সুসংবাদটি হল এই যে, নানা দুঃসাহসিকতা এবং ধ্বংসাত্মক মনোভাব পোষণ করা সত্ত্বেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকরা মূলত যুক্তিবাদীই থেকেছেন এবং উগ্রপন্থাকে প্রশ্রয় দেননি। আর দুঃসংবাদটি হল এই যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাগাড়ম্বর এবং অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদর্শনের অভ্যাস বেশির ভাগ পাকিস্তানির মনেই দেশের সামরিক শক্তি সম্পর্কে অতিরঞ্জিত চিত্র তুলে ধরে। তাঁরা এটা মেনে নিতে অক্ষম, যে সেনার কাছে তাঁরা নতজানু হন, সেই সেনাবাহিনী মোটেও সেই সর্বজয়ী, অজেয় শক্তি নয়, যেমনটা তারা জনগণকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করে। একটি সাম্প্রতিক টিভি সাক্ষাত্কারে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর ২০২১ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া দু’ডজনেরও বেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের নিয়ে যে বৈঠক করেন, তার কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য প্রকাশ করেছেন।
মীরের মতে, জেনারেল বাজওয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো অবস্থানে নেই এবং তাই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর যুদ্ধবিরতি অবস্থা পুনর্বহাল করার আগে বা পরে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। মীর দাবি করেছেন যে, বাজওয়া পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে একই সুরে কথা বলে্ন। আধ ডজন অবসরপ্রাপ্ত বিদেশ সচিব – যাঁরা এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন – তাঁরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যে কোনও পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেন। স্পষ্টতই, এই অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা এখনও অতীতেই বসবাস করছেন এবং নতুন বাস্তবতা, হুমকি, বাধ্যবাধকতা এবং ভূ-কৌশলগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না, যা পাকিস্তানকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে।
আধ ডজন অবসরপ্রাপ্ত বিদেশ সচিব – যাঁরা এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন – তাঁরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যে কোনও পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেন।
যদি মীরের কথা বিশ্বাস করা হয়, তা হলে জেনারেল বাজওয়া ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে সাংবিধানিক সংস্কার শুরু করার ভারতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন। মীর দাবি করেছেন যে, বাজওয়া পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের (পিওজেকে) তৎকালীন ‘প্রধানমন্ত্রী’ ফারুক হায়দারকে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত করেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের স্পেশ্যাল স্টেটাস বা বিশেষ মর্যাদার অবসান ঘটানো থেকে ভারতকে বিরত রাখার জন্য হায়দার অবিলম্বে সামরিক পদক্ষেপের দাবি জানালে বাজওয়া তাঁকে বলেছিলেন যে, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো কোনও অবস্থাতেই নেই। জম্মু ও কাশ্মীরে সাংবিধানিক সংস্কারের পরে ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স দ্বারা জারি করা বিবৃতিটিও এ কথা স্পষ্ট করে দেয় যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব না-দিতে এবং সামরিক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর বাধ্যবাধকতার ফাঁদ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু মীর – যিনি কাশ্মীরে জিহাদের পতাকাবাহী ছিলেন – বাজওয়ার বিরুদ্ধে কাশ্মীর বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। গোপন আঁতাতে সম্পন্ন এই চুক্তিতে কাশ্মীর সমস্যাকে আগামী ২০ বছরের জন্য ‘স্তব্ধ করে দেওয়া’র কথা আলোচিত হয়। এটি মোটেও কোনও নতুন তথ্য ছিল না। পাকিস্তানি সাংবাদিক জাভেদ চৌধুরী জানুয়ারি মাসে বাজওয়ার সঙ্গে কথোপকথনের পরেই এ কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন এবং এটি যে একটি নতুন ভাবনা তা-ও নয়। কারণ কাশ্মীর সমস্যাকে ঠান্ডাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া শান্তি প্রক্রিয়ারই একটি অংশ, যেমনটা এর আগে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে আলোচিত হয়েছিল।
যা সত্যিই মীরকে ক্ষুব্ধ করেছে বলে মনে করা হয় তা হল, পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সামনে বাজওয়ার স্বীকারোক্তি যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম ও সম্পদ সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান এবং ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ ও প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাহীনতা। মনে করা হচ্ছে, বাজওয়া বলেছিলেন যে, সশস্ত্র বাহিনী জ্বালানি, সরঞ্জাম এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাবের সম্মুখীন হয়েছে। ট্যাঙ্কগুলির অবস্থাও খুব একটা ভাল নয় এবং যুদ্ধবিমানও তথৈবচ। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নাসিম জেহরা চেয়েছিলেন যে, এই ধরনের মন্তব্যের জন্য বাজওয়ার কোর্ট মার্শাল হোক। তিনি এবং মীর দু’জনেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধের ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন। তাঁরা উভয়েই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পর্কে বাজওয়ার মূল্যায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বালাকোট বিমান হামলায় পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
জম্মু ও কাশ্মীরে সাংবিধানিক সংস্কারের পরে ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স দ্বারা জারি করা বিবৃতিটিও এ কথা স্পষ্ট করে দেয় যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব না-দিতে এবং সামরিক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর বাধ্যবাধকতার ফাঁদ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল।
বাজওয়া পাকিস্তানি সাংবাদিকদের, পরবর্তী সময়ে কূটনীতিকদের এবং পিওজেকে ‘প্রধানমন্ত্রী’কে যা বলেছিলেন, তা প্রকৃত পক্ষেই এক স্বীকারোক্তি যে, কী ভাবে ভারতের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘাত চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে এবং এমনটা হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে অব্যাহত অর্থনৈতিক চাপের কারণে। পাকিস্তানের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। অর্থপ্রদানের ভারসাম্য সংক্রান্ত (বিওপি) সঙ্কট ২০১৮ সালের শেষার্ধে পাকিস্তানকে আইএমএফ-এর কাছে বেলআউট চাইতে বাধ্য করে, যা ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে সম্ভবপর হয়েছিল। যখন দেশটি আইএমএফ-এর কর্মসূচির আওতাভুক্ত এবং নিজেই অর্থনৈতিক ঝঞ্ঝা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে, তখন তার পক্ষে বৃহত্তর প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী সামরিক অভিযানে লিপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের দুঃসাহসিক সামরিক অভিযান অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার দিকে চালিত করতে পারে এবং অর্থনীতির ন্যূনতম জ্ঞানসম্পন্ন যে কোনও ব্যক্তিই জানেন যে, শূন্য কোষাগার নিয়ে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।
২০১৮-২০২২ সালের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ১.১৩ ট্রিলিয়ন পিকেআর থেকে ১.৫৩ ট্রিলিয়ন পিকেআর হয়েছে। এই একই সময়ে পাকিস্তানি রুপি ডলার প্রতি ১২১ পিকেআর থেকে হ্রাস পেয়ে ২০৪ পিকেআর-এ অবমূল্যায়িত হয়েছে (এগুলি ২০১৮ এবং ২০২২ সালের গড় হার)। ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট কার্যত অচল ছিল। সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যয়সঙ্কোচমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, যা তাদের প্রশিক্ষণ এবং কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। ক্রস এলওসি ফায়ারিং বা আন্তঃসীমান্ত গোলাবর্ষণের জন্যও বড় মূল্য চোকাতে হচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে ভারত যে পরিমাণ গুলিবর্ষণ করে, পাকিস্তানকে তার এক তৃতীয়াংশ বা এমনকি এক পঞ্চমাংশ ব্যয় করার জন্যও আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাড়মজ্জায় ঘুণ হয়ে দাঁড়াবে। ২০২১ সাল নাগাদ আর্থিক সঙ্কট খারাপতর হয়ে ওঠার কারণে অর্থনীতি যখন অত্যন্ত চাপের মুখে পড়ে, তখন আফগানিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাও অব্যাহত ছিল। আফগানিস্তানে দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের নিজের পূর্ব সীমান্তে স্থিতিশীলতার প্রয়োজন, যাতে দেশটি তার পশ্চিম সীমান্তে মনোনিবেশ করতে পারে। আফগানিস্তানে তালিবানের দখলদারি এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থানের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির তীব্র অবনতি ঘটে, যার ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর অধিকতর কার্যকর সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সামরিক অথবা অর্থনৈতিক ভাবে দু’টি সংঘাতপূর্ণ ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠতে পাকিস্তান কোনও ভাবেই ইচ্ছুক নয়। স্পষ্টতই, এলওসি বরাবর গুলি বিনিময় বন্ধ রাখা এবং ভারতের সঙ্গে চাপানউতোর হ্রাস করা পাকিস্তানের জন্য ঠিক ততটাই প্রয়োজন, যতটা ভারতেরও প্রয়োজন এলএসি বরাবর চিনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের নিরিখে।
আফগানিস্তানে তালিবানের দখলদারি এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থানের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির তীব্র অবনতি ঘটে, যার ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর অধিকতর কার্যকর সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। স্বাভাবিক ভাবেই তারা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পরিস্থিতির মধ্যে জড়িয়ে পড়তে চায় না। বাজওয়ার বিবৃতি পাকিস্তানের প্রচলিত মনোভাব পরিবর্তনের এক প্রচেষ্টা মাত্র। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর জন্য একটি পদক্ষেপ গ্রহণের ধারণা বিদ্বেষপূর্ণ নয়, বরং বাস্তবসম্মত বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য ভাবে বলতে গেলে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল, সে সম্পর্কে তিনি ইতিবাচক মন্তব্যই করেন। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা সঙ্কট ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনে হাজির করে। যখন পাকিস্তান বালাকোটে ভারতের বিমান হামলার জবাব দিতে বাধ্য হয়েছিল, তখন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী চায়নি যে, পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠুক। বালাকোটের পরবর্তী সামান্য সংঘাত আর সর্বতো ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এক জিনিস নয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে, পাকিস্তানের কাছে প্রত্যক্ষ সংঘাত টিকিয়ে রাখার মতো কোনও উপায় ছিল না। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পাকিস্তানিরা বালাকোট-পরবর্তী সঙ্কট নিরসনে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। তাঁরা তাড়াহুড়ো করে বিমান সংঘর্ষের পরে বন্দি হওয়া ভারতীয় বিমানচালককে দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছিল। কারণ এমনটা করতে বিলম্ব হলে তা ভারতের জন্য যুদ্ধ শুরু করার উস্কানিই দেবে।
যুদ্ধবিরতি কি স্থায়ী হবে?
২০২১ সাল নাগাদ পাকিস্তানের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ভারতের কাছ থেকে কাশ্মীরকে ছিনিয়ে নেওয়ার তাদের প্রচেষ্টা আদতে ধোপে টিকবে না। ২০১৯ সালের সাংবিধানিক সংস্কারের পরে বিশ্বব্যাপী যে প্রচার শুরু হয়, তা অচিরেই ম্লান হয়ে পড়ে। বাজওয়া বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট গভীরতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গে চাপানউতোর হ্রাস করা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্যতা হয়ে উঠেছে। দুই দেশের মধ্যে গোপন আলোচনা স্বাভাবিকীকরণের অভিমুখে একটি অস্থায়ী পথ প্রদান করে এবং ঘটনাপ্রবাহকে প্রাক-পুলওয়ামা সময়কালে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদান করে। কিন্তু এর অর্থ কাশ্মীরের উপর থেকে পাকিস্তানের দাবির প্রত্যাহার নয়। এটিকে বড়জোর একটি কৌশলগত বিরতি বলা যেতে পারে, বড়জোর কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি। এর নেপথ্যের ধারণাটি ছিল উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাস্তব, সম্ভাব্য ও স্থিতিশীল করে তোলা পর্যন্ত সময় নষ্ট করা। এই বিরতির ফলে প্রাপ্ত সময়কে কাশ্মীরে রাজনৈতিক পুঁজি পুনর্গঠনে, ভারতীয় রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার কাজে এমন ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যে, ২০ বছর পরে যখন সমস্যাটি পুনরায় প্রকাশ্যে আসবে, তখন ভারতের পক্ষে তার মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। পাকিস্তানিরা অবশ্যই এই চিরাচরিত ভারতীয় প্রবণতার উপর ভিত্তি করেছিল যে, সমস্যার সমাধান তো হয়েই গেছে, এ হেন ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে ভারত বর্তমানে পরিস্থিতি থেকে নজর সরিয়ে নেবে।
ইমরান খানের রাজনৈতিক জমি হারানোর আশঙ্কায় সংযোগ সূত্রগুলি ভেঙে পড়ে, যখন তিনি ভারতের সঙ্গে পুনরায় বাণিজ্য শুরু করার প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন। যুদ্ধবিরতি দু’বছরেরও বেশি সময় যাবৎ বজায় রয়েছে। কারণ এটি উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক। তার পশ্চিম সীমান্তে ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা এবং দেশব্যাপী অর্থনৈতিক চাপের জন্য পাকিস্তানের জন্য এটি লাভজনক; এবং অন্য দিকে চিনের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান সমস্যা – যার কারণে এলওসি থেকে এলএসিতে সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে – এ হেন কারণে ভারতের জন্যও এমনটা লাভজনক। তবে এই যুদ্ধবিরতি কত দিন বজায় থাকবে, তা নির্ভর করবে পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এবং সম্ভবত তাঁর উত্তরসূরিদের উপর।
ইমরান খানের রাজনৈতিক জমি হারানোর আশঙ্কায় সংযোগ সূত্রগুলি ভেঙে পড়ে, যখন তিনি ভারতের সঙ্গে পুনরায় বাণিজ্য শুরু করার প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন।
বাজওয়ার উত্তরসূরিরা যদি যুক্তিবাদী হন, তা হলে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অস্থিরতা বৃদ্ধি করে এ হেন কোনও প্রসঙ্গে তাঁদের কোনও লাভ থাকবে না। কিন্তু যদি তাঁরা পাকিস্তানি গণমাধ্যমের ক্লজউইৎস, মেটারনিক এবং গুডেরিয়ানদের দ্বারা প্রভাবিত হন অথবা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নেপথ্যে মদত দেওয়ার জন্য একটি বিভক্ত রাজনীতি এবং সমাজ চান, তা হলে তাঁরা আবারও এলওসি বরাবর উত্তেজনা বৃদ্ধির পুরনো কৌশল অবলম্বন করবেন এবং ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বেন। যুক্তিবাদী হওয়ার সুবিধাটি খুব বেশি কাজে না-ও লাগতে পারে। তবে কট্টরপন্থা এবং সামরিক দুঃসাহসিকতার চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মূল্য (যদি শুধু মাত্র ছায়াযুদ্ধ হয়, তা হলেও) পাকিস্তানের বাস্কেট-কেস বা তলানিতে ঠেকে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক হবে।
ভারতীয় দৃষ্টিকোণ
ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই পরিস্থিতিটির অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে:
প্রথমত, পাকিস্তান ভারতের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনও অবস্থায় না থাকলেও এমনটা মনে করা ভুল হবে যে, পাকিস্তান সহজেই হার স্বীকার করে নেবে।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনও শান্তি চুক্তি সর্বোত্তম ভাবে একটি বিরতির নামান্তর এবং তা কখনওই শত্রুতা ও সংঘাতের অবসান নয়। বিরতি আসলে পরিস্থিতি, বাধ্যবাধকতা এবং ক্ষমতার অভাব দ্বারা নির্ধারিত হয়। যে মুহূর্তে এগুলি আর বাধা সৃষ্টি করবে না, তখনই সব কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। অন্য কথায় বললে, পাকিস্তানের বিষয়ে (যে কোনও প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রেই) ভারতের কখনই আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয় এবং শান্তির প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে… এমন ভ্রান্ত ধারণাও পোষণ করা উচিত নয়।
তৃতীয়ত, ভারত এখনও সেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেনি, যা পাকিস্তানের প্রতি তার শর্তাবলিকে বাধ্যতামূলক করে তুলতে পারে। এমনটা ভবিষ্যতে ঘটতে পারলেও, এখনও সেই সময় আসেনি।
চতুর্থত, পরের বার যখন ভারত একটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করবে, তখন তাকে সংঘর্ষ বৃদ্ধির কথাও মাথায় রাখতে হবে। যে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপই বালখিল্য নয়, বরং অনেক বেশি গুরুতর। ভারত যদি সংঘর্ষের সমীকরণ সম্পর্কে যথার্থ ভাবে অবগত হত, তা হলে বালাকোট-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের ‘অপারেশন সুইফট রিটর্ট’-এর যোগ্য জবাব দিত। সেটা না করার ফলে বালাকোট হামলার বার্তা ম্লান হয়ে গেছে।
সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.