে। যেহেতু ভারত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে এবং আরও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শক্তির মানচিত্র প্রসারিত করছে, তাই নয়াদিল্লিকে তেলের বিবর্তিত ভূ–রাজনীতির সুবিধা নিতেই হবে।


আরোপণ: হরি শেষশায়ী, “ইন্ডিয়াজ মোমেন্ট ইন দ্য জিওপলিটিক্স অব অয়েল”, ও আর এফ ইস্যু ব্রিফ নম্বর ৬২৯, এপ্রিল ২০২৩, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।


ভূমিকা

ভূ–রাজনীতির সঙ্গে ভূ–অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত, এবং এর কোনওটিই বিচ্ছিন্নভাবে  থাকতে পারে না। চিন এই সংযোগের একটি উপযুক্ত সমসাময়িক উদাহরণ। বিংশ শতাব্দীতে চিনের ভূ–রাজনৈতিক দাপট ছিল সামান্যই। তখন দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে একটি দ্বিমেরু বিশ্বের এক গৌণ শক্তি ছিল। একবিংশ শতাব্দীতে বিষয়গুলি পরিবর্তিত হতে শুরু করে, এবং ২০০২ সালে চিন ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ বৃহৎ পণ্য বণিকদের তালিকায় প্রবেশ করে (বাকিরা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান ও ব্রিটেন)।[১] ২০০৪ সালে চিনের মোট বাণিজ্য তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়, যে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্য ছিল ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের মধ্যে চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে, এবং তখন থেকেই দেশটি  স্থানটি ধরে রেখেছে। কোভিড–১৯ অতিমা্রি চলাকালীন উভয় অর্থনীতির মোট বাণিজ্যের পরিমাণের মধ্যে ব্যবধান বিস্তৃত হয়েছে:‌ ২০১৯ সালের ৮.৫ শতাংশ থেকে তা ২০২০ সালে ২১.২ শতাংশে, এবং আরও বেড়ে ২০২১ সালে ২৮.৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।[২]

চিন দ্রুত এই ক্রমবর্ধমান ভূ–অর্থনৈতিক প্রভাবকে ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থানান্তরিত করেছে, এবং কিছু বিশ্লেষক যাকে ‘‌নেকড়ে যোদ্ধা কূটনীতি’‌ বলেন তার অনুশীলন শুরু করেছে। ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’–এ ভিক্টর চা–এর প্রবন্ধে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে ‘‌চিন অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতাকে অস্ত্রে পরিণত করেছে’‌, এবং এর ‘অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা’‌ [বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার] আয়ত্বের বাইরে’‌। [৩] ভূ–রাজনীতিতে এই ধরনের বিস্তার শুধু চিনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আজ, বিশ্বের তিন–চতুর্থাংশের চিনের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি।[৪]

চিত্র ১। মোট বিশ্ব বাণিজ্যে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

সূত্র: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র, ‘‌বাণিজ্য মানচিত্র’‌[৫]

একইভাবে, ভারতকে যদি বিশ্বের ভূ–রাজনীতিতে তার স্থান নিতে হয়, তবে প্রথমে তাকে ভূ–অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরি করতে হবে। ভারত চিনের পথ অনুসরণ করে বিশ্বের কারখানা হতে পারবে না, পণ্য রপ্তানিতেও তার এই এশীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে সমান হতে পারবে না। ২০২২ সালে ভারতের বার্ষিক বাণিজ্য প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, চিন সেই চিহ্ন অতিক্রম করার পুরো ১৮ বছর পরে। কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতি অনেক বেশি ঝুঁকছে পরিষেবার দিকে, এবং বিশ্বের পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যে দেশটির ওজন হালকাই থেকে গেছে। ২০২১ সালে বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারীদের তালিকায় ভারত ছিল ১৮তম, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো অনেক ছোট দেশেরও নীচে। ভারত রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি আমদানি করে। ২০২১ সালে ভারত বিশ্বের দশম বৃহত্তম আমদানিকারী দেশ ছিল। ২৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি সহ ভারতের আমদানি ২০২২ সালে তার রপ্তানির তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি ছিল।[৬] এই ঘাটতিটিকে সাধারণত একটি নেতিবাচক আলোকে চিত্রিত করা হয়, কারণ একটি বড় ঘাটতির অর্থ হল ভারতকে তার পণ্য আমদানি করতে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে এবং অন্যান্য দেশের উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হতে হবে।

তবুও, ভারতের আমদানি ঝুড়ির একটি নির্দিষ্ট অংশ দেশের সুবিধার জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে, এবং সম্ভাব্যভাবে একটি ভূ–রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই অংশটি হল শক্তি। গত পাঁচ বছরে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম তেল বিশ্বব্যাপী একক সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যকৃত পণ্য।[৭] ভারত বিশ্বব্যাপী শক্তির তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক, যার আগে আছে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া ভারতের প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ব্যারেল (বিপিডি) পেট্রোলিয়াম পরিশোধন ক্ষমতা আছে, যা ব্রিটেন, ইতালি, তুরস্ক ও ফ্রান্সের সম্মিলিত ক্ষমতার সমান। [৮] ভূ–রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারত একটি বিশাল তেল আমদানিকারী হিসেবে তার অবস্থানকে তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পারে। এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে চাকাগুলি ইতিমধ্যেই গতিশীল।

মস্কো  ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারতের তেল কূটনীতি

গত কয়েক বছরে ভারত তেলের ভূ–রাজনীতিতে নিজেকে অনুকূল অবস্থানে রাখার জন্য অর্থনৈতিক কূটনীতি ব্যবহার করেছে। ওয়াশিংটন ডিসি ও মস্কোর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিল্লির সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা নিয়ে ইতিমধ্যেই মিডিয়াতে অনেক কাটাছেঁড়া হয়েছে, কিন্তু বিশ্বব্যাপী তেলের রাজনীতিতে ভারতের অর্থনৈতিক চালচলন এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ বিশ্লেষকের নজর এড়িয়ে গিয়েছে। দুটি স্বতন্ত্র ডেটা থেকে বিষয়টি সবচেয়ে স্পষ্ট: ভারত রাশিয়ার অশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারী (মার্চ ২০২২ থেকে), এবং মার্কিন অশোধিত তেলের বৃহত্তম আমদানিকারী (২০২১ সালে)।

ঠিক কীভাবে ভারত মার্কিন ও রুশ অপরিশোধিত তেলের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠল?

রাশিয়া

লক্ষণীয়ভাবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং প্রায় বিশ্বব্যাপী মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা সত্ত্বেও সেই সময়েই রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল ভারতে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এটি একটি নতুন ঘটনা, কারণ ২০১০ ও ২০২০–র মধ্যে রাশিয়া ভারতের তেল আমদানির মাত্র ০.৫ শতাংশ সরবরাহ করেছিল।[৯] এমন একটি বিশ্বে, যেখানে মস্কোর সঙ্গে সব সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, সেখানে সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো পশ্চিমী শক্তির ভারতকে নিন্দা করতে দ্রুত এগিয়ে আসার কথা। পরিবর্তে, তারা উল্টোটা করেছে, এবং প্রকাশ্যে ভারতের রুশ তেলের ক্রমবর্ধমান আমদানিতে সম্মতি জানিয়েছে। ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ডক্টর ফিলিপ অ্যাকারম্যান ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে একটি সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে ‘‌ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা আমাদের কোনও (‌মাথা ঘামানোর)‌ বিষয় নয়’‌।[১০] মার্কিন কর্তারাও প্রকাশ্যে বলেছেন রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে ‘‌ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি অস্বস্তিকর নয়’‌, এবং যোগ করেছেন যে ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক ‘‌সবচেয়ে পরিণতিমূলক’‌ সম্পর্কগুলির একটি।[১১] ভারতের অবস্থান স্পষ্ট: ভারতে তেল একটি অপরিহার্য পণ্য যার সরবরাহে ঘাটতি আছে,‌ এবং যে রপ্তানিকারী সেরা শর্ত ও দাম দেবে তার থেকেই সে কিনবে। তার একটা বড় কারণ ভারতীয়দের পাম্পে তেল কেনার সময় যাদের মাথাপিছু আয় তাদের থেকে ৩০ গুণ বেশি সেই আমেরিকানদের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দাম দিতে হয়।[১২] ভারতে প্রবাহিত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল যথেষ্ট ছাড়–সহ আসে, এবং তা ভারতের বাজেট ঘাটতি কমাতে সাহায্য করতে পারে।[১৩]

মিডিয়াতে চিত্রিত বর্ণনার বিপরীতে, রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি অর্থনীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত, রাজনীতি নয়। রাশিয়ার উপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা জারি এবং জি৭ দেশগুলির একটি নির্দিষ্ট মূল্যসীমার নিচে রাশিয়ার তেল কেনা সীমাবদ্ধ করার জন্য মূল্যসীমা আরোপ করা সত্ত্বেও, দেশের কোষাগারের সুবিধার জন্য ২০২২ ও ২০২৩ সালে ভারতের রুশ তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ব্যারেলপ্রতি ৯১ মার্কিন ডলারে ভারতকে তেল দিয়েছিল, যা ভারতের মোট তেল আমদানির জন্য গড় ব্যারেলপ্রতি ৯৭.৫ মার্কিন ডলারের চেয়ে অনেক কম ছিল।[১৪] ভারতীয় উপকূলে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আনার জন্য অতিরিক্ত খরচ সত্ত্বেও, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির খরচ কম ছিল। কারণ ভারতীয় আমদানিকারীরা ২০২২ সালে সৌদি আরব থেকে প্রতি ব্যারেল ১০৩ মার্কিন ডলারে এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে প্রতি ব্যারেল ১০৫ ডলারে তেল কিনেছিল।

কৌশলগত ইস্যুতে পশ্চিম ও কোয়াডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অব্যাহত রেখে ভারত সফলভাবে পরিস্থিতিটিকে তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছে। অথচ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা এমন সময়ে বাড়িয়েছে যখন রাশিয়া এত বেশি পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে যে  ‘‌বিশ্বের সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি দেশ’‌ বলে পরিচিতি অর্জন করেছে।[১৫]

রাশিয়া সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত একটানা ছয় মাসের জন্য ভারতে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম তেলের বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে থেকেছে।[১৬] এটি একটি সহজ কাজ ছিল না: ভারতের তেল সংস্থাগুলিকে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করতে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। রাশিয়ার বিমা সংস্থাগুলি ধীরে ধীরে তেল বাণিজ্যে পশ্চিমী বিমা সংস্থাগুলিকে প্রতিস্থাপন করেছে; মার্কিন ডলারে রাশিয়ার সংস্থাগুলির সঙ্গে লেনদেনের উপর আর্থিক বিধিনিষেধের কারণে বাণিজ্য এখন রুপি, রুবল ও দিরহামেও সঞ্চালিত হচ্ছে; তবে, রাশিয়া থেকে ভাল ছাড় কিন্তু ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি ছিল তা পুষিয়ে দিয়েছে। আজ চিনের পরে ভারত রাশিয়ার তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। এই রপ্তানির ফলস্বরূপ ভারত–রাশিয়ার বাণিজ্য ২০২২ সালে ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ এবং ২০২১ সালে ১১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের তিন গুণেরও বেশি।

চিত্র ২: ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার শীর্ষ ৫ তেল রপ্তানি গন্তব্য (মিলিয়ন টনে)

সূত্র: ২০২৩ রাশিয়া ফসিল ট্র্যাকার, সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার[১৭]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ভারতে প্রবাহিত রাশিয়ার তেলের গল্প যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করলেও মার্কিন অপরিশোধিত তেলের বাজার হিসাবে ভারতের ক্রমবর্ধমান সাবলীলতা সম্পর্কে একই কথা বলা যায় না। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের শক্তি বাণিজ্যের গল্পটি প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদক, এবং দেশটি আজ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। ভারত–মার্কিন সম্পর্ক গভীরতা ও বৈচিত্র্য দ্বারা চিহ্নিত, এবং তা ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। বেশিরভাগ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মতো এটিও বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভরশীল। ২০২১ সাল থেকে তেল ও গ্যাস ভারত–মার্কিন বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় উপাদান হয়ে উঠেছে:‌ এর মধ্যে আছে ভারতের অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম তেল, তৈরি পেট্রোলিয়াম পণ্য ও পেট্রোলিয়াম গ্যাস আমদানি, এবং সেইসঙ্গে ভারতের পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের রপ্তানি (সারণি ১ দেখুন)।

কীভাবে পেট্রোলিয়াম ভারত–মার্কিন বাণিজ্যের বৃহত্তম উপাদান হয়ে উঠল? গল্পটি জটিল এবং তা একাধিক ভূগোল অতিক্রম করে যায়।[১৮]

ভারতের বাজি

ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিম এশিয়ার সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকে ছিল। ১৯৯০ ও ২০০০–এর দশকে এই অঞ্চলের অসংখ্য যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, এবং ২০১০–এর দশকে আরব বসন্ত ভারতকে অন্যত্র আরও স্থিতিশীল সরবরাহকারী খুঁজতে বাধ্য করে। ২০১০–এর দশকে, ভারত তার তেলের ৪০ শতাংশ অন্যান্য অঞ্চল থেকে আনতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকা–ভেনিজুয়েলা একাই ২০১৩ সালে ভারতের তেল আমদানির ১২ শতাংশ সরবরাহ করে।[১৯] এর পর, তিনটি পরিবর্তন ২০১৯ সাল থেকে ভারতীয় তেল সংস্থাগুলিকে তাদের আমদানি কৌশল পরিবর্তন করতে প্ররোচিত করেছে। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল আমদানিকারীদের নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেওয়া বন্ধ করে দেয়, এবং ইরান থেকে আমদানি অব্যাহত রাখে এমন সংস্থাগুলির উপর দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়। ভারতীয় তেল আমদানিকারীরা অবিলম্বে ইরান থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার জাতীয় তেল সংস্থা পেত্রোলিওস দি ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ)–র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০২০ সালের শেষের দিকে, ভারতীয় আমদানিকারীরা পিডিভিএসএ–র থেকে সমস্ত আমদানি বন্ধ করে দেয়। অবশেষে, মেক্সিকো, যা ভারতের তেল আমদানির শীর্ষ ১০টি উৎসের মধ্যে ছিল, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ এবং পরিশোধনের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ায় ২০২১ সালে আকস্মিকভাবে ভারতে তার তেল রপ্তানি কমিয়ে দেয়।

ভারত মাত্র দুই বছরের মধ্যে ইরান ও ভেনেজুয়েলা থেকে তার তেল কেনা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই বৃহৎ ঘাটতি পূরণের জন্য ভারতের তেল সংস্থাগুলি মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দিকে চলে যায়, যা ভারী তেলের (ভেনেজুয়েলান ও মেক্সিকান তেলের মতো) পাশাপাশি হালকা তেলের গ্রেডের (ইরানের অপরিশোধিত তেলের অনুরূপ) মিশ্রণ সরবরাহ করে। সর্বোপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের সরবরাহকারীদের বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে ভারতে তেলের দশম বৃহত্তম সরবরাহকারী থেকে ২০২২ সালে পঞ্চম বৃহত্তম হয়ে উঠেছে৷ অপরিশোধিত তেল ছাড়াও ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও বিশেষভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে:‌ ২০২১ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং ২০২২–এ ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এলএনজি–র জন্য ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম আমদানি উৎস।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডিসেম্বর ২০১৫–এ অপরিশোধিত তেল রপ্তানির উপর তার ৪০ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তার আগে পর্যন্ত সমস্ত উৎপাদন অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রপ্তানি শুরুর পরে বেশিরভাগ মার্কিন অপরিশোধিত তেল বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারী চিনের জন্য নির্ধারিত ছিল। শীঘ্রই, মার্কিন–চিন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলস্বরূপ, চিন ২০১৯ সালে মার্কিন অপরিশোধিত তেল ও এলএনজির উপর শুল্ক আরোপ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধ নেয় সিনোচেম ও চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কর্পোরেশনের মতো চিনা শক্তি উদ্যোগে বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কাজেই এটা মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না যে মার্কিন তেল সরবরাহকারীরা বিশ্বের পরবর্তী বৃহত্তম তেল আমদানিকারী ভারতের দিকে নজর দেবে। ২০২১ সালে সে দেশের অপরিশোধিত তেলের প্রায় ১৪ শতাংশ, আর্থিক হিসাবে  ৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি ভারতের জন্য নির্ধারিত ছিল, যা এটিকে মার্কিন তেলের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার করে তুলেছে।

২০২২ সালে মার্কিন সরবরাহকারীরা মনোযোগ দেয় ইউরোপের দিকে, যে রাশিয়ার তেল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে আগ্রহী ছিল। তবুও, ২০২২ সালে ভারতে মার্কিন অশোধিত তেলের রপ্তানি বেড়ে ১০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত মার্কিন–চিন বাণিজ্য যুদ্ধ চলতে থাকবে, ততদিন মার্কিন তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা হিসেবে ভারত লাভবান হবে। ভারত–মার্কিন জ্বালানি বাণিজ্যের আরেকটি উপাদান হল গ্যাসোলিন–সহ ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি। প্রকৃতপক্ষে, ভারত ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের পঞ্চম বৃহত্তম সরবরাহকারী ছিল, যার মূল্য ছিল ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

সারণি ১: ২০২২ সালে ভারত–মার্কিন বাণিজ্যে শীর্ষ ৫টি পণ্য (২ অঙ্কের এইচএস কোড, বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

সূত্র: বাণিজ্য বিভাগ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার[‌২০]

ভারত তার শক্তি নিরাপত্তা ক্যালকুলাস পরিবর্তন করেছে

২১ শতক জুড়ে ভারতের তেল আমদানির বেশির ভাগটাই বাণিজ্যিক হিসাব দিয়ে নির্ধারিত হয়েছিল। এটি গত পাঁচ বছরে পরিবর্তিত হয়েছে, এবং আজ ভারতের তেল আমদানি অভ্যন্তরীণভাবে ভূ–রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলস্বরূপ, তেল একটি তাস হয়ে উঠেছে যা ভারত ভূ–রাজনীতির টেবিলে খেলতে পারে।

২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতের শীর্ষ পাঁচটি তেল আমদানির উৎস ছিল ইরাক, সৌদি আরব, ইরান, ভেনেজুয়েলা ও নাইজেরিয়া। এটি ছিল সাধারণ অর্থনীতির ফল—অর্থাৎ, সবচেয়ে সস্তা উৎস থেকে তেল কেনা এবং বিভিন্ন অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমদানির ঝুড়িতে বৈচিত্র্য আনা। যাই হোক, শীর্ষ পাঁচটির মধ্যে দুটি—ইরান ও ভেনেজুয়েলা—শীঘ্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়। ফলে ওই দুই দেশ থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখা ঝুঁকি হয়ে যায়।

মানচিত্র ১: ভারতের ২০১৮ সালে তেল আমদানির শীর্ষ ৫টি উৎস (বিপিডি–এ)

সূত্র: বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, ভারত সরকার[২১]

২০২২ সালের মধ্যে ভারতের তেল আমদানির শীর্ষ পাঁচটি উৎস উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যদিও ২০১৮–র শীর্ষ দুটি উৎস — ইরাক ও সৌদি আরব — তাদের জায়গায় থেকে গেছে, তিনটি নতুন দেশ প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে রাশিয়া তৃতীয় স্থানে রয়েছে, যার থেকে আমদানি ৬৬৪,৮৫৫বিপিডি। আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, ভারত এখন রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানি গন্তব্য, যা নয়াদিল্লিকে আরও দর কষাকষির ক্ষমতা দেয়। চতুর্থ স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নয়াদিল্লির একটি ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদার যার সঙ্গে ভারত ২০২২ সালে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ পঞ্চম স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যে রাশিয়ার তেল প্রতিস্থাপন করার জন্য ইউরোপে তার রপ্তানি বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতে প্রচুর পরিমাণে তেল পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।

মানচিত্র ২: ভারতের ২০২২ সালে তেল আমদানির শীর্ষ ৫টি উৎস (বিপিডি–এ)

সূত্র: বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার[২২]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গে ভারতের শক্তি সম্পর্কের এই গভীরতাকে অবশ্যই বিশ্বের বাজারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। উভয় ঘটনাই তেলের ভূ–রাজনীতিতে ভারতের জন্য সুবিধাজনক প্রমাণিত হতে পারে।

প্রথমটি হল পশ্চিমে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা, যে দেশটি শক্তিক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম মহাশক্তি এবং বিশ্বব্যাপী তেল রপ্তানির প্রায় ১১ শতাংশের ভাগীদার।[২৩] এটি রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে শক্তি সম্পর্কের একটি বিশাল ভাঙনের চিত্র তুলে ধরে, যা কিনা একসময় বিশ্বের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সংযুক্তি ছিল। কিছু তেল এখনও দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে স্থলপথে রাশিয়া থেকে ইউরোপে যায়, কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেলের সমুদ্রপথে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এটি রাশিয়াকে একটি বিশাল ঘাটতি এবং নতুন অংশীদারের প্রয়োজনের মুখে ফেলেছে। এই ঘাটতি মেটাতে তিন দেশ — চিন, ভারত ও তুরস্ক — রাতারাতি রাশিয়া থেকে তাদের তেল আমদানি বাড়িয়েছে। ভারত এই নতুন সমীকরণ থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে, কারণ এটি রাশিয়ার তেলের ক্ষেত্রে নিজের জন্য ক্রেতার বাজার খুঁজে পেয়েছে। ক্রেতার বাজার হল এমন বাজার যেখানে ভারতীয় ক্রেতারা শর্তাদি নির্দেশ করতে পারে, কারণ বাজারে ক্রেতা কম এবং রাশিয়ার তেল আমদানির জন্য অনেক বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে।

দ্বিতীয়টি হল ডিকার্বনাইজেশনের (‌কার্বন হ্রাসের)‌ ছায়া। ডিকার্বনাইজেশন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা চলছে। প্যারিস চুক্তি ও রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের মাধ্যমে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রশংসনীয়, তবে বাস্তবে পদক্ষেপ ধীরগতিতে হয়েছে। কিছু দেশ অন্যদের তুলনায় ভাল কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে। চিনে, উদাহরণস্বরূপ, নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা ইতিমধ্যেই কয়লা শক্তির ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেছে, এবং নবায়নযোগ্য শক্তির এখন মোট স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৪৭.৩ শতাংশ, কয়লার ৪৩.৮ শতাংশের চেয়ে বেশি।[২৪] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ইতিমধ্যে, পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদন কয়লার তুলনায় সস্তা হয়ে উঠেছে।[২৫]

দুর্ভাগ্যবশত, ভারত এই ফ্রন্টে কম অগ্রগতি করেছে, এবং কয়লা ও পেট্রোলিয়াম ভারতের শক্তির ঝুড়ির মূল উপাদান হিসাবে থেকে গিয়েছে। মাঝারি মেয়াদে এটি ভারতকে পেট্রোলিয়ামের আরও গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক হিসাবে জায়গা করে দিতে পারে, এবং দেশটি সম্ভাব্যভাবে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম তেল আমদানিকারীর সন্দেহ–উদ্রেককারী ট্যাগ অর্জন করতে পারে।  যে দেশটি ক্রমশ বেশি করে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকছে সেই চিন, এবং যার ইতিমধ্যে প্রচুর পেট্রোলিয়াম মজুত রয়েছে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ধীরে ধীরে তাদের পেট্রোলিয়াম আমদানি হ্রাস করছে।

ভূ–রাজনৈতিক হেভিওয়েট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ভারতের তেল আমদানি উৎসের শীর্ষ পাঁচে প্রবেশের দীর্ঘমেয়া্দি পরিণতি রয়েছে। এগুলি পর্যায়ক্রমে নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবে তেল

তেল এখন ভারতের তূণের অতিরিক্ত তীর। রাশিয়া ও মার্কিন দেশ উভয়ই ভারতকে তাদের পাশে রাখতে চাইবে, এবং তেল রপ্তানির বাজার হিসাবে দেশটিকে হারানোর ঝুঁকি নিতে চাইবে না। কারণ ভারত থাকলে তাদের উভয়েরই বিশ্বের শক্তির বাজারে আরও এমন বিঘ্ন ঘটার ঝুঁকি থাকবে না যা তাদের নিজস্ব অর্থনীতিকে বিপন্ন করবে। সর্বোপরি, ভারতের তেল আমদানির নিছক আকারটি চিনের ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ অন্যান্য বাজারকে নিষ্প্রভ করে। তেল রপ্তানি বাজার হিসেবে রাশিয়া যত বেশি ভারতের ওপর নির্ভর করবে, ততই নয়াদিল্লির পক্ষে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে তার স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়ে উঠবে।

ভারতের শক্তির ঝুড়িতে পরিবর্তন

পশ্চিম এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এখন রাশিয়ার যোগানের ফলে ভারতের তেল আমদানির উৎসগুলি ক্রমশ বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে। রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি তেল সরবরাহকারী হিসাবে থেকে যাবে। যতদিন ইরান ও ভেনেজুয়েলার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে, ততদিন ভারতও প্রচুর পরিমাণে মার্কিন অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে থাকবে। এদিকে রাশিয়া তার তেল রপ্তানির বাজার ইউরোপকে হারিয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ রাশিয়ার তেল আমদানিতে আগ্রহী, তাই মস্কো তার দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার সামর্থ্য রাখে না। এদিকে পশ্চিম এশিয়া ভারতের তেল আমদানির প্রাথমিক উৎস হিসাবেই থেকে গিয়েছে, আর লাতিন আমেরিকান ও আফ্রিকার সরবরাহকারীরাও ভারতে তাদের রপ্তানির অংশ বাড়াতে আগ্রহী হবে। যেহেতু ২০২৩ সালে তেলের ব্যবহারে বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির ১২ শতাংশ ভারত থেকে আসবে বলে অনুমান করা হয়েছে,[২৬] তেল রপ্তানিকারকরা ভারতের দিকে আরও বেশি মনোযোগ সহকারে তাকাবে।

বিশ্বে শক্তির ভূচিত্র

২০২০ এবং ২০২১ সালে কোভিড–১৯ অতিমা্রি চলাকালীন শক্তির ব্যবহার হ্রাস পাওয়ার পর জীবাশ্ম জ্বালা্নি ও নবায়নযোগ্য শক্তি উভয়ই ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে পশ্চিমী তেল সংস্থাগুলি ‘‌এই শিল্পে ইতিহাসের যে কোনও বছরের তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করেছিল’‌।[২৭] ২০২১ সালের মার্চ মাসে, আন্তর্জাতিক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সংস্থার (আইআরইএনএ) মহাপরিচালক বলেছিলেন যে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ২০১৯ সালে শীর্ষে পৌঁছেছে, এবং প্রাকৃতিক গ্যাসও ২০২৫ সালের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছে যাবে। আইআরইএনএ–র তরফে এই বক্তব্যে আশ্চর্যজনক কিছু নেই, কারণ তা একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা যার লক্ষ্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎপাদন প্রসার।[২৮] তারপর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিপি, বিশ্বের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম তেল সংস্থাগুলির মধ্যে একটি, অনুমান করেছিল যে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ২০২০–র দশকে সর্বোচ্চ হতে পারে।[২৯] অন্য অনুরূপ পূর্বাভাসের বক্তব্যও একই, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা এবং  বেশ কয়েকটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।

এই বিষয়ে ক্রমশ অনেকেই একমত হচ্ছেন যে হয় বিশ্ব ইতিমধ্যেই তেলের চাহিদার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছে, বা এই দশকে পৌঁছবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এর অসাধারণ পরিণতি রয়েছে। বিশ্বের জ্বালানি ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ব্যাঘাত এবং আরও ঝুঁকির আশঙ্কা দ্রুত নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে নিয়ে চলেছে, যা প্রায়শই একটি দেশীয় সম্পদ। ‘দ্য ইকনমিস্ট’ অনুমান করে যে, ‘‌‘‌ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট বাস্তবিকই আশ্চর্যজনকভাবে পাঁচ থেকে দশ বছরব্যাপী দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে পারে।’‌’‌[৩০] তারা আরও বলেছে, ‘‌‘‌সবুজ শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি এখন ১২ মাস আগের অনুমানের তুলনায় অনেক কম কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাইস্ট্যাড–এর আর্টেম আব্রামভ, যিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ২০২০–র দশকের শেষের দিকে বা এমনকি ২০৩০–এর দশক পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে নির্গমন স্থিতিশীল থাকবে, তিনি এখন বলেছেন ২০২৫ থেকে নিম্নগামিতা শুরু হতে চলেছে।’‌’‌[৩১]

ভারতের উচিত এই বিশ্বব্যাপী ঘটনাবলির দিকে খেয়াল রাখা। নবায়নযোগ্য শক্তি ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনে কয়লার চেয়ে সস্তা হয়ে উঠছে, তবে ভারতের ক্ষেত্রে তা এখনও অনেক দূরের কথা। ২০২২ সালে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও কয়লার আমদানি রেকর্ড ২৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট আমদানি বিলের ৩৭ শতাংশ,[৩২] এবং ২০২৩–২৪–এর জন্য ভারতের সমগ্র প্রতিরক্ষা বাজেটের (‌৭২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)‌ থেকে ৩.৫ গুণ বেশি।[৩৩]  ভারতের তেল  ও কয়লা আমদানির সিংহভাগই যেহেতু সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাগুলি দ্বারা করা হয়, তাই এটি দেশের বাজেট ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, এবং তা এতটাই বেশি যে এই আমদানিগুলি এককভাবে দেশের বাজেট ও বাণিজ্য ঘাটতির আকার নির্ধারণ করে।

যদি ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে শক্তির স্বাধীনতা অর্জন করতে চায়, যেমনটি ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রূপরেখা দিয়েছিলেন, তবে ভারতকে অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে গিয়ে শক্তির অভ্যন্তরীণ উৎসগুলির দিকে যেতে হবে। জৈব জ্বালানি ও ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল প্রোগ্রামের উপর সরকারের জাতীয় নীতি, যার লক্ষ্য পেট্রোলে ইথানল মিশ্রণের ২০ শতাংশের লক্ষ্যে পৌঁছনো, একটি স্বাগত পদক্ষেপ। সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনকে উৎসাহিত করার প্রয়াসও তাই। ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে অ–জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তি সংস্থান থেকে ৫০ শতাংশ ক্রমিক বৈদ্যুতিক শক্তি ক্ষমতা স্থাপনের একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে; বর্তমানে, ভারতে সৌর, বায়ু, হাইড্রো ও বায়োমাসের মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ১৭৫ গিগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতা রয়েছে, যা শক্তির মোট স্থাপিত ক্ষমতার ৪২.৫ শতাংশ।[৩৪]  সবুজ হাইড্রোজেন, যা এখনও তার প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়ে গেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে দিতে একটি অতিরিক্ত ধাক্কা দিতে পারে;‌ কিন্তু ২০৩০ সালের আগে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড ইকনমিক প্রোগ্রেস–এর বিক্রম সিং মেহতা নোট করেছেন, ‘‌‘‌কঠিন বাস্তবতা হল ভারতীয় অর্থনীতি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্মিত। একটি নতুন নন–ফসিল ফুয়েল এনার্জি সিস্টেমে রূপান্তরের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং কয়েক দশক সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত ভারত কয়লা, তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীল থাকবে।”[৩৫]

উপসংহার

যেহেতু ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানিকারক হওয়ার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে, নতুন দিল্লির ভূ–রাজনীতিতে তার অবস্থানের সুবিধা নিতে তেল কূটনীতি ব্যবহার করা উচিত। তবে তাকে পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক হিসেবে তার অবস্থানের পাশাপাশি বিশ্বের ভূ–রাজনীতির উচ্চ স্তরটিতে তেল ভারতের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড হতে পারে।

নয়াদিল্লির উচিত এই সুযোগটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা এবং তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা। দুর্ভাগ্যবশত, যেহেতু ভারত ২০৭০ সালের আগে তার নেট–শূন্য নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না, তাই জীবাশ্ম জ্বালানি ভারতের অর্থনীতির চালক হিসাবে থেকেই যাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের উচিত তেলের ভূ–রাজনীতিতে তার মুহূর্তটি সদ্ব্যবহার করা।


হরি শেষশায়ী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)–এর ভিজিটিং ফেলো। তিনি আগে কলম্বিয়া সরকারের অংশ প্রোকলম্বিয়া–কে পরামর্শ দিয়েছেন, এবং উড্রো উইলসন সেন্টারে গ্লোবাল ফেলো ছিলেন।


এন্ডনোট

এই অংশের হাইপারলিঙ্কের জন্য এইখানে দেখুন:‌ https://www.orfonline.org/research/indias-moment-in-the-geopolitics-of-oil/

[১] “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।

[২] “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।

[৩] ভিক্টর চা, “হাউ টু স্টপ চাইনিজ কোয়ারশন,” ফরেন অ্যাফেয়ার্স, জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি ২০২৩।

[৪] “জো বাইডেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যাতে চিন আমেরিকাকে স্থানচ্যুত করতে না পারে,” দ্য ইকনমিস্ট, জুলাই ১৭, ২০২১।

[৫] আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র, “বাণিজ্য মানচিত্র”।

[৬] “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।

[৭] গণনাগুলি ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪-সংখ্যার এইচএস কোডগুলির উপর ভিত্তি করে করা হয়। উৎস: “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।

[৮] “বিপি পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনা বিশ্ব শক্তি ২০২২,” বিপি, জুন ২০২২।

[৯] “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।

[১০] নিউজ ডেস্ক, “‘যদি আপনি এটি কম দামে পান…’ জার্মানি বলেছে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা ‘‌আমাদের বিষয় নয়’,” নিউজ১৮, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩৷

[১১] ইটি অনলাইন, “রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ক্রয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাইছে না, কারণ সম্পর্ক “সবচেয়ে পরিণতিমূলক”,” ইকনমিক টাইমস, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩।

[১২] ডরোথি নিউফেল্ড, “ম্যাপড: গ্লোবাল এনার্জি প্রাইস, বাই কান্ট্রি ইন ২০২২,” ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২।

[১৩] ভারতের তেল আমদানির একটি বড় শতাংশ রাষ্ট্রীয়, সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা দ্বারা করা হয়, কার্যত যার সবকটিই বৈদেশিক মুদ্রায়, প্রাথমিকভাবে মার্কিন ডলারে দেওয়া হয়।

[১৪] ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের তথ্যের ভিত্তিতে গণনা, এবং টন থেকে ব্যারেলে রূপান্তর সিএমই গ্রুপের গণনার উপর ভিত্তি করে।

[১৫] অমিত চতুর্বেদী, “এগুলি বিশ্বের সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি দেশ। রাশিয়া এখন নং ১,” এনডিটিভি, ৮ মার্চ, ২০২২।

[১৬] সূত্র: সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে জানুয়ারি ২০২৩–এর জন্য বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক; ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এর জন্য পিটিআই দেখুন, “ভারতের রাশিয়ার তেল আমদানি ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে; এখন ইরাক, সৌদি সমন্বয়ের চেয়ে বেশি,” দ্য হিন্দু, মার্চ ৫, ২০২৩।

[১৭] “২০২৩ রাশিয়া ফসিল ট্র্যাকার,” সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)।

[১৮] হরি শেষশায়ী, “তেল: মার্কিন-ভারত সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়,” উইলসন সেন্টার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।

[১৯] “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।

[২০] বাণিজ্য বিভাগ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, ভারত সরকার।

[২১] বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, ভারত সরকার, https://tradestat.commerce.gov.in/meidb/Default.asp

[২২] বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, ভারত সরকার, https://tradestat.commerce.gov.in/meidb/Default.asp

[২৩] “বাণিজ্য মানচিত্র,” আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র, https://www.trademap.org/

[২৪] ঝাও জুয়ান এবং ওয়ার্ড ঝৌ, “চিনের নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা প্রথম বারের জন্য কয়লাকে ছাড়িয়ে গেছে,” কাইশিং গ্লোবাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, https://www.caixinglobal.com/2023-02-15/chinas-renewable-energy-capacity-overtakes-coal-for-first-time-101998296.html

[২৫] জেফ সেন্ট জন, “গবেষণায় দেখা গেছে, পরিচ্ছন্ন শক্তি সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়লার চেয়ে সস্তা,” ক্যানারি মিডিয়া, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, https://www.canarymedia.com/articles/fossil-fuels/clean-energy-is-cheaper-than-coal-across-the-whole-us-study-finds

[২৬] বিশ্ব ব্যাঙ্কের (https://blogs.worldbank.org/opendata/oil-prices-remain-volatile-amid-demand-pessimism-and-constrained-supply) তথ্যের ভিত্তিতে গণনা করা হয়। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী তেলের ব্যবহারে মোট বৃদ্ধি অনুমান করা হয়েছে ১.৭%, যার মধ্যে ভারত ০.২%। এইভাবে ২০২৩ সালের জন্য মোট বৈশ্বিক বৃদ্ধির ১২% ভারতের।

[২৭] টম উইলসন এবং ডেরেক ব্রাউয়ার, “শক্তি রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিগ অয়েলের বিশাল লাভের অর্থ কী দাঁড়ায়,” ফিনান্সিয়াল টাইমস, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, https://www.ft.com/content/16f8800b-7300-42e0-a3c7- 3400ed6c4fa5

[২৮] দানিয়া সাদি, “শক্তি রূপান্তরের মধ্যে ২০১৯ সালে বিশ্ব তেলের চাহিদা শীর্ষে পৌঁছে থাকতে পারে: আইআরইএনএ,” এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল, ১৬ মার্চ, ২০২১, https://www.spglobal.com/commodityinsights/en/market-insights/latest- news/electric-power/031621-world-oil-demand-may-have-peaked-in-2019-mid-energy-transition-irena

[২৯] টম উইলসন, “বিপি তেল ও গ্যাসের চাহিদার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস কমিয়েছে,” ফিনান্সিয়াল টাইমস, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ https://www.ft.com/content/857dfefa-98c6-4ed5-a0ad-5a7bb6669411

[৩০] “যুদ্ধ ও ভর্তুকি মিলিতভাবে সবুজ রূপান্তরকে টার্বোচার্জ করেছে,” দ্য ইকনমিস্ট, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, https://www.economist.com/finance-and-economics/2023/02/13/war-and-subsidies-have-turbocharged-the-green-transition

[৩১] “যুদ্ধ ও ভর্তুকি মিলিতভাবে সবুজ রূপান্তরকে টার্বোচার্জ করেছে,” দ্য ইকনমিস্ট, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, https://www.economist.com/finance-and-economics/2023/02/13/war-and-subsidies-have-turbocharged-the-green-transition

[৩২] ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক থেকে তথ্য, https://tradestat.commerce.gov.in/meidb/Default.asp

[৩৩] মনোজ কুমার, “চিনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ভারত প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছে ৭২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,” রয়টার্স, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩, https://www.reuters.com/world/india/india-raises-defence-budget-726-bln-amid-tensions-with-china-2023-02-01/

[৩৪] “এক নজরে সারা ভারতে শক্তি ক্ষেত্র,” বিদ্যুৎ মন্ত্রক, ভারত সরকার। ১২ মার্চ, ২০২৩–এ অ্যাক্সেস করা হয়েছে https://powermin.gov.in/en/content/power-sector-glance-all-india

[৩৫] “সিএসইপি চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ফেলো বিক্রম সিং মেহতার ২৮তম ললিত দোশি স্মারক বক্তৃতা,” সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড ইকনমিক প্রোগ্রেস (সিএসইপি), ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, https://csep.org/wp-content/uploads/2023//02/Lalit-Doshi-Memorial-Lecture-by-CSEP-Chairman-1.pdf

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.