Author : Arya Roy Bardhan

Published on Jan 24, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমের ঘাটতিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বাজার-প্রস্তুত দক্ষতা সহ একটি বিশ্বব্যাপী কর্মশক্তি বিকাশের নীতিগুলি সময়ের প্রয়োজন।

বিশ্বপণ্য হিসেবে ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ

ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ, যা বর্তমান দশকে প্রতি বছর ৯.৭ মিলিয়ন সম্ভাব্য কর্মী যোগ করে, এর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক কাঠামো, আয় বণ্টন এবং  বিস্তৃতভাবে এর ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করবে। যা মূলত উপেক্ষিত হয়েছে তা হল, তার জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে বিশ্বব্যাপী শ্রম বাজারকে প্রভাবিত করবে। লভ্যাংশের পরিধির পরিপ্রেক্ষিতে, এর বৈশ্বিক উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ধরনগুলিকে নির্দেশ করার ক্ষেত্রে এর সহযোগী ক্ষমতা নীতি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

চিত্র ১: ভারতে প্রক্ষিপ্ত জনসংখ্যা কাঠামো
Figure
 India S Demographic Dividend As A Global Public Good
সূত্র: 
ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভে

এই সমস্যাটি সমাধানের দিকে প্রথম ধাপে শ্রমকে একটি বৈশ্বিক সাধারণ (গ্লোবাল কমন)‌ হিসাবে বিবেচনা করা হবে—একটি সম্পদ যা সার্বজনীনভাবে ভাগ করা হয় এবং কোনও নির্দিষ্ট দেশের মালিকানাধীন নয়। একটি তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সাধারণ পণ্যগুলি পরিহারযোগ্য নয় (‌নন-‌এক্সক্লুডেবল)‌ এবং সেগুলি প্রতিদ্বন্দ্বী, অর্থাৎ, সকলের দ্বারা সেগুলি  ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সেগুলি সীমিত। সাধারণত, দূর মহাসাগর, বায়ুমণ্ডল, মহাকাশ এবং অন্যান্য কমন-পুলের সংস্থানগুলিকে বিশ্বব্যাপী সাধারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম গতিশীলতার সীমাবদ্ধতা কমানো গেলে তা শ্রমকেও একটি বিশ্বব্যাপী সাধারণ করে তুলবে। যাই হোক, এটি দুটি বিস্তৃত কারণে গণপণ্যের থেকে আলাদা: প্রথমত, এটি বিশ্বব্যাপী নয়, এবং এইভাবে, গতিশীলতার উপর আইনি প্রতিবন্ধকতার কারণে সীমিত সরবরাহে রয়েছে; দ্বিতীয়ত, এর একটি বাজার-নির্ধারিত মূল্য রয়েছে।

বৈশ্বিক সাধারণ থেকে বৈশ্বিক গণপণ্যের দিকে শ্রমের স্থানান্তর সহজতর করে ভারতীয় জনসংখ্যাগত প্রসার বৈশ্বিক শ্রমের ঘাটতির সমস্যার প্রতিকার করতে পারে। অর্থনীতিবিদদের আদর্শ মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় যদি শ্রমকে নিখুঁত আন্তর্জাতিক গতিশীলতার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী শ্রম সরবরাহে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটবে। কম মজুরির অর্থোডক্স নিওক্লাসিক্যাল ফলাফল সত্ত্বেও, এটি উৎপাদনশীলতা এবং সমৃদ্ধিতে বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি ঘটাবে। আন্তর্জাতিক দক্ষতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কাঠামোর সঙ্গে শ্রম-ঘাটতিসম্পন্ন অর্থনীতিতে শ্রমের প্রবাহ উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, এবং তার ফলে জাতীয় আয় ও সার্বিক কল্যাণ বাড়বে। কল্যাণের পরিবর্ধন হল অভিবাসনের দ্বারা সৃষ্ট ইতিবাচক বাহ্যিকতা, যা শ্রমকে বিশ্বব্যাপী গণপণ্যে পরিণত করে।


আন্তর্জাতিক দক্ষতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কাঠামোর সঙ্গে শ্রম-ঘাটতিসম্পন্ন অর্থনীতিতে শ্রমের প্রবাহ উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, এবং তার ফলে জাতীয় আয় ও সার্বিক কল্যাণ বাড়বে।



বেকারত্ব ও বিশ্বব্যাপী শ্রমের ঘাটতি অসঙ্গতিপূর্ণ, এমনকি বৈপরীত্যপূর্ণ। এটা শুধু সংখ্যার খেলা নয়; গুণগত গুণাবলি শ্রম বাজারে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া ২০২৩ সালে যথাক্রমে
 ১ মিলিয়ন ও ৪০০,০০০ চাকরি পূরণ করার জন্য লোক খুঁজছিল, যেখানে তাদের বেকারত্বের হার ছিল ৫.৯ এবং ৪.১ শতাংশ। একইসঙ্গে শূন্যপদ ও বেকারত্বের এই ঘটনাটি দক্ষতা বা প্রতিভার অমিলের আকারে শ্রমবাজারের অসামঞ্জস্যতা থেকে উদ্ভূত হয়। কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার ক্রমহ্রাসমান অংশ এবং পরিপক্ব বাজারে নিষ্ক্রিয়তার মতো অন্যান্য চালকও পর্দার পিছনে সক্রিয় ছিল। উৎপাদন, লজিস্টিক ও স্বাস্থ্যসেবার মতো শিল্পগুলি এই অভাবের একটি অসম মূল্য বহন করে।

যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বার্ধক্য জনসংখ্যার সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্মশক্তি হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে, ভারতে ২০৩০ সালে
১.০৪ বিলিয়ন কর্মক্ষম বয়সের ব্যক্তি থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতে নির্ভরতার হার (‌কর্মক্ষম মানুষের সঙ্গে তাদের উপর নির্ভরশীল মানুষের অনুপাত)‌ হ্রাস পাচ্ছে, এবং তা ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশিত৷ এমনকী ২০৩০-‌এর পরেও আরও এক দশকের জন্য প্রতি বছর ৪.২ মিলিয়ন  শ্রমিক যুক্ত হতে থাকবেন। যদিও এই সময়ের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতি যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে চলেছে, তবে শ্রমশক্তির এই পরিমাণটি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহার করা হলে শ্রম উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেতে বাধ্য। শ্রমশক্তিকে বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তিযোগ্য করে তোলা হলে তা এই গতিশীলতার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেবে, এবং ভারত ও বিদেশ উভয় ক্ষেত্রেই অধিকতর উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করবে।

১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতের বৃদ্ধি ঘটেছে প্রধানত পরিষেবা ক্ষেত্রের নেতৃত্বে, যা একটি উচ্চ-দক্ষ কর্মীবাহিনীর কথা তুলে ধরে৷ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পরিষেবা এবং সফ্টওয়্যার পরিষেবা রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ভারত বিশ্বের পরিষেবাগুলির প্রায়
৪.৬ শতাংশ রপ্তানি করে৷ এটি দক্ষ-শ্রমে ভারতের তুলনামূলক সুবিধা দেখায় এবং শ্রমবাজারের অদক্ষতার গুণগত দিকটি মোকাবিলার একটি সুযোগকে চিত্রিত করে। জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে কর্মীদের সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ভারতের সম্ভাবনা যে প্রচুর  তা স্পষ্ট, যা গ্লোবাল নর্থের দক্ষ কর্মী না-‌পাওয়ার সমস্যাটিরও উপশম করতে পারে। সর্বাধিক সংখ্যক স্টেম স্নাতক-সহ, ভারত মাঝারি থেকে উচ্চ-দক্ষ কর্মী সরবরাহ করতে পারে, যারা উদীয়মান অর্থনীতিতে সরবরাহ-চাহিদা্র ব্যবধান কমাতে পারে।


শ্রমশক্তিকে বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তিযোগ্য করে তোলা হলে তা এই গতিশীলতার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেবে, এবং ভারত ও বিদেশ উভয় ক্ষেত্রেই অধিকতর উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করবে।

 

ভারত, তার সীমানার মধ্যে, দক্ষ কর্মী না-‌পাওয়ার একটি অভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়, যেখানে কর্মীদের চাহিদা-মাফিক দক্ষতার অভাব রয়েছে। এই সমস্যাটি সমস্ত দক্ষতা বিভাগ জুড়ে বিরাজ করে, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন করে, এবং আরও বাজার-প্রাসঙ্গিক কর্মীদের প্রস্তুত করার জন্য পাঠ্যক্রমের সংশোধনের দিকটি তুলে ধরে। যদিও একে অত্যধিক বাজার-ভিত্তিক হিসাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে, অর্থাৎ, ব্যবসার প্রয়োজন অনুসারে শ্রমিকদের ছাঁচনির্মাণ করা, এটি একেবারে তার বিপরীত। এটি শ্রমিকদের কাছে থাকা মানব পুঁজিকে বৃদ্ধি করবে এবং তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। দক্ষতার বিভাজন হ্রাস করার লক্ষ্যে নীতির সঙ্গে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও মানব পুঁজি গঠন একটি জৈব পদ্ধতিতে সংঘটিত হতে পারে, যা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রদান করবে। এগুলির বেশিরভাগই একটি খণ্ডিত বাজারে অনুপস্থিত।

এই তথ্য এবং পরিসংখ্যানের আলোকে এ কথা স্পষ্ট যে এটি একটি জিরো সাম গেম (‌যেখানে একপক্ষের লাভের সমপরিমাণ ক্ষতি হয় অন্য পক্ষের)‌ নয়। ভারত বৈশ্বিক কর্মীবাহিনী তৈরি করে, বিশ্বে শ্রমিক সরবরাহ করে, এবং বিশ্বব্যাপী উৎপাদনশীলতা পুনরুদ্ধার করে। ভারত জীবিকা সুরক্ষিত করে এবং তার নাগরিকদের জন্য ব্যক্তিগত সক্ষমতা বাড়ায়, আন্তর্জাতিক আয়ের একটি প্রধান উৎস হিসাবে রেমিট্যান্স পায়, এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতাকে আদর্শ স্তরে নিয়ে যায়। লোভনীয় ইতিবাচক দিকগুলি অবশ্য নীতিগত ব্যবধানের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। সুযোগের জানালা প্রতি মিনিটে সংকুচিত হচ্ছে। এই সময়ের প্রয়োজন হল এমন নীতি যা বাজার-প্রস্তুত দক্ষতা এবং উচ্চ মানব পুঁজির স্তরসম্পন্ন একটি বৈশ্বিক কর্মিবাহিনী গড়ে তোলে৷ যে কোনও গণপণ্যের ক্ষেত্রে যা সত্য, তেমনই এ ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক শ্রমের গতিশীলতাকে সহজতর করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।  তা করা না-‌হলে বাকিটা শুধুই বাগাড়ম্বর।



আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসির একজন গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.