-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
শক্তিশালী ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ভারতকে আঞ্চলিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে এবং ভারতের স্বার্থকে সামনে ও কেন্দ্রে রেখে আরও সক্রিয় আন্তর্জাতিক ভূমিকা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
ভারত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এসসিও-র সভাপতিত্ব এবং ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে জি২০-র সভাপতিত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ দু’টির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি এবং প্রত্যাশা প্রকাশ্যে উঠে আসে। গ্লোবাল সাউথের উদ্দেশ্যগুলি তুলে ধরার কাজে এক দিকে এসসিও যখন ভারতের প্রতিশ্রুতি পরীক্ষা করছিল, তখন অন্য দিকে জি২০ সভাপতিত্বে নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের সমার্থক হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ভারতের জন্য এই নেতৃত্বের ভূমিকার সুযোগ অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক দোলাচলের সময়ে উত্থাপিত হয়েছে, তবে স্পষ্টতই অব্যাহত রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব দ্বারা তা চিহ্নিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আন্তঃমহাদেশীয় যুদ্ধগুলির মধ্যে একটির সময়ে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করা যে কোনও সম্ভাব্য ফলাফলের নিরিখে নানাবিধ অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে৷
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে ভারতের অবস্থান ভারত-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্যারোমিটার হয়ে উঠেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট বিচ্যুতিগুলি বিভাজনমূলক এবং অমীমাংসিত থাকলেও সম্ভবত ভারতের নেতৃত্বের জন্য আরও কঠিন কাজ ছিল জি২০-র নেতা হিসাবে ঐকমত্য গড়ে তোলা এবং তা ভারতের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। এক বছর আগের কথা ভাবলে বোঝা যায়, ক্ষয়িষ্ণু আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের প্রেক্ষিতে কোনও পক্ষকেই প্রত্যক্ষ সমর্থন না করার ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতার দরুন এসসিও এবং জি-২০ উভয়ের মঞ্চের নেতৃত্ব প্রদানে জন্য এর চেয়ে ভাল বিকল্প সম্ভব ছিল না।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত যখম জি২০ সভাপতিত্বের সূচনা করে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএস) সঙ্গে তার সম্পর্কের ঊর্ধ্বমুখী গতিপথ নেপথ্যে সহায়ক ছিল। মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ভারতের জি২০ সভাপতিত্বকে সফল করে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সকল চেষ্টাই করবে। তবুও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে ভারতের অবস্থান ভারত-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্যারোমিটার হয়ে উঠেছে। ভারতের জন্য এই প্রতিবন্ধকতা ছিল দ্বিমুখী: প্রথমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার ভূ-রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা, অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন তার পশ্চিমী অংশীদার দেশগুলিকে সম্মত করানো। দ্বিতীয়ত, বহুস্তরীয় চিনা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পথ করে নেওয়া, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব প্রদানের পথে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিন ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জে (ইউএন) ভারতের অবস্থানের বিরোধিতা করে এসেছে, তা সে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশিষ্ট এবং শনাক্তকরণযোগ্য সন্ত্রাসবাদীদের তালিকাভুক্ত করা হোক বা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ভারতের অন্তর্ভুক্তিই হোক না কেন। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেবল প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিস্তৃত পরিসরেও চিনের হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী অক্ষের সঙ্গে চিনের আন্তর্জাতিক সমন্বয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জোগানোর কারণে তীব্রতর হয়ে ওঠে। ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি তার সম্ভাব্য প্রসারকে প্রভাবিত করলেও ভারত-মার্কিন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ভাবে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত মতপার্থক্যের বিষয়ে ভারতের অনড় অবস্থান ধীরে ধীরে পশ্চিমী দেশগুলিকে তা মেনে নিতে বাধ্য করেছে।
চিন ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জে (ইউএন) ভারতের অবস্থানের বিরোধিতা করে এসেছে, তা সে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশিষ্ট এবং শনাক্তকরণযোগ্য সন্ত্রাসবাদীদের তালিকাভুক্ত করা হোক বা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ভারতের অন্তর্ভুক্তিই হোক না কেন।
গত বছর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বৃদ্ধিকেই দর্শায়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত জি২০-র বিদেশ মন্ত্রীদের প্রাথমিক বৈঠকগুলির মধ্যে শুরু করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য নেতৃত্বের সাফল্য সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি খাদ্য, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, জ্বালানি, জলবায়ু, নারী নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও মাদকবিরোধিতার মতো ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ সহযোগিতা অর্জনের দ্বৈত উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করেছে। এই বছরের জুলাই মাসে জি২০ বৈঠকে যোগদানের জন্য গুজরাত সফরের সময় মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আন্তর্জাতিক ঘনিষ্ঠ অংশীদার’ বলে অভিহিত করেন। জ্বালানি সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত পুঁজি ব্যয় হ্রাস এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বিনিয়োগ মঞ্চ তৈরি করে জ্বালানির রূপান্তরের উপর নজরদারি চালানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন সফর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব ও দ্রুত অগ্রগতিকেই তুলে ধরে। সম্পর্কটিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গত এক বছর ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। এই বছরের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে ইনিশিয়েটিভ অন ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি (আইসিইটি) স্বাক্ষরিত হয়, যার লক্ষ্য হল সহযোগিতামূলক উদ্ভাবন বাস্তুতন্ত্রকে জোরদার করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরকালীন চূড়ান্ত হওয়া প্রতিরক্ষা পথনির্দেশিকার সশক্তিকরণ। এ সবই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতির নিরিখে ইতিবাচক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন উভয়ের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্কের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও অন্তত স্বল্প মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সুদৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভারতের স্বার্থকে কেন্দ্রে ও সামনে রেখে ভারতের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতাগুলির মোকাবিলা করার ভরসা জোগাবে।
বাইডেন প্রশাসন জি২০-তে ভারতের নেতৃত্বের উপর ব্যাপক আস্থা দর্শিয়েছে। এই ধরনের প্রত্যয় ভারতের গণতান্ত্রিক চরিত্র, স্থিতিশীল ও দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, দেশটির সুবিশাল বাজারের সম্ভাবনা, জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি দৃঢ় অবস্থান এবং চিনের সমস্যা মোকাবিলা ও অঞ্চলটিতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এক কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারতের সম্ভাবনার মধ্যেই নিহিত। এই অভিন্নতাগুলি এ কথা সুনিশ্চিত করেছে যে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা, সমন্বয়ের পাশাপাশি কোনও শত্রুতা ছাড়াই ভিন্নতার জন্ম দিতে পারে। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই বর্তমানের বহুপাক্ষিকতাকে সঙ্কটাচ্ছন্ন বলে মনে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এর অর্থ হল ভারতের মতো সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করা এবং ভারতের জন্য এটি একটি ‘সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতা’র দিকেই চালিত করে যেখানে আন্তর্জাতিক মঞ্চ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে গ্লোবাল সাউথের বক্তব্য ও প্রতিনিধিত্ব আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।
ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব প্রায় সর্বতো ভাবেই চিনের সঙ্গে একটি সুপ্ত অথচ অমীমাংসিত বিরোধ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। অন্য দিকে, একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন উভয়ের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্কের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও অন্তত স্বল্প মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সুদৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভারতের স্বার্থকে কেন্দ্রে ও সামনে রেখে ভারতের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতাগুলি মোকাবিলা করার ভরসা জোগাবে।
বিবেক মিশ্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...
Read More +