Published on Aug 26, 2023 Updated 0 Hours ago

গ্লোবাল নর্থ ও সাউথের মধ্যে সেতু হিসাবে ভারত দেখিয়ে দিয়েছে যে সাইবার স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা খুবই লাভজনক হবে এবং তা সাইবারস্পেস স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে

বর্তমানে ভারতের সাইবার কূটনীতি পরিণত হয়েছে

একটি অত্যন্ত মেরুকৃত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সমসাময়িক সাইবার পরিসরে ভারত সাইবার কূটনীতিতে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। যখন রাষ্ট্রীয় কুশীলবেরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলিকে ক্ষতিকারক উদ্দেশ্যে অনুসরণ করছে এবং ব্যবহার করছে, তখন ভারত বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে প্রযুক্তিকে বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সাইবার কূটনীতি চেষ্টা চালাচ্ছে সাইবার পরিসরে একটি নিয়ম–ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য। জি২০ প্রেসিডেন্সি একটি স্থিতিস্থাপক সাইবার পরিসর গড়ে তোলার জন্য এই সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নয়াদিল্লির জন্য আরেকটি সুযোগ এনে দিয়েছে।

সাইবার পরিসর সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে, এবং তা আজকের জীবনযাত্রাকে সংজ্ঞায়িত করে। সাইবার পরিসরের উপর মানবতার নির্ভরতা খল কুশীলবদের সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে এটিকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সন্দেহভাজন রুশ/রাশিয়া–ভিত্তিক হ্যাকাররা ২০০৭ সালে এস্তোনিয়াতে ধ্বংসাত্মক সাইবার আক্রমণ চালানোর পর থেকে সাইবার পরিসর ‘‌হাইব্রিড যুদ্ধের’‌ অংশ হিসাবে ভূ–রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সবচেয়ে বিশিষ্ট ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সাইবার আক্রমণের হুমকির পাশাপাশি সাইবার অপরাধ, সাইবার–সক্ষম বাণিজ্যিক গুপ্তচরবৃত্তি এবং র‍্যানসমওয়্যারের ঘটনাও সাইবার পরিসরে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

সাইবার পরিসরের উপর মানবতার নির্ভরতা খল কুশীলবদের সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে এটিকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিয়েছে।

এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘাতের বিপরীতে সাইবার সহযোগিতার পথ তৈরির প্রচেষ্টা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লকের — চিন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে পূর্বাঞ্চলীয় ব্লক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতৃত্বে পশ্চিমী ব্লক — উত্থানের ফলে বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের সাইবার ও প্রযুক্তিগত কূটনীতি এই পটভূমিতে বিকশিত হয়েছে, এবং তা দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ক) দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি, খ) তথ্য আদান–প্রদান, এবং গ) জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি সরবরাহের ইচ্ছার উপর।

দক্ষতা ও ক্ষমতা নির্মাণ

সাইবার বিপদ ছড়িয়ে পড়া জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতার বৃদ্ধি অপরিহার্য করে তুলেছে৷ কিন্তু অনেক উন্নয়নশীল ডিজিটাল অর্থনীতিতে এই কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও আর্থিক সংস্থানের অভাব রয়েছে। এই ব্যবধান চিহ্নিত করে ভারত তার সাইবার জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার জন্য ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ও মরক্কোর মতো দেশগুলির সঙ্গে কাজ করার সময় তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করেছে৷  এছাড়াও, এটি বিভিন্ন দেশে সাইবার নিরাপত্তার জন্য সেন্টার অফ এক্সিলেন্স (সিওই) প্রতিষ্ঠা করেছে।

‘সাইবার সুরক্ষিত ভারত উদ্যোগ’-এর মতো সেরা অনুশীলনগুলি ভাগ করার জন্য নয়াদিল্লি গ্লোবাল ফোরাম অন সাইবার এক্সপারটাইজ–এর মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।

একটি বিশিষ্ট বিদেশি সহায়তা উদ্যোগ ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন (আইটিইসি) প্রোগ্রামের অধীনে ভারত সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণও প্রদান করছে। ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি–কানপুর এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমির মতো বেশ কয়েকটি ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইটিইসি প্রোগ্রামের অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। ‘সাইবার সুরক্ষিত ভারত উদ্যোগ‘.’-এর মতো সেরা অনুশীলনগুলি ভাগ করার জন্য নয়াদিল্লি গ্লোবাল ফোরাম অন সাইবার এক্সপারটাইজ–এর মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। উপরন্তু, এটি ডিজিটাল ইকনমি ওয়ার্কিং গ্রুপ (ডিইডব্লিউজি)–এর মাধ্যমে ডিজিটাল দক্ষতার  থিম প্রচারের জন্য জি২০ ফোরামকে কাজে লাগিয়েছে।

তথ্য শেয়ার করা

সাইবার হুমকি মোকাবিলার একটি মূল দিক হল সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাকে বিপদ সংক্রান্ত তথ্য জানার অধিকার দেওয়া। ভারত নিজস্ব অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার  ও প্রস্তাবিত ন্যাশনাল ম্যালওয়্যার রেপজিটরিকে র‌্যানসমওয়্যার ও ম্যালওয়্যারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি রেফারেন্স ডেটাবেস হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে এই পদ্ধতির উপর গুরুত্ব আরোপ করছে।

ভারত এখন এটি আন্তর্জাতিক স্তরে পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে। গত বছরে ভারতের আয়োজিত বেশ কয়েকটি বিশ্ব সম্মেলনে — যেমন সাম্প্রতিক ‘‌এনএফটি, এআই ও মেটাভার্স–এর যুগে অপরাধ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জি২০ সম্মেলন’‌, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্টার–টেরোরিজম কমিটির বিশেষ বৈঠক, এবং  ৯০তম ইন্টারপোল (আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থা) সাধারণ পরিষদ — ভারতীয় কর্মকর্তারা তথ্য আদান–প্রদানের উপর জোর দিয়েছেন। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক কাউন্টার র‍্যানসমওয়্যার ইনিশিয়েটিভ (সিআরআই), আন্তর্জাতিক  টেলিকম ইউনিয়নের সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জ সমর্থিত আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব, ইন্টারপোল–এর গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন, এবং কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের একটি গোষ্ঠী ফোরাম অফ ইনসিডেন্ট রেসপন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি টিম–এর মতো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত ফোরামেও ভারত ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

ভারত নিজস্ব অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার ও প্রস্তাবিত ন্যাশনাল ম্যালওয়্যার রেপজিটরিকে র‌্যানসমওয়্যার ও ম্যালওয়্যারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি রেফারেন্স ডেটাবেস হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে এই পদ্ধতির উপর গুরুত্ব আরোপ করছে।

জি২০ সদস্য দেশগুলির মধ্যে সাইবার সহযোগিতার বিকাশে নয়াদিল্লি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৩ সালের জুনে, ভারত ‘‌ব্যাঙ্কিং সেক্টরের জন্য সাইবার নিরাপত্তা অনুশীলন’‌ বিষয়ক জি২০ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, যা ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক ক্ষেত্রের বিপদগুলির বিষয়ে আলোচনা করেছিল, এবং অপারেশনাল ড্রিলের আয়োজন করেছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, সাইবার নিরাপত্তা অনুশীলনে সম্ভাব্য ফাঁক শনাক্ত করতে ভারত দৃঢ়ভাবে সিমুলেশন অনুশীলনের ওপর জোর দিয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জি২০ দেশগুলির জন্য নতুন দিল্লিতে অনুরূপ ড্রিল ও টেবলটপ অনুশীলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সিআরআই–তে, যেখানে ভারত নেটওয়ার্ক রেজিলিয়েন্স ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়, দেশটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ভার্চুয়াল র‌্যানসমওয়্যার ড্রিল পরিচালনা করে, যাতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির বড় ধরনের র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানার ক্ষমতা পরীক্ষা করা যায়।

জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি সরবরাহ করা

একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসাবে ভারতের অভিজ্ঞতাগুলি জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার পদ্ধতিকে রূপ দিয়েছে। ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই)–এর অগ্রণী নেতৃত্ব, এবং পরিচয়, অর্থপ্রদান ও ডেটার উপর ফোকাস, ভারতকে  স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ভর্তুকি, কর, ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবার মতো সরকারি পরিষেবাগুলিতে নাগরিকদের প্রবেশাধিকার উন্নত করতে সহায়তা করেছে। ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস এবং কোউইন ভ্যাকসিনেশন পোর্টালের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি বিশ্বের সবচেয়ে বিশিষ্ট নাগরিক পরিষেবা সরবরাহের প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা অনুশীলনে সম্ভাব্য ফাঁক শনাক্ত করতে ভারত দৃঢ়ভাবে সিমুলেশন অনুশীলনের ওপর জোর দিয়েছে।

ডিপিআই সংক্রান্ত ভারতের অভিজ্ঞতা বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশের জন্য লিপফ্রগ লেগ্যাসি কাঠামোর জন্য কম খরচে উচ্চ–প্রভাবযুক্ত প্রযুক্তি মডেল প্রদান করে। জি২০–র ডিইডব্লিউজি–র মাধ্যমে ভারত শুধু অন্য জি২০ সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তার ডিপিআই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেনি, বরং জি২০–র সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে ডিপিআই–এর জন্য অর্থায়নের সুযোগগুলিও অন্বেষণ করেছে । এইভাবে শুধু প্রযুক্তির প্রাপক হওয়ার পরিবর্তে, যেভাবে গ্লোবাল নর্থ–এর তরফে অর্থনৈতিক  সহায়তা বিতরণ করার সময় আফ্রিকা ও এশিয়ার সম্পর্ক চিহ্নিত হয়ে থাকে, ভারত ওপেন সোর্স প্রযুক্তি উদ্ভাবন, অভিযোজন ও প্রয়োগের জন্য বিকাশমান ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

উপসংহার

গ্লোবাল নর্থ ও সাউথের মধ্যে সেতু হিসাবে ভারত দেখিয়েছে যে বৃহত্তর ভূ–রাজনৈতিক গতিশীলতায় জড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে সাইবার স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া আরও বেশি লাভজনক হবে এবং সাইবার পরিসরে স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে। নতুন দিল্লির সাইবার ও প্রযুক্তিগত কূটনীতি ডিজিটাল অর্থনীতির কার্যকারিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসাবে সাইবার নিরাপত্তার উপর ফোকাস করার জন্য জি২০–র কার্যক্ষেত্রকে সফলভাবে প্রসারিত করেছে। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইনিশিয়েটিভ ইন ক্রিটিকাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনলজি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিশ্বস্ত প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে এই বিশ্বব্যাপী সাইবার সম্পৃক্ততাকে প্রসারিত করতে চায়।


সমীর পাটিল অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.