Published on Mar 20, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য উদ্যমী সচেতন প্রস্তুতি নিয়ে এমন ড্রোন সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যা জিপিএস–অকার্যকর যুদ্ধের পরিবেশে সক্রিয় থাকে 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ড্রোন ব্যবহার: জিপিএস–অকার্যকর পরিবেশে উপগ্রহ চালনা

ভারতীয় সেনাবাহিনী (আইএ) সম্প্রতি লাদাখ, লে ও উত্তর–পূর্ব ভারতের লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর রসদ সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য খচ্চর ও হেলিকপ্টারের পরিবর্তে ড্রোন ব্যবহারের কথা ঘোষণা করেছে। মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিক্যালস (ইউএভি) দূরবর্তী অবস্থানে মোতায়েন বাহিনী বা বর্ডার অবজারভেশন পোস্টে (বিওপি) সৈন্যদের ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করবে। প্রক্সিমিটি সেন্সর লাগানো এই ইউএভি–গুলি সব আবহাওয়ায় উড়তে পারে এবং সেগুলি জিপিএস–নির্দেশিত৷ আইএ দ্বারা ড্রোনের এই সর্বশেষ ব্যবহারের পটভূমিতে আছে ২০২২ সালে পূর্ব লাদাখে ও চিন–ভারত সীমান্ত বরাবর ইনট্যালিজেন্স, সারভেল্যান্স, রিকনাইস্যান্স (আইএসআর) মিশনে ব্যবহারের জন্য আইএ–র নিবেদিত ড্রোন মোতায়েন৷ এই শক্তি–গুণক হিসাবে কাজ করা ড্রোনগুলির পরবর্তী সেটগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–সক্ষম, যা আইএ–র পদাতিক, যান্ত্রিক পদাতিক, মোবাইল আর্টিলারি ও সাঁজোয়া বিন্যাসের নিকটবর্তী আকাশ–থেকে–স্থল অপারেশনগুলির সমন্বয় ও সমর্থন করার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এছাড়াও, সেগুলি যে অটোমেটিক টার্গেট রেকগনিশন (এটিআর) সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত, তা শত্রু আর্টিলারি ইউনিট, ট্যাঙ্ক, পদাতিক গঠন ও স্ট্যাটিক ইনস্টলেশন–সহ লক্ষ্যগুলির একটি সম্পূর্ণ পরিসীমা সনাক্ত করতে পারে।

মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিক্যালস (ইউএভি) দূরবর্তী অবস্থানে মোতায়েন বাহিনী বা বর্ডার অবজারভেশন পোস্টে (বিওপি) সৈন্যদের ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করবে।


শান্তিকালীন মিশন ও কাজগুলির জন্য উপরে তালিকাভুক্ত যে ইউএভি সক্ষমতাগুলি আইএ মোতায়েন/নিয়োজিত করেছে, যার মধ্যে পশু পরিবহণ ও মানবচালিত রোটারি এয়ারক্র‌্যাফটের জন্য ড্রোন প্রতিস্থাপনও অন্তর্ভুক্ত, সেগুলি নিঃসংশয়ে অপরিহার্য। কিন্তু আইএ–র ড্রোন ব্যবহার, যা উল্লেখযোগ্যভাবে লজিস্টিক প্রয়োজনীয়তাগুলি সুরক্ষিত করার জন্য উপগ্রহ–নির্ভর, সেগুলি পরীক্ষিত হবে যুদ্ধের সময়, কারণ তখন সেগুলি ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি) ও পাকিস্তানের আক্রমণের প্রেক্ষিতে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।জিপিএস–অকার্যকর পরিবেশে ড্রোন অপারেশন যদিও ড্রোন ক্ষমতা গ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রয়োজনীয় ও প্রশংসনীয়, এই ইউএভি–গুলি সবই গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস)–সক্ষম। অর্থাৎ এগুলি আইএ–র জিপিএস–অকার্যকর পরিবেশে অপারেশনের জন্য কাজ করবে না। এ কথা যে কোনও গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (জিএনএসএস)–এর জন্যই সত্য, এবং ভারতের সীমিত সাতটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম, যেগুলিকে বলা হয় নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন (ন্যাভিক) এবং চিনের বেইডাউ স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের ক্ষেত্রেও সত্য। জিএনএসএস কনস্টেলেশন–গুলি আইএ–র ইউএভি–র জন্য সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পজিশন, নেভিগেশন ও টাইমিং (পিএনটি) পরিষেবাগুলি কার্যকর করে৷ যার মাধ্যমে সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া হয় সেই জিপিএন স্যাটেলাইট থেকে এবং ভারতের নিজস্ব ন্যাভিক কনস্টেলেশন থেকে ড্রোন ক্লাস্টারে সংকেত রিলেতে বিঘ্নের ক্ষেত্রে তা যুদ্ধের সময় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ড্রোন, আর্টিলারি বা মিসাইল যাই হোক না কেন, জিপিএস–নির্ভর সিস্টেমের জন্য জ্যামিং ও স্পুফিং হল আসল হুমকি। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধে, এবং বিশেষ করে রাশিয়া–ইউক্রেন দ্বন্দ্বে, দৃশ্যত ও তর্কাতীতভাবে প্রদর্শিত হয়েছে যে ইলেকট্রনিক জ্যামিং হল আইএসআর ইউএভি–গুলির বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণের মধ্যে একটি। স্পুফিং হল আক্রমণের আরেকটি ধরন, যার মধ্যে রয়েছে শত্রুর জিপিএস সংকেত অনুকরণের মাধ্যমে মিথ্যা সংকেত পাঠানো, এবং প্রতিপক্ষের রিসিভারকে ক্যাপচার করা, যার ফলে যুদ্ধাস্ত্রের অভ্রান্ততা হ্রাস পায়। আইএ ইতিমধ্যেই চিনের সঙ্গে ভারতের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে নিবেদিত যোগাযোগ নজরদারি মিশনের জন্য হার্মিস স্টারলাইনার ৯০০ ড্রোন নামে জিপিএস বা স্যাটেলাইট–নির্ভর মাঝারি উচ্চতা দীর্ঘ সহনশীল ইজরায়েলি ড্রোন কিনেছে।

ড্রোন, আর্টিলারি বা মিসাইল যাই হোক না কেন, জিপিএস–নির্ভর সিস্টেমের জন্য জ্যামিং ও স্পুফিং হল আসল হুমকি।

আইএ–র সর্বশেষ পদক্ষেপের দৌলতে স্যাটেলাইটের থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম ইউএভি ব্যবহার করার ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। পরিষেবাটি এমন ইউএভি পরীক্ষা করতে শুরু করেছে, যা আইএ–র মনুষ্যবিহীন বায়ু যানগুলির আইএসআর, লজিস্টিক ও লয়টারিং মিউনিশন স্ট্রাইক ক্ষমতাগুলিকে জিপিএস–অকার্যকর পরিবেশেও সঠিকভাবে কর্মক্ষম রাখে৷ বেঙ্গালুরু–ভিত্তিক নিউস্পেস রিসার্চ নির্মিত সোয়ার্ম ড্রোন থেকে নাগাস্ত্র–১ লয়টারিং যুদ্ধাস্ত্রগুলি স্যাটেলাইট নির্দেশিকা ছাড়াই চমৎকার নির্ভুলভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল। যাই হোক, আইএ দ্বারা সন্তোষজনক অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হবে। তা ছাড়া, সতর্কতামূলকভাবে, যে ড্রোন কনস্টেলেশন  প্রকৃত যুদ্ধ অভিযানের সময় বা যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতিতে আংশিকভাবে হারিয়ে যায়, সেগুলির একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতে হবে। আইএসআর ও স্ট্রাইক মিশন বা উভয়ের সংমিশ্রিত কারণে একটি ৩০–ড্রোন ক্লাস্টারের এক–পঞ্চমাংশ ড্রোন ধ্বংস হয়ে গেলেও বাকিগুলিকে অবশ্যই মিশনটি কার্যকর করতে সক্ষম হতে হবে। বেঙ্গালুরু–ভিত্তিক নিউস্পেস রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজি ও নয়ডার রাফে এমফিবর প্রাইভেট লিমিটেড দ্বারা নির্মিত এআই–চালিত ড্রোনগুলি, যা আইএ–র সাঁজোয়া বাহিনী ও যান্ত্রিক পদাতিক বাহিনী কিনেছে, এই কাজগুলি এবং মিশন সেট করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম কি না তা স্পষ্ট নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে অভিযানের সময় শত্রুর কর্মকাণ্ডের কারণে ড্রোন–ঝাঁকের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যায়। আরও, আইএ–র জন্য ভারতীয় স্টার্ট–আপগুলি দ্বারা বিশেষভাবে নির্মিত ড্রোনগুলিতে কি ইনার্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (আইএনএস) ক্ষমতা রয়েছে, এবং সেগুলি কি উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা–সহ একটি স্পুফ–প্রতিরোধী জিএনএসএস রিসিভারের সঙ্গে যুক্ত? এই ইউএভি–র সেন্সর অ্যারে, ক্যামেরা ও সফটওয়্যারগুলির কি জিএনএসএস বা জিপিএস–এর সাহায্য ছাড়াই তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে তাদের অবস্থান জানার ক্ষমতা আছে?

বেঙ্গালুরু–ভিত্তিক নিউস্পেস রিসার্চ নির্মিত সোয়ার্ম ড্রোন থেকে নাগাস্ত্র–১ লয়টারিং যুদ্ধাস্ত্রগুলি স্যাটেলাইট নির্দেশিকা ছাড়াই দুর্দান্ত নির্ভুলতার সাথে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।


এই প্রশ্নগুলির বিষয়ে স্পষ্টতা না–থাকলে জিপিএস-অকার্যকর পরিবেশে ড্রোন মিশন ও অপারেশনগুলির উচ্চ স্তরের অক্ষমতা দূর করতে আইএ–কে এখনও অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। যদি এর ড্রোন–ভিত্তিক লজিস্টিক বাহিনী এখনকার মতো জিপিএস–নির্ভর হয়ে থাকে, তবে সক্রিয় সামরিক অভিযানের সময় তা খুব কম হলে তার স্থল বাহিনীকে সীমাবদ্ধ করে রাখবে, এবং সর্বাধিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অতএব, আইএ–র সামনের কাজটি হল ড্রোনের সক্ষমতা সুরক্ষিত করার জন্য জিপিএস–এর উপর নির্ভরশীল নয় এমন লজিস্টিক প্রয়োজনীয়তাগুলি মেটাতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া, কারণ আইএ–র লজিস্টিক নোডগুলি — তা সে বায়ুবাহিত বা স্থলভিত্তিক যাই হোক — তা হবে পিপলস লিবারেশন আর্মি–আর্মি (পিএলএএ), পিপলস লিবারেশন আর্মি স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স এবং পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ)–এর প্রধান লক্ষ্য। এখনও পর্যন্ত, অন্তত এ যাবত যা দেখা গেল, এটি অস্পষ্ট বা প্রতীয়মান নয় যে আইএ–র লজিস্টিক মিশনের জন্য ডিজাইন করা ড্রোনগুলি জিপিএস থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম। এটি আইএসআর ও আক্রমণ মিশনের জন্য তৈরি আইএ–র সমস্ত ড্রোন সেটের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, যেগুলিকে অবশ্যই জিপিএস–অস্বীকৃত যুদ্ধ পরিবেশে কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হতে হবে। অবশেষে, আইএ এবং ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলিকে পিআরসি ও পাকিস্তানের জিএনএসএস–সক্ষম ইউএভি–গুলিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সাধারণভাবে নিজস্ব ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা ও স্পুফিং আক্রমণ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে হবে।



কার্তিক বোমাকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.