Author : Kabir Taneja

Published on Jun 17, 2023 Updated 0 Hours ago

দোরগোড়ায় সংঘাতের ক্ষেত্রে নৈকট্য ভারতের অগ্রাধিকার পরিবর্তন করে।

আফগানিস্তান নিয়ে ভারতকে এখনও রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে হবে

এখন পশ্চিমী রাজধানীগুলিতে আফগানিস্তান–কেন্দ্রিক প্রশ্নগুলি মূলত মানবিক সহায়তা, নারীর অধিকার, শিক্ষা, এবং ২০২১ সালের আগস্টে বিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত ‘‌প্রজাতন্ত্র’‌–এর একটি মাত্রা বজায় রাখার জন্য তালিবানের উপর চাপ তৈরি করাকে ঘিরে আবর্তিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অদক্ষ নিষ্ক্রমণ এবং মার্কিন ভোটার ও তার মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধের জনপ্রিয়তা হারানোর প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তন বিস্ময়কর নয়।

ভারতের বিষযটি তেমন নয়। ভূগোল গুরুত্বপূর্ণ, এবং নিকটবর্তী আফগানিস্তানের ক্ষমতার শূন্যতা দ্রুত রাশিয়া, চিন ও ইরানের মধ্যে আরও দৃঢ় সহযোগিতামূলক ত্রিভুজ ‌দিয়ে পূর্ণ হয়েছিল। বিশ্বের এই অংশে যে কোনও দীর্ঘমেয়াদি পশ্চিমী উপস্থিতির পথ বন্ধ করা এদের প্রত্যেকেরই একটি অভিন্ন লক্ষ্য। তিন দেশই বর্তমান স্থিতাবস্থা মেনে নিয়েছে, তেহরান, বেজিং ও মস্কোতে আফগান দূতাবাসগুলি এখন তালিবানের প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন যে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলির, যেমন (অন্যদের মধ্যে) ভারত ও রাশিয়ার আফগানিস্তানে আরও বেশি কিছু করা উচিত। নয়াদিল্লি এবং মস্কো এখন ঠিক সেটাই করছে।

ইউক্রেন আক্রমণের কারণে ভারত–রাশিয়া সম্পর্কজনিত উদ্বেগ এবং সেইসঙ্গে বেজিংয়ের সঙ্গে মস্কোর গভীর সম্পর্ক সত্ত্বেও ভারতের জন্য কাবুলের পরিস্থিতি মস্কোর সঙ্গে তার নিরাপত্তা অংশীদারিকে বিবেচনার মধ্যে নিয়ে আসে। তবে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য নিরাপত্তা বিবেচনা রয়েছে, এবং একে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের প্রতিযোগিতার দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখা দরকার। আফগানিস্তানে ভারতের ২০২১–পরবর্তী কৌশলটি প্রতিক্রিয়ানির্ভর রয়ে গেছে। পাকিস্তানের ব্যর্থ অর্থনীতি, এবং বর্তমান সরকারকে প্রতিস্থাপন করার লক্ষ্যে আফগান তালিবানের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে সক্রিয় তেহরিক–ই–তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)–এর দ্রুত ক্রমবর্ধমান হুমকি নয়াদিল্লির জন্য একটি সুযোগ তুলে ধরেছে, যা কাজে লাগিয়ে ভারত পাকিস্তানকে তার অভ্যন্তরীণ অশান্তিতে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য করতে পারে, এবং একটি বৃহত্তর লক্ষ্যে নিজের সীমানার বাইরে, বিশেষ করে কাশ্মীরে দুঃসাহসিকতার জন্য, পাকিস্তানের ক্ষমতা সীমিত করতে পারে।

ইসলামাবাদ আশা করেছিল তালিবান নেতৃত্বাধীন কাবুল মূলত তার স্বার্থের অধীন হবে, এবং নয়াদিল্লিকে দূরে রাখবে। তবে ভারত ২০২২ সালের জুনে আফগানিস্তানে একটি ‘‌প্রযুক্তিগত কার্যালয়’‌ খুলেছিল, এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জন্য গমের চালান পাঠিয়েছিল, যা জালালাবাদে ভারত ও তালিবানের পতাকা একসঙ্গে উড়িয়ে তালিবান স্বাগত জানিয়েছিল। ইতিমধ্যে পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, এবং তালিবানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাও এদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

রাশিয়া ভারতের জন্য তালিবানের সঙ্গে কাজ করার আরও একটি পথ তৈরি করে। এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছিল যখন ফেব্রুয়ারিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল মস্কো সফর করার সময় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। একজন এনএসএ–র রুশ শীর্ষ নেতার সাথে সাক্ষাত করা স্বাভাবিক প্রোটোকলের মধ্যে পড়ে না, বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়ায়। এদিকে রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তালিবানের পক্ষে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার, এবং চিন ও ইরানের চেয়ে অনেক বেশি। আরও যোগাযোগ প্রয়োজন, যেমন ভারতীয় কর্মকর্তাদের তালিবান পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেখা করা, বিশেষ করে হাক্কানি নেটওয়ার্ক পরিচালিত অংশগুলির সঙ্গে, যারা রাশিয়ার সহায়তা পেয়ে ২০০৮ সালে কাবুলে ভারতের দূতাবাসে হামলা চালিয়েছিল।

বেশিরভাগ আঞ্চলিক ফোরাম, যেখানে আফগানিস্তান একটি মূল উদ্বেগের বিষয় হিসাবে থাকে, সেগুলি সংগঠিত হয় রাশিয়ার ছত্রছায়ায়। এর মধ্যে রয়েছে মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলির টুনক্সি উদ্যোগ, তাসখন্দ আন্তর্জাতিক সম্মেলন, এবং অন্যান্য ছোট আঞ্চলিক উদ্যোগ। পাকিস্তানও এর অধিকাংশেরই অংশ। আফগানিস্তানের জন্য রাশিয়ার বিশেষ প্রতিনিধি জামির কাবুলভ কিন্তু বারবার  ইসলামিক স্টেট–খোরাসান প্রদেশ (আইএস–কে)    নামে পরিচিত তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তালিবানের অভিপ্রায়ের বারংবার প্রশংসা করেছেন। কাবুলভ সম্প্রতি ‘‌অ্যাংলো–স্যাক্সন’‌দের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন ও মধ্য এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করার জন্য, এবং আরও সরাসরি এমন দাবিও করেছেন (প্রমাণ না–দিয়ে) যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে আইএস–কে স্পনসর করছে

এটি এমন একটি এলাকা যেখানে ভারত ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা। যদিও নয়াদিল্লি নতুন তালিবান জমানার সঙ্গে আলোচনা করলেও তা কিন্তু এই গোষ্ঠীটি যে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে এমন দাবি করার জন্য অক্সিজেন জোগায়নি। ভারত গত দুই দশক ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে আফগানিস্তানের যাত্রার অন্যতম প্রধান সমর্থক হিসেবে পাকিস্তানি স্বার্থকে বাধাগ্রস্ত করা এবং দেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।

কিন্তু সেই সূক্ষ্ম রেখাটি বৃহত্তর ভূ–রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত প্রসারিত। ভারত যখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য সমালোচনার জবাব দেয়, সেই সময়ে আফগানিস্তানের প্রশ্নটি নয়াদিল্লির নীতিনির্ধারকদের জন্য আরও বিবেচনার বিষয়। এই অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতির অভাব, মধ্যপ্রাচ্যের মতো জায়গায় ওয়াশিংটনের একটি শক্তি হিসাবে মন্দাক্রান্ত হওয়া, এবং ইন্দো–প্যাসিফিকের দিকে দৃ্ষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া বেশ কিছু রঙ্গমঞ্চকে অমীমাংসিত রেখে দিয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে কাবুলের পতনের চার মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন যে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলির, যেমন (অন্যদের মধ্যে) ভারত ও রাশিয়ার আফগানিস্তানে আরও বেশি কিছু করা উচিত। নয়াদিল্লি এবং মস্কো এখন ঠিক সেটাই করছে।


এই ভাষ্যটি মূলত লোয়ি ইনস্টিটিউটে উপস্থাপিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.