২০১৭ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ভারতকে সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করার মতো জায়গার কাছাকাছি নিয়ে আসা। এই নীতিতে সমস্ত বয়সের মানুষের কাছে সর্বোচ্চ স্তরের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, এবং রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছে। এর রূপায়ণ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক স্বীকার করেছে যে এই লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে হলে ভারতের স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটালাইজ করতে হবে। আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন (এবিডিএম) নামে পরিচিত সেই ব্যবস্থাটি তৈরির সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের গঠিত এক কমিটির অধীনস্থ ভারতের ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ ব্লুপ্রিন্ট।
এবিডিএম হল ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি (এনএইচএ)–র একটি অঙ্গ, যেটি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা’ রূপায়ণের প্রধান কারিগর। প্রকল্পটি রূপায়ণের একটি অংশ হিসেবে এনএইচএ-কে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত কাঠামোর নকশা ও পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই এনএইচএ–ই আবার জাতীয় পর্যায়ে এবিডিএম বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এবিএইচএম রাজ্যস্তরে রূপায়ণের জন্য প্রতিটি রাজ্যে তৈরি করা হচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
এবিডিএম-এর উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হল যাচাইকৃত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তার, ফিজিশিয়ান, নার্স ও ফার্মাসিগুলোর একটি আধার তৈরি করা। এবিডিএম-এর দাবি, এটি সমস্ত অসাধু চিকিৎসা সংস্থাকে ছেঁটে ফেলে জালিয়াতি এড়াতে সাহায্য করবে৷ এবিডিএম ভারতীয়দের জন্য একটি অনন্য স্বাস্থ্য আইডি (শনাক্তকারী) তৈরির ভিত্তিতে কাজকর্ম পরিচালনের কথা ভেবেছে। এর পেছনের চিন্তাটা হল প্রত্যেক ব্যক্তির সমস্ত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নথি একটা প্ল্যাটফর্মে একত্র করার ব্যবস্থা করা। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি/রোগীর সম্মতিসাপেক্ষে তাঁদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য চিকিৎসাকারী ডাক্তার বা ফিজিশিয়ন ও স্বাস্থ্য বিমা সংস্থার মতো আরও অনেক পক্ষের কাছে উপলব্ধ হবে। এই হেলথ আইডি আধার আইডি থেকে আলাদা; একই ব্যক্তির জন্য একাধিক স্বাস্থ্য আইডি তৈরি করা যেতে পারে। এবিডিএম–র বক্তব্য, একজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি, যেমন যৌন ইতিহাস সংক্রান্ত, গোপন রাখার অনুমতি দেওয়া হবে। রোগীর পূর্ববর্তী চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস হাতে পেলে একজন চিকিৎসক অবশ্যই আরও ভাল ভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। এটি চিকিৎসা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করবে, এবং রোগীর আর্থিক খরচ কমিয়ে আনবে।
অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি/রোগীর সম্মতিসাপেক্ষে তাঁদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য চিকিৎসাকারী ডাক্তার বা ফিজিশিয়ন এবং স্বাস্থ্য বিমা সংস্থার মতো আরও অনেক পক্ষের কাছে উপলব্ধ হবে।
এই তথ্য সঞ্চিত রাখা ও ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট ডিজিটাল কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে ন্যাশনাল হেলথ স্ট্যাক–এ। এই স্ট্যাক হল এবিডিএম সিস্টেমের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পূর্বলিখিত কোডের একটি সংগ্রহ (যাকে সাধারণত এপিআই হিসেবে উল্লেখ করা হয়)। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেখানে স্বাস্থ্য তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা ও বিভিন্ন চিকিৎসা সংস্থার ভান্ডার তৈরি করার পাশাপাশি বিমাসংক্রান্ত দাবির জন্য আগ্রহী (ও অনুমোদিত) ফাইলগুলি বিশ্লেষণ করা যাবে। এই হেলথ স্ট্যাকটি পেমেন্ট গেটওয়ের (যেখানে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা দেওয়া যায়) সঙ্গেও একীভূত হবে। বর্তমানে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ এবিডিএম–এর স্বাস্থ্য আইডির জন্য নিজেদের নথিভুক্ত করেছেন, এবং ভারতের ছয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এক বছরের জন্য এই কর্মসূচি চালানো হয়েছে।
সমস্যাসমূহ
যদিও এবিডিএম দূরদর্শী, এবং ভারতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে, এটির বাস্তবায়ন এবং সামগ্রিক উদ্দেশ্যগুলি নিয়ে আরও চিন্তার প্রয়োজন আছে। এর কিছু সমস্যা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রোগী-চিকিৎসক আস্থা, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও তথ্যের সুরক্ষা। প্রথমত, এমন সব ক্ষেত্রে যেখানে দূর থেকে বা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে, সেখানে একজন নতুন ফিজিশিয়ন বা ডাক্তারকে বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য নথি শেয়ার করার জন্য রোগীর সম্মতি পেতে হলে রোগীর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ভারত যদি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে উঠে আসা স্থানীয় প্রতিভার আধার হিসেবে গর্ব করতে পারে, তা হলে সরকারি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) ব্যবহারের বিষয়টিতে আমূল পরিবর্তনও অবশ্যই আনতে পারে। সরকারি ক্ষেত্রের আইটি সিস্টেমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও শক্তিশালী ওয়েবসাইটের অভাব রয়েছে, এবং ব্যবহারকারীদের বাধাহীন ব্যবহারের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তা পিছিয়ে রয়েছে। এবিডিএম-এ একটি নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী লগ ইন করতে পারেন। এখন ভাবুন, আপনি যখন চিকিৎকের সঙ্গে বসেছেন সেই সময় ইন্টারনেটের স্পিড বা ডেটা লোডিং নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আপনার এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট তেমন কাজের না–ও হতে পারে, এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট যদি বাতিল হয়ে যায়, তা হলে কনসালটেশনের জন্য দেওয়া টাকাও বেকার হয়ে যেতে পারে। যে দেশে কম্পিউটার নিরক্ষরতার হার বেশি, সেখানে এই ধরনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা সরল করতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য সহজতর করতে হবে। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেশিরভাগ ওয়েবসাইট মোটেই সেই ধরনের নয়। তার উপর গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই ধরনের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। এই নাগরিকদের স্বাস্থ্য আইডি–র নিবন্ধীকরণের জন্য স্থানীয় যে ডাক্তার বা ফিজিশিয়ন তাঁদের চিকিৎসা করেন তাঁদের উপর নির্ভর করতে হবে। এই চিকিৎসকদের রোগীদের ব্যক্তিগত বিবরণ নিয়ে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত হতে হবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, এটাও বুঝতে হবে এবিডিএম হেলথ আইডি–তে নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক নয়, স্বেচ্ছাধীন। নাগরিকেরা, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যাতে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তার জন্য সিস্টেমটি কী ভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে এবং এর সংশ্লিষ্ট জটিলতার সম্পর্কে তাঁদের বিশদে জানাতে হবে।
যে দেশে কম্পিউটার নিরক্ষরতার হার বেশি, সেখানে এই ধরনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা সরল করতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য সহজতর করতে হবে।
তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণগুলির মধ্যে একটি হল তথ্যের সুরক্ষা। তথ্য সুরক্ষা আইনের অনুপস্থিতিতে ব্যক্তি/রোগীর সম্মতি থাকলেও তাঁদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকতে হবে। ২০২০ সালে নীতি আয়োগ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির এই জাতীয় তথ্য পাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে তথ্য ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা স্থাপত্যের (ডিইপিএ) একটি খসড়া তৈরি করেছে৷ ডিইপিএ-তে একজন ব্যক্তি এবং তাঁর তথ্য দেখার অধিকার চাইছে এমন সংস্থার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য ‘কনসেন্ট ম্যানেজার’ বা সম্মতি ব্যবস্থাপক রাখার কথা বলা হয়েছে। সম্মতি ব্যবস্থাপকদের তথ্য দেখার সুযোগ থাকবে না, তাঁরা শুধু ব্যক্তির সম্মতিসাপেক্ষে তথ্য শেয়ার করার বিষয়টিকে সহজতর করে তুলবেন। ডিইপিএ খসড়াটি বেশি নজর দিয়েছে আর্থিক ক্ষেত্রের উপর, যেখানে গ্রামীণ ব্যক্তির বা ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগগুলির ঋণ বা বিমা পরিষেবার সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি জড়িত আছে।। এবিডিএম-এর জন্য ডিইপিএ-তে বলা হয়েছে যে যদি ব্যক্তি/রোগী সম্মতি প্রদান করেন, তা হলে তাঁদের তথ্য পেতে আগ্রহী সংস্থার সঙ্গে তা শেয়ার করা যেতে পারে। তবে কোনও চিকিৎসক বা বিমা সংস্থার মতো কোনও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ‘সম্মতি’ দেওয়ার অর্থ হল ঠিক যে কারণে সম্মতি দেওয়া হয়েছে তার অতিরিক্ত অন্য কোনও উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করা যাবে না, এবং স্থানীয় ভাবে তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না। সমস্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষকে এই জাতীয় তথ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে এবং মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। যাঁরা এই কাজগুলো করবেন তাঁদের সংবেদনশীল করে তোলার জন্য এই জাতীয় তথ্যের সুরক্ষা ও সর্বোচ্চ স্তরের গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
এবিডিএম–এর বক্তব্য, যে কোনও ব্যক্তির তাঁর সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করার প্রশ্নে সম্মতি না–দেওয়ার স্বাধীনতা আছে; তবে সম্মতি না–দিলে তা কিছু শাস্তির কারণ হতে পারে। যেমন, যাঁরা বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য তথ্য শেয়ার করতে সম্মত তাঁদের জন্য একটি বিমা সংস্থা কিছু ছাড় দিতে পারে, কিন্তু যাঁরা অসম্মত তাঁদের জন্য প্রক্রিয়াগুলি আরও কঠিন করে দিতে পারে। তা ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সম্মতি ব্যক্তির পরিবর্তে সংগঠনের কাছ থেকে চাওয়া যেতে পারে। এর ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তির অনুরোধের জন্য পৃথক সম্মতির প্রয়োজন এড়িয়ে যাওয়া যাবে। এর জন্য আর এক প্রস্ত তথ্য নিয়ন্ত্রণ বিধির প্রয়োজন যা ভাল ভাবে বিজ্ঞাপিত হবে এবং সম্মতি প্রদানকারী ব্যক্তিদের কাছে ব্যাখ্যা করা হবে।
এবিডিএম-এর সামগ্রিক উদ্দেশ্য নিয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ রয়েছে। এবিডিএম–কে এমন একটি পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে ‘বিপণন’ করা হচ্ছে যা ভারতীয়দের কাছে কী ভাবে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায় তা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করবে। বর্তমান আকারে জনস্বাস্থ্য গবেষণার কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে এই স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবহার করতে পারেন, সেই বিষয়টার উপর এবিডিএম মোটেই জোর দেয়নি। বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য কিন্তু জনস্বাস্থ্য গবেষণার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য না–থাকায় জনস্বাস্থ্য গবেষণার জন্য তথ্য সাধারণত সংগ্রহ করে থাকে জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলি বা চলতি ও নতুন গবেষণার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি। এর জন্য প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরুর আগে অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে যায় অধ্যয়নের বিষয় পরিকল্পনা করতে, অংশগ্রহণকারীদের নিয়োগ করতে এবং ফিল্ড স্টাফেদের প্রশিক্ষণের জন্য। অনুদৈর্ঘ্য বিশ্লেষণের সুবিধার্থে এই জাতীয় তথ্য পূর্ব-নির্ধারিত সময়ের ব্যবধানে সংগ্রহ করে চলতে হয় অনেক দিন ধরে, যে ব্যবধান মাস বা বছরের হতে পারে। এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার মধ্যে আছে বেশি খরচ এবং দীর্ঘ সময়কাল। প্রাক-সংগৃহীত তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে এই দুই ধরনের সীমাবদ্ধতাই অতিক্রম করা যাবে। যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল ভারতের বেশিরভাগ হাসপাতালের রেকর্ড যে হেতু কাগজের প্রেসক্রিপশন বা হাতে লেখা রেজিস্টার এন্ট্রি নিয়ে তৈরি, তাই তার তুলনায় স্বাস্থ্য আইডি থেকে পাওয়া তথ্য আরও পরিপূর্ণ হওয়ার কথা।
এবিডিএম–কে এমন একটি পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে ‘বিপণন’ করা হচ্ছে যা ভারতীয়দের কাছে কী ভাবে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায় তা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করবে।
কোভিড-১৯ অতিমারি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে প্রমাণ-ভিত্তিক ফলাফল পেতে হলে বাস্তব বিশ্বের তথ্য পাওয়া দরকার। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে আগেকার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে একজন ডাক্তার বা ফিজিশিয়ন ডায়াবেটিস বা রক্তচাপের ইতিহাস আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য কোভিড-১৯ এর তীব্রতা চিহ্নিত করতে পারেন। এর বিপরীতটিও সত্য। চিকিৎসা ইতিহাস ও রোগের শেষতম তথ্য ব্যবহার করে রোগের অজানা ঝুঁকির কারণগুলিও চিহ্নিত করা যেতে পারে। এর জন্য বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য তথ্য উপলব্ধ হওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনই পরিপূরক হিসেবে রোগীর জীবনচর্যার মতো অতিরিক্ত তথ্যও প্রয়োজন। পশ্চিমী দেশগুলিতে বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য তথ্য হাসপাতাল স্তরে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, এবং তারা সাধারণত রোগীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত রেকর্ডের অংশ হিসেবে জীবনচর্যার মৌলিক প্রশ্নগুলির উত্তরও সংরক্ষণ করে।
রোগের নতুন ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করতে জনস্বাস্থ্য গবেষণার জন্য এক্সপোজার ভেরিয়েবল সংক্রান্ত তথ্য থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন এবিডিএম–এর ক্ষেত্রে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে যদি কোনও জনস্বাস্থ্য গবেষণা এবিডিএম–এর স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবহার করতে চায়, তা হলে তাদের গবেষণায় ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মতি চাইতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, আর তা হলে তাদের প্রয়োজন পড়বে সেই ব্যক্তিদের শনাক্তকারী তথ্যের। তারা তথ্য সুরক্ষা লঙ্ঘন করতে পারে, এবং জনস্বাস্থ্য গবেষণার ক্ষেত্রে এবিডিএম-এর উপযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ এক্সপোজার ভেরিয়েবল সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে তখনই সংগ্রহ করা যেতে পারে, যখন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। ভারতের মতো একটি দেশে পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় জনসংখ্যা-ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য গবেষণা খুবই কম। এ ক্ষেত্রে তথ্য না–থাকার ঘটনা একটা বড় প্রতিবন্ধক। এবিডিএম-এর অধীনে স্বাস্থ্য আইডির মতো একটি ব্যবস্থাকে অবশ্যই এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে, এবং এখনকার প্রস্তাবিত কাঠামোটিকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
সামগ্রিক ভাবে, এবিডিএম সঠিক লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ। এর উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে ডিজিটাল করা এবং ভারতীয়দের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ব্যবস্থাকে উন্নত করা। যে কোনও নতুন ব্যবস্থার মতোই এবিডিএম–ও প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত নয়। উপরে বর্ণিত এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করা যেতেই পারে, তবে তা নির্ভর করবে ইচ্ছা এবং সময় ও সম্পদের প্রাপ্যতার উপর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.