Author : Harsh V. Pant

Published on Aug 04, 2023 Updated 0 Hours ago

সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের সঙ্গে পিপিঅ্যান্ডআর-এর বেশির ভাগ সম্পৃক্ততা অনুষ্ঠানভিত্তিক আঙ্গিকেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই পদ্ধতিতে একটি মৌলিক সমস্যা রয়েছে

ভারতীয় বিদেশনীতিতে নাগরিক সমাজের বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন: বিদেশমন্ত্রককে অবশ্যই কনফারেন্স মডেলের ঊর্ধ্বে উঠে পদক্ষেপ করতে হবে

গণতন্ত্র বিকশিত ও পরিপক্ব হলেই বিদেশ নীতি সে দেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আকার পেতে শুরু করে। এই ধরনের রাজনৈতিক বিবর্তন বিদেশ নীতির গণতন্ত্রীকরণের বীজ বপন করে, যেখানে নাগরিকরা সক্রিয় ভাবে আন্তর্জাতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করেন এবং কূটনৈতিক উদ্বেগগুলি ‘সামান্য কয়েক জনের হিসেবের ঊর্ধ্বে উঠে বহু মানুষের আবেগের পথে’ চালিত হয়

এ কথা আশ্চর্যের নয় যে, বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২০২২ সালের জুন মাসে একটি সমাবেশে ‘জনগণ কেন্দ্রিক বিদেশ নীতি’র শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। এটি ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের বর্ষ হওয়ায় এ কথা এখন আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এর পাশাপাশি ভারত যখন জি২০-কে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে, তখন জন ভাগীদারি বা জনগণের অংশগ্রহণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাধারণ ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠলে দেশের বিদেশনীতির নির্মাণও সংশ্লিষ্ট নীতির আচরণবিধিতে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সেই উদ্দীপনায় সাড়া দিচ্ছে।

ভারতের বিদেশনীতিও চিরাচরিত ভাবে রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিজীবী অভিজাতদের একটি ক্ষেত্র ছিল। কিন্তু জি২০ সভাপতিত্বের বছরটি এই পরিসর কেন্দ্রিক আলোচনার গণতন্ত্রীকরণ করার উদ্দেশ্যে গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণের উপযুক্ত সময়। যদিও কিছু গুরুতর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া জরুরি: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি কী ভাবে বিদেশনীতিতে জনগণের বক্তব্যকে অন্তর্ভুক্ত করবে? আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, কৌশলগত গুরুত্বের বিষয়গুলিতে গঠনমূলক অংশগ্রহণের জন্য জনগণকে কী ভাবেই বা প্রস্তুত করা যায়?

সাধারণ ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠলে দেশের বিদেশনীতির নির্মাণও সংশ্লিষ্ট নীতির আচরণবিধিতে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সেই উদ্দীপনায় সাড়া দিচ্ছে।

এমইএ-কে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে

২০২৩ সালের ২১ মার্চ প্রকাশিত অনুদানের দাবিতে বিদেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার এক সূত্র প্রদান করে। ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার পরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তার আন্তর্জাতিক প্রকল্প এবং জনসাধারণের কাছে পৌঁছনো সম্পর্কিত বিদেশ মন্ত্রকের (এমইএ) আর্থিক অবস্থা ও অগ্রাধিকারগুলি নিয়ে আলোচনা চালায়। এটি বিদেশ নীতি গবেষণা এবং পরিকল্পনা নিয়ে একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় ব্যয় করেছে, যে কাজটি এমইএ-তে নীতি পরিকল্পনা ও গবেষণা বা পলিসি প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ (পিপিঅ্যান্ডআর) বিভাগের তত্ত্বাবধানে হয়েছে।

বিভাগটি কৌশলগত এবং শিক্ষক-গবেষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নীতি পরিকল্পনা ও সরকারি কূটনীতি উদ্যোগের জন্য একটি নোডাল সংস্থা। এটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল সরকারি ব্যবস্থার বাইরে থেকে দক্ষতা যোগ করা, যখন আমলারা মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বাধ্যবাধকতার ফলে ভারতীয় বিদেশ নীতিকে গণতান্ত্রিক করার ক্ষেত্রে পিপিঅ্যান্ডআরকেই অগ্রণী হতে হবে। বিভাগটি গত কয়েক বছরে তার কার্যকারিতার পুনর্বিন্যাস করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন পরামর্শদাতা এবং বাইরে থেকে গবেষকদের আনার পাশাপাশি বিশ্ব মানের সমাবেশমূলক মঞ্চ তৈরি করা, যার ফলে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের কণ্ঠস্বরকে জোরদার করা যায়।

যদিও নাগরিক সমাজের সঙ্গে পিপিঅ্যান্ডআর-এর সম্পৃক্ততার অধিকাংশই অনুষ্ঠানভিত্তিক, যেমন সম্মেলন, অধিবেশন এবং ট্র্যাক ১.৫  আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গবেষণার ক্ষেত্রে বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা পরামর্শ দিয়েছেন, ‘পিপিঅ্যান্ডআর মিথস্ক্রিয়া চালানো, ইন্টারফেস, সংগ্রহ, তথ্য ও বর্ণনার সংযুক্তিকরণ করে, যা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সম্প্রদায়গুলি ব্যবহার করতে পারে…আমরা যে নীতিগুলি করতে পারি, তার সঙ্গে সম্পর্কিত ও প্রকাশ্যে উপলব্ধ অ্যাকাডেমিক চর্চার উপর নির্ভরশীল।’ তাঁর মন্তব্যে মৌলিক গবেষণা করা ও তার প্রতি সমর্থনে অনাগ্রহ প্রকাশ পায়, যেখানে জ্ঞান আহরণকে উপলব্ধ আখ্যানেই সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

বিভাগটি গত কয়েক বছরে তার কার্যকারিতার পুনর্বিন্যাস করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন পরামর্শদাতা এবং বাইরে থেকে গবেষকদের আনার পাশাপাশি বিশ্ব মানের সমাবেশমূলক মঞ্চ তৈরি করা, যার ফলে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের কণ্ঠস্বরকে জোরদার করা যায়।

এই একই কথা সংসদীয় কমিটির প্রতিক্রিয়াতেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যেটিতে বলা হয়েছে যে, ‘দেশে গবেষণার উপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয় না’ এবং পিপিঅ্যান্ডআরকে অবশ্যই একটি গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দিতে হবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার উদ্দেশ্যে আরও বেশি পরিমাণ তহবিল বরাদ্দ করার জন্য একটি বাজেট তৈরি করার সুপারিশ করেছে। এর পাশাপাশি এমইএ-কে ভারত-নির্দিষ্ট আখ্যানগুলিকে শিক্ষাপাঠ্যে সংযুক্ত করতে এবং বিদেশ নীতিতে গবেষণার ভিত্তি প্রসারিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

একমুখী পথ নয়

বিদ্যমান পদ্ধতিতে একটি মৌলিক সমস্যা রয়েছে। পিপিঅ্যান্ডআর এই ভিত্তিতে কাজ করছে যে, সম্মেলনভিত্তিক মিথস্ক্রিয়া সুশীল সমাজে দক্ষতা অর্জন করবে এবং ইতিমধ্যেই কম কর্মীসম্পন্ন আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। যদিও এই ধারণা দু’টি প্রাথমিক কারণের দরুন সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথমত, ভাল নীতি গবেষণা নাগরিক সমাজ থেকে সরকার পর্যন্ত একমুখী পথ নয়। ভারতের বিদেশ নীতিতে সাধনীর হাই এন্ট্রি ব্যারিয়ার আইভরি টাওয়ার সিন্ড্রোমকে খারাপতর করে তোলে, যার জন্য অনুশীলনকারীরা শিক্ষাবিদ এবং থিঙ্কট্যাঙ্কগুলিকে অভিযুক্ত করে। এই নজরদারির কারণে শিক্ষাবিদরা ভারত সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণে বঞ্চিত হচ্ছেন, সরকারের সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে বাস্তব বোঝাপড়ার অভাব এবং নীতি-অপ্রাসঙ্গিক কর্মসূচিতে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তি ব্যয় করেন। বিগত কয়েক বছরে এমইএ-তে পরামর্শদাতা এবং গবেষকদের আগমন ঘটলেও তাঁদের সর্বোত্তম ব্যবহার এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।

দ্বিতীয়ত, পিপিঅ্যান্ডআর অনুমান করতে সক্ষম নয় যে, দক্ষতা শুধু মাত্র এনগেজমেন্ট মেকানিজম বা সম্পৃক্ততার প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অর্জন করতে হবে। দেশব্যাপী এর অনুশীলন দরকার। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতীয় আখ্যান এখনও পর্যন্ত জনসাধারণের কাছে পৌঁছয়নি এবং তাই তাঁদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের (আইআর) শৃঙ্খলার জনপ্রিয়তা নেই। এই কারণে বর্তমানে আইআর অধ্যয়নগুলি হয় দেশের অভিজাতদের জন্য একটি বিলাসিতাসম অথবা দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আর্থিক দায়বদ্ধতা হয়েই রয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি ভারতে আইআর সংক্রান্ত বৃত্তির এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটিতে বৈজ্ঞানিক দৃঢ়তার অভাব রয়েছে, যা উত্তর-ঔপনিবেশিক এবং সমালোচনামূলক অধ্যয়নের জন্য একটি সহজাত শিক্ষা সংক্রান্ত পক্ষপাতকে চালিত করে; বেশির ভাগ নীতি বিশ্লেষণ বর্ণনামূলক ও তথ্যহীনই হয় এবং সেগুলিতে পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণের অভাব বিদ্যমান।

এমইএ কী করতে পারে

উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে সম্পৃক্তকারী এই সমস্যাটি অবশ্যই আরও বিস্তৃত এবং এমইএ-র একার পক্ষে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ভারতে আইআর শিক্ষার গুণমান বৃদ্ধি করা এমইএ-র প্রাথমিক দায়িত্ব নয়। পিপিঅ্যান্ডআর নাগরিক সমাজের জন্য সঠিক আইআর সংক্রান্ত গবেষণর পথ সুগম করতে, গবেষক ও বিশ্লেষকদের সংগঠিত করতে, স্বল্পমেয়াদি ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণের জটিলতাগুলি তাদের সামনে তুলে ধরতে এবং সর্বোপরি বৈদেশিক নীতির আরও গণতন্ত্রীকরণ ঘটাতে যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

পিপিঅ্যান্ডআর-এর উচিত তার প্রচারে ‘জ্ঞান বিনিময়’-এর পরিবর্তে ‘জ্ঞান সৃষ্টি’র উপর জোর দেওয়া, যাতে গবেষকরা আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভারতীয় অবস্থানের জন্য যথাযথ ভাবে গবেষণা করতে সক্ষম হন।

প্রাথমিক ভাবে এমইএ পৃথক পৃথক ভাবে সম্মেলন এবং গবেষণা প্রকল্পের জন্য তহবিলের সীমা নির্ধারণ করতে পারে। এক বার শুধু মাত্র গবেষণার জন্য তহবিল বরাদ্দ করা হলে, বাজেটের দায়বদ্ধতা সংস্থাগুলির তরফে গুণমানসম্পন্ন গবেষণা সুনিশ্চিত করবে। পিপিঅ্যান্ডআর তাদের গবেষণা প্রকল্পের জন্য দরপত্র পাঠাতে পারে, যেখানে থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে পারে। এটি পিপিঅ্যান্ডআর-এর জন্য তহবিলও সঞ্চয় করবে। পরবর্তী পর্যায়ে এমইএ বিভিন্ন স্তরে নাগরিক সমাজের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার জন্য চুক্তিভিত্তিক পদ এবং ফেলোশিপের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। একই ভাবে, অঞ্চলভিত্তিক অধ্যয়ন গবেষণায় দক্ষতার প্রচারের জন্য এবং তরুণ গবেষকদের ফিল্ডওয়ার্কের জন্য একটি মঞ্চ সরবরাহ করতে বিশ্বব্যাপী ভারতীয় এম্ব্যাসি বা দূতাবাস এবং কনস্যুলেট বা বাণিজ্যদূতাবাসগুলিতে গবেষণামূলক ফেলোশিপ তৈরির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত।

পরিশেষে, পিপিঅ্যান্ডআর-এর উচিত তার প্রচারে ‘জ্ঞান বিনিময়’-এর পরিবর্তে ‘জ্ঞান সৃষ্টি’র উপর জোর দেওয়া, যাতে গবেষকরা আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভারতীয় অবস্থানের জন্য যথাযথ ভাবে গবেষণা করতে সক্ষম হন। এই উদ্যোগগুলির বেশির ভাগের জন্যই একটি সম্পূর্ণ সরকারি এবং সমগ্র সামাজিক পদ্ধতির প্রয়োজন হবে।

ভারতের গণতন্ত্র পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর আন্তর্জাতিক প্রসারও বৃদ্ধি পাবে, বিদেশ নীতি আরও বেশি করে গণতান্ত্রিক বিবেচনার আওতায় আসবে এবং জনমত ও মতদানের অগ্রাধিকারকে আকার দেবে। পিপিঅ্যান্ডআর জনসচেতনতার প্রসার ঘটাতে এবং বিদেশ নীতির বিষয়ে আরও দক্ষতা অর্জন করতে একটি চালিকা শক্তি হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের দ্বারা উপস্থাপিত বিদেশনীতি ‘জনগণের জন্য’ হলেও তবে আগামী দিনে আরও এক ধাপ এগিয়ে এই নীতিকে ‘অফ দ্য পিপল’ বা ‘জনগণের’ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাই দ্য পিপল’ বা ‘জনগণের দ্বারা’ করে তুলতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +