Author : Kabir Taneja

Published on Aug 16, 2023 Updated 0 Hours ago

উপসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত তার প্রতিরক্ষা কৌশল প্রসারিত করছে।

দ্রুত পরিবর্তনশীল পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল

এপ্রিল মাসের শেষ দু’সপ্তাহে সুদানে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে শহরের রাস্তায় হিংসার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় আবারও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী খার্তুমে আটকে থাকা নাগরিকদের সরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং ভারতীয় নৌবাহিনীকে সৌদি আরবের জেড্ডায় এবং সরাসরি সুদানের উপকূলে মোতায়েন করা হয় এবং উদ্ধারের কাজ গতি লাভ করে।

সুদান সঙ্কট অবশ্য প্রথম এমন ঘটনা নয়, যেখানে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া সশস্ত্র বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে উঠে এসেছে। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় থেকে ২০১৫ সালে ইয়েমেনে অপারেশন রাহাত পর্যন্ত ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে আনার কাজ সেনাবাহিনীর একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। প্রসারিত মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া) অঞ্চলে ৭.৫ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয়দের বসবাসস্থল ও কর্মক্ষেত্র হওয়ার দরুন একাধিক সার্বভৌম রাষ্ট্র জুড়ে ছড়িয়ে থাকা একটি ক্ষুদ্র দেশসম জনসংখ্যা পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়।

মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি অঞ্চল, যেখানে কূটনীতির পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতাও স্থির গতিতে বিকশিত হচ্ছে। কারণ এই অঞ্চলটি ভারতীয় অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সৌদি আরব এবং মিশরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পরিদর্শন থেকে শুরু করে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (ইউএই) ডুবোজাহাজ-সহ ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ পোর্ট কলের ঘটনা বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলি-সহ সমগ্র অঞ্চলের সঙ্গে আরও কৌশলগত সম্পৃক্ততার ক্রমবর্ধমান অভিপ্রায়কে দর্শায়।

মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি অঞ্চল, যেখানে কূটনীতির পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতাও স্থির গতিতে বিকশিত হচ্ছে। কারণ এই অঞ্চলটি ভারতীয় অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সামরিক যোগাযোগ একটি দ্রুত বিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে বহুস্তরীয় প্রসারের সুযোগ প্রদান করে। এটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অঞ্চলটি মধ্য শক্তির বাস্তববাদ এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার টানাপড়েনের মধ্যে বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতার অন্যতম সক্রিয় মঞ্চ হয়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়। হরমুজ প্রণালী গ্লোবাল এনার্জি সিকিউরিটি বা আন্তর্জাতিক শক্তি নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলভাগ, এই সঙ্কীর্ণ জলভাগের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক তেল সরবরাহের একটি বড় শতাংশ প্রবাহিত হয়। ফলে এটি শুধু এই অঞ্চলের দেশগুলির জন্যই নয়, ভারতের মতো অন্যদের জন্যও সব সময়েই সামগ্রিক কৌশলগত চিন্তাভাবনার উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। প্রণালীটি আন্তর্জাতিক জলসীমা নয়, বরং ইরান ও ওমানের মধ্যে অভিন্ন একটি আঞ্চলিক পরিসর। লোহিত সাগরে এর বিকল্প পথ বাব-আল-মান্দাব প্রণালীতেও সংঘাতের ছায়া পড়েছিল,  যখন সৌদি আরব এবং ইরান পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ইয়েমেন সঙ্কটকে জটিলতর করে তোলে।

এই অঞ্চলে অভিবাসী-সংক্রান্ত এবং কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যে অঞ্চল আগে বিশেষ করে ওমান উপসাগর জুড়ে বহু বার আন্তঃসীমান্ত গুলি বিনিময়ের শিকার হয়েছে। ১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারতীয় তেল ট্যাঙ্কার মুম্বইভিত্তিক গ্রেট ইস্টার্ন শিপিংয়ের মালিকানাধীন (তখন বোম্বে নামে পরিচিত) জগ পরি কুয়েতে যাওয়ার পথে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরানি ফাইটার জেট দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। তেহরান এই ধরনের দাবি অস্বীকার করে এবং তার পরে সাদ্দাম হোসেনের ইরাককে এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথের উপরে ক্রমাগত আগ্রাসনের ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছিল। আবার ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতীয় পতাকাবাহী তেলের ট্যাঙ্কার কাঞ্চনজঙ্ঘা সৌদি আরব থেকে ১.৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল নিয়ে যাওয়ার সময়ে ইরানের জেট হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল

ভারতীয় ফ্রিগেট আইএনএস তলওয়ার হরমুজ প্রণালী ও ওমান উপসাগরে টহল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং ভারতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ ও ভারতীয় কর্মীদের এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ চালানোর জন্য আশ্বাস দেয়।

২০১৯ সালের দিকে নজর ফেরানো যাক এবং সেই সময়ে একই ভৌগোলিক অঞ্চলে অনুরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যাই হোক, ১৯৮০-এর দশকের তুলনায়, যখন ভারতের সামর্থ্য এবং ক্ষমতা খুবই সীমিত ছিল, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই সময় ভারতীয় নৌবাহিনীকে উপমহাদেশে গুরুত্বপূর্ণ অপরিশোধিত পণ্য বহনকারী তেল ট্যাঙ্কারগুলিকে সুরক্ষা জোগানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন সংশ্লিষ্ট জলপথটি আবার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় অপারেশন সংকল্পের আওতায় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলি প্রতিদিন ১৬টি ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজকে নিরাপত্তা প্রদান করছে। ভারতীয় ফ্রিগেট বা যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তলওয়ার হরমুজ প্রণালী ও ওমান উপসাগরে টহল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং ভারতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ ও ভারতীয় কর্মীদের এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ চালানোর জন্য আশ্বাস দেয়। মিশনটি এখন তার তৃতীয় বছরের অপারেশনে কার্যকর এবং ২০০৮ সাল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ও এডেন উপসাগর জুড়ে ভারতের জলদস্যুতা বিরোধী অভিযানের একটি সম্প্রসারণও। বিগত দুই দশকে ভারত আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রসারিত আরব সাগরের অংশটিতে নিরাপত্তা প্রদানের কাজে একটি উল্লেখযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে এবং এমনটা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো, বিশেষ করে বাহরাইনে অবস্থানরত মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহর বা ফিফথ ফ্লিট-সহ অংশীদারদের সঙ্গে অবিচল সহযোগিতা বজায় রেখেছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলি বিকাশের জন্য কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান হাতিয়ার হিসাবে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করা এমন একটি অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের কৌশলী উপায়, যেখানে সামরিক উপস্থিতি একটি অংশীদার রাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণের গুরুত্বের মাত্রা তুলে ধরার প্রয়োজনীয় সঙ্কেত। ভারতীয় নৌবাহিনী সব অংশীদারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সময় কৌশলগত নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আরব রাষ্ট্রসমূহ, ইরান এবং ইজরায়েল জুড়ে পোর্ট কল করেছে, যার অন্যতম লক্ষ্য বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের সময়ে অফ-র‍্যাম্প বা বিকল্প পথ তৈরি করা।

উপরোক্ত লক্ষ্যের জন্য ভারতের অন্যতম প্রধান অংশীদার হল ওমান। ইউরোপে যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, সুইজারল্যান্ড যে ভাবে নিজের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়, সালতানাতও বছরের পর বছর ধরে নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সুইজারল্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও নয়াদিল্লি বর্তমানে এই অঞ্চলে একাধিক সামরিক মহড়ার অংশ যার মধ্যে অধিকাংশেরই সূচনা ঘটেছে বিগত এক দশকে, কিন্তু ভারত-ওমান দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে৷ ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ওমানের উপকূলে নাসিম আল বাহর মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, যা ছিল ভারতীয় নৌবাহিনী এবং রয়্যাল নেভি অফ ওমানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অনুশীলনের ৩০তম বর্ষ। ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলির জন্য রক্ষণাবেক্ষণ, পর্যবেক্ষণ এবং ফের রসদ ভরে নেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণের অভিপ্রায়ে ওমানের উপকূলের ডুকম বন্দরে সুবিধার নানাবিধ উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাগুলি পরিচালনা করার জন্য নয়াদিল্লির অভিপ্রায়কে তুলে ধরে, যা একটি চিরাচরিত অফশোর সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সূচনাবিন্দু হিসেবে কাজ করবে।

ভারতীয় নৌবাহিনী সব অংশীদারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সময় কৌশলগত নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আরব রাষ্ট্রসমূহ, ইরান এবং ইজরায়েল জুড়ে পোর্ট কল করেছে, যার অন্যতম লক্ষ্য বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের সময়ে অফ-র‍্যাম্প বা বিকল্প পথ তৈরি করা।

এ দিকে চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে উদাসীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট শূন্য স্থানে চিন ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেমেছে বলে অনেকেই মনে করলেও, বাস্তবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং এমনকি ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলি মার্কিন নিরাপত্তা পরিসরের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতিস্পর্ধী ভারসাম্য তৈরি করার জন্য বেজিংকে অঞ্চলটিতে আহ্বান জানাচ্ছে। দেশগুলির লক্ষ্য হল সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত তাদের দাবিগুলি পূরণ করা,  মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করা এবং অঞ্চলটিতে চিনা উপস্থিতির মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বার্তা দেওয়া যে এখন আরও বিকল্প আছে।

ভারতের জন্য সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাস্তুতন্ত্রের অংশ হয়ে উঠতে চলেছে। এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে ভারত আন্তর্জাতিক জলসীমা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কম্বাইন্ড মিলিটারি ফোর্সেস-বাহরিন (সিএমএফ-বি) নামক মার্কিন সমর্থিত সন্ত্রাসবিরোধী জোটের সহযোগী সদস্য হিসাবে যোগদান করে। সিএমএফ-বি-তে ভারতের যোগদানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল এই যে, এটিকে ভারত-মার্কিন ২+২ ডায়লগে আলোচনার পরে টোকিওতে দ্বিতীয় কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের সমান্তরালে ঘোষণা করা হয়েছিল। উভয় প্রক্রিয়াই ভারতের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও ভারতের সামগ্রিক কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সঙ্গে আরও বেশি সঙ্গতিপূর্ণ।


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Kabir Taneja

Kabir Taneja

Kabir Taneja is a Fellow with Strategic Studies programme. His research focuses on Indias relations with West Asia specifically looking at the domestic political dynamics ...

Read More +