সংস্কার ত্বরান্বিত করার জন্য ৪–তারকা জেনারেল হিসাবে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরির প্রায় চার বছর পরে ইন্টিগ্রেটেড থিয়েটার কমান্ডের চাকা ধীরে ধীরে ঘুরছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলি পরামর্শ দিয়েছে যে অনেক চিন্তাভাবনা, মতানৈক্য ও বিতর্কের পরে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর মধ্যে আদর্শগত কাঠামোর উপর মতৈক্য হয়ে থাকতে পারে, যা ভারতের সামরিক বাহিনীকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের পথ দেখাবে। থিয়েটার কমান্ড মূলত সামরিক বাহিনীর পৃথক বাহুগুলিকে সিঙ্গল–ইউনিফাইড কমান্ড কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসে। থিয়েটার কমান্ড একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে একক কমান্ডারের অধীনে কাজ করে। এটি সামরিক বাহিনীকে সম্পদ একত্র করতে এবং তা আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের জন্য সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম করে।
তার উত্তর ও পশ্চিম উভয় সীমান্তে অনিশ্চিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের জন্য থিয়েটার কমান্ডগুলি ভবিষ্যতের যে কোনও সংঘাতের ক্ষেত্রে একীভূত পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য অপরিহার্য। হিসাব অনুযায়ী, ভবিষ্যতে চিনের সঙ্গে যে কোনও সংঘর্ষে ভারতকে তার পাঁচটির বেশি সামরিক কমান্ড ব্যবহার করতে হতে পারে। র্যান্ড কর্পোরেশনের একটি প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতের দ্বন্দ্ব সাইবার–সহ যুদ্ধের সমস্ত উপাদানকে জড়িত করবে। এই কারণে একটি থিয়েটার কমান্ড কাঠামো আরও অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
একটি থিয়েটার সিস্টেমের প্রদত্ত ভিত্তিভূমিটি ভারতকে এমন একটি সমন্বিত যুদ্ধের ক্ষমতা প্রদান করবে যা বিপদ প্রতিরোধ করতে পারবে, এবং তার পাশাপাশি অভিযানগত খরচও কমাতে পারবে।
একটি থিয়েটার সিস্টেমের প্রদত্ত ভিত্তিভূমিটি ভারতকে এমন একটি সমন্বিত যুদ্ধের ক্ষমতা প্রদান করবে যা বিপদ প্রতিরোধ করতে পারবে, এবং তার পাশাপাশি অভিযানগত খরচও কমাতে পারবে। থিয়েটার কমান্ডগুলি দ্বন্দ্ব মোকাবিলার জন্য তিনটি পরিষেবার যুদ্ধ ক্ষমতাকেও সমন্বিত করে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, থিয়েটার কমান্ড ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বর্তমান অনুশীলনের বিপরীত। বিদ্যমান ১৯টি কমান্ডের মধ্যে ১৭টি সিঙ্গল–সার্ভিস ওরিয়েন্টেড। এর মধ্যে সাতটি সেনা, সাতটি বিমান বাহিনী ও তিনটি নৌবাহিনী। শুধু আন্দামান ও নিকোবর কমান্ড এবং পারমাণবিক মজুদের দায়িত্বে নিয়োজিত স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড দেশের ট্রাই–সার্ভিস কমান্ড হিসাবে কাজ করে।
যদিও প্রয়াত সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত ২০২৩ সালের প্রথম দিকেই থিয়েটার কমান্ডগুলি চালু করার পরিকল্পনা করেছিলেন, অনেকগুলি কারণের সংমিশ্রণ এর বাস্তবায়ন বিলম্বিত করেছে। এর মধ্যে একটি হল তিনটি বাহিনীর মধ্যে এক্তিয়ার, কাঠামো ও কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার পার্থক্য।
তা ছাড়া, একটি সিঙ্গল কমান্ডের অধীনে কী ধরনের যুদ্ধ–সরঞ্জাম মোতায়েন করা হবে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সেই সঙ্গে এক থিয়েটার কমান্ড থেকে অন্য থিয়েটার কমান্ডে অস্ত্র, প্ল্যাটফর্ম ও সংস্থান স্থানান্তর ঘিরে অস্পষ্টতাও বিষয়টিকে বিলম্বিত করেছে।
ভারতের বাইরে তাকালে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য (ইউকে), রাশিয়া ও ফ্রান্স–সহ প্রধান সামরিক শক্তিগুলি থিয়েটার কমান্ডের অধীনে কাজ করে। ২০১৬ সালে চিন থিয়েটার কমান্ডের পথে অগ্রসর হয়েছিল এবং তার মধ্যে ছিল ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড, যার দৃষ্টি অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ভারতের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) উপরেও নিবদ্ধ।
যদিও ভারতের থিয়েটার কমান্ডের সঠিক রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়নি, তবে জনসমক্ষে থাকা পর্যাপ্ত উপাদান গত তিন বছরে এটি যে বিভিন্ন আকার নিয়েছে তা তুলে ধরেছে।
থিয়েটার কমান্ডের জন্য রোডম্যাপ
২০২১ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে সামরিক বাহিনী ভারতের ১৭টি একক কমান্ডকে ৪ বা ৫টি থিয়েটার কমান্ডে একত্রিত ও পুনর্গঠিত করার লক্ষ্য ধার্য করেছিল।
এই কমান্ডগুলির মধ্যে থাকার কথা ছিল নর্দার্ন ল্যান্ড থিয়েটার, যা জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ ও সেন্ট্রাল সেক্টরের দেখাশোনা করবে, ওয়েস্টার্ন ল্যান্ড থিয়েটার, যার নজরে থাকবে পাকিস্তান, ইস্টার্ন ল্যান্ড থিয়েটার, মেরিটাইম থিয়েটার কমান্ড, এবং এয়ার ডিফেন্স কমান্ড। তাছাড়া এই কমান্ডগুলির সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ কমান্ডের সম্পূরক হওয়ার কথা ছিল। যাই হোক, ২০২৩ সালে সিডিএস অনিল চৌহানের নির্দেশনায় পরিকল্পনাটি বদলে ফেলে তিনটি সমন্বিত থিয়েটার কমান্ড তৈরির প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে মনে হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কমান্ডগুলি লেফটেন্যান্ট জেনারেল, এয়ার মার্শাল বা ভাইস অ্যাডমিরাল পদমর্যাদার সিনিয়র ৩–স্টার অফিসারদের অধীনে থাকবে। এই পরিকল্পনাটি নিয়ে সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রায় ঐকমত্য হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনটি প্রস্তাবিত থিয়েটার কমান্ডে চিনের সঙ্গে উত্তর ফ্রন্ট, পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম সীমান্ত এবং দক্ষিণ ভারতের দিকে একটি সামুদ্রিক কমান্ড অন্তর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পূর্বের পুনরাবৃত্তি থেকে এয়ার ডিফেন্স কমান্ডের (এডিসি) ধারণা বাদ দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই এয়ার ফোর্স এডিসি–র ধারণাকে প্রতিহত করেছে। কর্মী ও সীমিত স্কোয়াড্রন শক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাহিনীর সম্পদের ঘাটতি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ধারণাটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য করতই। ভারতের কাছে ৪২টি ফাইটার স্কোয়াড্রনের অনুমোদিত শক্তি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩১টি রয়েছে। তার উপর বিমান বাহিনী তার সীমিত বিমান সম্পদকে কমান্ডের মধ্যে বিভক্ত করার বিষয়েও সতর্ক ছিল। কমান্ডের নেতৃত্বের বিভাজনও তাদের জন্য বিভ্রান্তির কারণ ছিল।
সংক্ষেপে, তিনটি থিয়েটার কমান্ডের দিকে স্থানান্তর একটি আরও বাস্তবসম্মত পুনর্গঠনকে প্রতিফলিত করে, যেখানে বিদ্যমান কমান্ডগুলিকে নিয়ে অনেকগুলি বড় কমান্ড তৈরি করার পরিবর্তে —যা প্রাথমিক প্রশাসনিক সমস্যা তৈরি করতে পারে — তিনটি ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যেহেতু থিয়েটার কমান্ডগুলি তিনটি সার্ভিসের ক্ষেত্রজুড়ে কর্মরত অফিসারদের জড়িত করবে, তাই সামরিক বাহিনীতে মানবসম্পদ নীতিগুলির পুনর্নির্ধারণের কাজও চলছে। সামরিক বাহিনী সম্প্রতি ১০২ জন অফিসারকে এক পরিষেবা থেকে অন্য পরিষেবায় ক্রস–পোস্ট করেছে তাঁদের অন্যান্য পরিষেবার কাজগুলি বুঝতে পারা নিশ্চিত করতে৷
এই স্থানান্তরগুলি একীকরণ নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, এবং সমন্বিত থিয়েটার কমান্ডের দিকে অগ্রসর হওয়ার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
থিয়েটার কমান্ডের সুবিধা
থিয়েটার কমান্ডের সুবিধার কেন্দ্রবিন্দু হল ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রদত্ত সমন্বিত যুদ্ধের ক্ষমতা এবং যৌথতা। বাহিনীগুলি দক্ষতার সঙ্গে তাদের সংস্থানগুলি ব্যবহার করতে সক্ষম হবে, যার ফলে প্ল্যাটফর্ম, অস্ত্র সিস্টেম ও সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার হবে।
থিয়েটার কমান্ড, দীর্ঘমেয়াদে, বাহিনীতে লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে পারে। সম্মিলিতভাবে তিনটি পরিষেবার প্রয়োজন পূরণ করার জন্য একক কাঠামো পৃথক পরিকল্পনার চেয়ে বেশি উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। এটি তিনটি পরিষেবার জন্য একই পণ্য আলাদা আলাদাভাবে ক্রয়ের জন্য সংস্থান বরাদ্দ করাকে বাধা দেবে৷
বর্তমানে ভারতের একাধিক সামরিক কমান্ড বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত। এটি মাঝে মাঝে যৌথ অভিযান বা অনুশীলনের সময় যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করে। পরিকল্পনা ও কৌশলগুলিকে সমর্থন করার জন্য শ্রেণিবিন্যাস ও ভৌগোলিক ক্ষেত্রজুড়ে একাধিক স্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। একটি ইউনিফায়েড কমান্ড কাঠামোর ফলে এই যোগাযোগ প্রক্রিয়াগুলি সহজ এবং আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
তাছাড়া, নীতির ক্ষেত্রে, তিনটি সার্ভিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি ঐক্যবদ্ধ কমান্ড কাঠামো শান্তিকালীন ও যুদ্ধকালীন উভয় কৌশলের জন্যই আরও দক্ষ পরিকল্পনার দিকে চালিত করবে।
থিয়েটার কমান্ডের চ্যালেঞ্জ
যদিও থিয়েটার কমান্ডের তাত্ত্বিক সুবিধাগুলি প্রণিধানযোগ্য, ভারতকে এর বাস্তবায়ন করার আগে এখনও কয়েক মাইল যেতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক জড়তা ও সংকীর্ণ স্বার্থ, যা স্থিতাবস্থাকে বেশি মূল্য দেয়, এই পরিবর্তনের বাস্তবায়নের অগ্রদূত হিসাবে সেগুলিকে অতিক্রম করতে হবে।
যদিও থিয়েটার কমান্ডের তাত্ত্বিক সুবিধাগুলি প্রণিধানযোগ্য, ভারতকে এর বাস্তবায়ন করার আগে এখনও কয়েক মাইল যেতে হবে।
এর অতিরিক্ত, আপাতভাবে থিয়েটার কমান্ডে কাজ করার জন্য সামরিক কর্মীদের শিক্ষাগত ভিত্তি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে দেশ প্রয়োজনের পিছনে পড়ে রয়েছে। স্টাফ কলেজ ও ওয়ার কলেজের পাঠ্যক্রম নতুন করে তৈরি করা যেতে পারে, যাতে সংশ্লিষ্ট সার্ভিসের সদর দফতরে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা প্রদান করা যায়। এটি, দীর্ঘমেয়াদে, থিয়েটার কমান্ডে দায়িত্বের জন্য তাঁদের প্রস্তুত করতে পারে।
তাছাড়া, অনেক অবসরপ্রাপ্ত সামরিক পেশাদার কোনও সুসংহত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস) ছাড়াই থিয়েটার কমান্ড বাস্তবায়নের সমালোচনা করেছেন। মূলত একটি এনএসএস না–থাকলে কাজ করার জন্য থিয়েটার কমান্ডের একটি স্পষ্ট নীলনকশা বা নীতি উদ্দেশ্য থাকবে না।
মোট কথা, ভারত যখন তার সবচেয়ে বড় সামরিক সংশোধন বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে একটি শক্তিগুণক হতে পারে, এই ধরনের পরিবর্তনে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পেতে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও আদর্শগত পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সুচেত বীর সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.