Published on Feb 21, 2025 Updated 0 Hours ago

বাণিজ্য যুদ্ধ ও আর্থিক পুনর্গঠনের মধ্যে ক্রমবিকাশমান ভূদৃশ্যে ভারতের সাফল্য নির্ভর করবে স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতার উপর

ট্রাম্প ২.০-র জন্য ভারতের ভূ-অর্থনৈতিক প্লেবুক: ২০২৫ সালে বাণিজ্যিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা

যেহেতু দেশগুলি উল্লেখযোগ্য বাধা ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে, ২০২৫ তাই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বিশ্ব বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের পুনরুত্থান এনেছে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট অস্থিরতা তৈরি করেছে। তাঁর প্রথম মেয়াদে, ট্রাম্প "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতি, শুল্ক প্রয়োগ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এবং কঠোর ভিসা প্রবিধানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন, যা তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) পরিষেবা, বস্ত্রবয়ন, ও ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল — যেগুলি ভারতের মোট আভ্যন্তর উৎপাদন (জিডিপি) ও কর্মসংস্থানের মূল চালক। প্রকৃতপক্ষে, কঠোর এইচ-১বি ভিসা নিয়মের সম্ভাবনা আইটি শিল্পের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা তার আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশের জন্য মার্কিন বাজারের উপর নির্ভর করে।

উপরন্তু, ট্রাম্পের চিনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বাণিজ্য অবস্থান বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত করেছে, যা ভারতকে একটি বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ উভয়ই তৈরি করেছে। যাই হোক, এই পরিবর্তনগুলি বাণিজ্য প্রবাহে অনিশ্চয়তা বাড়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে প্রভাবিত করে। একটি শক্তিশালী মার্কিন ডলার, যার ফলে মূলধনের বহিঃপ্রবাহ ঘটে, তা নিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে মিলিতভাবে ভারতীয় বাজারগুলি আরেকটি ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উদ্বেগও প্রতিফলিত করেছে।


ভারতীয় রপ্তানিকারীরা মার্কিন-চিন উত্তেজনার পরোক্ষ পরিণতির সম্মুখীন হয়, যেমন মার্কিন শুল্কের কারণে চিনা পণ্যগুলির তৃতীয় বাজারে ভিড়  করা, যার ফলে সেখানে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়।


প্রতিযোগিতা ও সমৃদ্ধি: ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভারতীয় রপ্তানিকারীরা মার্কিন-চিন উত্তেজনার পরোক্ষ পরিণতির সম্মুখীন হয়, যেমন মার্কিন শুল্কের কারণে চিনা পণ্যগুলির তৃতীয় বাজারে ভিড়  করা, যার ফলে সেখানে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের বস্ত্রবয়ন শিল্পকে মার্কিন বাজার থেকে ফিরে আসা চিনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে, যা দাম নিয়ে চাপকে তীব্রতর করেছে এবং ভারতীয় উৎপাদকদের বাজারের অংশ ধরে রাখতে দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও, বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহের ব্যাঘাত ভারতের জন্য একটি বিকল্প উৎপাদন গন্তব্য হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য অনন্য সুযোগ তৈরি করে।

যেহেতু বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি চিনের উপর নির্ভরতা কমাতে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনতে চায়, ভারত একটি মূল সুবিধাভোগী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। সরকারের উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা (পিএলআই) প্রকল্পগুলি বিশ্ব নির্মাতাদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পিএলআই প্রকল্পগুলির লক্ষ্য ইলেকট্রনিক্স, ফার্মাসিউটিক্যালস ও অটোমোবাইলের মতো ক্ষেত্রগুলিতে নির্মাতাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা। উদাহরণস্বরূপ, প্রকল্পটি ১৩টি মূল ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে, যার লক্ষ্য দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি করা। এটি বৃহত্তর ‘‌আত্মনির্ভর ভারত’‌ উদ্যোগের সঙ্গে সারিবদ্ধ। এই প্রকল্পগুলির অধীনে, অ্যাপল, ফক্সকন ও স্যামসাং-এর মতো কোম্পানিগুলি ভারতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে, যা দেশের উৎপাদন সম্ভাবনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

উচ্চ-মূল্যের শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য তার দক্ষ শ্রমশক্তি এবং স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রকে কাজে লাগাতে ভারতের নিজের ক্ষমতার মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ব্লকচেনের মতো উদীয়মান প্রযুক্তির উপর ক্রমবর্ধমান নজর-‌সহ ভারতের আইটি পরিষেবা ক্ষেত্রটি ক্রমাগতভাবে মূল্য শৃঙ্খলে আরোহণ করছে। এটি ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্রগুলি যখন সুরক্ষাবাদী নীতির কারণে বাধার সম্মুখীন হয়, সেই সময় ভারতকে বৈশ্বিক জ্ঞান অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তোলে।


যেহেতু বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি চিনের উপর নির্ভরতা কমাতে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনতে চায়, ভারত একটি মূল সুবিধাভোগী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।



যাই হোক, এই লাভগুলির মধ্যে ঝুঁকিও আছে। বৃহত্তর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট চ্যালেঞ্জিং রয়ে গেছে, এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০২৫-এর জন্য ২.৮ শতাংশের নিম্ন বৈশ্বিক বৃদ্ধির হার অনুমান করেছে। উন্নত অর্থনীতিতে মন্থর বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের শক্তিশালীকরণ ভারতের মতো উদীয়মান বাজারে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ কমাতে পারে। একটি শক্তিশালী ডলার ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা প্রধানত শক্তি ও কাঁচামাল আমদানির খরচও বাড়িয়ে দেয়।

একটি খণ্ডিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য: ভারত ট্রাম্প-শি সমঝোতার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যা বিশ্ব বাণিজ্য দৃশ্যপটের উল্লেখযোগ্যভাবে পুনর্নির্মাণ করতে পারে। মার্কিন কৃষি ও জ্বালানি পণ্যের চিনা আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত একটি সম্ভাব্য চুক্তি সম্পর্কে জল্পনা ভারতের জন্য উদ্বেগ বাড়ায়, কারণ এই ধরনের চুক্তি উদীয়মান অর্থনীতি থেকে বাণিজ্য প্রবাহকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। একটি ঘনিষ্ঠ মার্কিন-চিন অর্থনৈতিক অংশীদারি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে চিনের আধিপত্যকে শক্তিশালী করতে পারে, এবং একটি কার্যকর বিকল্প ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিতে পারে। এটি চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলের পিছনের গতি কমিয়ে দেবে, যা অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে চিনের বাইরে তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ভিত্তিগুলি বৈচিত্র্যময় করার জন্য বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলিকে চালিত করছিল।

বৈশ্বিক বাণিজ্য গতিশীলতার পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি কমাতে, ভারত সক্রিয়ভাবে বাজার বৈচিত্র্যকরণ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি কৌশল অনুসরণ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে শক্তিশালী করা এই পদ্ধতির একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। ভারত-ইইউ ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের মতো উদ্যোগগুলি ডিজিটাল বাণিজ্য সহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ)-এ ভারতের অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির প্রতি তার দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরে, যা কোনও একক বাণিজ্য ব্লকের উপর নির্ভরতা কমায়। ইন্দো-প্যাসিফিকের মূল অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার মাধ্যমে ভারত বিশ্ব বাণিজ্যে তার ভূমিকা প্রসারিত করতে তার কৌশলগত স্বার্থ সুরক্ষিত করার লক্ষ্য রাখে।

ইন্দো-প্যাসিফিক ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ)-এ ভারতের অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির প্রতি তার দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরে, যা কোনও একক বাণিজ্য ব্লকের উপর নির্ভরতা কমায়।



ব্রিকস যখন ‘‌ব্রিকস প্লাস’‌ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রসারিত হচ্ছে, সেই সময় ভারত ব্রিকসের মতো বৃহত্তর অর্থনৈতিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে তার ভূমিকাকে পুনর্নির্মাণ করছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো প্রধান শক্তি উৎপাদনকারী এবং ইরানের মতো সম্পদ-সমৃদ্ধ দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিকস লিথিয়াম ও তেল-‌সহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থানগুলির জন্য বিশ্ব বাজারে তার প্রভাবকে শক্তিশালী করেছে। যদিও চিন ও রাশিয়া প্রায়শই ব্রিকসকে পশ্চিমী আধিপত্যের বিরুদ্ধে ভারসাম্য হিসাবে দেখে, ভারত একটি বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে পশ্চিমী অর্থনীতিগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক শাসনের জন্য ব্লকটিকে ব্যবহার করে।

২০২৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সময় বাণিজ্য যুদ্ধ, আর্থিক পুনর্গঠন ও উদীয়মান ব্লকগুলির জটিলতাগুলির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার জন্য ভারতের ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিকে শক্তিশালী করা, রপ্তানি বাজারকে বৈচিত্র্যময় করা, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একটি অগ্রগামী কৌশলের অপরিহার্য উপাদান। ভারতের ভূ-অর্থনৈতিক সাফল্য নির্ভর করবে দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ভূদৃশ্যে স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার  ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতার উপর।



এই ভাষ্যটি প্রথম
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে   প্রকাশিত হয়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Soumya Bhowmick

Soumya Bhowmick

Soumya Bhowmick is a Fellow and Lead, World Economies and Sustainability at the Centre for New Economic Diplomacy (CNED) at Observer Research Foundation (ORF). He ...

Read More +