Author : Hari Bansh Jha

Published on Jun 30, 2023 Updated 0 Hours ago

জলবিদ্যুৎ ও শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করায় নেপালের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক কূটনীতি এখন উভয়ের জন্য একটি লাভজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মনে হচ্ছে

নেপালে চিনকে পিছনে ফেলেছে ভারত

উন্মুক্ত সীমান্ত ব্যবস্থা এবং নেপাল ও ভারতের মধ্যে মানুষের ঘনিষ্ঠ সংযোগ তাদের সম্পর্ককে অনেক বছর ধরে প্রাণবন্ত ও গতিশীল করে রেখেছে। তাই যখনই নেপাল কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হয় তখন প্রথমেই ভারতের কাছে যায়, আবার ভারতও প্রথমে নেপালের কাছে যায়। নেপালে ২০১৫ সালের মারাত্মক ভূমিকম্পের সময়ও এই একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন ভারত ছয় ঘণ্টার মধ্যে কাঠমান্ডুতে ত্রাণ সামগ্রী ও  উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২০–২১ সালে কোভিড–১৯ সময়কালে অবশ্য দেশদুটির মধ্যে সীমান্ত বন্ধ ছিল। তবুও এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে মাঝেমধ্যে বিরক্তির কারণগুলি, বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বা সরকারের সঙ্গে সরকার পর্যায়ে, কিছু সময়ের মধ্যেই বাষ্প হয়ে উবে যায়।

অন্যদিকে, হিমালয় এখনও তার উত্তরের প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে নেপালের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে রয়েছে। ২০১৫ সালে নেপালের মারাত্মক ভূমিকম্পের পর ব্যাপক ক্ষতির কারণে চিনকে নেপালের সঙ্গে তাতোপানি–ঝাংমু স্থলসীমান্ত বন্ধ করতে হয়েছিল। এমনকি রাসুওয়াগড়ি–কেরুং সীমান্তও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ২০২০–২১ সালে কোভিড–১৯–এর প্রাদুর্ভাবের পর যখন নেপালের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক ফ্রন্টে চিনের সমর্থনের প্রয়োজন ছিল, তখন তাতোপানি–ঝাংমু রুটটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, আর রাসুওয়াগাড়ি–কেরুং রুটটি শুধু চিনের সুবিধার জন্য মাঝে মাঝে খোলা হয়েছিল। ফলে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যে নিয়োজিত বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এখন চিনা কর্তৃপক্ষের প্রতি বিরক্ত, এবং তাঁরা প্রায়শই চিনকে নেপালের উপর অঘোষিত বাণিজ্য অবরোধ আরোপ   করার দায়ে অভিযুক্ত করেন।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি হতে শুরু করে ২০২২ সালের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পর প্রাক্তন মাওবাদী গেরিলা নেতা পুষ্প কমল দহল নেপালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে।

এর মধ্যে কিছু ঘটনা নেপালের দক্ষিণ ও উত্তর প্রতিবেশী উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক নেপালের বাম সরকারের সময় ধাক্কা খেয়েছিল, বিশেষ করে যখন কে পি শর্মা ওলি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ১৩ মে ২০২১ পর্যন্ত দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দেউবা ১৩ জুলাই ২০২১–এ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই তা আবার স্বাভাবিক পথটিতে ফিরে আসে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি হতে শুরু করে ২০২২ সালের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পর ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২–এ  প্রাক্তন মাওবাদী গেরিলা নেতা পুষ্প কমল দহল নেপালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে।

ভারত তার সাতলুজ জলবিদ্যুৎ নিগমের (এসজেভিএন) মাধ্যমে নেপালে ৯০০ মেগাওয়াট অরুণ-৩ প্রকল্প তৈরি করছে। এর পাশাপাশি এসজেভিএন ও নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ২০২২ সালের মে মাসে ৬৭৯ মেগাওয়াট অরুণ–৪ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে। আরেকটি ভারতীয় কর্পোরেট জিএমআর গ্রুপকে ৯০০ মেগাওয়াট আপার কর্নালি প্রকল্প নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এসজেভিএন এখন ৪৫০ মেগাওয়াট শ্বেতী নদী ৬ প্রকল্পটিরও দায়িত্ব পেয়েছে। ইতিমধ্যে যেটি আগে চিনের থ্রি গর্জেস কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল সেই ৭৫০ মেগাওয়াট পশ্চিম শ্বেতী প্রকল্পের দায়িত্বও এখন ভারতের এনএইচপিসি লিমিটেডকে  দেওয়া হয়েছে। ধলকেবর–মজফফরপুর ট্রান্সমিশন লাইন সহ কয়েকটি আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন লাইনের কাজও চলছে।

এটা প্রত্যাশিতই ছিল যে মে–জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের নয়াদিল্লি সফরের সময় কিছু উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তার মধ্যে অবশ্য ভারতের আর্থিক সহায়তায় ৩.‌১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রক্সাউল–কাঠমান্ডু রেলপথ নির্মাণের চুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলেও মনে করা হয়েছিল। এর বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) ইতিমধ্যেই ভারতীয় পরামর্শদাতা কোঙ্কন রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেআরসিএল) তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্প সমাপ্ত হলে ভারতের সীমান্ত শহর রক্সাউল নেপালের বেশিরভাগ পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়ে রাজধানী কাঠমান্ডুর সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ভারত ইতিমধ্যেই তার সীমান্ত শহর জয়নগরকে জনকপুরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, যা এখন নেপালের হিমালয়ের পাদদেশের কাছাকাছি বারদিবাস পর্যন্ত প্রসারিত হচ্ছে।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে নেপালের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আগামী ২৫ বছর ভারত যাতে কিনে নেয় তার জন্যও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে নেপাল আগ্রহী ছিল।

প্রধানমন্ত্রী দহলের ভারত সফরের সময় নেপাল ও ভারত ৪৮০ মেগাওয়াট ফুকোট–কর্ণালী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৬৬৯ মেগাওয়াট নিম্ন অরুণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছিল, এবং তা স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সময়ে ভারত নেপালকে ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়ে বাংলাদেশে তার উদ্বৃত্ত জলবিদ্যুৎ রপ্তানির অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে নেপালের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আগামী ২৫ বছর ভারত যাতে কিনে নেয় তার জন্যও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে নেপাল আগ্রহী ছিল।

নেপালে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব খর্ব করা
নেপালের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বাড়ানো ছাড়াও ভারত নীরবে অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে নেপালে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব খর্ব করার চেষ্টা করছে। এ দিকে চিনের বিনিয়োগে তৈরি নেপালের কোনও প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ না–কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এই সিদ্ধান্ত নেপালের সেই সব চিনা সংস্থাগুলির জন্য একটি গুরুতর ধাক্কা হিসাবে এসেছে যারা সে দেশের বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে জড়িত। এখন চিনা সংস্থাগুলি মনে করছে জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নেপালে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ নয়।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত ঠিক করেছে নেপালের সেই সব প্রকল্পে বিস্ফোরক সরবরাহ করা হবে না যেখানে চিনা সংস্থাগুলো ডেভেলপার বা ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। এই সিদ্ধান্তও চিনাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। নেপালে কাজ করা চিনা সংস্থাগুলির উপর ফাঁস আরও শক্ত করার জন্য ভারত নেপালের কাছ থেকে শেষ–ব্যবহারকারী সংক্রান্ত শংসাপত্র চেয়েছে। এই শংসাপত্র পাওয়ার জন্য ক্রেতাকেই বিস্ফোরক সামগ্রীর চূড়ান্ত প্রাপক হতে হবে। এমন একটি শর্তও আছে যে ক্রেতা কোনও অবস্থাতেই এই ধরনের বিস্ফোরক অন্যদের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না।

অনেক ভারতীয় সংস্থা নেপালে মেগা–জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরিতে আগ্রহী হয়েছে, অন্যদিকে চিন নেপালে কাজ করার ক্ষেত্রে বেশ ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে।

ভারত সরবরাহ করতে অস্বীকার করার পর নেপাল প্রথম বারের মতো চিন থেকে বাণিজ্যিক বিস্ফোরক আমদানি করে। যেখানে চিনারা কোনও না কোনওভাবে যুক্ত ছিল সেই হংশি শিভান সিমেন্ট ফ্যাক্টরি (নওয়ালপরাসি) ও সেনজেন খোলা হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্ট (রাসুওয়া) চিন থেকে বিস্ফোরক পেয়েছিল। কিন্তু চিন থেকে আমদানি করা বিস্ফোরক দিয়ে নেপালের বিভিন্ন প্রকল্পের বিস্ফোরকের প্রয়োজন পূরণ হয় না। কাঠমান্ডু–নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প, ১৪০ মেগাওয়াট তানাহু হাইড্রোপাওয়ার কোম্পানি, ও হুয়াক্সিন সিমেন্ট নারায়ণী প্রাইভেট লিমিটেড–সহ চিনা সংস্থা নেপালের এই ধরনের যে সব প্রকল্পে যুক্ত সেগুলি এখনও বিস্ফোরকের তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এটা ভালভাবে উপলব্ধি করা যায় যে বিস্ফোরক আমদানির ক্ষেত্রে চিন ভারতের বিকল্প নয়, কারণ চিন থেকে এই জাতীয় উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে নিয়মকানুন সবচেয়ে জটিল। নির্মাণ প্রকল্পের চাহিদা মেটাতে নেপালের প্রতি বছর প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ টন বিস্ফোরক প্রয়োজন। অন্তত অদূর ভবিষ্যতে চিনের এই চাহিদা পূরণ করার কোনও সম্ভাবনা নেই।

নেপালের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক কূটনীতি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভাল কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে; এবং তা নেপাল ও ভারত উভয়ের জন্যই লাভজলক পরিস্থিতি তৈরি করছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে অনেক ভারতীয় সংস্থা নেপালে মেগা–জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরিতে আগ্রহী হয়েছে;‌ অন্যদিকে চিন নেপালে কাজ করার ক্ষেত্রে বেশ ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে। নেপাল এই মুহূর্তে মাত্র ২,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যদিও দেশটির ৫০,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২২ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নেপাল ভারতে ১১ বিলিয়ন নেপালি রুপি মূল্যের বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছিল, যা আগামী বছরগুলিতে নেপালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবিদ্যুৎ ও সংযোগ ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভারত–নেপাল সহযোগিতা নেপালকে শুধুমাত্র রাজস্ব বাড়াতে এবং ব্যাপক পরিসরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেই সাহায্য করবে না, সেইসঙ্গেই তা ভারতের সঙ্গে নেপালের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতিকেও কমিয়ে আনবে।


হরি বংশ ঝা ওআরএফ–এর একজন ভিজিটিং ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.