ভারত-উজবেকিস্তান সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং শতাব্দী প্রাচীন সাংস্কৃতিক সংযোগের গভীরে নিহিত রয়েছে অভিন্ন মূল্যবোধ। নয়াদিল্লি সম্পর্ক উন্নত করতে এবং এই অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের নিরিখে একটি ধারাবাহিক কৌশল অনুসরণ করেছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উজবেকিস্তান সফর কৌশলগত অংশীদারিত্বকে অগ্রসর করেছে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছে। গত ১০ বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ২০১৪ সালের ৩১৬.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৬৮৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। উজবেকিস্তানের পরিসংখ্যান সংস্থা অনুসারে, ভারত ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে উজবেকিস্তানে ২৫৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বর্ধিত বাণিজ্য দুই দেশের মধ্যে উচ্চ স্তরের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ফলাফল যা উল্লেখযোগ্য ভাবে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। তার পরও এই অঞ্চলে নয়াদিল্লির কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সঙ্কুচিত ছিল। কারণ পাকিস্তান তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ভারতকে প্রবেশের অনুমতি দিতে অনাগ্রহী ছিল। ভারতকে অবিরত বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সুবিধার্থে সংযোগ প্রকল্পগুলি ত্বরান্বিত করতে হবে।
ভারত-উজবেকিস্তান সম্পর্ক
ভারত ও উজবেকিস্তানের আর্থ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে কুশান যুগ থেকে, যা সিল্ক রুটের দ্বারা সহজতর হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর এবং স্বাধীন সেন্ট্রাল এশিয়ান রিপাবলিকস (সিএআর) গঠনের পর নয়াদিল্লি এই অঞ্চলের সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে। সিএআরগুলি একটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল এবং ভারত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছিল। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও উজবেকিস্তান এবং কাজাখস্তান সফর করেছিলেন। ২০১২ সালে এই অঞ্চলের প্রতি ভারতের সুসংগত দৃষ্টিভঙ্গি তার কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া পলিসি বা সংযোগ মধ্য এশিয়া নীতিতে সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফর কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া নীতিকে নতুন গতি দিয়েছে এবং সহযোগিতার পরবর্তী পর্যায়ের গতি নির্ধারণ করেছে। ২০১৯ সালে দুই অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্নিশ্চিত করার জন্য বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ে প্রথম ঐতিহাসিক ইন্ডিয়া-সেন্ট্রাল ডায়লগের জন্য সমরখন্দকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
ভারত ও উজবেকিস্তানের আর্থ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে কুশান যুগ থেকে, যা সিল্ক রুটের দ্বারা সহজতর হয়েছে।
২০১৮ এবং ২০১৯ সালে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মির্জিওয়েভের পারস্পরিক সফর তাসখন্দের শীর্ষ বিদেশনীতি অগ্রাধিকার হিসাবে ভারতের অবস্থানকে জোর দিয়েছিল। ২০২০ সালে উজবেক প্রেসিডেন্ট ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দেখা করেছিলেন এবং কৌশলগত সম্পর্কে নতুন গতিশীলতা প্রদান করেছিলেন। ২০২২ সালে উদ্বোধনী ভারত-মধ্য এশিয়া ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল এবং একই বছরে প্রধানমন্ত্রী মোদী উজবেকিস্তানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করতে কপ২৮-এ উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। বছরগুলি কূটনৈতিক, অবকাঠামো এবং বিনিয়োগ সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে এবং বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করেছে।
ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে উচ্চ স্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত
|
১ ডিসেম্বর, ২০২৩
|
কপ২৮ চলাকালীন রিপাবলিক অফ উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী সাক্ষাৎ করেন
|
৮ অগস্ট, ২০২৩
|
ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে ১৬ দফার ফরেন অফিস কনসাল্টেশন (এফওসি)
|
৩০ মে, ২০২৩
|
ভারতের সভাপতিত্বে এসসিও সম্মেলন
|
১৪ এপ্রিল, ২০২৩
|
চাবাহার সংক্রান্ত ইন্ডিয়া-সেন্ট্রাল এশিয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) প্রথম সাক্ষাতের যৌথ বিবৃতি
|
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
|
এসসিও সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর উজবেকিস্তান সফর
|
১১ মে, ২০২২
|
ইন্ডিয়া-উজবেকিস্তান ফরেন অফিস কনসাল্টেশন
|
১৪ ডিসেম্বর, ২০২১
|
চাবাহার বন্দরের যৌথ ব্যবহারের জন্য ভারত, ইরান ও উজবেকিস্তানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় সম্মেলন
|
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
|
মিনিস্টার অব স্টেট ফর এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স শ্রীমতী মীনাক্ষী লেখির উজবেকিস্তান সফর (২৩-২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১)
|
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
|
ভারতের বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে উজবেকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের বৈঠক
|
১২ ডিসেম্বর, ২০২০
|
চাবাহার বন্দরের যৌথ ব্যবহার নিয়ে ভারত, ইরান এবং উজবেকিস্তানের ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক
|
০৯ ডিসেম্বর, ২০২০
|
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টে শভকাত মির্জিওয়েভের ভার্চুয়াল সম্মেলন
|
২০ নভেম্বর, ২০২০
|
ইন্ডিয়া-উজবেকিস্তান ফরেন অফিস কনসাল্টেশন
|
২৪ অগস্ট, ২০২০
|
যৌথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ভারত ও উজবেকিস্তানের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটির প্রথম বৈঠক
|
১৪ জানুয়ারি, ২০২০
|
উজবেকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফর
|
১৮ জানুয়ারি, ২০১৯
|
আমদাবাদে ভাইব্র্যান্ট গুজরাত গ্লোবাল সামিট ২০১৯-এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ
|
০৯ জানুয়ারি, ২০১৯
|
উজবেকিস্তানের সমরখন্দে প্রথম ইন্ডিয়া-সেন্ট্রাল এশিয়া ডায়লগে (১২-১৩ জানুয়ারি, ২০১৯) ভারতের বিদেশমন্ত্রকের সফর
|
সূত্র: লেখক দ্বারা সঙ্কলিত
বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) প্রয়োজন
২০১৮ সালে উজবেক প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের সময় উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রবাহ এবং যৌথ ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য পিটিএ-তে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালে উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৯৮টি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। উপরন্তু, নয়াদিল্লি অবকাঠামো এবং তথ্য প্রযুক্তির মতো উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করার জন্য উজবেকিস্তানের জন্য একটি ক্রেডিট লাইন চালু করেছে। নীচের চিত্রটি দেখায় যে, কী ভাবে এই উচ্চ পর্যায়ের সফর এবং নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরের পরিপ্রেক্ষিতে গত পাঁচ বছরে ভারত-উজবেকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। উজবেকিস্তান একটি আঞ্চলিক শক্তিকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, তার ক্রমবর্ধমান তরুণ জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রতি বছর তার কর্মশক্তিতে ধারাবাহিক ভাবে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করেছে। ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের জন্য অনুমানকৃত প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৫.৪ শতাংশ এবং ৫.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। নানাবিধ তথ্য দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয় এবং ভারত-উজবেকিস্তান বাণিজ্যের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যৎকে দর্শায়, যাতে আরও প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৮ সালে উজবেক প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের সময় উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রবাহ এবং যৌথ ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য পিটিএ-তে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত ইতিমধ্যেই অন্যদের মধ্যে ওষুধ প্রস্তুত, অটোমোবাইল উপাদান এবং আতিথেয়তা শিল্পে বিনিয়োগ করেছে। উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি সম্পূর্ণ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং এবার এটি স্বাক্ষরিত ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। মির্জিওয়েভ বাজার সংস্কার ত্বরান্বিত করতে এবং জাতীয় আইনকে ডব্লিউটিও চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য অসংখ্য পদক্ষেপ করেছেন। উজবেকিস্তান ২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের জন্য অর্থনীতি উন্মুক্ত করতে তার অর্থনৈতিক সংস্কার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ডব্লিউটিও-তে যোগদান করবে। ভারতের উচিৎ উজবেকিস্তানের সঙ্গে পিটিএ নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত করা, যাতে বাণিজ্য বাড়ানো যায় যা উৎপাদন ক্ষেত্রে ভারতের বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। উদাহরণস্বরূপ, নয়াদিল্লি ৫৮৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে এবং ২০২৩ সালে উজবেকিস্তান থেকে মাত্র ১০৫.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পণ্য আমদানি করে। উজবেকিস্তানে ভারতের প্রধান রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পরিষেবা, যান্ত্রিক সরঞ্জাম, অপটিক্যাল যন্ত্র, ওষুধ, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জাম। আমদানির মধ্যে রয়েছে জুস, নির্যাস, ফল ও উদ্ভিজ্জ পণ্য, সার, পিচ্ছিলকারক পদার্থ এবং সেবা।
সূত্র: বিদেশমন্ত্রক, ভারত
সংযোগের ক্ষেত্রে সমন্বয়
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অপরিসীম প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও সরাসরি সংযোগের অভাব এর সম্ভাবনাকে বাধা দান করেছে। এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চিনা প্রভাবের মধ্যে ভারত ২০১৫ সাল থেকে হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ এবং কৌশলগত এলাকার সঙ্গে তার সংযোগ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে চাবাহার বন্দর উন্নয়নের জন্য ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে। এই মউয়ের লক্ষ্য ছিল মধ্য এশিয়া এবং ইউরেশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নত করা। যাই হোক, চাবাহার বন্দরের অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোরের (আইএনএসটিসি) পূর্ব রুটের গুরুত্বপূর্ণ ৬২৮ কিমি দীর্ঘ চাবাহার-জাহেদান রেললাইন - যা ভারতকে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করে - ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, আমলাতান্ত্রিক বাধা এবং আন্তঃআঞ্চলিক বিরোধের কারণে বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অপরিসীম প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও সরাসরি সংযোগের অভাব এর সম্ভাবনাকে বাধা দান করেছে। এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চিনা প্রভাবের মধ্যে ভারত ২০১৫ সাল থেকে হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ এবং কৌশলগত এলাকার সঙ্গে তার সংযোগ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০২ সালে ভারত, ইরান এবং রাশিয়া কর্তৃক প্রস্তাবিত ১৩টি ইউরেশীয় দেশ আইএনএসটিসি অনুমোদন করেছে। আইএনএসটিসি-র পূর্ব পথ - যা কেটিআই করিডোর নামেও পরিচিত - ইরান হয়ে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতকে সংযুক্ত করে। ২০০৭ সালে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পর ২০০৯ সালে ইস্টার্ন রুট বা পূর্ব পথের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যেখানে প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে। আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করতে ভারতও ২০১৮ সালে আশগাবাত চুক্তিতে যোগদান করেছে।
১৩ মে ভারত এবং ইরান চাবাহার বন্দর পরিচালনা ও উন্নয়নের জন্য একটি দশ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির অধীনে ইন্ডিয়া পোর্ট গ্লোবাল লিমিটেড চাবাহারের চারপাশে অবকাঠামো উন্নত করার লক্ষ্যে পারস্পরিক ভাবে চিহ্নিত প্রকল্পগুলির জন্য প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ বিনিয়োগ করবে। চাবাহার-জাহেদান রেললাইন ২০২৫ সালে সম্পন্ন হলে এটি আইএনএসটিসি-র পূর্ব করিডোরের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় কৌশলগত প্রবেশাধিকার দেবে। উজবেকিস্তান একটি স্থলবেষ্টিত দেশ এবং এর ৮০ শতাংশ বাণিজ্য রাশিয়ার ভূখণ্ডের মাধ্যমে হয়। ইউক্রেনের যুদ্ধ তাসখন্দকে নতুন বাণিজ্য রুট, বিশেষ করে চাবাহার এবং আইএনএসটিসি খুঁজতে বাধ্য করেছে। ভারতের নেতৃত্বাধীন সংযোগ প্রকল্পগুলির ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে উজবেকিস্তান ২০২০ সালে চাবাহার বন্দরে ভারত এবং ইরানের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে। ২০২২ সালে মধ্য এশিয়ার নেতারা আইএনএসটিসি-র কাঠামোয় চাবাহার বন্দরকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। নেতারা একমত হয়েছেন যে, সংযোগ প্রকল্পগুলি স্বচ্ছ হওয়া উচিত, স্থানীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এবং সদস্য দেশগুলির সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত।
ইরানের চাবাহার বন্দর এবং পিটিএ শুধু উদ্যোগ নয়, ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও বটে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত রফতানি করার সম্ভাবনা-সহ ভারত একটি প্রধান বৈশ্বিক উত্পাদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। মধ্য এশিয়ায় উজবেকিস্তানের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে নয়াদিল্লি উজবেকিস্তানের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে একটি সমন্বিত বর্ধিত প্রতিবেশী নীতির ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অপরিহার্য বলে মনে করে। চাবাহার বন্দরের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা উজবেকিস্তান এবং সমগ্র মধ্য এশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে উন্নত করার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য নয়াদিল্লির লক্ষ্য প্রতিফলিত করে।
আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
কানওয়ার সিমার সিং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.