Published on Jan 16, 2024 Updated 0 Hours ago

আবারও, শ্রীলঙ্কায় একটি চিনা গবেষণা জাহাজের বকেয়া সফর ভারতীয় আপত্তির কারণ হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় ভার‌ত–চিন ট্যাঙ্গো অব্যাহত

ভারত ও চিনের মধ্যে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। অক্টোবরে একটি চিনা সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ, শি ইয়ান ৬, শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল অ্যাকুয়াটিক রিসোর্সেস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এনএআরএ)–র সহযোগিতায় গবেষণার উদ্দেশ্যে কলম্বোয় আসে। এনএআরএ এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে শি ইয়ান ৬ ‘‌রুহুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা অনুসারে’‌ শ্রীলঙ্কায় আসবে। তবে শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে। রুহুনা বিশ্ববিদ্যালয় চিনা জাহাজের সঙ্গে গবেষণা অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছিল। এক মাসের জন্য কলম্বোতে চিনা জাহাজের ডকিং করা নিয়ে ভারতের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কা চিনকে ‘‌সফর পিছিয়ে দিতে To defer the visit.  ’‌ বলেছিল বলেও জানা যায়। কিন্তু চিন অক্টোবর–নভেম্বরে মূল শিডিউল মেনে চলার জন্য জোর দিয়েছিল এবং জাহাজটিকে শ্রীলঙ্কায় ডক করার অনুমতি দেওয়ার দাবি করেছিল। শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী আলি সাবরি প্রথমে বলেছিলেন যে শ্রীলঙ্কা ‘‌চিনা জাহাজ শি ইয়ান ৬–কে অনুমতি দেয়নি, কারণ ভারতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’‌। তবে তিনি তখনই যোগ করেন যে ‘‌আলোচনা চলছে, এবং যদি জাহাজটি শ্রীলঙ্কার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে চলে, তবে কোনও সমস্যা হবে না’‌। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিল। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর পলিটিকাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে নিউইয়র্কে সাবরির সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং চিনা গবেষণা জাহাজের ডকিং নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, জানা গিয়েছে, সাবরি বলেন যে শ্রীলঙ্কা একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর তৈরি করেছে যা তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা যে কোনও বিদেশি জাহাজ ও বিমানকে মেনে চলতে হবে।’‌ শ্রীলঙ্কার ‘‌সকলের জন্য একই দৃষ্টিভঙ্গি’‌ অনুসারে মন্ত্রী বলেছিলেন যে দেশটি ‘‌চিনকে বাদ দিতে পারে না’‌।    


মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর পলিটিকাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে নিউইয়র্কে সাবরির সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং চিনা গবেষণা জাহাজের ডকিং নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

সেপ্টেম্বরের শুরুতে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস দ্বারা নিউইয়র্কে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংহে বলেছিলেন, ‘‌‘‌শ্রীলঙ্কায় কোনও গুপ্তচর জাহাজ নেই। আমি জানি না কেউ একটি গুপ্তচর জাহাজ স্থাপন করতে পারে কি না।’‌’‌ চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় জলজ গবেষণা সংস্থার মধ্যে একটি চুক্তি অনুসারে তিনি চিনা জাহাজগুলিকে ‘‌গবেষণা জাহাজ’‌ হিসাবে বর্ণনা করে বলেছিলেন এই জাহাজগুলি গত এক দশক ধরে শ্রীলঙ্কায় আসছে। সম্ভবত শ্রীলঙ্কার নেতৃত্বের উপর চিনা প্রভাবের একটি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি অওকাস–এর সমালোচনাও করেছিলেন, যা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনে অস্ট্রেলিয়াকে সজ্জিত করার চুক্তি। তিনি বলেছিলেন, এটি ‘‌একট সামরিক জোট যার লক্ষ্য একটি দেশ—চিন’‌ এবং ‘‌একটি কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ’‌। বিক্রমসিংহে ‘‌ইন্দো–প্যাসিফিক’‌ ধারণাটিকে উপহাস করার সুযোগও নিয়েছিলেন, এবং পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এই নতুন মুদ্রা একটি ‘‌কৃত্রিম কাঠামো’‌ এবং ‘‌কেউ জানে না ইন্দো–প্যাসিফিক কী’‌। এই বিতর্ক মোটেই অনন্য নয়। গত বছর আরেকটি চিনা জাহাজ, ইউয়ান ওয়াং ৫ নিয়ে বেশ হট্টগোল হয়েছিল, যেটিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং জাহাজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এটি ১৬ আগস্ট, ২০২২ থেকে এক সপ্তাহের জন্য শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূলের হাম্বানটোটা বন্দরে ডক করেছিল। ভারতীয় উদ্বেগের কারণে শ্রীলঙ্কা এই বছরের মতোই সে বারও চিনকে জাহাজের আগমন স্থগিত করতে বলেছিল;‌ কিন্তু পরে ডকিংয়ের জন্য শর্তের স্পষ্টীকরণ দিয়ে বলেছিল যে জাহাজটি ‘‌এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) চালু রাখবে ( শ্রীলঙ্কার ইইজেড), এবং শ্রীলঙ্কার জলসীমায় কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হবে না’‌। শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে জাহাজটিকে নিছক পুনঃপূরণের (‌রিপ্লেনিশমেন্ট)‌ উদ্দেশ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্ষেত্রে ভারতীয় উদ্বেগের বিষয় ছিল যে ইউয়ান ওয়াং ৫, যার বায়বীয় নাগাল প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার, দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরল, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র প্রদেশে বন্দরগুলির রাডার মনিটরিং করতে সক্ষম ছিল। শ্রীলঙ্কায় ডক করার পর চিনা জাহাজটির, ভারতীয় যুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর নজরদারি করার সুযোগ ছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে চিনের কাছে এমন সাতটি ট্র্যাকিং জাহাজ রয়েছে, যা প্রশান্ত মহাসাগর, অ্যাটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরে কাজ করতে পারে। চিনের জাহাজ–ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ চিনের স্থলভিত্তিক ট্র্যাকিং ক্ষমতাকে উন্নত করে। ইউয়ান ওয়াং ৫ সম্পর্কে ভারতীয় উদ্বেগের পাশাপাশি মার্কিন বিদেশ দপ্তর আরও উল্লেখ করেছে যে চিনা জাহাজটি পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্সের অংশ, যা হল ‘‌পিএলএ–র কৌশলগত স্থান,  সাইবার, ইলেকট্রনিক, তথ্য, যোগাযোগ, এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ মিশন ও ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি থিয়েটার কমান্ড–লেভেল সংস্থা’‌।

 

শ্রীলঙ্কায় ডক করার পর চিনা জাহাজটির, ভারতীয় যুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর নজরদারি করার সুযোগ ছিল। 

 

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৪৮টি চিনা বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ডক করেছে, যার বেশিরভাগ মোতায়েন হয়েছে বঙ্গোপসাগর ও পারস্য উপসাগরের দিকে আরব সাগরে। চিন তার দাবি চালিয়ে যেতে পারে যে এগুলি বৈজ্ঞানিক মিশন, তবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ সামরিক উদ্দেশ্যে এই মিশনগুলিকে ব্যবহার করা নিয়ে চিন সম্পর্কে ভারতীয় সন্দেহ দূর হবে না। ইতিমধ্যে, শ্রীলঙ্কার মতো ছোট দেশগুলি ভারত ও চিন উভয়ের কাছ থেকে সর্বাধিক লাভের জন্য তাদের নিজস্ব ভূ–রাজনৈতিক খেলা খেলছে। সাময়িক হলেও, এই ঘটনাগুলি শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে ভারতে উদ্বেগের কারণ। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ‘‌অনিবার্য পরিস্থিতির’‌ কারণে শেষ মুহূর্তে বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছিল। এটি নিশ্চিত নয় যে এটি শ্রীলঙ্কায় চিনা জাহাজের ডকিংয়ের খবরের কারণে করা হয়েছিল কি না, তবে খুব সম্ভবত ঘটনাটি নিছক কাকতালীয় ছিল না। স্থগিতকরণ সম্ভবত কলম্বোতে ভারতের অসন্তোষ প্রকাশ করার জন্যই ছিল।



এই ভাষ্যটি প্রথমে দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.