-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
তাপপ্রবাহ যখন শ্রেণিকক্ষকে উত্তপ্ত করে রাখে, বন্যায় যখন অবকাঠামো ভেসে যায় এবং ধোঁয়াশা যখন আমাদের শহরগুলির শ্বাসরোধ করে, তখন জলবায়ু পরিবর্তন আর ভবিষ্যতের জন্য হুমকি নয়, বরং শিক্ষার ক্ষেত্রে ঘন ঘন ব্যাঘাত ঘটানোর নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠছে।
এপ্রিল মাস পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওড়িশা, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট-সহ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য স্কুলের পঠনপাঠনের সময়কাল ভোরে স্থানান্তরিত করেছে। ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি শিশুদের অতিরিক্ত তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়কাল এগিয়ে এনে তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুল বন্ধের পাশাপাশি জলবায়ু সঙ্কট বিভিন্ন ভাবে শিক্ষাকে ব্যাহত করে এবং এর অন্যতম হল দূষণজনিত অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিতি, বন্যাজনিত অবকাঠামোগত ক্ষতি এবং তাপের কারণে জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা হ্রাস। এর পাশাপাশিই এই কারণগুলি নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতার জন্য একটি বিপর্যস্ত পরিবেশ তৈরি করে, যার সবচেয়ে ভারী বোঝা গিয়ে পড়ে অরক্ষিত শিশুদের উপর।
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা এবং শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট
ইউনিসেফের অনুমান, ২০২৪ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা কমপক্ষে ২৪২ মিলিয়ন শিশুর স্কুলের পড়াশোনার উপর প্রভাব ফেলেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই সঙ্কট আরও ভয়াবহ, যেখানে ১২৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভারতে ৫৪.৮ মিলিয়ন শিশু কেবল তাপপ্রবাহের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভারত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এভং ইউনিসেফের শিশু জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে (ইউনিসেফ চিলড্রেন ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) ১৬৩টি দেশের মধ্যে ২৬তম স্থানে রয়েছে।
ভারত ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের দরুন এত ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই তাপপ্রবাহ, বন্যা ও বায়ু দূষণের মতো চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাপ্রবাহের মাত্রা ও তীব্রতা শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে এবং শিক্ষাগত বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বিশেষ করে শীতকালে তীব্র ধোঁয়াশা ও বায়ু দূষণ হয়, যার ফলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে স্কুল বন্ধ থাকে।
তাপপ্রবাহের প্রভাবে গত বছরও উত্তর প্রদেশ ও ছত্তিশগড়-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য গ্রীষ্মকালীন ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিল। অন্য দিকে, দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বিশেষ করে শীতকালে তীব্র ধোঁয়াশা ও বায়ু দূষণ হয়, যার ফলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে স্কুল বন্ধ থাকে। মেঘালয় ও অসমের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির পাশাপাশি কর্নাটকের মতো দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে বন্যার কারণে প্রায়শই স্কুল বন্ধ থাকে। প্রতি বছর ভারতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের সংখ্যা ও সেগুলি পুনরায় চালু করতে কত সময় লাগে তার জাতীয় পরিসংখ্যান সহজলভ্য না হলেও, রাজ্য স্তরের বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে এ কথা স্পষ্ট যে, বন্যার কারণে শিক্ষাগত অবকাঠামোর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের কর্নাটকের বন্যায় ৬,৯৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সম্প্রদায়ভিত্তিক গবেষণায় শিশুদের উপর এই জলবায়ু পরিবর্তনের স্থায়ী প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, বন্যার পরেও শিশুরা বই, ইউনিফর্ম, সার্টিফিকেট হারিয়ে যাওয়ার কারণে এবং পারিবারিক আয়ের ক্ষতিপূরণে সহায়তা করার প্রয়োজনীয়তা থাকার দরুন আর স্কুলে ফিরে যেতে পারেনি।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, ২০২৪ সালে একটি ১০ বছর বয়সি শিশু তার জীবদ্দশায় ১৯৭০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি জলবায়ু-সৃষ্ট দুর্যোগের মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যদি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তবে দ্বিগুণ দাবানল এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়, তিনগুণ নদীর বন্যা, চারগুণ ফসল ফলনের অভাব এবং পাঁচগুণ খরার সম্মুখীন হবে।
দৈনন্দিন শিক্ষার ব্যাঘাত ও বৈষম্য বৃদ্ধি
তাৎক্ষণিক ব্যাঘাতের বাইরেও জলবায়ু পরিবর্তন শিক্ষাগত ফলাফলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, বন্যার দিনগুলিতে বন্যা-কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াতের জন্য অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হয়, যার ফলে অনুপস্থিতির হার অনেক বেড়ে যায়। বন্যার সময় জলবাহিত রোগও শিক্ষার ক্ষতিতে অবদান রাখে (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)।

সূত্র - ডিজিটাল সাধনীর সাহায্যে লেখক দ্বারা নির্মিত।
গরমের দিন ও বায়ুর খারাপ গুণমানের দিনগুলিতে শিশুদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, জ্ঞান ও শিক্ষাগত কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ভারত, ব্রাজিল এবং চিনের মতো একাধিক দেশের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, হায়ার পার্টিকুলেট ম্যাটার বা উচ্চতর কণা পদার্থ (পিএম ২.৫) এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের (এনওটু) মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক অনুমান করেছে যে, ব্রাজিলের উষ্ণতম ১০ শতাংশ পৌরসভায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের বার্ষিক প্রায় ১ শতাংশ শুধুমাত্র তাপের সংস্পর্শে আসার কারণে শিক্ষাগ্রহণ থেকে বিচ্যুত হয়। ভারতে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, বায়ু দূষণ জ্ঞানগত দক্ষতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং পড়ার ও গণিতের ফলাফলের স্তর হ্রাস পায়।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুরা অর্থাৎ মেয়েরা, প্রতিবন্ধী শিশুরা, প্রান্তিক আর্থ-সামাজিক পরিবারের সদস্যরা অথবা গ্রামীণ, প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা শহুরে বস্তিতে বসবাসকারী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। শিক্ষার ক্ষতির পাশাপাশি স্কুলের মিড-ডে মিলের মতো অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যাঘাতের কারণেও তারা অরক্ষিত। নানাবিধ প্রমাণ দর্শিয়েছে যে, স্কুলের খাদ্য কর্মসূচিগুলি শিক্ষাগত কৃতিত্বে (যেমন গণিত বা পড়ার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল) অবদান রাখে, যদি শিশুরা দীর্ঘ সময় ধরে এই কর্মসূচিগুলি গ্রহণ করতে পারে।
শিক্ষাক্ষেত্রে জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার জন্য পাঁচটি সমাধান
শিক্ষার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বহুমুখী হলেও জলবায়ু নীতি নির্ধারণ মূলত এটিকে উপেক্ষা করে। ২০০৮ সালে প্রবর্তিত ভারতের জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন কর্ম পরিকল্পনা (এনএপিসিসি) শিক্ষাকে মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে না। একই ভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি) ২০২০ পরিবেশগত শিক্ষাকে উৎসাহ জোগালেও এটি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ জলবায়ু ঝুঁকিগুলির পর্যাপ্ত ভাবে মোকাবিলা করে না। রাজ্য পর্যায়ে প্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত সাময়িক হয়। যেমন দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা তৈরির জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ করার বদলে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো বা চরম আবহাওয়ার ঘটনার পরে অনলাইনে ক্লাস স্থানান্তর করা।
জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি) ২০২০ পরিবেশগত শিক্ষাকে উৎসাহ জোগালেও এটি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ জলবায়ু ঝুঁকিগুলির পর্যাপ্ত ভাবে মোকাবিলা করে না।
জলবায়ু বিপর্যয় থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে পাঁচটি স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, জলবায়ু সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহ কী ভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে শিক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করে, সে সম্পর্কে সরকারকে পদ্ধতিগত ভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হবে। এর পাশাপাশি এ কথাও সরকারকে স্বীকার করতে হবে যে, এই প্রভাবের বেশির ভাগই এখনও গবেষণার অধীন এবং অঞ্চল অনুসারে পরিবর্তিত হয়। এই প্রমাণ ভিত্তি আরও তথ্যবহুল এবং স্থানীয় ভাবে উপযুক্ত নীতিগুলিকে সমর্থন করবে। দ্বিতীয়ত, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ - যেমন দুর্যোগ-প্রতিরোধী স্কুল ভবন, সৌরশক্তিচালিত সুবিধা এবং সঠিক বায়ুচলাচল – যে কোনও সমস্যা প্রতিহত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, জলবায়ু সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার সময় অভিযোজিত অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার, সংশোধিত স্কুল সময়সূচি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন ও রেডিয়ো প্রোগ্রাম এবং আশপাশের শিক্ষা কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে মিশ্র শিক্ষা পদ্ধতিতে শেখার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা জরুরি। চতুর্থত, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও স্থিতিস্থাপকতা তৈরির জন্য পাঠ্যক্রমের মধ্যে জলবায়ু সংক্রান্ত শিক্ষাকে সমন্বিত করা দরকার। এর জন্য জলবায়ু কর্মকাণ্ড ও স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলির সংস্কার জরুরি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের (এনসিইআরটি) সঙ্গে অংশীদারিত্বে ভারতে ইউনিসেফের প্রকল্পের কথা। পরিশেষে, স্থিতিশীল ও উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য বর্ধিত তহবিল ও বহু-ক্ষেত্রগত অংশীদারিত্ব - সরকার, এনজিও ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে মিলে - অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ১৮ বছরের কম বয়সি এবং উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার দরুন পদক্ষেপ করার তাগিদ স্পষ্ট। সরকার সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ না করলে লক্ষ লক্ষ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হবে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অতএব, শিক্ষাকে জলবায়ু নীতির একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হয়ে উঠতে হবে।
অর্পণ তুলসিয়ান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Arpan Tulsyan is a Senior Fellow at ORF’s Centre for New Economic Diplomacy (CNED). With 16 years of experience in development research and policy advocacy, Arpan ...
Read More +