ভূমিকা
জুন মাসে ভারত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) পূর্ণ সদস্য হিসাবে সাত বছর পূর্ণ করেছে। আস্তানায় অনুষ্ঠিত ২৪তম এসসিও প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী মোদী এড়িয়ে গিয়েছেন। এসসিও-র প্রধান লক্ষ্যগুলি হল পারস্পরিক আস্থা জোরদার করা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার প্রচার করা। ভারত দু’টি প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে এসসিও-তে যোগদান করেছে: আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করা। ২০১৭ সালের শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য ছিল, ‘সন্ত্রাসবাদ মানবতার জন্য একটি বড় হুমকি। আমার পূর্ণ আস্থা আছে যে, ভারত-এসসিও সহযোগিতা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি নতুন দিকনির্দেশনা এবং শক্তি দেবে।’ মোদীর এই বক্তব্য এসসিও-র অধীনে ভারতের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানকেই দর্শায়। ভারত বহুপাক্ষিক মঞ্চটিকে প্রাথমিক ভাবে মধ্য এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে মনে করে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হল ইউরেশীয় নিরাপত্তা; চিরাচরিত নিরাপত্তা উদ্বেগের ঊর্ধ্বে উঠে ভারত জ্বালানি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মতো অপ্রচলিত নিরাপত্তা বিষয়গুলিতে সহযোগিতা করার জন্য এসসিও-তে যোগ দিয়েছে।
এসসিও-র প্রধান লক্ষ্যগুলি হল পারস্পরিক আস্থা জোরদার করা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার প্রচার করা।
এসসিও-র গঠন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। কারণ এটি তার ধরনের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক সংস্থা, যা ইউরেশীয় অঞ্চলের প্রধান অ-পশ্চিমী দেশগুলিকে একত্রিত করেছে। এটি ২০০১ সালে পশ্চিমকে মোকাবিলা করার জন্য একটি ব্লক হিসাবে গড়ে উঠেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার সঙ্গে মিল রেখে জোটটি ইউরেশীয় অঞ্চলে একটি নিরাপত্তা গ্যারান্টার হিসাবে নিজের ভূমিকা পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারত ২০১৫ সালে এসসিও-র পূর্ণ সদস্য হয়েছিল এবং এই একই সময়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘বৃহত্তর ইউরেশীয় অংশীদারিত্ব’র ধারণাটি চালু করেছিলেন। বৃহত্তর ইউরেশিয়ার কর্মসূচি এসসিওর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করে, কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস-এর (সিআইএস) প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সুযোগগুলিকে সর্বাধিক করে তোলে এবং ইউরেশিয়ার অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণের বিকাশের মাধ্যমে গঠিত হয়। এসসিও বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামরিক পটভূমি থেকে সদস্যদের একত্রিত করেছে। এসসিও-র সদস্যপদ পশ্চিমী আধিপত্যবাদী সাংগঠনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে রাশিয়া ভারতকে বৃহত্তর ইউরেশিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে মনে করে।
রাশিয়ার বৃহত্তর ইউরেশীয় কৌশলে ভারত
তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ‘বৃহত্তর ইউরেশিয়া’ হল রাশিয়ার পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশ। বৃহত্তর ইউরেশিয়ার মধ্যে আধুনিক বিশ্বের তিনটি প্রধান শক্তি অবস্থিত— রাশিয়া, ভারত এবং চিন, যার প্রত্যেকটি অন্যদের প্রতি ভারসাম্য বজায় রাখে, যা অসম শক্তির গতিশীলতা গঠনের বিরুদ্ধে একটি গ্যারান্টিও বটে।
রাশিয়ার ফরেন পলিসি কনসেপ্ট ২০২৩-এ ভারতকে তার দূরদর্শী নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে, যে অন্যান্য দেশের মধ্যে বহুমুখিতা এবং সার্বভৌম সমতার পক্ষে সওয়াল করে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে রাশিয়া ভারতকে বৃহত্তর ইউরেশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখে। একটি ‘মহান প্রতিবেশী’ হিসাবে মনোনীত হওয়ার পাশাপাশি ধারণাটি ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে। রাশিয়া ‘বন্ধুত্বহীন জোট’ মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চায়। ২০২২ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর থেকে রাশিয়া সক্রিয় ভাবে ভারতকে আফগান নিরাপত্তা আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, ভারতকে একটি উল্লেখযোগ্য ইউরেশীয় অংশীদার হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে। রাশিয়া ইউরেশিয়ায় ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে আশাবাদের সঙ্গে উপলব্ধি করে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর সম্ভাবনাকে স্বীকার করেছে। বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাশিয়া ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বলে মনে করে। যাই হোক, দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থাৎ ভারত এবং চিনের উপস্থিতি রাশিয়ার বৃহত্তর ইউরেশীয় দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে।
রাশিয়ার ফরেন পলিসি কনসেপ্ট ২০২৩-এ ভারতকে তার দূরদর্শী নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে, যে অন্যান্য দেশের মধ্যে বহুমুখিতা এবং সার্বভৌম সমতার পক্ষে সওয়াল করে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে রাশিয়া ভারতকে বৃহত্তর ইউরেশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখে।
ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (আইএনএসটিসি) এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) মতো সংযোগ প্রকল্পগুলি বৃহত্তর ইউরেশীয় অংশীদারিত্বের কেন্দ্রবিন্দু। ভারত এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য প্রবাহকে সহজতর করে ‘সমৃদ্ধি সক্ষমকারী’ হওয়ার সম্ভাবনা-সহ আইএনএসটিসি-কে চিনের বিআরআই-এর একটি কার্যকর বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এসসিও-তে ভারত ও তার প্রতিবেশী
এসসিও চার্টার দ্বিপাক্ষিক বিরোধের সমাধান নিষিদ্ধ করে। তবুও সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করা এবং দেশগুলির মধ্যে আলাপ-আলোচনাকে উত্সাহিত করার জন্য এসসিও একটি সহায়ক মঞ্চও সরবরাহ করে। সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে কোনও অবনতি সংগঠনের কার্যকারিতাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করে। এসসিও-তে ভারতের অংশগ্রহণ চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে তার সূক্ষ্ম সম্পর্ক পরিচালনা করার সময় মধ্য এশিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কৌশলকে তুলে ধরে।
এসসিও-র চালিকাশক্তি হিসেবে সংস্থার অংশীদার হওয়ার দরুন চিন ভারতের জন্য সীমিত গুরুত্বই বহন করে। সীমান্ত উত্তেজনার কারণে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ২০২১ সাল থেকে এসসিও-র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলিকে বাধা দিয়েছে। বালিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন এবং ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনের সময় শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত মিথস্ক্রিয়াই ঘটেছিল। অন্য সমস্ত এসসিও সদস্যের থেকে ভিন্ন মনোভাব অর্থাৎ তিব্বতের প্রতি ভারতের সমর্থন এবং এক চিন নীতি বজায় রাখতে অস্বীকৃতি এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। তা সত্ত্বেও ভারত ও চিন বহুপাক্ষিক স্তরে অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছে। উভয় দেশ রাষ্ট্রপুঞ্জে সহযোগিতা করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও এসডিজি-র মতো বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করেছে। ভারতও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের (এআইআইবি) সদস্য, বিআরআই-এর বিপরীতে এর নিয়মভিত্তিক কাঠামোকে মূল্য দেয়। যাই হোক, ভারত ও চিনের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি ২০১৭ সাল থেকে সঙ্কুচিত হয়েছে এবং বিভেদ ক্রমশ বাড়ছে।
এসসিও-র চালিকাশক্তি হিসেবে সংস্থার অংশীদার হওয়ার দরুন চিন ভারতের জন্য সীমিত গুরুত্বই বহন করে। সীমান্ত উত্তেজনার কারণে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ২০২১ সাল থেকে এসসিও-র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলিকে বাধা দিয়েছে।
২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টাকে থামিয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালে গোয়ায় এসসিও বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের পর জারদারি বলেছিলেন যে, এই সিদ্ধান্ত আলোচনা পুনরায় শুরু করার একমাত্র বাধা। পাকিস্তান দাবি করেছে যে, ‘ভারত যতক্ষণ না তার ২০১৯ সালের পদক্ষেপগুলি ফিরিয়ে নেয়, অর্থপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক মিথস্ক্রিয়া কঠিন হবে।’ পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে এসসিও-র উদ্দেশ্যের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছে।
মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা ২০১২ সালে ‘কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া’ নীতির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং ২০১৪ সালে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ দ্বারা অনুসৃত হয়েছিল। এসসিও-তে ভারতের সদস্যপদ এই সম্পর্কগুলিকে আরও দৃঢ় করেছে। ২০২২ সালে প্রথম ভারত-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন ‘সকলের সমর্থন, সকলের জন্য উন্নয়ন, সকলের বিশ্বাস, সকলের প্রচেষ্টা’ নীতির অধীনে আঞ্চলিক উন্নয়ন, শান্তি এবং সমৃদ্ধির প্রচারের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মধ্য এশিয়া ভারতের ‘বর্ধিত প্রতিবেশী’ হিসাবে বিবেচিত এবং ইউরেশিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। বিশেষ করে বিকশিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সম্পদের সমৃদ্ধি এবং তাদের বহুমাত্রিক বৈদেশিক নীতির অবস্থান মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলিকে ভারতের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
এসসিও-তে ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ
এসসিও-র অধীনে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা এবং সংযোগ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি অব্যাহত রয়েছে। ভারতই একমাত্র এসসিও সদস্য রাষ্ট্র যেটি বিআরআই-এর অংশ নয়। এই সিদ্ধান্তটি সার্বভৌমত্বের উদ্বেগ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, বিশেষ করে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) থেকে, যা পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) মধ্য দিয়ে যায়। ‘চরমপন্থা, সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের’ দিকে পরিচালিত মৌলবাদকে যৌথ ভাবে মোকাবিলা করার জন্য জোটের মূল লক্ষ্য বদলে দেওয়া হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ এসসিও-তে ভারতের কার্যকর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা উপস্থাপন করে। সাম্প্রতিক রিয়াসি সন্ত্রাসবাদী হামলা আগুনে ইন্ধন যোগ করেছে। কারণ এটি ‘একটি নিরাপদ এসসিও-র অভিমুখে’ ভারতের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী কাঠামোর কার্যকারিতার ক্ষেত্রে এসসিও-র কার্যকারিতার অভাব ভারতের জন্য এসসিও-র প্রাসঙ্গিকতা কমিয়ে দিতে পারে।
ভারতের বহু-সাযুজ্যপূর্ণ কূটনীতি এসসিও এবং কোয়াড-এ তার সদস্যপদ থেকে স্পষ্ট। ভারত এই জোটের মূল বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি চিনের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপরীতে ভারসাম্য বজায় রেখে চলে। সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ আসলে আস্তানা শীর্ষ সম্মেলনে তার অনুপস্থিতির নিরিখে বৈপরীত্যকেই দর্শায়। এসসিও প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অনিয়মিত উপস্থিতি এসসিও-র মধ্যে ভারতের সম্পৃক্ততার চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী কার্যত ২০২১ সালের তাজিকিস্তান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং ২০২২ সালের উজবেকিস্তান বৈঠকে অংশ নেওয়ার পরে ২০২৩ সালে একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, যা সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ২০২৪ সালের আস্তানা শীর্ষ সম্মেলন এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এই উদ্বেগগুলিকে আরও শক্তিশালী করবে। এসসিও-তে এই অসঙ্গতি দর্শায় যে, ভারত-চিন এবং ভারত-পাকিস্তান বিরোধ সীমান্ত উত্তেজনার বাইরেও প্রসারিত হয়েছে, আঞ্চলিক সংস্থাগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগকে হ্রাস করেছে।
অধিকন্তু, রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এসসিও সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্যকে জটিল করে তুলেছে। রুপি-রুবল এবং রুবল-ইউয়ানের বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতার কারণে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার জন্য ভারত ও চিনের কাছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের আবেদন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
উপসংহার
নিঃসন্দেহে এসসিও ভারতকে উপকৃত করেছে। যাই হোক, ভারত এই জোট থেকে স্বাধীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়া উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাগ করে নেয়। রাশিয়া ভারতের প্রাথমিক অস্ত্র সরবরাহকারী হিসাবে রয়ে গিয়েছে, যদিও ভারত পশ্চিমে এবং দেশে তার উত্স বৈচিত্র্যময় করছে। ভারত মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ভারত-মধ্য এশিয়া আলোচনা এবং ভারত-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া তৈরি করেছে। যাই হোক, এসসিও ভারত-মধ্য এশিয়া উন্নত অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য একটি ভাল মঞ্চ প্রদান করেছে। ভারত তার শক্তির চাহিদা পূরণ ছাড়া গোষ্ঠী থেকে কোনও নিরাপত্তা সুবিধা পায়নি। গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার স্তর বিবেচনা করে এসসিও-তে ভারতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এটি ভারতের আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই অসঙ্গতি রাশিয়ার ‘বৃহত্তর ইউরেশীয়’ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি আঘাত হতে পারে। ভারত যুদ্ধের সমালোচনা করার সময় এবং সাধারণ ভাবে রাশিয়ার পদক্ষেপকে সমর্থন না করে ইউক্রেন বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারত চিনের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার শক্তিশালী মিত্রের বিপরীতে রাশিয়ার কাছাকাছি আসার চেষ্টা চালায়। তবে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারত তার ‘ভারসাম্যমূলক কাজ’ কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক মস্কো সফরকে এসসিও সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ভারতের প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা যেতে পারে। ভারতের সদস্যপদ হুমকির মুখে পড়েছে… এ কথা বলার সময় এখন না এলেও ভারত নিঃসন্দেহে এসসিও গোষ্ঠীটিকে অবহেলা করছে।
আয়ুষী সাইনি জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর রাশিয়ান অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান স্টাডিজের জুনিয়র রিসার্চ ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.