Author : Harsh V. Pant

Published on May 27, 2024 Updated 0 Hours ago

নয়াদিল্লি সাধারণ হুমকির মোকাবিলা করার জন্য সম্পর্ক আরও গভীর করার চেষ্টা করলেও গোষ্ঠীর মধ্যে নানাবিধ পার্থক্য বাধা সৃষ্টি করছে।

ভারতের পূর্ব এশিয়ায় সংযোগ স্থাপন আসলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় এই অঞ্চলের কেন্দ্রিকতাকেই দর্শায়

ভারতে নির্বাচনী চক্রের মধ্যে মার্চ মাসে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তিনটি দেশ সফর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার লক্ষ্যে নয়াদিল্লির উচ্চাকাঙ্ক্ষাঅঞ্চলটির কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে দর্শায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক  ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধন দ্বারা চিহ্নিত, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অভিযোজিত হয়ে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক পরিসরকে আকার দিয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে ভারতের লুক ইস্ট’ বা ‘পূর্ব অভিমুখী’ নীতি – যা ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয়েছিল এবং পরে অ্যাক্ট ইস্টনীতি হিসাবে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল – এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়।

তা সত্ত্বেও আইএসইএএস - ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের আসিয়ান স্টাডিজ সেন্টার দ্বারা প্রকাশিত সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই অঞ্চলে ভারতের সামনের পথ দীর্ঘ। সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ০.৪% ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দেশ হিসাবে বলে মনে করে। চিরাচরিত ভাবে নয়াদিল্লির সাংস্কৃতিক প্রভাব বাণিজ্যিক পথ, ধর্মীয় আদান-প্রদান এবং ভারতীয় সভ্যতার বিস্তারের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রসারিত হওয়া সত্ত্বেও সমীক্ষার এই ফল প্রকাশ্যে এসেছে

 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধন দ্বারা চিহ্নিত, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অভিযোজিত হয়ে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক পরিসরকে আকার দিয়েছে।

 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) হল ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মতো উদ্যোগগুলি বাণিজ্য উদারীকরণ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে সহজতর করেছে। উপরন্তু, পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মতো আঞ্চলিক মঞ্চে ভারতের অংশগ্রহণ দেশটিউপস্থিতির প্রসারে সহায়তা করে।

ইন্দো-প্যাসিফিকের যুগে, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং ক্ষমতার পরিবর্তিত ভারসাম্য সম্পর্কিত সাধারণ উদ্বেগের দ্বারা ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কৌশলগত অভিসার নাটকীয় ভাবে বিবর্তিত হয়েছে। ভিয়েতনাম এবং ফিলিপিন্সের মতো দেশের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও গভীর করেছে, বিশেষ করে সন্ত্রাস দমন, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সামুদ্রিক নজরদারির মতো ক্ষেত্রে।

সর্বোপরি, ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড ট্রাইল্যাটেরাল হাইওয়ে এবং কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের মতো সংযোগ প্রকল্পগুলির উপর জোর দেয়।

পূর্ব অভিমুখে ভারতের উপস্থিতির একটি কৌশলগত মাত্রার উত্থান তুলনামূলক ভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা। ২০১৪ সালে প্রবর্তিত অ্যাক্ট ইস্ট নীতিটি অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণকে গভীরতর করেছে, কৌশলগত অংশীদারিত্বকে বৃদ্ধি করেছে এবং সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সম্পৃক্ততাউপর আরও বেশি করে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মনটা করার মাধ্যমে ভারত তার নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ এবং লক্ষ্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলের বিবর্তিত ভূ- রাজনৈতিক সমীকরণকে আকার দিতে আরও প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করতে চায়।

 

ভিয়েতনাম এবং ফিলিপিন্সের মতো দেশের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও গভীর করেছে, বিশেষ করে সন্ত্রাস দমন, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সামুদ্রিক নজরদারির মতো ক্ষেত্রে।

 

ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির মূলে রয়েছে আসিয়ান কেন্দ্রিকতার ধারণা, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অবকাঠামো নির্মাণে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার দায়বদ্ধতাকে দর্শায়। তবুও, আসিয়ান-এর মধ্যে বিভাজনগুলি আরও তীব্র হয়ে উঠছে এবং এক সময়ের গতিশীল আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সামনে প্রতিবন্ধকতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সুসংগত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে আসিয়ান-এর অক্ষমতাকে আর উপেক্ষা করা যায় না।

মার্চ মাসে ম্যানিলা সফরের সময় জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে, এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি একটি নিয়ম-ভিত্তিক আদেশের কঠোর আনুগত্য দ্বারা সবচেয়ে ভাল ভাবে পরিবেশিত হয়।’ ১৯৮২ সালের ইউএন কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি-র (আনক্লজ) ভিত্তিগত দিক হিসাবে তিনি এই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন যে, সকল পক্ষকে অবশ্যই আনক্লজ-এর নিয়ম আক্ষরিক ভাবে এবং ভাবনাগত দিক থেকে সম্পূর্ণ রূপে মেনে চলতে হবেএবং ফিলিপিন্সের জাতীয় সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার জন্য ভারতের সমর্থন’-এর কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। চিন এবং ফিলিপিন্সের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে কারণ চিনা বাহিনী সেকেন্ড টমাস শোল থেকে ফিলিপিন্সকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে, চিরাচরিত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলির জন্য ভারতকে তার কৌশলগত সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করতে ম্যানিলার প্রচেষ্টা অতীতে সম্পর্কগুলির বাস্তবতা অর্থাৎ প্রায়শই নিম্ন রাজনীতির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকার সম্পূর্ণ বিপরীত।

দক্ষিণ চিন সাগর (এসসিএস) প্রসঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা প্রাথমিক ভাবে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নৌচলাচলের স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলিতে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ দ্বারা চালিত। ভারত এসসিএস বিরোধের দাবিদার রাষ্ট্র নয়, তবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিরাপত্তামূলক স্বার্থের কারণে এই অঞ্চলে ভারতের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে। নয়াদিল্লি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে আনক্লজ অনুযায়ী দক্ষিণ চিন সাগরে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে কথা বলেছে, ভারত মহাসাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ হিসাবে তাত্পর্যের কারণে এসসিএস-এ নৌচলাচল এবং ওভারফ্লাইটের (কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উপর দিয়ে বিমান চলাচলের অনুমতি) স্বাধীনতার নীতিগুলিকে সমুন্নত রাখার গুরুত্বকে দর্শিয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, সংযোগের প্রচার এবং অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার উপর মনোযোগ দিয়ে বিতর্কটিকে আকার দেওয়ার জন্য ভারত আদর্শগত শর্তের উপর মনোনিবেশ করতে চাইছে।

 

ভারত এসসিএস বিরোধের দাবিদার রাষ্ট্র নয়, তবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিরাপত্তামূলক স্বার্থের কারণে এই অঞ্চলে ভারতের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে।

 

সমস্যার সমাধানে আঞ্চলিক অংশীদাররা সহমত হতে না পারার দরুন ভারতও সীমিত ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। তা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যে ধরনের অশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা থেকে ভারত কোনও মতেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে না। নয়াদিল্লির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উপস্থিতি সংক্রান্ত নীতি আঞ্চলিক দেশগুলির পছন্দের উপর নির্ভরশীল।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.