১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে সূচিত হয়েছিল ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি (যা আগে ছিল লুক ইস্ট নীতি)। এটি ছিল এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভারতের বিদেশনীতির একটি ভিত্তি। এই কৌশলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। বাণিজ্যনীতির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ করে অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)-এর সঙ্গে এফটিএ-র ক্ষেত্রে, দেশীয় শিল্প রক্ষা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মধ্যে একটি জটিল ভারসাম্যমূলক কাজ প্রতিফলিত করে।
ভারত-আসিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এআইএফটিএ) ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল ভারত ও আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে ব্যবসায়িক পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো। যাই হোক, সাম্প্রতিক আলোচনাগুলি পারস্পরিক সুবিধা ও আঞ্চলিক একীকরণের জন্য আসিয়ান-এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে, এবং বৈষম্য মোকাবিলা ও বাণিজ্য প্রবাহ উন্নত করার জন্য শুল্ক কাঠামো সংশোধন করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আসিয়ান ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার রয়ে গিয়েছে, যা এর বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১১ শতাংশ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২৩-২৪ সালে ১২২.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত-আসিয়ান কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (সিইসিএ) পণ্য, পরিষেবা ও বিনিয়োগ নিয়ে তিনটি মূল চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে। আসিয়ান-ইন্ডিয়া ট্রেড ইন গুডস এগ্রিমেন্ট (এআইটিআইজিএ) স্বাক্ষর করার পর আসিয়ান-এর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের বিস্ময়কর বৃদ্ধি হয়েছে। যাই হোক, এই বাণিজ্য অসমভাবে আসিয়ান অঞ্চলকে উপকৃত করে। অর্থবর্ষ ২০০৯ ও অর্থবর্ষ ২০২৩-এর মধ্যে আসিয়ান থেকে ভারতে আমদানি ২৩৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ভারত থেকে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১৩০.৪ শতাংশ, ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি যখন ২০১১ সালে চুক্তিটি কার্যকর হয়েছিল তখনকার বার্ষিক ৭.৫ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২৩-এ হয়েছে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চিত্র ১: আসিয়ান-এর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ভারসাম্য (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
সূত্র: বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক
শুল্কের সম্ভাব্য সমন্বয় ভারতের অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রগুলিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার দ্বারা প্রভাবিত হয়, এবং তা ভারতকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার জন্য সরকারের "মেক ইন ইন্ডিয়া" উদ্যোগের সঙ্গে সারিবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ও অটোমোবাইল উপাদানগুলির উপর শুল্ক বাড়ানো অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে। পণ্য বাণিজ্য বিভাগে ভারত শুল্ক লাইনের প্রায় ৭৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাদ দিয়েছে এবং অতিরিক্ত ১৪ শতাংশ শুল্ক লাইনে শুল্ক কমিয়েছে, যা আসিয়ানের কাছে একটি সুসংহত প্রস্তাব তুলে ধরে৷ অন্য দিকে, প্রতিটি আসিয়ান সদস্য ভারতকে পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার ক্ষমতার এই অসাম্য প্রতিযোগিতামূলক আসিয়ান আমদানি থেকে দুর্বল দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভারতের নমনীয়তাকে বাধাগ্রস্ত করে ।
সারণী ১: ভারতে আসিয়ান ট্যারিফ প্রস্তাব (শতাংশ লাইন)
আসিয়ান সদস্য
|
এলিমিনেশন
|
মোট প্রস্তাব
|
ব্রুনেই
|
৮০.১০%
|
৮৪.৭০%
|
কম্বোডিয়া
|
৮৪.১০%
|
৯২.০০%
|
ইন্দোনেশিয়া
|
৫০.১০%
|
৭০.৪০%
|
লাওস
|
৭৭.৫০%
|
৮৮.৫০%
|
মালয়েশিয়া
|
৭৮.১০%
|
৮৬.২০%
|
মায়ানমার
|
৭৩.৪০%
|
৮১.৩০%
|
ফিলিপিনস
|
৭৫.৬০%
|
৮৮.১০%
|
সিঙ্গাপুর
|
১০০.০০%
|
১০০.০০%
|
তাইল্যান্ড
|
৭৫.৬০%
|
৮৫.৪০%
|
ভিয়েতনাম
|
৬৯.৭০%
|
৮২.২০%
|
সূত্র: গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ রিপোর্ট ২০২৪
আসিয়ান অর্থনীতিগুলি সহজাতভাবে রপ্তানিমুখী এবং সমৃদ্ধ উৎপাদন ঘাঁটি। বিপরীতে, ভারতের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিষেবা ও কৃষিভিত্তিক, এবং এটি এফটিএ থেকে পুরো লাভ তুলতে পারেনি, যার ফলে ভারতীয় বাজারে আসিয়ান দেশগুলির অধিকতর প্রবেশ ঘটেছে। ভারতীয় রপ্তানি আসিয়ান দেশগুলিতে অনুরূপ আকর্ষণ পেতে সংগ্রাম করেছে। তার উপর ফেরোঅ্যালয়, অ্যালুমিনিয়াম, তামার পাইপ ও টিউব, টেক্সটাইল প্রধান ফাইবার এবং বেশ কয়েকটি রাসায়নিক প্রস্তুতির মতো কিছু আইটেমের উপর অনুপযুক্ত শুল্ক কাঠামো ভারতীয় শিল্পগুলিকে অসুবিধায় ফেলে।
স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ভারত প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম, উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং আমদানি নিরীক্ষণের মতো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়িত করেছে, কিন্তু আগে আলোচনা করা বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দেখা হয়। ভারতের দেশীয় সংস্থাগুলি, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স ও স্বয়ংচালিত ক্ষেত্র, স্থানীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করতে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর জন্য সরকারকে চাপ দিয়েছে, যার মূলে রয়েছে দেশীয় নির্মাতাদের সস্তা আমদানি থেকে রক্ষা করা এবং স্বনির্ভরতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রসারিত করার আকাঙ্ক্ষা। এই ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সুরক্ষার বাইরেও প্রসারিত। একটি শক্তিশালী শিল্পভিত্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে ভারত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে পারে, এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাড়াতে পারে। যাই হোক, এই ব্যবস্থাগুলিকে এমনভাবে বাস্তবায়িত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে এই অঞ্চলে বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত না হয়।
ভারত-আসিয়ান বাণিজ্য আলোচনা
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আসিয়ান সচিবালয়ে এআইটিআইজিএ জয়েন্ট কমিটির ৫ম সভা ভারত ও আসিয়ান-এর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চিহ্নিত করে, যেখানে সমস্ত আটটি উপ-কমিটি বাজার প্রবেশ, উৎসের নিয়ম, মান, পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা (স্যানিটারি মেজার্স), এবং বাণিজ্য সুবিধার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল। ভারত ও আসিয়ান-এর মধ্যে বাণিজ্য সুবিধার পারস্পরিকতা সম্পর্কিত অমীমাংসিত উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করার জন্য নভেম্বর ২০২৪-এ ভারত এআইটিআইজিএ পর্যালোচনা করার জন্য পরবর্তী আলোচনার আয়োজন করবে৷
প্রাথমিক উদ্বেগের মধ্যে একটি হল ভারত এবং এর এফটিএ অংশীদারদের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা। এই ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা করার জন্য ভারত তার পণ্যগুলির ক্ষেত্রে বাজারে বৃহত্তর প্রবেশাধিকার চায়, বিশেষ করে স্বয়ংচালিত ও কৃষি ক্ষেত্রে। উদাহরণ স্বরূপ, ভারতের লক্ষ্য আসিয়ান দেশগুলিতে অটোমোবাইল ও কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো, যা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তার কৌশলগত অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শুল্কবহির্ভূত বাধা হ্রাস করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুল্কবহির্ভূত বাধা, যেমন কঠোর শুল্ক পদ্ধতি এবং নিয়ন্ত্রক বাধা, মসৃণ বাণিজ্য প্রবাহকে বাধা দেয় এবং ব্যবসার খরচ বাড়ায়। এই পদ্ধতিগুলি সরল করা গেলে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা হলে, তা ভারত এবং এর এফটিএ অংশীদারদের মধ্যে বাণিজ্যকে সহজতর করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, কৃষি রপ্তানির জন্য শুল্ক পদ্ধতিকে সুবিন্যস্ত করা ভারতীয় কৃষকদের আসিয়ান দেশগুলিতে নতুন বাজার খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।
আসিয়ান ব্লক ইতিমধ্যেই ভারতের শুল্ক (বাণিজ্য চুক্তির অধীনে মূল নিয়মের প্রশাসন) বিধিমালা, ২০২০ (ক্যারোটার ২০২০) সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা তারা বিশ্বাস করে যে তাদের রপ্তানিতে বাধা তৈরি করেছে। ভারতীয় আলোচকেরাও রাসায়নিক, ধাতু, টেক্সটাইল ও রত্ন সহ বিভিন্ন খাতে শুল্ক কমানো, এবং আসিয়ান দ্বারা আরোপিত অ-শুল্ক বাধাগুলি — যেমন কঠোর খাদ্য শংসাপত্রের প্রয়োজনীয়তা — লাঘব করার উপর জোর দেন। এই আলোচনার ফলাফল ভারত-আসিয়ান বাণিজ্য গতিশীলতার পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সংবেদনশীল এবং বর্জনীয় তালিকা সংশোধন করার জন্য ন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্বল দেশীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করাও আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। এই সংশোধন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে দেশীয় নির্মাতাদের স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। সামঞ্জস্যপূর্ণ ও স্বচ্ছ বাণিজ্যনীতি প্রতিষ্ঠাসহ বাণিজ্য অনুশীলনের স্বচ্ছতা ও পূর্বাভাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করা আরও শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য ।
অবশেষে, এআইএফটিএ ও সিইসিএ-এর মতো ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আসিয়ান-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের লক্ষ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং এই অঞ্চলে তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবকে দৃঢ় করা। আঞ্চলিক একীকরণের সঙ্গে সুরক্ষাবাদের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা তার বিস্তৃত অর্থনৈতিক কৌশলকে প্রতিফলিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ভারত তার বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করে বিশ্ব অর্থনীতিতে একীভূত করার চেষ্টা করে, সেই সময় "আত্মনির্ভর ভারত" উদ্যোগটি স্বনির্ভরতা ও দেশীয় উৎপাদনের উপর জোর দেয়। এই কৌশলটি নিশ্চিত করতে পারে যে ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতাক্ষম থাকবে।
সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
তানিশা পল অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.