ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ-সহ, লক্ষ্যযুক্ত উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক সীমান্ত। এর বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলটি বিভিন্ন মানব উন্নয়ন সূচকে জাতীয় গড় থেকে পিছিয়ে রয়েছে, এবং ভারতের জিডিপি-তে মাত্র ২.৮ শতাংশ অবদান রাখে। এই অঞ্চলের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্ভব করার জন্য এমন একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য যা নজর দেবে মানবসম্প্দের সশক্তিকরণ ও বঙ্গোপসাগরের অর্থনীতির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন একীকরণের উপর। শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, পরিকাঠামো, এবং ডিজিটাল অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা অবশ্যই একটি দক্ষ কর্মী-বাহিনীকে লালন-পালন, সংযোগ ও বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) উন্নয়ন, এবং একটি উদ্যোক্তা বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করার বিভিন্ন পথ তৈরি করার সুযোগ করে দেয়৷ এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বের আর্থ-সামাজিক ভূচিত্রকে উন্নত করার আকাঙ্ক্ষাই নয়, বরং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক আখ্যানের মধ্যে এর তাৎপর্যকে প্রসারিত করার লক্ষ্যও রয়েছে।
এই অঞ্চলের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্ভব করার জন্য এমন একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য যা নজর দেবে মানবসম্প্দের সশক্তিকরণ ও বঙ্গোপসাগরের অর্থনীতির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন একীকরণের উপর।
১ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ
উত্তর-পূর্ব ভারতে সাক্ষরতার হার জাতীয় গড়ের সঙ্গে তুলনীয় হওয়া সত্ত্বেও এর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় সীমিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দক্ষ শ্রমের অভাবের কারণে, যা বেকারত্বের একটি চক্রকে স্থায়ী করে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। বিভিন্ন স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এই অঞ্চলের জন্য কম, ভারতের মোট সংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ। কাজেই যা প্রয়োজন তা হল, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সারিবদ্ধ করার লক্ষ্যে পাঠ্যক্রম সংশোধন করা, উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাড়ানো, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএড)-এর মতো সংস্থাগুলির সহায়তায় বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি তৈরি ও প্রচার করা। শিক্ষার দিগন্ত বিস্তৃত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ভার্চুয়াল লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা এবং ক্রমবর্ধমান চাকরির বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা দিয়ে তাদের সজ্জিত করার জন্য প্রচেষ্টা অপরিহার্য, যা শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং বাকি দেশের মধ্যে উন্নয়নমূলক ব্যবধান হ্রাস করবে।
চিত্র ১: উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রকার অনুসারে সংখ্যা৷
উৎস: উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রক, বার্ষিক রিপোর্ট ২০২২-২৩
২ স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা
সমীক্ষার তথ্য ইঙ্গিত করে যে উত্তর-পূর্বের জনসংখ্যার একটি বিস্ময়কর ৮৪ শতাংশ তাদের অভিবাসনের প্রাথমিক কারণ হিসাবে উন্নত চিকিৎসার সুযোগের কথা উল্লেখ করে। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব অবশ্যই জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, টেলিমেডিসিন এবং রোগ প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার সুবিধা দিতে পারে। উপরন্তু, চিকিৎসা প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ডায়াগনস্টিকগুলির সুযোগ প্রদান করতে পারে, এবং আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের উন্নতি করতে পারে। উন্নত কৌশল, গবেষণা পদ্ধতি, এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ডাক্তার, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের জন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর ব্যবস্থা করে চিকিৎসা কর্মীদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিও অপরিহার্য।
চিত্র ২: ভারতে গুরুতর অসুস্থতার কারণে অভিবাসন (জরিপ করা নমুনা ব্যক্তিদের শতাংশ)
সূত্র: ডেভেলপমেন্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
৩ ভৌত পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ
ভারতের উত্তর-পূর্বে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক একীকরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল পরিকাঠামোর উন্নয়ন, যেখানে অপ্রতুল ভৌত ও ডিজিটাল সংযোগ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। এই ফাঁকগুলি পূরণ করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যযুক্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভৌত পরিকাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে, পরিবহণ নেটওয়ার্কগুলিতে বিনিয়োগ সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্বের প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করতে এবং বঙ্গোপসাগর বরাবর প্রতিবেশী দেশ এবং বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য শক্তিশালী সড়ক ও মহাসড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এই উদ্যোগগুলির জন্য ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। রেলপথের উন্নতি, ব্রহ্মপুত্র নদীর মতো নৌপথের সুবিধা এবং বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পণ্য ও মানুষদের চলাচলের জন্য অপরিহার্য।
এই ফাঁকগুলি পূরণ করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যযুক্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভৌত পরিকাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে, পরিবহ্ণ নেটওয়ার্কগুলিতে বিনিয়োগ সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রক সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, নয় বছরে (২০১৪-২০২৩), মোট ৪,৯৫০ কিলোমিটার জাতীয় হাইওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল, যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪১৪.৫৯ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি। অতিরিক্তভাবে, নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিম (নেসিডস)–এর জন্য ২০২২-২৩ থেকে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত প্রায় ৮১.৩৯৫ বিলিয়ন ভারতীয় রুপির বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, এবং রাস্তা ও অন্য পরিকাঠামো উপাদানগুলির জন্য নির্দিষ্ট তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে৷ অধিকন্তু, এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা টেকসইভাবে মেটাতে সৌর, জলবিদ্যুৎ ও বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
৪ ডিজিটালাইজেশন এবং উদ্যোক্তা
ভারতের উত্তর-পূর্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং একীকরণের জন্য ডিজিটাল পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ অপরিহার্য, যেখানে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলের ইন্টারনেট সাবস্ক্রিপশনের হার ৪৩ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ৫৫ শতাংশের নিচে। প্রয়োজনীয় কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক ও স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিস্তৃত করা এবং বিভিন্ন জনসংখ্যার জন্য উপযোগী ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রোগ্রামের প্রসার। ডিজিটাল উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বিশেষ করে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যটনের মতো ক্ষেত্রে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কর্মী বাহিনীকে দক্ষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেইসঙ্গে প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী।
সরকারি উদ্যোগ, যেমন স্টার্টআপের জন্য কর ছাড় এবং সুবিন্যস্ত নিয়ন্ত্রক কাঠামো, উদ্ভাবনের জন্য প্রণোদনা প্রদান করে এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুঁজির প্রাপ্তি সহজতর করে, এবং তার ফলে স্টার্টআপগুলিকে উন্নত করতে সক্ষম করে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কর্মী বাহিনীকে দক্ষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেইসঙ্গে প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী।
৫ এফডিআই এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব
বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীন শিল্পনীতি ও প্রচার বিভাগের মতে, ভারতে এফডিআই বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেখিয়েছে, কিন্তু উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং জম্মু ও কাশ্মীরে বিনিয়োগ দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক কমই থেকে গিয়েছে। অক্টোবর ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কালে, উত্তর-পূর্বে এফডিআই প্রবাহ খুবই কম ছিল: সামগ্রিক বিদেশী বিনিয়োগের প্রায় ০.০১৮ শতাংশ।
বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে, এই অঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করার উপায় প্রদান করে।
এইভাবে, উত্তর-পূর্বের বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য অংশীদারদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও অন্য অংশীদারেরা প্রয়োজন মূল্যায়ন, অংশীদারিত্বের সুবিধা এবং সর্বোত্তম অনুশীলনের প্রসারের সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গতিশীল উদ্ভাবনী পরিবেশের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারলে, তা উত্তর-পূর্বে পরিষেবার গুণমানকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে, এবং উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে পারে।
উপসংহারে, ভারতের উত্তর-পূর্বে ব্যবসার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য একটি সহায়ক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা কার্যকর অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম। বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে, এই অঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করার উপায় প্রদান করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিকাঠামো ও ডিজিটাল অগ্রগতির মাধ্যমে সম্মিলিত প্রচেষ্টা উন্নয়নমূলক বৈষম্য দূর করা এবং উত্তর-পূর্বের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি রাখে।
লেখক তার গবেষণা সহায়তার জন্য ওআরএফ ইন্টার্ন এবং প্রথম টিআই ফেলো আরতি মাহাতোকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.