Author : Ajay Bisaria

Published on Feb 16, 2025 Updated 0 Hours ago

২০২৪ সালে ভারত তার অস্থির প্রতিবেশকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করেছে। তবে ২০২৫ সালে ভারতকে অবশ্যই একটি দীর্ঘমেয়াদি, বাস্তববাদী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে এবং কয়েকটি স্বল্পমেয়াদি জয়ের লক্ষ্য স্থির করতে হবে।

অশান্ত দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত কূটনীতিকে কাজে লাগিয়েছে

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চাইলেও ২০২৪ সালে ভারতের প্রতিবেশ অশান্তই থেকেছে। গত বছর আফগানিস্তান মায়ানমারের দলাদলি সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলার জন্য কৌশলগত সমন্বয় সাধনের সময় ভারত তার চিরাচরিত প্রতিপক্ষ চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। একই সময়ে ভারত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ নেপালের নতুন সরকারের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি করেছে। এই ছোট প্রতিবেশী দেশগুলির - যারা ভারত ও চিনের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল – মধ্যে আবেগের পরিবর্তন হয়েছে এবং প্রায়শই এই দেশগুলিতে ভারত-বিরোধী বক্তব্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্রমশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার দরুন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনাপ্রবাহ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যেই আবার ভুটান চিনের চাপের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র হয়ে উঠেছে

ভারত প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে, এমনকি অভ্যন্তরীণ আলোচনা তার প্রতিবেশীদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ কথাও স্বীকার করে নিয়েছে যে, অভ্যন্তরীণ কারণগুলি শাসনের পরিবর্তন বা ভারত-বিরোধী মনোভাবগুলি প্রায়ই নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। নিজের প্রতিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া ভারতীয় বিদেশনীতি একটি দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য। অ-হস্তক্ষেপ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে ১৯৫০-এর দশকে নেহরুর পঞ্চশীল নীতি থেকে শুরু করে ১৯৮০-র দশকে সাউথ এশিয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন-এর (সার্ক) মাধ্যমে অনুসৃত আঞ্চলিকতা কিংবা ১৯৯০-এর দশকের গুজরাল মতবাদ, যা অ-পারস্পরিকতা ছোট প্রতিবেশীদের প্রতি সম্মান দর্শানোর উপর জোর দিয়েছিল… এই সব কিছুর মাধ্যমেই ভারত ধারাবাহিক ভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় তার কূটনীতিকে ভিত্তি করে তোলার চেষ্টা করেছে। মোদী সরকারের প্রতিবেশ প্রথম উদ্যোগ ২০১৪ সালে চালু হয়েছিল মোদীর প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরি-সহ সার্ক নেতাদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘প্রতিবেশ প্রথম’ প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এই ঐতিহ্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থেকেছে। কারণ পুনঃনির্বাচিত মোদী সরকার তাঁর তৃতীয় মেয়াদের অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এই নীতির এক দশক উদযাপন করেছে; তবে এ বার খুব স্বাভাবিক ভাবেই পাকিস্তান আমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে

ভারত প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে, এমনকি অভ্যন্তরীণ আলোচনা তার প্রতিবেশীদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ কথাও স্বীকার করে নিয়েছে যে, অভ্যন্তরীণ কারণগুলি শাসনের পরিবর্তন বা ভারত-বিরোধী মনোভাবগুলি প্রায়ই নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

ঢাকায় ভারত-বিরোধী প্রচার বৃদ্ধি পাওয়াসঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনা আসলে এই বিতর্ককেই উস্কে দিয়েছে যে, বাংলাদেশ কি আদৌ ভারতকে তার প্রতিবেশ অঞ্চলে ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করে? এবং এর পাশাপাশি ভারতের বদলে বাংলাদেশ কি এ বার চিন বা অন্যান্য প্রতিপক্ষ শক্তির মুখাপেক্ষী হচ্ছে… এ নিয়েও বিতর্ক স্পষ্ট। প্রতিবেশী ভারতকে খলনায়ক হিসাবে মনে না করলেও এ কথা মানতেই হবে যে, ভারতকে এখন তিনটি স্থায়ী বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে।

প্রথমত, কোনও প্রতিবেশী দেশের স্বার্থেরই ভারতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভাবে এক হওয়ার সম্ভাবনা নেইতাই নয়াদিল্লি কী ভাবে চাইছে, সে কথা না ভেবে ভারতের উচিত প্রতিবেশী দেশটি কোন আঙ্গিকে সম্পৃক্ত হতে চাইছে, তা খতিয়ে দেখা। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি দু প্রভাবশালী এশীয় মহাশক্তির মাঝে আটকা পড়েছে এবং পরিস্থিতি এমনটাই থাকবে। তাই ভারতের উচিত নিজেকে বাধ্যতামূলক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তৃতীয়ত, ভারত-বিরোধী মনোভাব বা শাসনব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ পাবে। তাই ভারতকে কৌশলগত ভাবে ধৈর্য ধরতে হবে এবং বাস্তবসম্মত সম্পৃক্ততা বজায় রেখে চলতে হবে।

শাসক অভিজাত তার প্রতিবেশী দেশগুলির বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য তাত্ক্ষণিক স্থায়ী সুবিধাগুলি সৃষ্টি করাই ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এমনকি একটি জটিল পরিসরে - যেখানে প্রতিবেশীরা চিনের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে বা যেখানে ভারত-বিরোধী শক্তিগুলি মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে –ভারতকে অবশ্যই এই অঞ্চল জুড়ে স্থিতিশীলতা সদিচ্ছাকে উন্নত করে এমন অর্থপূর্ণ জয় অর্জনের লক্ষ্যে মনোযোগ দিতে হবে। ভারতকে স্পষ্টতার সঙ্গে যে প্রস্তাবটি দিতে হবে তা হল: যদি তার প্রতিবেশীরা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করে, তা হলে ভারত তাদের নিরাপত্তা সমৃদ্ধির জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠবে।

বাস্তববাদ পক্ষপাতিত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা

সমালোচকরা প্রায়শই এ কথা বলে থাকেন যে, নয়াদিল্লির প্রধানত বন্ধুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রবণতা তার বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থকে খর্ব করার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যে সাবলীলতায় শত্রুপক্ষ সৌম্য শাসক সম্প্রদায়কে প্রতিস্থাপন করায় সক্ষম। এই সমালোচনা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এবং ভারত ক্রমবর্ধমান ভাবে একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে কম উপযুক্ত শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি তার কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়েছে

সমন্বিত রাজনৈতিক সত্তার ঊর্ধ্বে উঠে ভারতের ঐতিহাসিক নির্ভরতা রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারত-বিরোধী মনোভাব এবং চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দ্বারা চিহ্নিত একটি অঞ্চলে পরিসর খুঁজে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়। এই কৌশলের সীমাবদ্ধতাগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে ভারত আরও বাস্তববাদী দক্ষিণ এশীয় নীতির দিকে ঝুঁকেছে; জাতীয়তাবাদী, ভারত-বিরোধী ও চিনপন্থী নেতাদের পাশাপাশি অভ্যুত্থানের কাণ্ডারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিজের সম্পৃক্ততা পরিসর আরও বিস্তৃত করেছে এবং বাস্তববাদের সঙ্গেই নিজের নীতিগুলির ভারসাম্য বজায়  রেখেছে।

উদাহরণস্বরূপ, উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত বাংলাদেশের বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (যদিও শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে পর্যন্ত এ বিষয়ে তেমন সাফল্য পাওয়া যায়নি) আফগানিস্তানে তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে এবং মায়ানমারে বিদ্রোহী দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এই বৈচিত্র্যময় পদ্ধতি জটিল আঞ্চলিক সমীকরণ পরিচালনার জন্য ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলকেই দর্শায়।

শাসক অভিজাত তার প্রতিবেশী দেশগুলির বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য তাত্ক্ষণিক স্থায়ী সুবিধাগুলি সৃষ্টি করাই ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলি এই অঞ্চলে ভারতের বাস্তববাদী পদ্ধতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। রেল, সড়ক, বন্দর টেলিযোগাযোগে বিস্তৃত আঞ্চলিক সংযোগে বিনিয়োগ অভিন্ন সাধারণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। গত এক দশকে ভারত উল্লেখযোগ্য ভাবে তার ক্রেডিট লাইন বৃদ্ধি করেছে, বাংলাদেশকে বিলিয়ন মার্কিন ডলার শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে এবং অন্যান্য প্রতিবেশীকে যথেষ্ট সমর্থন জুগিয়েছে। উন্নয়নমূলক সহায়তা ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এই প্রচেষ্টাগুলি ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে সতর্ক আশাবাদের সঞ্চার করেছে।

যাই হোক, চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ তৈরি করে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বেজিংয়ের প্রভাবের আন্তঃপ্রক্রিয়া নয়াদিল্লির স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তোলে। এই জটিলতাগুলি মোকাবিলা করার জন্য ভারত এই কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ঝুঁকি কমাতে এবং নিজের প্রভাব বজায় রাখতে গভীর অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণের পাশাপাশি বাস্তববাদী কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছে।

একই সময়ে, ভারতকে অবশ্যই তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিমার্জিত করতে হবে এবং এ কথা স্বীকার করে নিতে হবে যে, একটি ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ বা ‘সব দেশের জন্য একই নীতি’ কখনও তিন ধরনের প্রতিবেশীর স্বতন্ত্র চাহিদা সমাধান করতে পারে না এবং এই তিনটি ধরন হল প্রতিপক্ষ (অর্থাৎ চিন), ভেঙে পড়তে থাকা রাষ্ট্র (অর্থাৎ বাংলাদেশ) এবং ছোট আকারের দেশ (অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা)। ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিটি গোষ্ঠীর জন্য উপযোগী কৌশল অপরিহার্য হবে।

প্রথাগত প্রতিপক্ষ

২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক স্থবিরতার পরে ২০২৪ সালে ভারত ও চিন সম্পর্ককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। অক্টোবর মাসে মোদী-শি আলোচনা এবং ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল ও চিনা বিদেশমন্ত্রক (এফএম) প্রধান ওয়াং ইয়ের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকগুলিতে সৈন্য প্রত্যাহার ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর শান্তি বজায় রাখার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। যাই হোক, লাদাখে চিনের দৃঢ় সামরিক অবস্থান ভারতের সঙ্গে বৃহত্তর কৌশলগত শত্রুতার কারণে অবিশ্বাস অব্যাহতই রয়েছে। বেজিংয়ের সঙ্গে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্যের পরিমাণের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি কৌশলগত অগ্রগতির পরিবর্তে কৌশলগত সমন্বয় সাধনে আগ্রহী। চিনকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগের মতো বৈশ্বিক কূটনীতি দ্বারা শক্ত হয়েছে।

দীর্ঘদিনের উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত পাকিস্তানের কাছে পৌঁছেছে। বিদেশমন্ত্রী (ইএএম) এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং গত বছরের মধ্যে এটিই এই ধরনের প্রথম সফর। ভিসা-মুক্ত তীর্থযাত্রার জন্য কর্তারপুর করিডোর চুক্তি পুনর্নবীকরণের পর ই সফর হয়েছিল। পাকিস্তানের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট কিছু স্থিতিশীলতার সঙ্কেত দিলেও ভারত জোর দিয়েছে যে, জম্মু ও কাশ্মীরে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ কমানোই আসলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি সাধনের চাবিকাঠি। তাই আশা করা হচ্ছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সম্পর্কের উন্নতি সাধনের সুযোগ ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে।

ব্যর্থ রাষ্ট্র

অভ্যুত্থান-পরবর্তী তিন বছর সময়কাল ধরে মায়ানমার গৃহযুদ্ধে জর্জরিত এবং দেশটির ভূখণ্ডের মাত্র ১৪ শতাংশ স্থিতিশীল হুন্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সহিংস ঘটনার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা একটি মানবিক সঙ্কট তৈরি করেছে এবং এই সঙ্কটের দরুন ২০২৪ সালে ১৮.৬ মিলিয়ন মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত আন্তঃসীমান্ত বিদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ মাদক পাচারের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে অস্থিতিশীলতা ভারতের ৪৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-কেও হুমকির মুখে ফেলেছে, যা মায়ানমারের পূর্ব উপকূলকে ভারতের উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য হুন্তা ও জাতিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

তালিবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তান অর্থনৈতিক পতন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশের (আইএসআইএস-কে) তরফে চরমপন্থী হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। ভারতের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি একটি সমন্বয়মূলক মিশনের মাধ্যমে তালিবানদের সঙ্গে মানবিক সহায়তা সম্পৃক্ততার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। আবার এর পাশাপাশি ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির জন্য, বিশেষ করে মহিলাদের শিক্ষা সংক্রান্ত নীতির জন্যও তালিবানদের চাপ দিয়েছে ভারত। ৫০০টিরও বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত আফগানিস্তানকে সমর্থন করেছে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করার সময় তালিবান শাসনকে ন্যূনতম স্বীকৃতি দিয়ে দেশটির জনগণের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেছে।

প্রতিবেশীদের মাঝে পড়ে

গস্ট মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ নিজেকে ভারত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। ১৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশের ভারতপন্থী অবস্থান নিরাপত্তা অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উত্সাহিত করেছিলকিন্তু মুহম্মদ ইউনূসের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তান অন্যান্য দেশের প্রতি ঝুঁকতে থাকায় বাংলাদেশের মনোভাবের পরিবর্তন স্পষ্ট। বিএনপি অন্যান্য ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর পুনরুত্থান ভারতের নিরাপত্তা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা উদ্বেগের উপর জোর দিয়ে ভারতকে অবশ্যই নতুন প্রশাসনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা জোরদার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির অধীনে নেপালের চিনপন্থী ঝোঁক আসলে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চুক্তি এবং ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাসের পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসে বেজিংয়ে অলির সফরের মাধ্যমেই স্পষ্ট। ভারত ও চিনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার সময় নেপাল ভারতের কাছ থেকে অনন্য সুবিধা পেতেও আগ্রহী। নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এই বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে এবং পারস্পরিক সুবিধার মাধ্যমে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ককে গভীরতর করতে হবে।

অর্থনৈতিক সঙ্কট-পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট দিসানায়েকের অধীনে শ্রীলঙ্কা ভারত ও চিনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে দিসানায়েকের ভারত সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করার মাধ্যমে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলা করেছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন শাসনামলে সক্রিয় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ভারত দ্বীপদেশটির সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর ভারতে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর আবার মুইজ্জুর আগেকার ভারত বিরোধী বক্তব্য থেকে সরে আসারইঙ্গিত দেয়। মলদ্বীপে চলতে থাকা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি ইন্ডিয়া আউট প্রচারাভিযানকে খারিজ করতে বাধ্য করেছে এবং মলদ্বীপ এ বার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার পর জোর দিয়েছে

স্বল্পমেয়াদি জয় কৌশলগত ধৈর্য

ভারতের আঞ্চলিক কৌশল একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক কাজকে দর্শায়: প্রতিকূল সম্পর্কের মধ্যে পথ খুঁজে নেওয়া, ভেঙে পড়তে থাকা রাষ্ট্রগুলির তরফে বাড়তে থাকা চাপানউতোর বা বিদ্বেষী মনোভাবের মোকাবিলা করা এবং বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে থাকার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের উপর প্রভাব বজায় রাখা। এই জটিল গতিশীল পরিবেশে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতের প্রয়োজন কূটনৈতিক বাস্তববাদ শক্তিশালী অর্থনৈতিক উদ্যোগের সংমেল

ভারতের প্রতিবেশ নীতি কৌশলগত ধৈর্যের পাশাপাশি মাঝে মাঝে ভারত-বিরোধী শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছা, চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজের পরিসর করে নেওয়া এবং শূন্য-সমষ্টির পন্থা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানায়। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি স্থিতিশীল কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ঋণের চেয়ে অনুদানকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সংযোগ মানবিক সহায়তার পর জোর দেওয়া উচিত। সম্পৃক্ততার মূল ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সহযোগিতা, উন্নয়নমূলক সহায়তা, প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব, দুর্যোগ ত্রাণ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং অবকাঠামো প্রকল্প। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান অস্ট্রেলিয়ার মতো কোয়াড অংশীদারদের উৎসাহিত করলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করতে পারে আলোচনার জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে সার্ক-কে পুনরুজ্জীবিত করা, বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক) এবং বিবিআইএন-এর (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) মতো উপ-আঞ্চলিক পদ্ধতি আসলে চিন নেতৃত্বাধীন এসসিও-র বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

ভারতের প্রতিবেশ নীতি কৌশলগত ধৈর্যের পাশাপাশি মাঝে মাঝে ভারত-বিরোধী শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছা, চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজের পরিসর করে নেওয়া এবং শূন্য-সমষ্টির পন্থা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানায়।

ভারতের সাম্প্রতিক আঞ্চলিক কূটনীতি তার প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার প্রতি প্ররোচনা এবং সম্মানের কৌশলগত সংমিশ্রণ প্রদর্শন করে। চিনের উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক বিনিয়োগের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জকে স্বীকৃতি দিয়ে ভারতকে নিজের প্রতিবেশীদের অনন্য মূল্য প্রদান করার জন্য তার প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে হবে। নিজের পরিধিকে স্থিতিশীল করে বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্যগুলির পাশাপাশি আঞ্চলিক নীতিগুলিকে সাযুজ্যপূর্ণ করে তোলার মাধ্যমেই ভারত নিজের সীমানা সুরক্ষিত করতে পারে এবং এই ভাবেই ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি প্রধান উন্নত শক্তি হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে পারে।

 


অজয় বিসারিয়া অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.