ভারতের কাছে স্বদেশে তৈরি নিজস্ব লাইট ব্যাটল ট্যাঙ্ক (এলবিটি) জোরাওয়ার থাকবে বলে ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী (আইএ) তার প্রধান প্রতিপক্ষ পিপলস লিবারেশন আর্মি-আর্মি (পিএলএএ) ও তার টাইপ-১৫ হালকা ট্যাঙ্কের সমান সমান হতে চলেছে। যদিও এলবিটি-কে এখনও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়নি, এবং যুদ্ধে মোতায়েন করার জন্য এর প্রস্তুতি এখনও কিছুটা দূরে, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এলএন্ডটি) ও ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় তৈরি জোরাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। বর্তমান লেখক তিন বছর আগে সুপারিশ করেছিলেন, “হালকা ট্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে দেশীয়ভাবে আইএ-কে অবশ্যই ডিআরডিও ও বেসরকারি ক্ষেত্রের উদ্যোগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। ভারত সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে এবং তহবিল উপলব্ধ করতে হবে।” এই সুপারিশ ফল দিয়েছে। জোরাওয়ারকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিকশিত করা হয়েছিল — রেকর্ড দুই বছরে। তবুও এটি শুধুমাত্র জোরাওয়ারের প্রাথমিক রূপ, এবং ডিআরডিও প্রধান সমীর কামাথ স্বীকার করেছেন, আইএ-র ব্যাপক উৎপাদন ও অধিগ্রহণের জন্য কমিশন করার আগে সমস্ত ধরনের কঠোর পরিবেশগত, ভূখণ্ডগত, জলবায়ুগত ও ব্যবহারিক ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে একে যেতে হবে। এই ট্রায়ালগুলিতে আরও ২ থেকে ২.৫ বছর সময় লাগতে পারে৷
ভারতের কাছে নিজস্ব স্বদেশে তৈরি লাইট ব্যাটল ট্যাঙ্ক (এলবিটি) জোরাওয়ার থাকবে বলে ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী (আইএ) তার প্রধান প্রতিপক্ষ পিপলস লিবারেশন আর্মি-আর্মি (পিএলএএ) এবং তার টাইপ-১৫ হালকা ট্যাঙ্কের সমান সমান হতে চলেছে।
ডিআরডিও-র ল্যাব ‘কমব্যাট ভেহিকেলস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট’ (সিভিআরডিই)-এর সঙ্গে চুক্তির পর গুজরাটে এলঅ্যান্ডটি-র হাজিরা প্ল্যান্ট এলবিটি প্রোটোটাইপ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জোরাওয়ার এলবিটির বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে তিন সদস্যের ক্রু, ২৫ টন ওজন, জন ককেরিল দ্বারা তৈরি একটি ১০৫ মিমি গান, এবং একটি সমন্বিত আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি), যা যুদ্ধক্ষেত্রে আরও বেশি দৃশ্যমানতা প্রদান করে এবং বিমান পরিবহণের মাধ্যমে দ্রুত নিয়োজিত করা যায়। ভারতের কাছে ইঞ্জিন বিক্রি করার জন্য জার্মানির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিধিনিষেধ শিথিল করতে অস্বীকার করার কারণে জার্মান মোটরেন-উন্ড টারবিনেন ইউনিয়ন (এমটিইউ)-এর ইঞ্জিন পেতে ভারত ব্যর্থ হয়, এবং তারপর মার্কিন কামিনসান এর ইঞ্জিনটি তৈরি করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (এমওডি) জার্মানির অস্বীকারের পরে আমেরিকা-নির্মিত কামিন্স-এর কাছে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তৎপরতা দেখিয়েছিল, যা এই লেখা পর্যন্ত এলঅ্যান্ডটি, সিভিআরডিই ও আইএ-র প্রয়োজনীয়তা সন্তোষজনকভাবে পূরণ করেছে। জোরাওয়ার এলবিটি-র বর্তমান প্রোটোটাইপের ওজন অনুপাতের শক্তি ৪০ হর্স পাওয়ার (এইচপি) প্রতি টন (এইচপি/টন)-এর নিচে। এটি লো ট্র্যাক প্রেসারের মোকাবিলায় সর্বোত্তম, যা লাদাখের মতো অতি-উচ্চ অঞ্চলে সাধারণভাবে পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য। যেখানে সাধারণ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটার বেশি, সেখানে ট্যাঙ্কের আরও প্রয়োজন হল লাদাখের পাতলা বা বিরল বাতাসে কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ রাখা, যা ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতাকে পাহাড়ি ভূখণ্ডে এলবিটি-র গতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। জোরাওয়ার এলবিটি-কে অতি-উচ্চতার সাঁজোয়া অপারেশনের চাহিদার প্রয়োজনীয়তা সন্তোষজনকভাবে পূরণ করতে হলে ব্যাপক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তদুপরি, এটি তার চিনা প্রতিপক্ষ টাইপ-১৫-র চেয়ে গতিশীলতা ও নির্ভুলতা উভয় ক্ষেত্রেই বেশি উৎকৃষ্ট বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা পরীক্ষিত হবে লাদাখে একটি প্রকৃত যুদ্ধে নিয়োজিত হওয়ার আগে বেশ কয়েকটি ফিল্ড ট্রায়াল শেষ হওয়ার পরে, এবং সর্বোপরি পিএলএএ-র টাইপ-১৫ এলবিটি-র সঙ্গে প্রকৃত লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
ডিআরডিও-র ল্যাব কমব্যাট ভেহিকেলস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট (সিভিআরডিই)-এর সঙ্গে চুক্তির পর গুজরাটে এলঅ্যান্ডটি-র হাজিরা প্ল্যান্ট এলবিটি প্রোটোটাইপ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রাথমিক অর্ডারে ৫৯টি ট্যাঙ্কের একটি ব্যাচ থাকবে, যার একটি সম্ভাব্য ফলো-অন অর্ডারে প্রায় ৩৫০টি ট্যাঙ্ক থাকবে। আইএ যে পরিমাণ ট্যাঙ্ক অর্ডার করার পরিকল্পনা করেছে তা নির্বিশেষে, ডিআরডিও ও শিল্পের পরিষেবাটিকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে জোরাওয়ার এলবিটিগুলি যেন যে ভূপৃষ্ঠ এবং যে পরিবেশের জন্য প্রাথমিকভাবে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে সেখানে কার্যকর সক্ষম ব্যবহারের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। অন্যথায়, অর্জুন মেন ব্যাটল ট্যাঙ্ক (এমবিটি)-এর বিকাশের মতো আইএ একই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। যে উন্নতি প্রয়োজন তা ক্রমান্বয়ে করা যেতে পারে, এবং ট্যাঙ্কের সমস্ত উপাদান দেশীয়ভাবে তৈরি করার প্রয়োজন নেই। যাই হোক না কেন, আগে যা বলা হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট, ডিআরডিও ও এলএন্ডটি বিদেশী বিক্রেতাদের কাছ থেকে জোরাওয়ার-এর জন্য কামিন্স ইঞ্জিন এবং এর ১০৫ মিমি বন্দুক সংগ্রহ করেছে। আইএ এবং লিড ডেভেলপাররা পরে জোরাওয়ার এলবিটি-র জন্য আমদানিকৃত উপাদানগুলিকে দেশীয় উপাদান দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারে। সিভিআরডিই এবং এলঅ্যান্ডটি-র তৈরি করা প্রোটোটাইপটি তার চিনা সমকক্ষ টাইপ-১৫-র তুলনায় হালকা। টাইপ-১৫-র আনুমানিক ওজন ৩৩ টন এবং অতিরিক্ত বর্মের সঙ্গে সেটির ওজন ৩৬ টনে পৌঁছয়। তবুও, জোরাওয়ার-এর ওজনও বাড়তে পারে, কারণ আইএ-র এই এলবিটি-তে আরও বর্ম চাপানোর পাশাপাশি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র শনাক্ত ও প্রতিহত করতে এতে অ্যাক্টিভ প্রোটেকশন সিস্টেম (এপিএস) যুক্ত করার দাবি করতে পারে। এগুলি অবশ্য আইএ-র পরিষেবায় থাকা ট্যাঙ্ক যেমন টি-৭২ বা টি-৯০-এর কাছেও নেই। আইএ-এর মূল পরীক্ষা হবে এটি নিশ্চিত করা যে, তার নিজস্ব কর্মক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত চাহিদা যেন জোরাওয়ার এলবিটি-র উন্নয়নকে সম্পূর্ণভাবে লাইনচ্যুত না করে।
প্রাথমিক অর্ডারে ৫৯টি ট্যাঙ্কের একটি ব্যাচ থাকবে, যার একটি সম্ভাব্য ফলো-অন অর্ডারে প্রায় ৩৫০টি ট্যাঙ্ক থাকবে।
গত দশকটি ট্যাঙ্কগুলির জন্য ভাল ছিল না, বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে ট্যাঙ্কের খ্যাতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও ট্যাঙ্কগুলি তাদের আপাতদৃষ্টিতে অপ্রচলিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও এখনও প্রয়োজনীয়, কারণ তারা এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ, তারা স্থলযুদ্ধে মোবাইল ফায়ার পাওয়ারের এমন একটি স্তর সরবরাহ করে যা এখনও অন্য কোনও অস্ত্রব্যবস্থা বা প্ল্যাটফর্ম করতে পারে না।
ভারত পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার সমকক্ষ এমন একটি এলবিটি-র একটি প্রাথমিক রূপ নির্মাণে চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি করেছে। আসন্ন মাস এবং বছরগুলিতে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা এবং আইএ-র জন্য প্রকৃত পরীক্ষা এবং দুর্দান্ত সাফল্যের মুহূর্ত হবে এর প্রকৃত মোতায়েনের সময়টি, যখন এর প্রতিপক্ষ হবে পিএএএ-এর টাইপ-১৫ লাইট ট্যাঙ্ক, যা বর্তমানে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের (ডব্লিউটিসি) অধীনে সামরিক অঞ্চল লাদাখ, জিনজিয়াং ও তিব্বতে মোতায়েন রয়েছে। ডিআরডিও প্রধান কামাথ ঘোষণা করেছেন যে ব্যবহারগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জোরাওয়ার-কে ২০২৭ সালের মধ্যে ব্যবহারিক স্থাপনার উপযুক্ত হতে হবে। এই প্রত্যাশা যাতে মিথ্যা প্রতিপন্ন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কার্তিক বোমাকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.