১৮ অক্টোবর ভারত, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং আমেরিকার বিদেশমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠক পশ্চিম এশিয়া এবং আরও দূরবর্তী অঞ্চলে ভারতের সক্রিয়তা নিয়ে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রথমত এই বৈঠকের সময়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি এমনই এক সময়ে সংঘটিত হয় যখন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর সরকারি সফরে ইজরায়েলেই ছিলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে তাঁকে ইজরায়েলের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ-এর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগদান করেন আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ অল নাহিয়ান। লক্ষ্য করার বিষয়, ওয়াশিংটন ডিসি শহরে ১৩ অক্টোবর আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইজরায়েলের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কয়েক দিনের মধ্যেই এই বৈঠক হয়।
এই চতুর্দেশীয় বৈঠকের তরফে জারি করা প্রাথমিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই জোটের প্রধান লক্ষ্য হবে দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে মজবুত করা, যারা এই অঞ্চলকেন্দ্রিক মুখ্য বিষয়গুলি নিয়ে একই রকমের অভিমত পোষণ করে। পরিবহণ সংক্রান্ত পরিকাঠামো মজবুত করার কথা নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতির উপর নজর রাখা এবং দুবাই এক্সপোর সময় এই চার বিদেশমন্ত্রীর মুখোমুখি বৈঠকের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
প্রফেসর মাইকেল তানচুম সম্প্রতি একটি ভারত-আরব-ভূমধ্যসাগরীয় করিডরের সম্ভাবনার কথা লিখেছেন, যা অঞ্চলটির ক্রমবিকশিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গ্রিক ট্রানশিপমেন্ট পোর্ট পায়রেয়াস-এর মাধ্যমে মুম্বই এবং ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের মধ্যে একটি মাল্টি মোডাল লিঙ্ক গড়ে তুলতে পারে।
এই বৈঠক আগামিদিনে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক রাজনৈতিক কর্মসূচির সূচনা করবে। প্রফেসর মাইকেল তানচুম সম্প্রতি একটি ভারত-আরব-ভূমধ্যসাগরীয় করিডরের সম্ভাবনার কথা লিখেছেন, যা অঞ্চলটির ক্রমবিকশিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গ্রিক ট্রানশিপমেন্ট পোর্ট পায়রেয়াস-এর মাধ্যমে মুম্বই এবং ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের মধ্যে একটি মাল্টি মোডাল লিঙ্ক গড়ে তুলতে পারে। প্রাথমিক ভাবে, প্রফেসর তানচুমের প্রস্তাবিত ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ফুড করিডর এবং শক্তি ও পেট্রো-কেমিক্যাল ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারটি একটু বেশিই আশাবাদী মনে হয়েছিল। কারণ, এই অঞ্চলটির বাস্তব চিত্র গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং প্রাথমিক বিবৃতির ভিত্তিতে করা প্রফেসর তানচুমের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই বাস্তব চিত্র যদিও ভারত এবং ইউরোপের সংযোগকারী এক নতুন ট্রেড করিডর গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সংক্রান্ত তাঁর প্রাথমিক অনুমানের গুরুত্বকে কোনও ভাবেই খাটো করে না। এবং এই প্রসঙ্গে আমরা চোখ রাখতে পারি সাম্প্রতিক সময়ের এমন কিছু ঘটনাবলির দিকে যা প্রফেসরের ভবিষ্যদ্বাণীকে সফল করে তুলতে পারে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
১) সাম্প্রতিক কালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এতিহাদ রেল ১৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলপথ স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণ করেছে, যা সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে আল-ঘুয়াইফত-এ সৌদি আরব রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার কাজটি করবে। এই ঘটনাটি প্রস্তাবিত জিসিসি রেল নেটওয়ার্কের বাস্তবায়নের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এবং এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। এই প্রকল্পেরই তৃতীয় পর্যায়ে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত আল-ঘুয়াইফতের সঙ্গে হারাধ-কে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২) সৌদি রেলওয়েজ-এর উত্তর দক্ষিণ শাখার আওতায় দক্ষিণ-পূর্ব সৌদি আরবের হারাধ থেকে আল-খার্জ, রিয়াধ, বুরাইদাহ হয়ে সৌদি আরব ও জর্ডনের সীমান্তবর্তী আল-হাদিথা পর্যন্ত ১৩৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন সংযোগ ইতিমধ্যেই বর্তমান।
৩) আল হাদিথা থেকে ইজরায়েলের প্রধান বন্দর হাইফা পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন প্রয়োজন যার মধ্যে ইজরায়েল-জর্ডনের সীমান্তবর্তী বেইত শি’আন থেকে হাইফা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ ইতিমধ্যেই কার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এই সংযোগ পথের বাকি অংশ জর্ডনের মধ্য দিয়ে যাবে এবং স্পষ্টতই সম্ভাব্য এই করিডরের অন্যতম সুবিধে প্রাপক হবে জর্ডন। ইজরায়েলের সঙ্গে জর্ডনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং কাজের শেষ অংশ সম্পূর্ণ করার জন্য আমেরিকা আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত যে দিকে সকলের নজর থাকবে সেটি হল সৌদি আরব এবং জর্ডনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার কাজে অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি হয় কি না তার উপরে।
৪) চিন ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পটিতে নিজেদের সম্ভাব্য ভূমিকা নির্ধারণ করে ফেলেছে। চিনের সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট গ্রুপ হাইফাতে বে পোর্ট কনটেনার টার্মিনাল গঠনে ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যেখানে অন্যতম বিশালাকার জাহাজগুলি পণ্য ওঠানামা করতে সক্ষম হবে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বি আর আই) একটি অংশ রূপে চিন পারস্য উপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত পিস রেলওয়ে প্রকল্পের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে। এ ছাড়াও সরকার নিয়ন্ত্রিত চায়না ওশান শিপিং কোম্পানি (কসকো) গ্রিক রেল কোম্পানি পায়রেয়াস ইউরোপ এশিয়া রেল লজিস্টিকস-এ (পার্ল) ৬০%-এর অংশীদার, যেটি মধ্য ইউরোপ এবং আরও দূরবর্তী অঞ্চলে প্রতি বছর ৮০,০০০ পণ্য পরিবহণ করতে সক্ষম।
ভারতের ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ তহবিল গঠন করার পাশাপাশি একটি সুসংহত লজিস্টিকস এবং সাপ্লাই চেন কোম্পানি হিসেবে নিজেদের মাটি শক্ত করতে ২০১৯ সাল থেকেই ডি পি ওয়ার্ল্ড ভারতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করে চলেছে।
৫) দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস কোম্পানি ডি পি ওয়ার্ল্ড (ডি পি ডব্লিউ) এই বাণিজ্যিক করিডর বা সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠতে পারে। দুবাইতে ফ্রি জোন বা মুক্তাঞ্চল এবং সুবিশাল জেবেল আলি বন্দরের মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্ব এই সংস্থাটির হাতেই রয়েছে। আব্রাহাম অ্যাকর্ডস বা আমেরিকা, ইজরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফলস্বরূপ এই সংস্থাটি হাইফা বন্দরের প্রসারণের কাজে বিনিয়োগের জন্য ইজরায়েলি ব্যাঙ্ক লেউমির সঙ্গে একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর করেছে। এটি লক্ষ্য করার মতো যে, ডি পি ডব্লিউ এবং চিনের বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন নৌপরিবহণ সংস্থাগুলির মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা এখনও বিদ্যমান। জিবুতি বন্দরে দোরালে কন্টেনার টার্মিনালের কাজে ডি পি ডব্লিউ ৪৮ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলেও জিবুতি সরকারের তরফে সংস্থাটিকে খারিজ করে দেওয়া হয় যখন চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোল্ডিং কোম্পানি বন্দরের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় ২৩.৫% অংশীদারিত্বের অধিকারী হয়। ডি পি ডব্লিউ আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং এখনও পর্যন্ত ৭টি রায় তাদের পক্ষে গেছে, যেগুলির মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে লন্ডন কোর্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন-এর একটি সালিশি আদালতের দেওয়া রায়ও অন্তর্ভুক্ত। আদালতের এই রায়ে জিবুতি সরকার বা চিনের এই দখলদারিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।
৬) ডি পি ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে সঙ্গে প্রক্রিয়াটিতে ভারতের সংযুক্তিকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ ডি পি ওয়ার্ল্ড ভারতের পশ্চিম উপকূলের মুন্দ্রা, নব সেবা এবং কোচির মতো একাধিক বন্দরে বড় বড় কন্টেনার টার্মিনাল চালায়। ভারতের ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ তহবিল গঠন করার পাশাপাশি একটি সুসংহত লজিস্টিকস এবং সাপ্লাই চেন কোম্পানি হিসেবে নিজেদের মাটি শক্ত করতে ২০১৯ সাল থেকেই ডি পি ওয়ার্ল্ড ভারতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করে চলেছে। এগুলির মধ্যে কন্টিনেন্টাল ওয়্যার হাউজিং কর্পোরেশনের সর্ব বৃহৎ অংশীদার হয়ে ওঠা, ক্রিভকো বা কৃষক ভারতী কো-অপারেটিভ-এর রেল কর্মসূচি এবং ট্রান্সওয়ার্ল্ড ফিডারস-এর উপকূলীয় নৌপরিবহণ কর্মসূচিতে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ডি পি ওয়ার্ল্ড বর্তমানে মুম্বইয়ের নব সেবা টার্মিনালের কাছে একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোন গড়ে তুলছে যা রফতানির কাজেও সক্ষম হবে।
৭) রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিষয়ে ইজরায়েল আগ্রহ দেখিয়েছে। সে দেশের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ ২০১৭ সালে এই বিষয়টি প্রথম তোলেন এবং গালফ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মজবুতিকরণ এবং শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ২০২০ সালে দুবাই সফর চলাকালীন এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইজরায়েলের পরিবহণ মন্ত্রক জানিয়েছে, জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনের আওতায় প্রস্তাবিত রেল প্রকল্পটি সরকারি ভাবে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
৮) সরকারি প্রাতিষ্ঠানিকতার শিলমোহর ছাড়াই ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইজরায়েলের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক সম্পর্ক আকার নিতে শুরু করেছে। ২০ অক্টোবর দিল্লিতে কর্মরত ইজরায়েলের ডেপুটি চিফ অব মিশন রনি ইয়েদিদিয়া-ক্লেইন দুবাই এক্সপোর সময় এই তিন দেশের বিদেশমন্ত্রীদের আলাদা ভাবে মিলিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান। দুবাইতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারত এবং ইজরায়েলের কনসাল জেনারেলরা অক্টোবর মাসেই ভারত, ইজরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ত্রিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্দো-ইজরায়েল চেম্বারস অফ কমার্স (আই এফ আই আই সি সি) দুবাইতে তাঁদের সদর দফতর চালু করেছে। ‘এই সংস্থাটি ভারত এবং ইজরায়েলের প্রবাসী মানুষ এবং বিশ্ব নাগরিকদের উদ্ভাবন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহিত করা’র পাশাপাশি নিজেদের ভরসাযোগ্য স্থিতিশীল কৌশলগত অংশীদারিত্বগুলির সশক্তিকরণের কাজে নিযুক্ত নতুন আঙ্গিকসম্পন্ন এক আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।
ভবিষ্যতের পথ
পশ্চিম এশিয়াতে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের দ্রুত পট পরিবর্তনের বাস্তবতা নিয়ে কোনও সন্দেহ না থাকলেও ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সংযোগকারী মাল্টি মোডাল করিডর স্থাপনের প্রস্তাবনাকে বাস্তব করে তুলতে একাধিক শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে। রাজনৈতিক স্তরে সৌদি আরবকে ইজরায়েলগামী জাহাজগুলি পর্যন্ত রফতানির মালপত্র পরিবহণের জন্য নিজের উত্তর-দক্ষিণ রেলপথ ব্যবহারে সম্মতি দিতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এই প্রেক্ষিতে একটি ছোট অথচ প্রতীকী পদক্ষেপ নেওয়া হয় যখন সৌদি আরব দিল্লি এবং তেল আভিভ সংযোগকারী এয়ার ইন্ডিয়ার প্রথম উড়ানকে নিজের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমান বছরে ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করতে চলেছে এবং ই ইউ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
এই ঘটনার পর থেকে জল অনেক দূর গড়িয়েছে যার মধ্যে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস এবং ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেতানইয়াহু-র সৌদি আরবে তথাকথিত গোপন সফর উল্লেখযোগ্য। শোনা যাচ্ছে যে, আমেরিকা রিয়াধকে তেল আভিভের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করছে এবং প্যালেস্টাইন ফ্রন্টে কিছু অগ্রগতি এই সম্পর্ক স্থাপনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রস্তাবিত রেল সংযোগের ব্যাপারে জর্ডন এখনও তেমন আগ্রহ না দেখালেও রেল সংযোগের কাজে জর্ডনের অন্তর্গত অংশটির কাজের জন্য বিনিয়োগের দিকটি সুস্পষ্ট হলে তারা যে এক বাস্তবিক অবস্থান গ্রহণ করবে, এমনটা আশা করা যায়। এর পাশাপাশি এই কর্মসূচির ফলে সুয়েজ খালের মাধ্যমে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক রাজস্বতে যে তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না, সে ব্যাপারে মিশরকেও আশ্বস্ত করার দিকটিতে নজর দিতে হবে।
মাইকেল তানচুম হিসেব করে জানিয়েছেন যে, প্রস্তাবিত ভারত-আরব-ভূমধ্যসাগরীয় করিডর তৈরি হলে বর্তমানে মুম্বই থেকে পায়রেয়াস পর্যন্ত ১৭ দিনের সমুদ্র যাত্রা মাল্টি মোডাল লিঙ্কের মাধ্যমে সংযোগের ফলে মাত্র ১০ দিন সময় লাগবে। এটি নিঃসন্দেহে এক আকর্ষণীয় প্রস্তাব, কিন্তু এই ধরনের প্রকল্পের অর্থনৈতিক বাস্তবোপযোগিতা অনেকাংশে নির্ভর করবে এই পথে সম্ভাব্য পণ্যের পরিমাণের উপরে। আর ঠিক এই জায়গাতেই ভারতের সময়ানুগ বৈদেশিক নীতি অঞ্চলটিতে এবং অঞ্চলটির বাণিজ্যিক নীতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বহু বছর ধরে গড়িমসি করার পরে এত দিনে ভারত প্রথম বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইজরায়েল এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফ টি এ) বা মুক্ত বাণিজ্যিক চুক্তির বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা শুরু করেছে। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমান বছরে ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করতে চলেছে এবং ই ইউ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। চিনের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা এবং উৎপাদনের একটা অংশের ভার ভারতকে দেওয়ার মাধ্যমে সাপ্লাই চেনগুলির ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দেশগুলিকে ভারতে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য তার নিজস্ব পারফরম্যান্স-লিঙ্কড-ইনসেনটিভ (পি এল আই) কর্মসূচিও বর্তমান প্রবণতাকে উৎসাহিত করবে।
ভারতের কাছে সুযোগ থাকছে এই প্রকল্পটিকে দীর্ঘমেয়াদি, কৌশলগত আঙ্গিকে দেখার। স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তাকারী সংস্থাগুলি থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনার উপরে বাজি রেখে ইরকন-এর মতো সংস্থাগুলি সৌদি আরব এবং জর্ডনে প্রকল্পের অসম্পূর্ণ অংশের কাজের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য আগ্রাসী ভাবে তাদের প্রস্তাবনা রাখতে পারে। প্রস্তাবিত ভারত-আরব-ভূমধ্যসাগরীয় করিডর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা, প্রভাব এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সংক্রান্ত গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যানের সঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত সামুদ্রিক বাণিজ্য পথগুলির সুবিধে-অসুবিধের তুল্যমূল্য বিচার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। পাশাপাশি সমান গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের সাপ্লাই চেনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়ে তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সুবিধেগুলি আরও বেশি করে ভারতের উন্নয়নের কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.