কোভিড–১৯ অতিমারি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারগুলিতে অভূতপর্ব পরিবর্তন এনেছে, যার ফলে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মোকাবিলায় আরও সমন্বিত পদ্ধতি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত এমন একটি সময়ে জি২০–র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে যখন অতিমারি থেকে ন্যায়সঙ্গত পুনরুদ্ধার এবং একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য কর্মসূচি তৈরির দিকে মনোনিবেশ করা হচ্ছে।
জি২০ , যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা, সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতের যে কোনও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্যস্থাপত্য ও ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার জন্য এর সংযুক্তি ও নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। জি২০ দেশগুলি বিশ্বের জিডিপি–র ৮০ শতাংশ, বৈশ্বিক আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ, এবং গ্রহের জনসংখ্যার দুই–তৃতীয়াংশ, যা এর নেতৃত্বকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
অতিমারি থেকে শিক্ষা নিয়ে জি২০ ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সঙ্কটের জন্য প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া আরও উন্নত করতে কাজ করতে পারে। এ বিষয়ে যে গুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে আছে জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রচার, ভুল তথ্য ও স্বচ্ছতার অভাবের মোকাবিলা, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। জি২০ স্বাস্থ্য অ্যাজেন্ডায় এই বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, এবং আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত সব থেকে বেশি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর। সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি একটি মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাগুলির সমাধান করা অপরিহার্য।
জি২০ দেশগুলি বিশ্বের জিডিপি–র ৮০ শতাংশ, বিশ্ব আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ, এবং সারা পৃথিবীর জনসংখ্যার দুই–তৃতীয়াংশ, যা এর নেতৃত্বকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
জি২০–র বর্তমান সভাপতি হিসাবে ভারত তিনটি অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছে: স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি, প্রতিরোধ ও প্রস্তুতি, এবং প্রতিক্রিয়া; ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা; এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজকে সহায়তা করার জন্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য উদ্ভাবন ও সমাধান। হেলথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (এইচডব্লিউজি) মিটিং ও হেলথ মিনিস্টারিয়াল মিটিং (এইচএমএম)–এর সময় অনুষ্ঠিত বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় এই অগ্রাধিকারগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জি২০–তে ভারতের সভাপতিত্ব দেশটিকে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা অগ্রাধিকারের নেতৃত্ব দেওয়া এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বৈষম্যের মৌলিক কারণগুলি মোকাবিলায় একটি বিশাল ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে। দেশটি তার ডিজিটাল স্বাস্থ্যস্থাপত্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তার কোউইন ও জাতীয় ডিজিটাল হেলথ মিশন (এনডিএইচএম) –এর মতো প্রযুক্তিগত সাফল্য, এবং এইভাবে অন্যদের সক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার জি২০ সভাপতিত্বের সময় বৈশ্বিক স্বাস্থ্য মান প্রোটোকল যুক্তিপূর্ণ করে তোলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এমন একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড প্রোটোকল থাকা গুরুত্বপূর্ণ যা বিলিং সিস্টেমের বাইরে যাবে। হেলথ ইন্স্যুরেন্স পোর্টেবিলিটি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট (এইচআইপিএএ) তৈরি করা হয়েছিল মূলত একটি বিলিং সিস্টেম হিসাবে, কিন্তু এখন এটি একটি স্বাস্থ্য মান প্রোটোকল হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিপদ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন। ভারতের ডিজিটাল ফাইন্যান্স — যা ব্যক্তি, সরকার ও ব্যবসাগুলিকে সরলীকৃত উপায়ে সংযুক্ত করে — তা ব্যবহারযোগ্যতা ও প্রাপ্যতা উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
শুধুমাত্র মানুষই মানুষকে সাহায্য করতে পারে, এবং স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব জনসম্প্রদায়ের সেরা পর্যবেক্ষক। অতএব, স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনায় অংশীদার হিসাবে স্থানীয় সম্প্রদায়কে জড়িত করা অপরিহার্য। তারা প্রসঙ্গ–নির্দিষ্ট ও উপযোগী যত্ন প্রদান করতে পারে, এবং সহ–নাগরিকদের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বাস্থ্যসেবার ন্যায়সঙ্গত সুযোগ প্রসারের জন্য সামগ্রিক সামাজিক পদ্ধতির প্রয়োজন, বিশেষ করে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য, যারা প্রায়শই দূরে পড়ে থাকে। স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনার কেন্দ্রে স্থানীয় জনসম্প্রদায়গুলিকে রাখে এমন ব্যবস্থাগুলি বিকশিত করা অপরিহার্য।
তৃণমূল পর্যায়ে, বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে ধারণার আদান–প্রদান সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে সম্প্রদায়ের উপাদানগুলিকে জড়িত করা এবং শুধুমাত্র বিভাগীয় সম্পৃক্ততার উপর নির্ভর না–করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি গ্রাম বা ওয়ার্ড থেকে শেখা পাঠ অন্য যে সব জনসম্প্রদায় সমস্যার সঙ্গে লড়ছে তাদের উপকৃত করতে পারে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্যের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে জ্ঞানবৃদ্ধি, ডিজিটাল বিভাজনের বৈশম্য হ্রাস, এবং সিস্টেম–স্তরের সমাধান ও স্থানীয় উদ্ভাবনী সমাধানগুলির মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ফাঁকগুলি পূরণ করার জন্য ডিজিটাল হেলথ টাস্কফোর্স ও একটি গ্লোবাল পেশেন্ট সেফটি লিডারস গ্রুপকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
অসুস্থতা ও রোগের দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক খরচ কমানোর জন্য শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। সুতরাং স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যের সমস্ত দিককে — শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও ভাবাবেগগত সুস্থতাকে — অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক ও প্রচারমূলক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাগুলিকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আয়ুর্বেদ ও যোগের মতো স্বাস্থ্যের সর্বোত্তম অনুশীলন এবং ঐতিহ্যগত ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা এই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্যের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে জ্ঞানবৃদ্ধি, ডিজিটাল বিভাজনের মধ্যে সেতুবন্ধন, এবং সিস্টেম–স্তরের সমাধান ও স্থানীয়ভাবে প্রযোজ্য উদ্ভাবনী সমাধানগুলির মাধ্যমে বাস্তবায়নের ফাঁকগুলি পূরণ করার জন্য ডিজিটাল হেলথ টাস্কফোর্স ও একটি গ্লোবাল পেশেন্ট সেফটি লিডারস গ্রুপকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রযুক্তি আজকের ডিজিটাল যুগে স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনার অগ্রভাগে রয়েছে, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা এবং বিকল্প পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল বিভাজন ও ডিজিটাল সমাধানের ভ্রান্তি এমন কিছু বিষয় যা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে। এর বিপরীতে গ্লোবাল পেশেন্ট সেফটি লিডারস গ্রুপ কিন্তু সিস্টেম–লেভেল সমাধান এবং স্থানীয়ভাবে প্রযোজ্য উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের ফাঁক পূরণ করতে পারে।
কোভিড–১৯ অতিমারি জরুরি পরিস্থিতিতে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজন তুলে ধরেছে যাতে ভ্যাকসিন, চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিকস সকল মানুষের কাছে সুলভ হয়, তা তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন। জি২০ প্রক্রিয়াটি নিরীক্ষণ করতে পারে, এবং এই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারে যে সংগঠিত ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট প্রাইসিং মেকানিজম ন্যায্য ও স্বচ্ছভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। উপরন্তু টিকা, চিকিৎসা ও রোগনির্ণয় ব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য জি২০ বিভিন্ন দেশকে অনুদান ও সহায়তা প্রদান করতে পারে, এবং সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় এমন পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে পারে যাতে চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিত্তিতে আইপি শেয়ারিং ও বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট মূল্য বাস্তবায়িত হয়।
ডিজিটাল বিভাজন ও ডিজিটাল সমাধানের ভ্রান্তি এমন কিছু বিষয় যা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে।
ভবিষ্যতের অতিমারি প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাগত দুর্বলতা কমাতে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিপদের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত জরুরি প্রতিক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থায়ন। ভারতীয় প্রেসিডেন্সির উচিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলার জন্য অতিমারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)–র মতো বিশ্ব সংস্থাগুলির আর্থিক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা। জি২০ বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বব্যাপী শাসন, বিশেষ করে হু–এর মতো সংস্থাগুলিকে, শক্তিশালী করতে পারে কি না তাও ভারতকে বুঝতে হবে।
জি২০ এই ব্যবস্থাগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনার জন্য আরও সমন্বিত ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করতে পারে, এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্তিযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারে। সামগ্রিকভাবে, ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি যেমন কিছু জরুরি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারে, তেমনই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক শাসন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। জি২০–র সম্পৃক্ততা ও নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য স্থাপত্য এবং ভবিষ্যতের যে কোনও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরুরি অবস্থার ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.